Main Menu

সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর ফাঁসির রায়

+100%-
বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধকালের মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় বিএনপি নেতা ও সংসদ সদস্য সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে ফাঁসির রায় দিয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত।
স্টাফ রিপোর্টার: যুদ্ধাপরাধ মামলায় বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর বিরুদ্ধে আনা হত্যা ও গণহত্যার অভিযোগ প্রমাণ হওয়ায় তাকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড দেয়ার রায় দিয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। দুপুরের পর ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান এটিএম ফজলে কবির এ রায় ঘোষণা করেন। বিএনপির এ নেতার বিরুদ্ধে আনান ২৩টি অভিযোগের মধ্যে হত্যা ও গণহত্যাসহ ৯টি অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে। আটটি অভিযোগ প্রমাণ হয়নি। বাকি ছয়টি অভিযোগের বিষয়ে সাক্ষী হাজির করতে না পারায় এ বিষয়ে কোন মন্তব্য করেনি ট্রাইব্যুনাল। এর আগে সকাল ১০টায় একটি প্রিজন ভ্যানে করে তাকে ট্রাইব্যুনালে নেয়া হয়। এটিএম ফজলে কবীর নেতৃত্বাধীন ট্রাইব্যুনাল-১ এ অন্য দুই সদস্য হলেন-বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন এবং বিচারপতি আনোয়ারুল হক। এই রায়কে ঘিরে ট্রাইব্যুনাল এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করা হয়। সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর রায়ের মধ্য দিয়ে প্রধান বিরোধী দল বিএনপি’র কোন নেতার বিরুদ্ধে রায় দিয়েছে ট্রাইব্যুনাল। মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে প্রায় ২ বছর ৯ মাস ধরে কারাগারে বন্দি আছেন অভিযুক্ত সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী।
২০১০ সালের ২৬শে জুন বিএনপি-জামায়াত সহ জোটের সমমনাদের ডাকা হরতালের আগের রাতে মগবাজারে গাড়ি ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় রমনা থানায় একটি মামলা হয়। এই মামলায় দলের অন্যান্য নেতাকর্মীর সঙ্গে এজাহারভুক্ত আসামি ছিলেন সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী। এই মামলায় ১৬ই ডিসেম্বর তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। ১৯শে ডিসেম্বর তাকে মুক্তিযুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শোন অ্যারেস্ট দেখায় পুলিশ। ৩০শে ডিসেম্বর প্রথমবারের মতো আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে তাকে হাজির করা হয়। ২০১১ সালের ৩রা অক্টোবর সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর বিরুদ্ধে তদন্তের অগ্রবর্তী প্রতিবেদন দাখিল করে প্রসিকিউশন। অভিযোগ গঠন করা হয় ২০১২ সালের ৪ঠা এপ্রিল। সে বছরের ৪ঠা অক্টোবর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হয়। তদন্ত প্রতিবেদনে তার বিরুদ্ধে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় হত্যা, গণহত্যা, ধর্ষণে সহযোগিতা, অগ্নিসংযোগ, ভিন্নধর্মীয় লোকজনকে দেশান্তরী হতে বাধ্য করার মতো মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ আনা হয়। তদন্ত রিপোর্টে ৫৫ পৃষ্ঠার অভিযোগপত্র ও ১ হাজার ২৭৫ পৃষ্ঠার আনুষঙ্গিক নথিপত্র ও ১৮টি সিডি দাখিল করে তদন্ত সংস্থা। মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ (ফরমাল চার্জ) দাখিল করা হয় ২০১২ সালের ১৪ই নভেম্বর। ট্রাইব্যুনাল-১ অভিযোগ আমলে নেন ১৮ই নভেম্বর। প্রসিকিউশন অভিযুক্তের বিরুদ্ধে ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় সংঘটিত ৭২টি ঘটনায় ২৩টি অভিযোগ দাখিল করে। সাক্ষ্যগ্রহণ ও যুক্তি উপস্থাপন করা হয় ১৭টি অভিযোগের ভিত্তিতে। ৬টি অভিযোগ সম্পর্কে রাষ্ট্রপক্ষ কোন সাক্ষী হাজির ও অভিযোগের বিরুদ্ধে যুক্তি উপস্থাপন করেনি। সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর বিরুদ্ধে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে তিন শতাধিক ব্যক্তিকে হত্যা, ৫ নারীকে ধর্ষণে সহযোগিতা, ৬টির বেশি গণহত্যা সহ মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে ১৯৭৩ সালের আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনালস) আইনের ৩ (২) (এ), ৩ (২) (সি), ৩ (২) (জি) ও ৩ (২) (এইচ) ধারায় এ অভিযোগ গঠন করে প্রসিকিউশন। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা নুরুল ইসলাম সহ রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষীর সংখ্যা ছিল ৪১। এর মধ্যে জব্দ তালিকার সাক্ষী ৪ জন। তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. নুরুল ইসলামকে দেয়া ৪ সাক্ষীর জবানবন্দি তাদের অনুপস্থিতিতে সাক্ষ্য হিসেবে গ্রহণ করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১। সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর পক্ষে সাফাই সাক্ষী ছিলেন ৪ জন। তারা হলেন- তার কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের বন্ধু নিজাম আহমেদ, এশিয়া-প্যাসিফিক ইউনিভার্সিটির ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য কাইয়ুম রেজা চৌধুরী, সাবেক রাষ্ট্রদূত আবদুল মোমেন চৌধুরী সহ সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী নিজে। ২০১২ সালের ১৪ই মে থেকে ২০১৩ সালের ১৩ই জুন পর্যন্ত অভিযুক্তের বিরুদ্ধে সাক্ষীদের জবানবন্দি গ্রহণ ও তাদের জেরা করে উভয়পক্ষ। চলতি বছরের ১৭ই জুন থেকে ২৮শে জুলাই পর্যন্ত সাফাই সাক্ষীদের জবানবন্দি গ্রহণ ও জেরা শেষ হয়। ২৮শে জুলাই এই মামলার যুক্তিতর্ক (আর্গুমেন্ট) শুরু হয়। এ সময় রাষ্ট্রপক্ষ ৫ কার্যদিবস ও অভিযুক্ত সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর পক্ষে ৭ কার্যদিবস যুক্তি উপস্থাপন করে তার আইনজীবী এডভোকেট আহসানুল হক হেনা। যুক্তি খণ্ডন (রিভাইটাল) শেষ হলে ১৪ই আগস্ট উভয়পক্ষের সমাপনী বক্তব্য শেষে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি এটিএম ফজলে কবীর এই আলোচিত মামলার রায় অপেক্ষাধীন (সিএভি) রাখেন। এই মামলার বিচারকাজ চলে প্রায় ২ বছর ৮ মাস।






Shares