উদ্ধার ৪০ কোটির কোকেন
ডেস্ক ২৪:: হেরোইন, সোনার বিস্কুটের পরে এ বার কোকেন!
দেশের বৃহত্তম স্থলবন্দর পেট্রাপোল সীমান্ত দিয়ে কোকেন পাচারের প্রমাণ পেল বিএসএফ। বুধবার সন্ধ্যায় বাংলাদেশের বেনাপোল সীমান্ত থেকে পেট্রাপোল সীমান্ত ঢোকা একটি ভারতীয় ট্রাক থেকে বিএসএফ ওই কোকেন আটক করেছে। গ্রেফতার করা হয়েছে ট্রাকের চালক সুমন শীলকে। তার বাড়ি বনগাঁর সীমান্তবর্তী গ্রাম জয়পুরে।
বিএসএফ জানিয়েছে, ট্রাকের মধ্যে বাক্সে থাকা একটি প্যাকেটের মধ্যে ছিল কোকেন। মোট দশ কেজি কোকেন আটক করা হয়েছে। আন্তজার্তিক বাজারে যার দাম প্রায় ৪০ কোটি টাকা!
পেট্রাপোল সীমান্ত দিয়ে কোকেন পাচারের ঘটনা প্রকাশ্যে আসতেই নড়েচড়ে বসেছেন বিএসএফের কর্তারা। বিষয়টি নিয়ে তাঁরা উদ্বিগ্নও।
বিএসএফ সূত্রে জানা গিয়েছে, বুধবার বিকেল ৫টা নাগাদ নির্দিষ্ট একটি সূত্রে বিএসএফের ৪০ নম্বর ব্যাটেলিয়নের কর্তাদের কাছে খবর আসে, ট্রাকে করে পেট্রাপোল সীমান্ত দিয়ে মাদক পাচার হতে চলেছে। সন্ধে ৬টা নাগাদ বিএসএফের পক্ষ থেকে একটি বিশেষ দল তৈরি হয়। জওয়ানেরা বেনাপোল সীমান্ত পেরিয়ে যে সব খালি ট্রাক পেট্রাপোল সীমান্তে ঢুকছিল, তাতে তল্লাশি শুরু করেন। তখনই উদ্ধার হয় কিছু সাদা পাউডার। তা যে মাদক, মোটামুটি নিশ্চিত ছিলেন অভিজ্ঞ জওয়ানেরা। কিন্তু মাদক ঠিক কী গোত্রের, তা জানতে কলকাতার নারকোটিক্স কন্ট্রোল ব্যুরোর (এনসিবি) সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। বিএসএফ জানিয়েছে, এনসিবি ওই পাউডার পরীক্ষা করে জানিয়েছে, সেটি কোকেন। বিএসএফের দাবি, কোকেন উদ্ধারে দক্ষিণবঙ্গে এটাই তাদের সব থেকে বড় সাফল্য। ধৃত ব্যক্তি এবং আটক করা কোকেন, ট্রাক এনসিবি’র হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে।
বিএসএফের একটি সূত্র জানাচ্ছে, সম্প্রতি বিএসএফের সাউথ বেঙ্গল ফ্রন্ট্রিয়ারের ইন্সপেক্টর জেনারেল সন্দীপ সালুঙ্কে সীমান্তে পাচার ও বিভিন্ন ধরনের দেশবিরোধী কার্যকলাপ বন্ধ করতে নির্দেশিকা জারি করেছেন। তারপরেই সীমান্তে পাচার বন্ধ করতে বিএসএফের পক্ষ থেকে আর কড়া পদক্ষেপ করা হচ্ছে। সেই সূত্রেই এ ধরনের বড়সড় সাফল্য মিলল।
বন্দর সূত্রে জানা গিয়েছে, ধৃত সুমন ট্রাক মালিক নয়। সে অন্যের ট্রাক চালায়। কোথা থেকে ওই কোকেন সে পেয়েছিল বা এ দেশে কাকে কোকেন দেওয়ার কথা ছিল, বিএসএফ ও এনসিবি কর্তারা তা খতিয়ে দেখছেন। বেশ কিছু নাম তাঁরা পেয়েছেন। তাদেরও খোঁজ শুরু হয়েছে।
এ দেশ থেকে বাংলাদেশের বেনাপোল বন্দরে পণ্য নিয়ে যাওয়া ভারতীয় ট্রাক ফিরে আসে পেট্রাপোলে। অতীতে দেখা গিয়েছে, ওই সব ফিরে আসা খালি ট্রাকের মধ্যে করে গাঁজা, হেরোইন, সিডি, সোনার বিস্কুট পাচার হচ্ছে। কয়েকজন ট্রাক চালক ও খালাসিকে এর আগে গ্রেফতারও করা হয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে, সোনার বিস্কুটের রমরমা বেড়েছে ওই সীমান্ত এলাকা দিয়ে। পণ্য নামিয়ে খালি ট্রাক এ দেশে ফিরে আসার সময়ে তল্লাশির কোনও ব্যবস্থা নেই পেট্রাপোল বন্দরে। চালক ও খালাসিদের একাংশ তারই সুযোগ নিচ্ছে দীর্ঘদিন ধরে। বিএসএফ বা শুল্ক দফতরের আধিকারিকেরা নির্দিষ্ট সূত্রে খবর পেলে তবেই তল্লাশি চলে।
বন্দর সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রতি দিন দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পণ্যবাহী হাজার হাজার ট্রাক পেট্রাপোল বন্দরে আসে। কিন্তু পাচারের অভিযোগ বারবারই উঠছে স্থানীয় ট্রাক চালক বা খালাসিদের বিরুদ্ধে। ভিন রাজ্যের ট্রাক বা চালকদের বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযোগ প্রায় নেই বললেই চলে। তা ছাড়া, স্থানীয় কিছু ট্রাকের চালক ও খালাসি আবার বাংলাদেশি। তাদেরও কেউ কেউ পাচারে যুক্ত হয়ে পড়ছে।
পেট্রাপোল ক্লিয়ারিং এজেন্ট স্টাফ ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক কার্তিক চক্রবর্তী বলেন, ‘‘বাংলাদেশের অনেকেই এ দেশে ট্রাক চালাচ্ছে বা খালাসির কাজ করছে। যা খুবই উদ্বেগের বিষয়। বন্দরের নিরাপত্তার দিক থেকেও বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ। গোটা বিষয়টি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রককে জানানো হয়েছে।’’ বন্দরের ব্যবসায়ীদের একাংশ জানালেন, ট্রাক মালিকেরা চালক বা খালাসি হিসাবে যাঁকে কাজ দিচ্ছেন, তাঁর সম্পর্কে বিশদে খোঁজ রাখেন না। এ বিষয়ে সচেতন হওয়া উচিত।