সংখ্যালঘুদের রক্ষা করুন
বাংলাদেশ রাষ্ট্রের নৈতিক ও ঐতিহাসিক দায়বদ্ধতা যুদ্ধাপরাধীদের বিচার । এ দায়বদ্ধতা থেকে সরে যাওয়ার বিন্দুমাত্র সুযোগ নেই। কিন্তু বিচারের বিরুদ্ধে জামায়াত-শিবিরদেশজুড়ে তাণ্ডব ও নাশকতা চালিয়ে যাচ্ছে। প্রবল উন্মত্ততায় তারা থানা, পুলিশ ফাঁড়ি, রেলস্টেশন, রফতানি মালবাহী ট্রাক, ট্রেনসহ যাত্রীবাহী যানবাহন, ব্যবসাকেন্দ্র, বাণিজ্যমেলা, স্টেডিয়াম, সাধারণের বসতবাড়ি, উপাসনালয়থ সবখানে হামলা, ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ চালিয়েছে। বলাই বাহুল্য, ভয়ঙ্কর এ তাণ্ডবে সাধারণ মানুষ উদ্বিগ্ন ও আতঙ্কিত। যে কোনো বিবেকবান মানুষই প্রশ্ন করবেন, এ ধরনের তাণ্ডব চালিয়ে কী প্রমাণ করতে চায় বাংলাদেশ রাষ্ট্রের জন্মের বিরোধিতাকারী দলটি? কী সংকেত দিতে চায় তারা জাতিকে? প্রশ্ন আরও উঠছে- মুক্তিযুদ্ধে পরাজিত পাকিস্তান বাহিনীর এই দোসররা কি তাদের পরাজয়ের শোধ নিতে চায়? ৪২ বছর পর? লাগাতার এবং পরিকল্পিত নৈরাজ্য চালিয়ে তারা কি সরাসরি বাংলাদেশ রাষ্ট্রকেই আঘাত করে বসছে না? শান্তিকামী মানুষের আতঙ্কের আরও একটি বড় কারণ দেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর এই অপশক্তির নগ্ন আক্রমণ। দেশের নানা জায়গায় সংঘটিত এসব আক্রমণে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষ আতঙ্কে দিনযাপন করছে। নতুন করে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে তারা। আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ আদালত থেকে জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মৃত্যুদণ্ডের রায় ঘোষিত হওয়ার পর থেকে নানা জায়গায়, বিশেষত হিন্দু সম্প্রদায়কে টার্গেট করা হয়েছে। তাদের ঘরবাড়ি, মন্দির, প্রতিমা ভাংচুর করা হয়েছে। বসতবাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে। অসহায় মানুষ উদ্বাস্তু ও সহায়-সম্বলহীন মানবেতর জীবনযাপন করছে। এসব হামলায় নোয়াখালীর বেগমগঞ্জের আলাদীনগর ও টঙ্গীরপাড়াসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষ অসহায় হয়েছেন। আশ্রয়হীন হয়েছেন চট্টগ্রামের বাঁশখালীর শীলপাড়ায় অগ্নিদগ্ধ বসতবাড়ির মানুষ। হামলা চলেছে সাতক্ষীরাসহ আরও কিছু জায়গায়। বলার অপেক্ষা রাখে না, ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর এই নগ্ন হামলা পরিকল্পিত, দূরভিসন্ধিমূলক এবং নগ্ন সাম্প্রদায়িক। হরতাল বা প্রতিবাদ নিঃসন্দেহে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড। সরকারের বিরোধিতা যে কোনো গণতান্ত্রিক রাজনীতির অংশ। কিন্তু বাংলাদেশ রাষ্ট্রের প্রতি আনুগত্যশীল কোনো নাগরিক বা রাজনৈতিক দল এভাবে সহিংসতা চালাতে পারে কিনা- সেটিও ভেবে দেখার বিষয়। হরতাল বা প্রতিবাদের নামে স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি যা করছে, তা অবশ্যই রাষ্ট্র বিরোধিতা। তারা রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠান পুলিশের ওপর নির্বিচার আক্রমণ করছে। পবিত্র ধর্মকে নিয়ে মিথ্যাচার করছে। থানা ও পুলিশ ফাঁড়ি, রেলস্টেশনে হামলা ও ভাংচুর করেছে। ট্রেনে আগুন দিচ্ছে। মহাসড়কগুলো বন্ধ করছে এবং ঠিক একাত্তরের কায়দায় ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা চালাচ্ছে। প্রতিবাদ স্বাভাবিক গণতান্ত্রিক আচরণ। কিন্তু প্রতিবাদের ভাষা সহিংস হলে তা কেবলই নৈরাজ্যের জন্ম দেয়। সম্প্রতি যেসব প্রাণহানি ঘটেছে, নিঃসন্দেহে তা অনাকাক্সিক্ষত এবং দুঃখজনক। কিন্তু এটিও স্ব্বীকার করতে হবে যে, মানবতাবিরোধী অপরাধে দণ্ডিত একাত্তরের অমানুষদের সমর্থনে যারা সর্বাংশে জঙ্গি বা সহিংস পন্থায় মানবতাকে দলিত করছে, পুলিশের প্রতি আক্রমণ করছে, যানবাহন ও সরকারি-বেসরকারি স্থাপনায় একের পর এক আঘাত হানছে, আগুন জ্বালাচ্ছে, ধর্মীয় সংখ্যালঘুসহ সাধারণ নাগরিকের নিরাপত্তা বিপন্ন করছে, তাদের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা যে কোনো রাষ্ট্র্রকেই নিতে হবে। |