বসুন্ধরার সুদমুক্ত ঋণ
বাঞ্ছারামপুর থেকে ফিরে: বসুন্ধরার সুদমুক্ত ঋণ পেয়ে আপ্লুত বাঞ্ছারামপুরের হতদরিদ্ররা। সেইসঙ্গে নিজেদের ভাগ্যোন্নয়নের স্বপ্ন দেখা শুরু করেছেন। “বসুন্ধরার সুদমুক্ত ঋণের এ ধারা অব্যাহত থাকলে বাঞ্ছারামপুর থেকে দারিদ্র নির্বাসনে চলে যাবে অচিরেই ।” মঙ্গলবার বসুন্ধরা ফাউন্ডেশনের ২৮তম সুদ ও সার্ভিস চার্জ মুক্ত ঋণ প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ মন্তব্য করেন বাঞ্ছারামপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অবসরপ্রাপ্ত যুগ্ম সচিব মুক্তিযোদ্ধা মো. সিরাজুল ইসলাম। তিনি বলেন, “ড. ইউনুস ক্ষুদ্রঋণের কারণে নোবেল শান্তি পুরস্কার পেয়েছেন। তিনি ঋণের সুদ আদায় করতেন ৩৩ শতাংশ। আর বসুন্ধরা কোনো সুদ বা সার্ভিস চার্জ নিচ্ছে না। এক কথায় বসুন্ধরা চেয়ারম্যানের এই দৃষ্টান্ত অনন্য ও তুলনাহীন।” এতোটা নিঃস্বার্থভাবে মানুষের জন্য কাজ করার নজির খুব কমই আছে বলে উল্লেখ করেন তিনি। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বসুন্ধরা গ্রুপের উপদেষ্টা (ট্রেজারার) ও দৈনিক কালের কণ্ঠ, বাংলাদেশ প্রতিদিন ও ডেইলি সান-এর প্রকাশক ময়নাল হোসেন চৌধুরী। তিনি বলেন, “আমরা দারিদ্র দূর করতে কাজ করে যাচ্ছি। ঋণ গ্রহীতাদের সহযোগিতা পেয়ে আমরা অভিভূত। আপনারা শতভাগ ঋণ পরিশোধ করে রেকর্ড সৃষ্টি করেছেন। আগামীতে এই ধারা অব্যাহত থাকলে নিশ্চয়ই আমরা অনেক দূর এগিয়ে যেতে সক্ষম হব।” ঋণের টাকা উন্নয়ন ছাড়া অন্য কোনো খাতে বিনিয়োগ না করার আহ্বান জানান ময়নাল হোসেন চৌধুরী। ঋণ গ্রহীতারাও শোনালেন তাদের এগিয়ে যাওয়ার কথা। ভিটি ঝগড়ারচর গ্রামের আব্দুল কাদির মিয়ার স্ত্রী সেলিনা আক্তার জানান, আজকে তিনি দ্বিতীয় দফায় ঋণ নিতে যাচ্ছেন। তিনি জানালেন, হতদরিদ্র হওয়ায় ব্যাংক তাদের ঋণ দেয় না। এনজিও ঋণের জটিল শর্ত ও সুদ তাদের কোনো উপকারে আসে না। আর দ্রুত ঋণ পাওয়াও যেতো না। সে কারণে বাধ্য হয়েই তারা দাদন ব্যবসায়ীদের কাছে যেতেন। এতে তাদের ভাগ্যের উন্নয়ন হয় নি।” দাদনের বেড়াজালে আটকে গিয়ে ভিটেমাটি বিক্রি করে অনেক পরিবার এলাকাছাড়া হয়েছে বলে জানালেন সেলিনা আক্তার। তারা জানালেন, এনজিওর কাছ থেকে ঋণ নিলে পরের সপ্তাহ থেকে সুদসহ পরিশোধ করতে হয়। কিন্তু বসুন্ধরা ফাউন্ডেশনের টাকায় তিন মাস ব্যবসা করে মুনাফা দিয়েই কিস্তি দেওয়া যায়। এতে কোনো সার্ভিস চার্জ বা সুদ দিতে হয় না। ঋণ প্রদান অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন- বাঞ্ছারামপুর সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হযরত আলী, বসুন্ধরা গ্রুপের সহকারী মহাব্যবস্থাপক মাইমুন কবির, বসুন্ধরা ফাউন্ডেশনের ইনচার্জ মোশারফ হোসেন। ২৮ তম ঋণ বিতরণ অনুষ্ঠানে ৮৫৭ সদস্যকে ৫৪ লাখ ৮৫ হাজার টাকা প্রদান করা হয়। এর মধ্যে ৪৭৯ নতুন সদস্যকে জন প্রতি ৫ হাজার টাকা, পুরানো সদস্য ২৭৬ জনের প্রত্যেককে সাড়ে ৭ হাজার ও পুরাতন ১০২ সদস্যের প্রত্যেককে নগদ ১০ হাজার টাকা করে প্রদান করা হয়। প্রসঙ্গত, দেশের অন্যতম শীর্ষ শিল্প প্রতিষ্ঠান বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান ২০০৫ সালে বসুন্ধরা ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা করেন। ফাউন্ডেশন সমাজের সুবিধাবঞ্চিতদের পশু পালন, ক্ষুদ্র ব্যবসাসহ ৩৩ খাতে সুদমুক্ত ঋণ প্রদান করে আসছে। বাঞ্ছারামপুর উপজেলার ১৩ ইউনিয়নের মধ্যে ১১ ইউনিয়নের ৭২টি গ্রামে এই কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত ৬ হাজার ৭১৭ হতদরিদ্র পরিবারকে ঋণ সহায়তা দিয়েছে। সদস্যদের মাঝে ঘূর্ণায়মান ভিত্তিতে ৪ কোটি ৩ লাখ ২২ হাজার ৫শ‘ টাকা বিতরণ করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে গোটা উপজেলায় সুদমুক্ত ঋণ বিতরণের পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানালেন ময়নাল হোসেন চৌধুরী। উল্লেখ্য ফাউন্ডেশনের এই ঋণ প্রদানের তারিখ থেকে পরবর্তী তিন মাসে কোনো কিস্তি আদায় করা হয় না। তিন মাস পর থেকে ৫০টি সমান সাপ্তাহিক কিস্তিতে তা আদায় করা হয়। ঋণ পরিশোধ সাপেক্ষে আবার ঋণ নেওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়। |