প্রাণবন্ত তালশহর রেলস্টেশন এখন নিষ্প্রাণ
মোঃ তারিকুল ইসলাম সেলিম:প্রধান মন্ত্রীর শেখ হাসিনার ঘোষনানুযায়ী যাত্রীসেবায় কয়েকটি ট্রেনের যাত্রাবিরতি দিলেই তালশহর রেল স্টেশনটি ফিরে পবে তার পূর্ণযৌবন।
ইতিহাসের রাখাল রাজা, হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালী, আধুনিক বাংলাদেশে আর্কিটেড ডিজাইনার, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের আদরের দুলালী, গণতন্ত্রের মানসকন্যা, বঙ্গবন্ধুর উন্নয়নের অসমাপ্ত স্বপ্ন বাস্তবায়নের অগ্রদূত, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উন্নয়নের রূপকল্পে রেল-কে তার পূর্ণযৌবন দিতে দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন । তাঁর ঘোষনানুযায়ী ইতিমধ্যেই সারা দেশকে রেলওয়ের নেটওর্য়াকের আওতায় আনার মহাকর্মযজ্ঞও আজ দৃশ্যমান । দেশের প্রতিটি জেলায় রেল লাইন স্থাপনের কাজ চলছে । যাত্রীসেবা নিশ্চিত করতে ট্রেনের সংখ্যাও বৃদ্ধি করা হচ্ছে । ইতিমধ্যে বেশ কয়েকটি নতুন আর্ন্তঃনগর ট্রেনের শুভ উদ্ভোধন করেছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা । প্রতিটি স্টেশন থেকে ট্রেনে যাত্রীসেবা নিশ্চিত করতে নির্ঘুম কাজ করে যাচ্ছেন রেলমন্ত্রী মুজিবুল হকের রেল বিভাগ। প্রশ্ন হলো এক সময়ের গুরুত্বপূর্ণ রেল স্টেশনগুলোকে পরিত্যক্ত রেখে নতুন নতুন রেলপথ স্থাপন করে লাভ কি ? বিশাল একটি জনগোষ্ঠী রেলস্টেশন থেকেও যাত্রীসেবা থেকে বঞ্চিত হয়ে আছে অথচ এদিকে কতৃপক্ষের কোন নজর পড়ছে না।
তালশহর রেলস্টেশন পূর্ববাংলা রেলওয়ের অতিগুরুত্বপূর্ণ রেলস্টেশন হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেছিল আসাম বেঙ্গল রেলওয়ে কোম্পানী (এবিআর) । শুরুতে অনেক জমজমাট ছিল এই রেলস্টেশনটি । রেলস্টেশনকে কেন্দ্র করে বহু লোকের চায়ের দোকান থেকে শুরু করে নতুন নতুন দোকানপাট ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠে । প্রতিদিন ভোর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত শতশত যাত্রীর কলরব আওয়াজে অনেক জমাট হয়ে উঠতো । প্রতিদিন আট থেকে দশটি ট্রেনের স্ট্রোপিজ (যাত্রাবিরতি) ছিল শুধু যাত্রী পরিবহনের জন্য আর ৪ থেকে ৫ টি কন্টিনার (মালবাহী) ট্রেন ছিল পূণ্য পরিবহনে জন্য । বর্তমানে আন্তঃনগর ট্রেন তো দূরের কথা, লোকাল কোন ট্রেনেরও যাত্রাবিরতি নেই ফলে যাত্রীদের সরব উপস্থিতি আর আগের মতো এখন চোখে পড়ে না । তালশহর রেলস্টেশনটি বর্তমানে যে অবস্থায় আছে যা পরিত্যক্ত পর্যায়।
১৯১০ সালে আখাউড়া থেকে আশুগঞ্জ পর্যন্ত রেললাইন স্থাপন করা হয়। সামনে মেঘনা নদীর উপস্থিতি থাকায় এবং প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি না থাকায় অপর পাড় ভৈরব বাজারের সাথে আশুগঞ্জের রেলপথ যোগাযোগ স্থাপন করা সম্ভব হয়নি। তখন আশুগঞ্জকে একটি ফ্ল্যাগ স্টেশন করে তালশহর স্টেশন থেকে সব কন্ট্রোল করা চিন্তা স্থির করে আসাম বেঙ্গল রেলওয়ে কোম্পানী (এবিআর)। ফলে তালশহর স্টেশনকেই সর্বাদিক গুরুত্ব দিয়ে প্রতিষ্ঠিত হয় তালশহর রেলস্টেশন। প্রথমে ৮টি লাইন বসানো হয়, পরে আরও সম্প্রচারিত করা পরিকল্পনা রাখা হয়। পূর্বাঞ্চলীয় কোন জংশনের পর তালশহর রেলস্টেশনটি ছিল সবচেয়ে ব্যস্ত।মেঘনা নদী থাকায় অপর পাড় ভৈরব বাজারের সাথে ওয়াগন ফেরির মধ্যেমে যোগাযোগ হত । চট্রগ্রাম সিলেট এমনকি আসাম থেকে ছেড়ে আসা সব ট্রেন এখানে ইঞ্জিন ঘুরিয়ে আবার চট্রগ্রাম, সিলেট ও আসামের উদ্দেশে ছেড়ে যেত । অনেক ট্রেন এখানে রেখে দেওয়া ছিল নিত্যদিনের চিত্র । ১৯৩৭ সালে রাজা ৬ষ্ঠ জর্জ সেতু নির্মিত হলে আশুগঞ্জের সাথে ভৈরব বাজারের রেল সংযোগ স্থাপিত হয় ফলে এই সেতু ঢাকাসহ পশ্চিম অঞ্চলের সাথে পূর্বাঞ্চলীয় অর্থাৎ চট্রগ্রাম, সিলেট ও আসামের সাথে সরাসরি রেল যোগাযোগ শুরু হয় ।
এরপর থেকে তালশহর রেল স্টেশনের গুরুত্ব হারাতে থাকে । যাত্রী ও মালামাল পরিবহণের জন্য ট্রেনের দিনেরদিন কমে যায় । এখন চট্রলা, তিতাস, সুরমা, নাসিরাবাদ, ডেমু এই ট্রেনগুলোর আপ-ডাউন যাত্রাবিরতি দেওয়া হলে একদিকে যেমন এ অঞ্চলের মানুষের দীর্ঘদিনে যাতায়তের কষ্ট দূরদর্শা থেকে পরিতান পাবে । অন্যদিকে তালশহর রেলস্টেশনটি ফিরে পাবে তার পূর্ণযৌবন । নিষ্প্রাণ স্টেশনটি আবার প্রাণবন্তর হয়ে উঠবে।