Main Menu

চীন-ভারত সংঘর্ষ: ভারত এখন বলছে তাদের ২০ জন সৈন্য নিহত হয়েছে

+100%-

বিরোধপূর্ণ কাশ্মীর অঞ্চলের লাদাখ সীমান্তে ভারত ও চীনা সৈন্যদের মধ্যে সংঘর্ষে অন্তত ২০ জন ভারতীয় সৈন্য নিহত হয়েছে বলে ভারতীয় কর্মকর্তার এখন বলছেন।

এর আগে জানা গিয়েছিল তিন জন ভারতীয় সেনা নিহত হয়েছিলেন।দু’পক্ষ থেকেই মধ্যে হতাহতের দাবি করা হচ্ছিল।

কিন্তু মঙ্গলবার দিনের আরো পরের দিকে ভারতীয় কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সংঘর্ষে আহত বেশ ক’জন সেনা প্রাণত্যাগ করেছে।

চীনের তরফ থেকে এ ব্যাপারে এখনও কোন তথ্য জানা যায়নি।

১৯৭৫ সালে অরুণাচল প্রদেশে ভারত-চীন সীমান্তের খুব কাছে চীনা বাহিনীর চালানো এক হামলায় ভারতের আসাম রাইফেলসের চারজন জওয়ান নিহত হয়েছিলেন।পঁয়তাল্লিশ বছর আগে সেটাই শেষবারের মতো ভারত ও চীনের মধ্যে সংঘর্ষে সেনা সদস্যদের প্রাণহানির ঘটনা ঘটে।

এর আগে ভারতের দিকে একজন কর্নেল পদমর্যাদার কর্মকর্তা ও দুজন সেনা জওয়ান নিহত হন বলে ভারতীয় সেনাবাহিনীর এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছিল।

অন্যদিকে আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা এএফপি টুইট করেছে, বেইজিং অভিযোগ করেছে যে ভারত সীমান্ত অতিক্রম করে চীনা বাহিনীর সদস্যদের ওপর আক্রমণ চালিয়েছে।

চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের একজন মুখপাত্র ঝাও লিজিয়ানকে উদ্ধৃত করে জানানো হয়েছে, চীনের অভিযোগ সোমবার ভারত দুই দফা সীমান্ত অতিক্রম করে “চীনের সৈন্যদের উস্কানি দিয়েছে এবং তাদের ওপর হামলা চালিয়েছে, যার ফলস্বরুপ এই প্রাণঘাতী সংঘর্ষ ঘটেছে।”

ভারতীয় সেনা জানিয়েছে, গত রাতে গালওয়ান ভ্যালিতে যখন ‘ডি-এসক্যালেশন’ বা উত্তেজনা প্রশমনের প্রক্রিয়া চলছিল তখনই দুপক্ষের মধ্যে তীব্র সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে এবং তাতে দুপক্ষেই বেশ কয়েকজন হতাহত হন।

এই মুহুর্তে ঘটনাস্থলেই (গালওয়ান ভ্যালি) পারমানবিক শক্তিধর দুটি দেশের উর্ধতন সেনা কর্মকর্তারা পরিস্থিতি শান্ত করার চেষ্টায় আলোচনা চালাচ্ছেন বলেও জানানো হয়েছে।

যার অর্থ, গত রাতের সংঘর্ষের পর এখন আলোচনার মাধ্যমে একটা মিটমাটের চেষ্টা চলছে।

গত প্রায় দেড় মাস ধরেই লাদাখের ভারত ও চীনের মধ্যে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখায় (লাইন অব অ্যাকচুয়াল কন্ট্রোল বা এলএসি) দুপক্ষের মধ্যে তীব্র উত্তেজনা চলছে, দুই দেশের সেনাবাহিনীও মুখোমুখি অবস্থান নিয়েছে।

কোনও কোনও সামরিক বিশ্লেষক জানিয়েছেন, একটা পর্যায়ে চীনা সৈন্যরা এলএসি অতিক্রম করে ভারতীয় ভূখন্ডের ভেতর প্রায় চল্লিশ থেকে ষাট কিলোমিটার ঢুকে পড়েছিল – যদিও আনুষ্ঠানিক পর্যায়ে ভারত এ ব্যাপারে এখনও কোনও মন্তব্য করেনি।

ভারতের অভিযোগ, চীন দেশটির ৩৮ হাজার বর্গকিলোমিটার ভূখণ্ড দখল করে রেখেছে।গত তিন দশকে বিরোধপূর্ণ ভূখণ্ড এবং সীমান্ত সংকট নিয়ে কয়েক দফা আলোচনা হয়েছে।

মে মাসে, করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যেই উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় সিকিম সীমান্তে চীনের বাড়তি সেনা মোতায়েনকে কেন্দ্র করে দুই দেশের মধ্যে তীব্র উত্তেজনা সৃষ্টি হয়, যা পরবর্তীতে সরাসরি সংঘর্ষেও গড়ায়।

২০১৭ সালে, বিতর্কিত মালভূমিতে চীন তার সীমান্ত সড়ক বাড়ানোর চেষ্টা করলে দুই দেশের মধ্যে সংঘর্ষ হয়।

চীন এবং ভারত দুটি দেশই সামরিক শক্তিতে বিশ্বের অন্যতম বৃহত্তর, এর আগে বেশ কয়েকবারই তারা সীমান্তে মুখোমুখি সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে।

দুই দেশের মধ্যকার যে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা অর্থাৎ লাইন অব অ্যাকচুয়াল কন্ট্রোল বা এলএসি সেটিও অত্যন্ত দুর্বল।

দুই দেশের মধ্যে বেশ কয়েকটি নদী, হ্রদ এবং শৈলপ্রবাহ প্রবাহিত হয়েছে, যার মানে হচ্ছে সীমানা যেকোনো সময় বদলে যেতে পারে, যা ভবিষ্যতে আরো সংঘর্ষের উস্কানি হিসেবে কাজ করবে।

দুই পক্ষই বলছে, গত চার দশকে চীন ও ভারতের মধ্যে কোন গুলি বিনিময় হয়নি।

মঙ্গলবারও ভারতীয় বাহিনী দাবি করেছে তারা ‘কোন গুলি চালায়নি’।

ভারতের স্থানীয় সংবাদমাধ্যমে বলা হচ্ছে, ভারতীয় সৈন্যদের পিটিয়ে মারা হয়েছে। কিন্তু এ নিয়ে দেশটির সেনাবাহিনী কোন মন্তব্য করেনি।

সাম্প্রতিক সময়ে দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা বাড়ার কয়েকটি কারণ রয়েছে।

ভারত সম্প্রতি লাদাখের একেবারে প্রত্যন্ত এলাকায় একটি নতুন রাস্তা বানিয়েছে।

এবং কোন সংঘর্ষ হলে ওই রাস্তা দিয়ে দিল্লি সহজেই সীমান্ত এলাকায় সৈন্য এবং মালামাল পাঠাতে পারবে।

বিশ্লেষকেরা মনে করেন ওই এলাকার অবকাঠামো যে ভারত নতুন করে ঢেলে সাজাতে চাইছে, তার ফলেই ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেছে চীন।






Shares