Main Menu

যে কারণে বাবা-মাকে খুন করল ঐশী

+100%-

ডেস্ক ২৪:মেয়ে ঐশীর উচ্ছৃঙ্খল জীবন-যাপনে বাধা দেয়ায় নৃশংস হত্যাকাণ্ডের শিকার হতে হয় এসবির (স্পেশাল ব্রাঞ্চ) পরিদর্শক মাহফুজুর রহমান ও তার স্ত্রী সপ্না রহমানকে। নিহত দম্পতির বাসার কাজের মেয়ে সুমীকে (১৫) আটকের পর এমন তথ্যই জানতে পেরেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ।

সুমী পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছে, নিহত দম্পতির মেয়ে অক্সফোর্ড ইউনির্ভরসিটির ছাত্রী ঐশী উচ্ছৃঙ্খল জবীন-যাপন পছন্দ করতেন। বন্ধুদের সাথে আড্ডা, ইচ্ছেমতো বাসা থেকে বেড়োনো ও রাতে দেরি করে বাসায় ফেরা ইত্যাদি পছন্দ করতেন ঐশী। তার চলাফেরায় ছিল প্রচুর খামখেয়ালিপনা। আর এ আচরণগুলো পছন্দ করতেন না ঐশীর বাবা-মা। এ কারণেই আক্রোশের বশবর্তী হয়ে পরিকল্পনা করে খুন করে জন্মদাতা পিতা-মাতাকে।
সুমী পুলিশকে জানায়, হত্যাকাণ্ডের কিছুদিন আগে ঐশী রাতে দেরি করে (১২টার পর) বাসায় ফেরে। পরে বাবা-মা মাহফুজুর এ নিয়ে ঐশীকে বকা দেয় এবং মারধরও করে। এ কারণে ঐশী বাবা-মার প্রতি প্রচুর ক্ষিপ্ত হয় এবং হত্যার পরিকল্পনা করে। এরই সূত্র ধরে ঘটনার দিন (১৪ আগস্ট বুধবার) সন্ধ্যায় ঐশী কফির সাথে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন ওষুধ মিশিয়ে তার মাকে খাওয়ায়। কফি খেয়ে তার মা ঘুমিয়ে পরে। রাত ১১টার কিছু পরে ঐশীর বাবা বাসায় আসে এবং ঐশীর মাকে ডেকে তুলে। ঐশীর মা ওঠে এবং আবারো ঘুমিয়ে পরে। এরপর ঐশীর বাবা রাতের খাবার সেরে ঘুমাতে যায়। এর মাঝেই ঐশী তার মাকে খাওয়ানো কফিতে আরো কিছু ওষুধ মিশিয়ে গরম করে তার বাবাকে খেতে দেয়।

কফি খাওয়ার পরে বাবাও অচেতন হয়ে পরলে ঐশী তার ছোট ভাই ওহিকে বাসার এক বাথরুমে ঢুকিয়ে বাহির থেকে দরজা বন্ধ করে দেয়। এরপরই ঐশী অচেতন অবস্থায় তার বাবা-মার গলাসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে বাসায় থাকা ছুরি ও বটি দিয়ে উপুর্যপুরি কুপিয়ে হত্যা করে। বাবাকে ২টি কোপ দিলেও মাকে অনেক বেশি কোপায়। কারণ মার প্রতি ঐশীর অনেক রাগ ছিল। পরে বাবার লাশ সুমীর সহযোগিতায় ঐশীর বাথরুমে টেনে নিয়ে যায়। মা মোটা ছিল বলে শরীর ভারি থাকায় তার লাশটি টেনে বাথরুম পর্যন্ত নিতে পারেনি। রুম থেকে বাথরুমের মাঝামাঝি স্থানে ফেলে রাখে। পরে একটি কাপড় দিয়ে মেঝেতে পরে থাকা রক্ত মোছার চেষ্টা করে ঐশী ও সুমী।

বাবা-মা দু’জনকেই হত্যার পর ছোট ভাই ওহিকে বাথরুম থেকে বের করে আনে ঐশী। মেঝেতে রক্ত দেখে ওহি ঘাবড়ে গিয়ে বড় বোন ঐশীকে রক্তের বিষয়ে জিজ্ঞেস করে। জবাবে ঐশী ওহিকে বলে বাবা-মাকে কারা যেন চাকু মেরেছে তাই হাসপাতালে নেয়া হয়েছে। চল আমরা মামার বাসায় যাই।

সুমী পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে আরো জানায়, ঘটনার পরদিন বৃহস্পতিবার সকালে বাসা থেকে ২টি ব্যাগে কিছু স্বর্ণ ও টাকা নিয়ে ওহি এবং তাকে নিয়ে বের হয়। পরে একটি সিএনজি ভাড়া করে সারাদিন কোথাও আশ্রয় খুঁজে। কিন্তু এক পর্যায়ে ছোট ভাইকে কাকরাইল থেকে অপর একটি সিএনজিযোগে বাসায় পাঠিয়ে দেয়। এরপর তারা দু’জনেই সিএনজিতে করে উত্তরা, বনানী ও বাসাবোসহ বিভিন্নস্থানে ঘোরাফেরা করে। দিন শেষে রাত হলে সিএনজি চালককে ১৫ হাজার টাকা ভাড়া প্রদান করে সুমীকে চালকের বাসায় রাখার জন্য অনুরোধ করেন ঐশী। সিএনজি চালাকও তার কথামতো সুমীকে বাসায় রাখতে রাজি হন। পরে ঐশী চলে যান তার এক বান্ধবীর বাসায়।

এর আগে রাত সোয় ৮টার দিকে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে গোয়েন্দা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার নিহত এসবির পরিদর্শক মাহফুজুর ও তার স্ত্রী সপ্না হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে তাদের মেয়ে ঐশীর সম্পৃক্ততার প্রমাণ পাওয়ার খবর জানান।

মনিরুল ইসলাম জানান, ঐশী পুলিশের কাছে স্বীকার করেছে হত্যার আগে সে বাবা মাহফুজুর রহমান ও মা স্বপ্না রহমানকে চেতনানাশক ওষুধ খাওয়ায়। তারা চেতনা হারিয়ে ফেললে তাদেরকে হত্যা করা হয়।

তিনি আরো জানান, নিহত দম্পতির বাসার গৃহকর্মী সুমীকে এক সিএনজি চালকের বাসা থেকে আটক করা হয়েছে। হত্যার সঙ্গে জড়িত থাকার বিষয়ে তার সম্পৃক্ততাও পাওয়া গেছে। তবে হত্যার সঙ্গে আরো কারা জড়িত আছে জানতে চাইলে ঐশী ও তার বন্ধু রনি ওরফে জনিকে আরো জিজ্ঞাসাবাদ করতে হবে বলে জানান তিনি।

তিনি জানান, স্বল্প সময়ের মধ্যে পাওয়া তথ্য অনুসারে ঐশীই তার বাবা-মাকে হত্যা করেছে বলে প্রমাণ পেয়েছেন তারা।

প্রসঙ্গত, শুক্রবার সন্ধ্যার দিকে চামেলীবাগের ২নম্বরস্থ চ্যামেলি ম্যানশনের ৫-২ নম্বর ফ্ল্যাটবাসা থেকে এসবির ইন্সপেক্টর মাহফুজুর রহমান এবং তার স্ত্রী সপ্নার মৃতদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। ঘটনার পর থেকেই পলাতক ছিলেন নিহতের মেয়ে ঐশী ও বাসার কাজের মেয়ে সুমী।

পরে শনিবার দুপুরে পল্টন থানায় আত্মসমর্পণের পর তাকে গোয়েন্দা পুলিশে সোপর্দ করা হয়। পরে তাকে তল্লাশি করে বাসা থেকে নেয়া স্বর্ণ ও টাকা উদ্ধার করে পুলিশ। এরপর ঐশীকে নিয়ে সন্ধ্যায় রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে ৫ জনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়। এ সময় বাসার গৃহকর্মী সুমী, ঐশীর বান্ধবী তৃষা ও তার ছেলে বন্ধু রনি ওরফে জনিকে আটক করে গোয়েন্দা পুলিশ।

পরিদর্শক মাহফুজুর রহমান ১৯৮৮ সালে সাব-ইন্সপেক্টর হিসাবে পুলিশের ঢাকা রেঞ্জে যোগদান করেন। ৩ বছর আগে এসবির (স্পেশাল ব্রাঞ্চ) রাজনৈতিক শাখায় পোষ্টিং হয় তার। তার বাবার নাম মতিন মাস্টার। দুই ভাই ও তিন বোনের মধ্যে সবার বড় তিনি।

নিহতের মেয়ে ঐশী অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে ও লেভেলে অধ্যয়নরত। আর ছেলে ওহি রাজারবাগ পুলিশ লাইন্স স্কুল এ্যান্ড কলেজের ২য় শ্রেণীর ছাত্র।