Main Menu

হায়রে মানবতা! প্রসঙ্গ ধর্ষণ

+100%-


ডেস্ক টোয়েন্টি ফোর : জগতের অন্যান্য প্রাণীর সাথে মানুষের পার্থক্যের কারণ- মানুষ বিবেক ও বুদ্ধির অধিকারী। কিন্তু মানুষ যখন বিবেক বুদ্ধিহীন হয়ে পড়ে, তখন তাদের পশুর সাথে তুলনা করা হয়ে থাকে। বর্তমান সমাজে কিছু সংখ্যক মানুষধারী নরপশুদের দ্বারা ধষর্ণের শিকার হচ্ছে অসংখ্য নারী ও শিশু। ধর্ষণ আমাদের দেশের সামাজিক ব্যাধি হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই সমাজের এই সমস্যা থেকে আমাদের মুক্তি পাওয়া খুব জরুরি হয়ে পড়েছে। ধষর্ণের খবর জাতীয় পত্রিকায় প্রতিদিন প্রকাশিত হচ্ছে। ধর্ষণ নিয়ে বাংলাদেশের বিভিন্ন পত্রিকায় ধর্ষণের উপর প্রকাশিত প্রতিবেদনে দেখা গেছে, গত(২০১২) বছর ধর্ষিত হয়েছে ২৩৯ জন নারী ও ৩৮৪ জন শিশু। আর নতুন বছরের (২০১৩) শুরু থেকে আজ পর্যন্ত সিরিয়াল ধর্ষণের ঘটনা ঘটছে। এ বছর কি মনে হতে পারে না, গত বছরের তুলনায় চলতি বছরে ধর্ষণের পরিমাপ দ্বিগুণে গিয়ে দাড়াবে? এমন কোনো দিন নেই যে, ধর্ষণের খবর জাতীয় দৈনিকগুলোতে পাওয়া যাচ্ছে না। নরপশুদের হাত থেকে রেহাই পায় না ৩ বছরের শিশু কন্যাও! এ অপরাধের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ, আন্দোলন ও বিচারের দাবিতে যে যার জায়গা থেকে নানা কর্মসূচি পালন করছে পেশাজীবী সচেতন শ্রেণী, নারী সংগঠন ও মানবাধিকার সংগঠন । মিডিয়া প্রতিনিয়ত এই অপরাধের বিরুদ্ধে সোচ্চার ভূমিকা পালন করছে।

কিন্তু তারপরেও আমাদের দেশের সরকারের পর্যাপ্ত কার্যকর পদক্ষেপ দেখা যাচ্ছে না। বিভিন্ন কারণে আমাদের দেশের রাজনৈতিক দলগুলো হরতাল, মানববন্ধনের মত কর্মসূচি পালন করে থাকেন। কিন্তু এই যে প্রতিদিন অসংখ্য নারী ও শিশু ধর্ষিত হচ্ছে এ বিষয়ে আমাদের দেশের রাজনৈতিক দলগুলো খুব মাথা ঘামান না। কিছুদিন আগে ঢাকার অদূরে মানিকগঞ্জে চলন্ত বাসে ড্রাইভার ও হেলপার দ্বারা গার্মেন্টস কর্মী ধর্ষণের ঘটনা অনেকেই জানেন। ড্রাইভার ও হেলপার গ্রেফতারও হয়েছে। কিন্তু ক্ষমতাসীনদের দাপটে হয়তো দু’দিন পড়েই জেল থেকে ছাড়া পেয়ে যাবে। তখন ধর্ষিতার খবর কেউ রাখবে না? ধর্ষকও নির্বিচারে ঘুরে বেড়াবে। সরকারের কাছে আমার অনুরোধ ধর্ষককারীদের এমন শাস্তি হওয়া উচিত, যে শাস্তি দেখে কোনো নরপশু আর ধর্ষণ করতে সাহস না পায়। প্রসঙ্গত, ভারতের দিল্লির চলন্ত বাসে মেডিকেল ছাত্রীর ধর্ষণের ঘটনা কারো অজানা নয়। যে ঘটনা সারাদেশে তোলপাড় সৃষ্টি করেছিল। কংগ্রেস নেত্রী সোনিয়া গান্ধী সেই ধর্ষণের ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে নিজের জন্মদিনও পালন করে নাই। প্রতিবাদে ছিলেন স্তব্ধ।

একজন মেয়েকে কারো ভালো লাগলো তাই সে মেয়েটিকে জোর করে ধর্ষণ করে দিলো। এ ধর্ষণের অপরাধী কে জানেন? আপনি নিজেই! তথাকথিত সুশীল সমাজের মতে, আপনি মেয়ে মানুষ। আপনি কেন নিজেকে বাঁচিয়ে চলতে পারলেন না? আপনি কেন সারা শরীর আলকাত্রা দিয়ে ঢেকে চললেন না। কেন আপনি খোলা চুলে শাড়ির আঁচল উড়িয়ে রাস্তাঘাটে চলাফেরা করলেন? তাই আপনাকে ধর্ষণ করা পুরুষের জন্মগত অধিকার। আমার প্রশ্ন- ধর্ষণ করা যদি পুরুষের জন্মগত অধিকার হয়, তাহলে ব্যাংক ডাকাতি করা তো ডাকাতদের জন্মগত অধিকার! ধরুন একটি কাচের দেয়ালের তৈরি একটি ব্যাংক। ব্যাংকের প্রতিটি দেয়াল স্বচ্ছ। রাস্তা থেকে দাঁড়িয়ে লকারের সব টাকা দেখা যাচ্ছে। তেমন একটা নিরাপত্তাও নাই। কি করবেন তখন? কি আর করবেন-নগদে সেই ব্যাংক লুট করবেন।  এটা তো আপনার জন্মগত অধিকার! দোষ তো আপনার না! দোষ হচ্ছে সেই ব্যাংক মালিকের, যে কিনা ব্যাংকটাকে আলকাত্রা দিয়ে না ঢেকে উলঙ্গ করে রেখেছিলো। সুতরাং আসল অপরাধী হচ্ছে ঐ ব্যাংক মালিক। আপনি হচ্ছেন সম্পূর্ন নির্দোষ। তাই না?

যদি কেউ উলঙ্গ থাকে সেটা তাকে ধর্ষিত হবার জন্য প্রলুদ্ধ করে, তাহলে রাস্তাঘাটে যে এতো পাগল/পাগলী ন্যাংটা হয়ে চলাফেরা করে তাদের কেউ গণধর্ষণ করে না কেন? তখন তো দেখি উল্টা ঘটনা ঘটে। যারা পাগলদের উলঙ্গ দেখে, তারাই লজ্জা পেয়ে মাথা নামিয়ে চলে যায়। কিন্তু কেন?
পুরুষেরা খুব সহজেই ভুলে যায় যে, তাদের জন্ম হয়েছে কোন না কোন নারীর গর্ভ থেকেই। তাঁরা বিয়েও করবো কোন না কোন নারীকে। বোন হিসেবেও কিন্তু পাবে সেই নারীকেই। আমাদের সন্তান হলেও সেখানে ৫০% সম্ভাবনা আছে কন্যা সন্তানের পিতা হবার। সুতরাং আমরা নারীদেরকে কেন তাদের প্রাপ্য সন্মান দিবো না। আমাদের নিজের মা-বোন-কন্যাকে কেউ যদি ধর্ষণ/ইভিটিজিং করে আমাদের কি রকম লাগবে? হ্যাঁ হতেই পারে, আপনার সামনের মানুষটি একজন চরিত্রহীন/চরিত্রহীনা। তাই বলে আপনি চরিত্রহীন কেন হবেন? ‘উত্তম নিশ্চিন্তে চলে অধমের সাথে’। এটা শুধুমাত্র কোনো দেশ নেয়,বরং সমগ্র বিশ্বের জন্য প্রযোজ্য। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের হৈমন্তী নামক ছোটগল্পে অপু তার স্ত্রী হৈমন্তীকে উদ্দেশ্য করে বলেছিল, সে আমার সম্পত্তি নয়, সে আমার সম্পদ। অপু তাঁর স্ত্রীকে সম্পদের সাথে তুলনা করেছেন, তাহলে আমরা কেন মাতৃজাতির পরিচর্যা করতে পারবো না?

যারা কঠোর আইনের দোহাই দিয়ে পার পেতে চান। তাদের জন্য জেনে রাখা ভালো- �আইনের হাত বিশাল লম্বা হলেও, আইনের পা কিন্তু ব্যাপক ছোট�। তাই আইন কখনো সময়মত অপরাধস্থলে পৌছতে পারে না। সবচেয়ে বড় আদালত হচ্ছে, মানুষের বিবেক। সুতরাং নিজের বিবককে জাগ্রত করুন। লেখার শেষ প্রান্তে এসে উপমহাদেশের প্রয়াত গায়ক ভূপেন হাজারিকার সেই বিখ্যাত গানটি বলতে হচ্ছে, মানুষ মানুষের জন্যে, জীবন জীবনের জন্যে, একটু সহানুভূতি কি মানুষ পেতে পারে না, ও বন্ধু? …………….

…………

……..

…./ মানুষ যদি সে না হয় মানুষ, দানব কখনো হয় না মানুষ, যদি দানব কখনো বা হয় মানুষ, লজ্জা কি তুমি পাবে না?  মাতৃজাতির প্রতি সকলের শ্রদ্ধাবোধ জাগ্রত হোক।






Shares