সারাদেশে বৃহস্পতিবার বিএনপির ও জামায়াতের হরতাল
ডেস্ক টোয়েন্টি ফোর : বিএনপির সমাবেশে পুলিশি হামলার প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার সারাদেশে সকাল- সন্ধ্যা হরতাল ডেকেছে বিএনপি। বুধবার বিকেলে দলীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ পণ্ড ও পুলিশের গুলিতে নেতাকর্মীরা আহত হওয়ার পর তাৎক্ষণিক ব্রিফিং করে এ কর্মসূচি ঘোষণা দেন দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘পূর্বপরিকল্পিতভাবে পুলিশ ও র্যাবের সঙ্গে এ হামলায় অংশ নেয় আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের ক্যাডার বাহিনী। তারা বিভিন্ন গলির ভেতর থেকে বিএনপি নেতাকর্মীদের ওপর গুলি চালায়।’ ব্রিফিং-এ মির্জা ফখরুল তার লিখিত বক্তৃতায় বলেন, ‘গত কয়েকদিনে সারাদেশে সরকারের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী এবং সশস্ত্র যুবলীগ, ছাত্রলীগের হত্যা, নির্যাতন, উৎপীড়ন, মামলা, হামলা ও গ্রেফতারের প্রতিবাদে বিএনপির ডাকে বুধবার ঢাকাসহ দেশব্যাপী বিক্ষোভ সমাবেশের কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছিল। ঢাকা মহানগরীতে দলের নয়াপল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশ শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠিত হচ্ছিল। আমাদের অনেক গুরুত্বপূর্ণ নেতা বক্তব্য রাখার পর সভার শেষ পর্যায়ে আকস্মিকভাবে বিনা উসকানিতে পুলিশ-র্যাব সমাবেশের ওপর উন্মত্তের মতো ঝাঁপিয়ে পড়ে। পুলিশ-র্যাবের পাহারায় আওয়ামী যুবলীগ-ছাত্রলীগ সশস্ত্র সন্ত্রাসীরাও আজকের এ হামলায় অংশগ্রহণ করে। তারা বিভিন্ন গলি থেকে বিএনপি নেতাকর্মীদের লক্ষ্য করে গুলি ছুড়তে থাকে ও বোমা নিক্ষেপ করতে থাকে।’ সমাবেশকে লক্ষ্য করে ফকিরাপুল মোড় এবং নাইটিংগেলের মোড় দুই দিক থেকে পুলিশ আমর্ড কার থেকে গুলি ছুড়তে ছুড়তে সভার মঞ্চের দিকে এগিয়ে আসে। এরই সঙ্গে পুলিশ-র্যাব বিএনপি নেতাকর্মীদের লক্ষ্য করে অবিরাম টিয়ার শেল ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করতে থাকে। মুহূর্তের মধ্যে গোটা এলাকাটিতে এক বিভিষিকাময় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম হয়।’ মির্জা ফখরুল বলেন, ‘পুলিশের গুলিতে দলের জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, যুগ্ম মহাসচিব আমান উল্লাহ আমান, অর্থনৈতিক বিষয়ক সম্পাদক ও ঢাকা মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব আবদুস সালাম, যুবদলের সিনিয়র সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট আবদুস সালাম আজাদ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানীসহ প্রায় দেড় সহস্রাধিক নেতাকর্মী গুরুতর আহত হন।’ তিনি বলেন, ‘আপনারা এখনও নিশ্চয়ই লক্ষ্য করছেন যে, গোটা এলাকাটি রণক্ষেত্রে পরিণত হয়ে আছে। রণসজ্জায় সজ্জিত পুলিশ-র্যাব শান্তিপূর্ণ সমাবেশে নিরস্ত্র মানুষের ওপর সশস্ত্র অবস্থায় ঝাঁপিয়ে পড়ে সরকারের গণতন্ত্রের একটি নমুনা প্রদর্শন করলেন।’ ফখরুল বলেন, ‘আমরা প্রতিদিন আওয়ামী গণতন্ত্রের বৈশিষ্ট্যগুলি প্রত্যক্ষ করছি। গণহত্যা, গুম, গুপ্তহত্যা, অপহরণ, বিভৎস নির্যাতন এবং মামলা হামলা নির্ভর এ সরকার। বর্তমান শাসকগোষ্ঠী জনগণের স্বার্থ এবং তাদের জানমালের তোয়াক্কা করে না। তারা রাষ্ট্রকে এক ভয়ঙ্কর অত্যাচারের যন্ত্র বানিয়ে বিরোধী মতকে নিষ্ঠুরভাবে দমন করার পাশাপাশি সাধারণ মানুষকেও অত্যাচারের যাঁতাকলে প্রতিনিয়ত পিষ্ট করছে। এরা দেশকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে ঠেলে দিয়েছে। এরা ফ্যাসিবাদের বিষাক্ত থাবায় সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করতে চাচ্ছে। সর্বব্যাপী দুর্নীতি, লুটপাট এবং দখলের পাশাপাশি সাধারণ মানুষকে হত্যা এদের নিত্যদিনের খেলা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এখন কঠিন এবং চূড়ান্ত প্রতিরোধে এদের পতন ঘটানো ছাড়া মানুষের আর কোনো উপায় নেই। আর ফিরে দেখার কিছু নেই ‘ গণতন্ত্রকামী মানুষের কাছে আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এখন দেশের সর্বত্র নিশ্ছিদ্র ব্যারিকেড গড়ে তুলতে হবে। এ রক্ত পিপাসু সরকারের আজকের নারকীয় তাণ্ডবের প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার সারাদেশে বিএনপির ডাকে সকাল-সন্ধ্যা হরতাল পালিত হবে।’ সকাল থেকেই পুলিশ নাশকতার আশঙ্কা করছিল পুলিশের এ বক্তব্যের দৃষ্টি আকর্ষণ করলে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আপনারাই উপস্থিত থেকে সবকিছু দেখেছেন। সকাল থেকে তাদের কাছে যদি নাশকতার তথ্য ছিল তাহলে তারা এটা বন্ধ করেননি কেন?’ অন্যদিকে, প্রধান বিরোধী দল বিএনপির পর বৃহস্পতিবার সারাদেশে সকাল-সন্ধ্যা হরতালের কর্মসূচি ঘোষণা করলো ১৮ দলীয় জোটে তাদের প্রধান শরিক জামায়াতও। বুধবার বিকেলে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে সমাবেশ ভণ্ডুল হওয়ার পর নয়াপল্টনের দলীয় কার্যালয়ে এক জরুরি সভায় মিলিত হয়ে এ হরতালের সিদ্ধান্ত নেয় বিএনপি। সভা শেষে দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর হরতালের ঘোষণা দেন। এর ঘণ্টাখানেক পর জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল রফিকুল ইসলাম খান এক বিবৃতিতে জামায়াতের পক্ষ থেকে হরতালের ঘোষণা দেন। হরতাল ঘোষণাকালে ফখরুল বলেন, “পুলিশের গুলিতে নজরুল ইসলাম খান, আমান উল্লাহ আমান, আব্দুস সালামসহ বেশ কয়েকজন নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। শান্তিপূর্ণ সমাবেশে পুলিশ ঝাঁপিয়ে পড়েছে। আমাদের ওপর নির্যাতন চালানো হয়েছে। এ সরকারের পতন ঘটানো ছাড়া আর কোনো পথ নেই। এ সরকারের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।” বুধবার বিএনপি ও এর অঙ্গ সংগঠনের ১৫০ নেতাকর্মী আহত হয়েছেন বলেও উল্লেখ করেন ফখরুল। ‘আর পেছন ফিরে তাকানোর পথ খোলা নেই’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, “এই ফ্যাসিবাদি সরকার প্রতিদিন গণহত্যা, গুম থেকে শুরু করে প্রতিদিন নির্বিচারে গুলি করে মানুষ হত্যা করছে। আজকের শান্তিপূর্ণ সমাবেশে পুলিশ ও ছাত্রলীগ-যুবলীগ একাট্টা হয়ে হামলা চালিয়েছে। শান্তিপূর্ণ সমাবেশ চলাকালে গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের বক্তব্য দেওয়ার মাঝে পুলিশ যুবলীগ ও ছাত্রলীগের যোগসাজশে হামলা চালিয়েছে। এ হামলার প্রতিবাদ ও নিন্দা জানানোর ভাষা আমাদের নেই।” পুলিশের এডিসি মেহেদির দেওয়া বক্তব্যকে প্রত্যাখ্যান করে ফখরুল বলেন, “ পুলিশের বক্তব্য সম্পূর্ণ মিথ্যা। কারণ আমাদের সমাবেশ থেকে কোনো প্রকার উস্কানি দেওয়া হয়নি। সাংবাদিকরাও তা দেখেছে।” তিনি আরও বলেন, “পুলিশ বর্বরোচিতভাবে নিরীহ মানুষের ওপর নির্বিচারে হামলা চালিয়ে ভয়াবহ এবং বিভীষিকাময় পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে। এ কয়েকদিনে তারা হত্যা করেছে ১৪৪ জনকে। দেশকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে দেওয়ার জন্য ভয়ঙ্কর ষড়যন্ত্র শুরু করেছে তারা। তাই এখন সরকার পতনের চূড়ান্ত আন্দোলন ছাড়া আর কোনো পথ খোলা নেই।” সংবাদ সম্মেলনে আরো ছিলেন স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ভাইস চেয়ারম্যঅন সেলিমা রহমান, আবদুল্লাহ আল নোমান, সাদেক হোসেন খোকা, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আব্দুল মান্নান, ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন, যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী খান প্রমুখ। এদিকে জামায়াতের পক্ষ থেকে দেওয়া বিবৃতিতে রফিকুল ইসলাম খান বলেন, “দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মুক্তির দাবিতে ঘোষিত গণবিক্ষোভ কর্মসূচি পালনে বুধবার সারা দেশে বাধাদান ও মিছিলে ব্যাপকভাবে গুলি বর্ষণের প্রতিবাদে দুর্বার গণআন্দোলন গড়ে তোলার লক্ষ্যে বৃহস্পতিবার দেশব্যাপী সকাল-সন্ধ্যা সর্বাত্মক হরতাল পালন করবে জামায়াত।” |