Main Menu

দরিদ্র বিধবা বোনকে একমুঠো চাল কেনার টাকাও দেন না মৃধা

+100%-
রেল বিভাগের সম্পদ লুটে অগাধ বিত্তের মালিক হলেও হতদরিদ্র বিধবা বোনের পেটের আহার জুটাতে একমুঠো চাল কেনার অর্থ সহযোগিতা করেন না ইউসুফ আলী মৃধা। দরিদ্র ওই বোনটি জানেন, তার ভাই রেল বিভাগে বড় চাকরি করেন, ঢাকা শহরে তার বিশাল বিশাল বাড়ি আছে, অনেক দামি গাড়িতে চড়েন, পরিবার নিয়ে মহাসুখে আছেন। কোনদিন একটু সাহায্য চেয়েও পাননি ভাইয়ের কাছে। বিধবা হয়ে বোনটি আশ্রয় নিয়েছেন বাবার বাড়িতে, সংসারে একমাত্র উপার্জক্ষম ছেলেটি মারা যাওয়ার পর এখন অনাহার-অর্ধাহারেই দিন কাটে বাংলাদেশ রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলীয় জোনের জিএম ইউসুফ আলী মৃধার বিধবা বোন কোহিনুর বেগমের। বিধবা কোহিনুর বেগমের আক্ষেপ তো আছেই সঙ্গে সঙ্গে ইউসুফ আলী মৃধার প্রতি প্রচণ্ড ধিক্কার তার গ্রামের মানুষের, ধিক্কার তার অমানুষসুলভ আচরণের জন্য।

ঘুষের ৭০ লাখ টাকা নিয়ে রেলমন্ত্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের বাসায় যাওয়ার পথে ধরা পড়ার পর ইউসুফ আলী মৃধাকে নিয়ে নানা আলোচনা চলছে মাদরীপুর জেলায় তার গ্রামের বাড়িতে। সে আলোচনায় গ্রামবাসীর ঘেন্নাই বেশি। গতকাল ইউসুফ আলী মৃধার গ্রামের বাড়িতে গেলে কথা হয় এলাকার অনেক মুরব্বির সঙ্গে। জানা যায়, টাকা খেকো ওই মানুষটির অনেক অজানা কথা। গ্রামের মানুষের খোকা এখন দেশব্যাপী পরিচিত ইউসুফ আলী মৃধা নামে।

ইউসুফ আলী মৃধা নামটি তার কাগজে-কলমে থাকলেও বড় আমলা হওয়ার আগ পর্যন্ত এলাকার সবাই তাকে খোকা হিসেবেই জানতো। রেল মন্ত্রণালয়ের বড় আমলা হওয়ার সুবাদে ইউসুফ আলী মৃধা নামটিও জনপ্রিয় হতে থাকে নিজ এলাকায়। মাদারীপুর সদর উপজেলার ধুরাইল ইউনিয়নের খালাসীকান্দি গ্রামের এক স্কুলশিক্ষক পিতার বড় ছেলে খোকা। পড়াশোনায়  ছোটবেলা থেকেই অত্যন্ত মেধাবী। পিতামাতার অভাবী সংসারের আলোর ঝলকানি দেয়ার মতোই মেধাবী ছিল খোকা। স্কুল-কলেজের গণ্ডি পেরিয়ে উচ্চশিক্ষা নিয়েছেন বুয়েট থেকে।

উচ্চশিক্ষিত হলেও খোকা তার আচরণ উন্নত ছিল না। ভাই-বোনদের প্রতি তার খুব একটা দরদ নেই। তিনি নিজেই নিজের বিত্ত-বৈভব তৈরিতে ব্যস্ত। বড় আমলার চাকরি করে  কোটি কোটি টাকা, বাড়ি, গাড়ি সবই করেছেন ঢাকার শহরে। খোকা দেশের  রেল মন্ত্রণালয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদে চাকরি করলেও এলাকাবাসীর সঙ্গে তার ছিল না কোন যোগাযোগ। গ্রামের বাড়িতেও তেমন একটা যাওয়া-আসা নেই বলে জানান এলাকাবাসী। খালাসীকান্দি গ্রামের ৮০ বছর বয়স্ক মুরব্বি আবদুল ওয়াদুদ বলেন, ‘শুনেছি মজিদ মাস্টারের বড় ছেলে রেল মন্ত্রণালয়ের বড় চাকরি করে। ঢাকার পরীবাগে কোটি কোটি টাকা খরচ করে গড়েছেন ৫ তলা বাড়ি, ফার্মগেট এলাকায়ও একটি বাড়ি আছে, স্ত্রীর নিয়ন্ত্রণে একাধিক গাড়ি। তবে এলাকায় তার আসা-যাওয়া খুব একটা চোখে পড়ে না। এখানকার আত্মীয়-স্বজন ঢাকায় তার বাড়িতে বেড়াতে যান বলে জানান এই বর্ষীয়ান মুরব্বি।’

ইউসুফ আলী মৃধা ওরফে খোকা গ্রামের বাড়ি না এলেও রেল মন্ত্রণালয়ে জিএম হিসেবে রেলমন্ত্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের ৭০ লাখ টাকা ঘুষ কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে হয়েছেন নিজের জেলার মুখরোচক ব্যক্তি। হোটেল, রেস্তোরাঁয়, অফিস আদালতে সর্বত্র এখন চলছে এই খোকার আলোচনা-সমালোচনা। মানুষের মুখে মুখে এখন একটি নাম। তাহলো মাদারীপুরের খোকা মৃধা। চার ভাই ও পাঁচ বোনের মধ্যে খোকা ছিল সবার বড়। ছোট ভাই মাসুদ থাকেন গ্রিসে। মাসুদের ছোট আইয়ুব আলী মৃধা পড়ালেখা তেমন একটা না করায় গ্রামেই থাকেন। কৃষিকাজ করেন। সর্বকনিষ্ঠ ভাই জামাল এলাকায় ব্যবসা করেন।

পাঁচ বোনের বিয়ে হয়ে গেছে অনেক আগেই। বিধবা বোন কোহিনুর বেগম ভাইদের গ্রামের বাড়িতেই থাকেন। অনাহার-অর্ধাহারে তার দিন কাটে। তার কোন খবর নেয় না ইউসুফ আলী একমুঠো চাল কেনার টাকাও দেন না। কোহিনুর বেগম আক্ষেপ করে জানান, তিনি বিধবা এবং তার একটি ছেলে মারা যাওয়ার পর একেবারে নিঃস্ব হয়ে গেলেও ইউসুফ তাকে কোন সাহায্য সহযোগিতা করেনি। তার ভাই কি অবস্থায় আছে সেটাও তিনি জানেন না। তিনি জানেন, তার ভাই বড় চাকরি করে। তবে তাকে তিনি কোন রকমের আর্থিক সাহায্য করেন না এবং তিনি খুব একটা গ্রামের বাড়িতেও আসেন না। ঢাকায় তার নিজের পরিবার-পরিজন নিয়ে থাকেন।’ ইউসুফ আলী মৃধা খোকার ছোট ভাই মাসুদ মৃধার স্ত্রী মাদারীপুর শহরের একতলা একটি বাড়িতে গেলে সাংবাদিকদের বলেন, ‘এই বাড়িটি তার স্বামী গ্রিস প্রবাসী মাসুদ মৃধা নিজের টাকায় কিনেছেন। তিনি বলেন, আপনারা চাইলে এই বাড়ির ছবি তুলে পত্রিকায় ছাপাতে পারেন। আমাদের এতে কোন আপত্তি নেই। তিনি বলেন, তার ভাসুর ইউসুফ আলী মৃধা খোকা ঢাকাতেই তার বাড়িতে থাকেন।’