মন্ত্রী নিজেই ঠিক করছেন ইউপি নির্বাচনের প্রার্থী
নাসিরনগর ডাকবাংলো ঘিরে এত ভিড় দেখা যায়নি সম্ভবত আগে কখনও। যেন মানুষের বাজার। এই মওকায় হকাররা তাদের পসরা সাজিয়ে বসেছে। দূর থেকেই চোখে পড়ে ডাকবাংলো ঘিরে এ ভিড়বাট্টা। ডাকবাংলোর পথে মানুষের দল বেঁধে আসা-যাওয়ার স্রোত। শনিবার দুপুরের চিত্র এটি। অবশ্য এই ভিড়ের কারণ আছে যথেষ্ট। এলাকার সংসদ সদস্য মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী অ্যাডভোকেট ছায়েদুল হক অবস্থান করছেন ডাকবাংলোর অভ্যন্তরে। ইউপি চেয়ারম্যান পদে দলের প্রার্থী ঠিক করতেই তিনি এসেছেন এলাকায়। প্রার্থী বাছাইয়ে দুদিন তিনি কাজ করবেন এমন কর্মসূচি জানা ছিল সবার আগে থেকেই। অবশ্য তার সরকারি সফরসূচিতে এমন কিছু উল্লেখ নেই। সরেজমিন দেখা গেছে, নাসিরনগর উপজেলার ১৩টি ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রার্থী ও তাদের সমর্থকরা এসেছেন উপজেলা সদরে। উপজেলার চা দোকান-খাবার হোটেল কোথাও জায়গা নেই। দলের অনেক মনোনয়ন প্রার্থী জানান, তারা মন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে এসেছেন। মন্ত্রী সবার সঙ্গে কথা বলে দলের মনোনয়ন চূড়ান্ত করছেন। সেখানে অবস্থান করে দেখা যায় একেকজন করে ডেকে নেয়া হচ্ছে ভেতরে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মন্ত্রীর সঙ্গে ভেতরে রয়েছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ডাক্তার রাফি উদ্দিন ও সাধারণ সম্পাদক এটিএম মনিরুজ্জামান। এককভাবে সাক্ষাৎকার শেষে এক ইউনিয়ন থেকে দলের মনোনয়ন প্রার্থী সবাইকে আবার একসঙ্গে ডাকা হয়। এ সময় বলে দেয়া হয় আমি (মন্ত্রী) যাকে সিলেকশন করবো তাকে মেনে নিতে হবে। এর বাইরে কিছু করা যাবে না। শনিবার চাতলপাড়, ভলাকুট, গোয়ালনগর, কুন্ডা, বুড়িশ্বর এসব ইউনিয়নে দলের মনোনয়ন প্রার্থীদের সাক্ষাৎকার নেন মন্ত্রী। গতকাল রোববার দুপুর পর্যন্ত নেয়া হয় ধরমন্ডল, চাপরতলা, হরিপুর, গুনিয়াউক ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে দলের মনোনয়ন প্রার্থীদের সাক্ষাৎকার। শনিবার ডাকবাংলো এলাকায় অবস্থানকালে কথা হয় বুড়িশ্বর ইউপিতে দলের মনোনয়ন প্রার্থী এ জেড ইমাম রেজা, মোজাম্মেল হক সরকার, মো. সায়েম মিয়া, মোজাম্মেল হক জুরান, গোকর্ণ ইউনিয়নের বশির আল হেলাল, অ্যাডভোকেট মো. আব্বাস আলী, চাপরতলার শেখ আবদুল আহাদের সঙ্গে। তারা বলেন, নাসিরনগরের প্রত্যেকটি ইউনিয়ন মন্ত্রীর নখদর্পণে। তিনি জানেন কাকে কোথায় দিলে ভালো হবে। প্রার্থীরা দলের জন্য নিজেদের ত্যাগ-তিতিক্ষার বিবরণও দেন। কেউ কেউ বলেন, মনোনয়ন পেলে জীবন-যৌবন সবই শেষ করবেন দলের জন্য। গোকর্ণ ইউনিয়নের বশির আল হেলাল বলেন, তার এখানে বিএনপির প্রার্থী হবেন উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবদুল হান্নান। তিনি বলেন, হান্নানের সঙ্গে লড়ার মতো অবস্থা একমাত্র আমারই আছে। মন্ত্রীর এ তৎপরতায় প্রার্থী বাছাইয়ে সাংগঠনিক নিয়মনীতি লঙ্ঘিত হওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এ বিষয়ে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আল মামুন সরকার বলেন, জেলা আওয়ামী লীগ দলের মনোনয়ন ফরম দিয়েছে। ফরমগুলো আমাদের কাছে এখনও ফেরত আসেনি। এগুলো ফেরত আসার পর নীতিমালা অনুসারে প্রতিটি ইউনিয়নভিত্তিক নির্বাচনী বোর্ডের সভা আহ্বান করা হবে। উপজেলা আওয়ামী লীগ ও সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের সমন্বয়ে এই সভা হবে। ওই সভাতেই সিদ্ধান্ত হবে কাকে আমরা মনোনয়ন দেবো। সেই সভা শেষে যে তালিকা হবে সেটাই কেন্দ্রে যাবে। অন্য কোনো তালিকা কেন্দ্রে গেলে তা বিবেচনায় আসবে না। মন্ত্রী কী করছেন না করছেন তা আমি জানি না। তবে মন্ত্রী তৃণমূল সভা করতে পারেন। শনিবার ডাকবাংলোয় অবস্থানকালে একাধিকবার মন্ত্রীর সাক্ষাৎ চেয়ে পাওয়া যায়নি। মন্ত্রীর ব্যক্তিগত সহকারী মিজানুর রহমান জানিয়ে দেন, স্যার কথা বলবেন না। গতকাল রোববার মন্ত্রীর মোবাইল নাম্বারে ফোন করে তা বন্ধ পাওয়া যায়। ব্যক্তিগত সহকারী মিজানুর রহমানের নাম্বারে ফোন করলে তিনিও ফোন রিসিভ করেননি। উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা চেয়ারম্যান এটিএম মনিরুজ্জামানের নাম্বারে ফোন করলে তিনিও তার ফোন রিসিভ করেননি। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী ৪ দিনের সফরে এলাকায় এসেছেন বৃহস্পতিবার। তার সরকারি সফরসূচিতে বলা হয়েছে, বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৯টায় নাসিরনগর উপজেলার ডাকবাংলোয় উপস্থিতি এবং রাতযাপন। শুক্রবার নাসিরনগর উপজেলার ডাকবাংলোয় অবস্থান ও রাতযাপন। শনিবার বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড পরিদর্শন ও রাতযাপন। রোববার বিকাল ৩টায় স্থানীয় নেতৃবৃন্দের সঙ্গে মতবিনিময়। সন্ধ্যা ৬টায় নাসিরনগর থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে যাত্রা।
সংবাদ :: মানবজমিন