যুক্তরাষ্ট্র ও তালেবানের ঐতিহাসিক চুক্তি সই
১৮ বছরের আফগান যুদ্ধের অবসান ঘটাতে কাতারে যুক্তরাষ্ট্র ও তালেবানের মধ্যে ঐতিহাসিক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে৷ এতে করে এখন আফগানিস্তানের ভেতরের পক্ষগুলোর মধ্যে আলোচনার পথ খুলল৷
শনিবার কাতারের রাজধানী দোহায় এই চুক্তি সই হয়৷ সেখানে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও এবং তালেবানের দোহা মুখপাত্র সোহাইল শাহীন চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন৷
চুক্তি অনুযায়ী যুক্তরাষ্ট্র আফগানিস্তান থেকে তাদের বেশিরভাগ সেনা প্রত্যাহার করে নেবে৷ ২০০১ সালে সংঘাত শুরু হবার পর থেকে তালেবানের প্রধান দাবিগুলোর একটি ছিল এটি৷ দক্ষিণ এশিয়ার দেশটিতে এখন ১২,০০০ মার্কিন সেনা রয়েছে৷ সেখান থেকে ৮,৬০০ জনকে প্রত্যাহার করবে তারা৷
দীর্ঘসময় ধরে যুদ্ধ চলা দেশটিকে ঘিরে এমন সমঝোতায় আসতে পারা নিয়ে দু’পক্ষই সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছে৷
শুক্রবার এক বিবৃতিতে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেছেন, ‘‘যদি তালেবান ও আফগান সরকার তাদের অঙ্গীকার রক্ষা করতে পারে, তাহলে যুদ্ধের অবসান ঘটিয়ে আমরা আমাদের সেনাদের ঘরে ফিরিয়ে আনতে পারি৷”
তিনি যোগ করেন, ‘‘এই প্রতিশ্রুতিগুলো একটি নতুন শান্তিপূর্ণ আফগানিস্তানকে প্রতিনিধিত্ব করে যেখানে আল কায়েদা, আইএসআইএস এবং এমন কোনো সন্ত্রাসী সংগঠন নেই৷”
বিশ্লেষকরা মনে করেন, এই চুক্তি ট্রাম্পকে আগামী জাতীয় নির্বাচনে জনসমর্থন আদায়ে সহযোগিতা করবে৷
জটিলতা কাটেনি
চুক্তি অনুষ্ঠানে আফগান সরকারের একজন প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন৷ কিন্তু তাঁর কোনো সরাসরি ভূমিকা ছিল না৷
দেশটির বর্তমান সরকারকে তালেবান ‘অ্যামেরিকার পুতুল’ বলে মনে করে এবং তাদের সঙ্গে সরাসরি কোনো যোগাযোগ তৈরি করতে আগ্রহ দেখাচ্ছে না৷
‘‘তালেবানের সঙ্গে যোগাযোগ তৈরির জন্য আফগানিস্তান একটি কমিটি তৈরি করেছে,” আফগান প্রেসিডেন্ট আশরাফ ঘানির মুখপাত্র সেদিক সেদিকি ডয়চে ভেলেকে বলেন৷
‘‘আমাদের আন্তর্জাতিক মিত্রদের কাছে এর জন্য বারবার দাবি জানিয়ে আসছিল তালেবানরা৷”
অবশ্য এই শান্তি প্রক্রিয়ায় তালেবানরা কখনো আফগান সরকারের গুরুত্ব স্বীকার করেনি৷ এখন পর্যন্ত দোহায় মার্কিনিদের সঙ্গে তালেবানরা যত আলোচনা করেছে, তাতে ঘানি সরকারের সক্রিয় কোনো অংশগ্রহণ ছিল না৷
‘‘আমরা আফগান সরকারের কাউকে দোহায় আমন্ত্রণ জানাইনি৷ যুক্তরাষ্ট্র যদি আমন্ত্রণ জানিয়ে থাকে, তা আমাদের ধর্তব্যের বিষয় নয়,” ডয়চে ভেলেকে বলেন সোহাইল শাহীন৷
‘‘যু্ক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে হওয়া এ চুক্তির কাঠামোর মধ্যে থেকেই আমরা এগোব৷ আর এই কাঠামো পরিষ্কার- চুক্তি স্বাক্ষর হবে৷ এরপর একটা আস্থা তৈরির জন্য সময় দিতে হবে,” শাহীন বলেন৷
‘‘এই আস্থা তৈরির সময়টুকুতে আফগান জেলে বন্দি আমাদের ৫০০০ সদস্য ও আমাদের কাছে আফগান সরকারের ১০০০ বন্দীকে মুক্তি দেয়া হবে৷ এরপরই কেবল অভ্যন্তরীণ আফগান সংলাপ শুরু হতে পারে৷”