নবীনগরের শাহনূর হত্যা মামলায় জজের আদেশ বাতিলে হাইকোর্টের রুল
ডেস্ক ২৪:::ব্রাক্ষণবাড়িয়ায় ব্যবসায়ী শাহনূর হত্যার ঘটনায় র্যাবের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে দায়রা জজ আদালতের দেয়া আদেশ কেন অবৈধ ও বাতিল ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট।
একটি ফৌজদারি বিবিধ আবেদনের প্রাথমিক শুনানি শেষে হাইকোর্টের বিচারপতি মো. শওকত হোসেন ও বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলামের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এই রুল জারি করেন।
আদালতে জারি করা রুলে সংশ্লিষ্টদেরকে জবাব দিতে বলা হয়েছে। একই সঙ্গে আগামী ৩ সেপ্টেম্বর এ আবেদনের পরবর্তী শুনানির জন্য দিন ঠিক করা হয়েছে।
আদালতে আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া। অপরদিকে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।
জানা যায়, শাহনূরকে হত্যার অভিযোগে র্যাব-১৪ ভৈরব ক্যাম্পের অধিনায়ক মেজর এ জেড এম সাকিব সিদ্দিককে প্রধান আসামি করা হয়৷ এছাড়া র্যাব-১৪-এর উপপরিদর্শক (এসআই) এনামুল হক, নবীনগরের কৃষ্ণনগর গ্রামের নজরুল ইসলাম ও উপজেলা সদরের আবু তাহেরের নাম উল্লেখসহ র্যাবের অজ্ঞাতনামা আরও সাতজনকে আসামি করা হয়।
শাহনূরের ছোট ভাই মেহেদী হাসান বাদী হয়ে গত ১ জুন ব্রাক্ষণবাড়িয়া জেলার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট নাজমুন নাহারের কাছে এই আবেদন করেন।
ওই আবেদনের প্রেক্ষিতে গত ৪ জুন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত সু্ষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে পুলিশকে এ মামলায় এফআইআর দাখিল করে তদন্তের নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে তদন্তভার সিআইডির উপর অর্পণের জন্য বলা হয়। এএসপি (সহকারী পুলিশ সুপারের) পদমর্যাদার কম নয় এমন কর্মকর্তাকে তদন্ত করতে আদেশে বলা হয়।
এরপর আসামী র্যাব-১৪ এর উপ-পরিদর্শক মোঃ এনামুল হক এ আদেশের বিরুদ্ধে দায়রা জজ আদালতে ফৌজদারি রিভিশন দায়ের করেন। তার আবেদনের ফলে ৮ জুন জেলার দায়রা জজ মোঃ কাওসার ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের আদেশ সংশোধন করেন এবং এ অভিযোগের উপর অনুসন্ধান করে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার আদেশ দেন।
আসামীরা আত্মসমর্পণ না করেই দায়রা জজ আদালতে রিভিশন আবেদন করতে পারে কিনা এবং দায়রা জজ এ বিষয়ক আদেশ দিতে পারেন কিনা সে বিষয়কে চ্যালেঞ্জ করে ১৩ জুলাই রোববার হাইকোর্টে আবেদন করেন র্যাবের নির্যাতনে মৃত শাহিনুরের ছোট ভাই।
অভিযোগে বলা হয়, ২৯ এপ্রিল দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলার বগডহর গ্রাম থেকে ব্যবসায়ী শাহনূর আলমকে চোখ ও মুখ বেঁধে র্যাবের ভৈরব ক্যাম্পে নিয়ে যায় র্যাব-১৪-এর একটি দল৷
রাত সাড়ে ১১টার দিকে শাহনূরকে পিটিয়ে গুরুতর জখম করেন ক্যাম্পের অধিনায়ক সাকিব সিদ্দিক৷ শাহনূর অচেতন হয়ে পড়েন৷ পরদিন সকালে চেতনা ফিরলে তাঁকে নবীনগর থানায় নেওয়া হয়৷
পরে উপজেলা সদর স্থানীয় আবু তাহেরকে ডেকে এনে শাহনূরের বিরুদ্ধে মামলা করায় র্যাব৷ পরে ওই মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে তাঁকে কারাগারে পাঠানো হয়৷ কারাগারে অসুস্থ হয়ে পড়লে তাঁকে ৪ মে প্রথমে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর হাসপাতালে এবং পরে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়৷ সেখানে ৬ মে শাহনূরের মৃত্যু হয়৷
নিহত শাহনূর আলমের সুরতহাল প্রতিবেদনে বলা হয়, তার উভয় হাতের কনুইয়ের উপরে ও নিচে থেঁতলানো কালচে বর্ণের দাগ, ডান ও বাঁ ঊরুর ওপরের অংশে থেঁতলানো গুরুতর জখমের এবং ডান ও বাঁ পায়ের হাঁটুর নিচে বিভিন্ন অংশে কালচে বর্ণের দাগ আছে। কোমরের নিচে দুই পাশে এবং দুই পায়ের পাতা পর্যন্ত রক্তাক্ত থেঁতলানো ও যৌনাঙ্গে জখমের দাগ আছে৷
এরপর শাহনূরকে নির্যাতন করে হত্যার অভিযোগে এনে ১ জুন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আদালতে র্যাবের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের আবেদন করেন শাহনূরের ছোট ভাই মেহেদী হাসান।