৬ সেপ্টেম্বর সুর সম্রাট উস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁর ৪৫ তম মৃত্যুবার্ষিকী
মিঠু সূত্রধর পলাশ, ব্রাহ্মনবাড়িয়া,নবীনগর,প্রতিনিধি : ৬ই সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার সুর সম্রাট ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ-র ৪৫ তম মৃত্যু বার্ষিকী। তিনি ১৯৭২ সালের ৬ই সেপ্টেম্বর এই দিনে ভারতের মাইহার রাজ্যে মদীনা ভবনে ১১০ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন।
পাক-ভারত উপমহাদেশের শাস্ত্রীয় সঙ্গীতকে ক্ষণজন্মা এই শিল্পী নিজ সাধনাবলে বিশ্ববাসীর দরবারে মহিমান্মিত রূপে তুলে ধরেন। তিনি ১৮৬২ সালে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জেলার নবীনগর উপজেলার শিবপুর গ্রামে জন্ম গ্রহন করেন। তাঁর মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষ্যে প্রতিবছরের মতো গতকাল (৫ই সেপ্টেম্বর) নবীনগর স্বজন সমাবেশেরে উদ্যোগে প্রেসক্লাব প্রাঙ্গনে আলোচনা সভা ও সংগীতানুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।
১৯১৮ সালে তিনি ভারতের মাইহারে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরুকরেন। ব্রিটিশ সরকার তাঁকে ‘খাঁ সাহেব’ উপাধিতে ভূষিত করেন। ১৯৫২ খ্রিস্টাব্দে ভারতের সঙ্গীত একাডেমি পুরস্কার পান। ১৯৫৪ খিষ্টাব্দে একাডেমির ফেলো নির্বাচিত হন। ১৯৫৮ খিস্টাব্দে ‘পদ্মভূষণ’ ও ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দে ‘পদ্মবিভূষণ’এবং ১৯৬১ খ্রিস্টাব্দে তিনি বিশ্বভারতী কর্তৃক ‘দেশিকোত্তম’ উপাধিতে ভূষিত হন। ভারতের দিল্লি ও বাংলাদেশের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে আজীবন সদস্যপদ দান করেন। তিনি অসংখ্য গুণী শিষ্য রেখে গেছেন। তাঁদের মধ্যে অন্যতম পুত্র আলী আকবর খাঁ, জামাতা পন্ডিত রবিশংকর, কন্যা রাওশন আরা ওরফে অন্নপূণ্যা , ভ্রাতুষ্পুত্র বাহাদুর খাঁ, তিমির বরণ, শ্যাম গাঙ্গুলী, নিখিল ব্যানার্জী, শরণ রাণী প্রমুখ।
সুর সম্রাট ওস্তাাদ আলাউদ্দিন খাঁ-র মৃত্যুর ৪৫ বছর পেরিয়ে গেলেও সংরক্ষনের অভাবে ওস্তাদের নিজ জন্মভূমি নবীনগর উপজেলার শিবপুর গ্রামে তার নিজ হাতে গড়া মসজিদ এবং পিতা-মাতার কবর নিশ্চিহ্ন প্রায়। অন্যদিকে সংগীত বিদ্যালয়, পর্যটন কেন্দ্র অতিথি শালা, মিলনায়তন গড়ে তুলার জন্য দানকৃত নির্ধারিত জায়গাটি বর্তমানে পরিত্যাক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। মহান এই গুণীজনের জন্মভূমিতে তাঁর স্মৃতিকে লালন করার জন্য সরকারী বা বেসরকারি পর্যায়ে কোন উদ্যোগ বাস্তবায়ীত হয়নী।
শিবপুরে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় , ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ-র পিতা সবদর হোসেন খাঁ এবং মাতা সুন্দরী খানম এর কবর দুটির পাকা করা হলেও চারদিকের সীমানা প্রাচীর করা হয়নী। অন্যদিকে ১৯১৯ ইং সালে লক্ষাধিক টাকা ব্যায়ে ওস্তাাদজী কর্তৃক নির্মিত হয় সুদৃশ্য একটি মসজিদ। কারোকার্য মন্ডিত মসজিদটিতে ছোট-বড় ১৬টি মিনার আছে। মসজিদের পিছনে ঈদের নামাজের জন্য বড় পাকা মাঠ তৈরী করা হয়। ওস্তাদজী নিজে হাতে মাটি কেটে ফেলে ইট বসিয়ে যে, মসজিদটি তৈরীর সূচনা করেছিলেন তা আজ সংস্কার করা দরকার। অন্যদিকে ১৯৯১ ইং সালে আলাউদ্দিন খাঁ-র দৌহিত্র লাখু খাঁ সঙ্গীত বিদ্যালয়, পর্যটন কেন্দ্র, অতিথি শালা, মিলনায়তনে গড়ে তুলার জন্য তৎকালীন জেলা প্রশাসকের কাছে ২২.৫০ শতক জায়গা হস্তাস্তর করেন। কিন্তু আজো তা বাস্তবায়িত হয়নি। আলাউদ্দিন খাঁর অনেক সম্পাত্তি থাকলেও তা আজ কতিপয় ব্যক্তির ভোগ দখলে। সুর স¤্রাট ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ’র পৈত্রিক সম্পত্তি জালিয়াতি করে নাল, ভিটি, পুকুর শ্রেণীর ৫০৫ শতক জমি গত বছরের ২১ জুলাই নামমাত্র মূল্য ২৮ লক্ষ টাকা বিক্রি করেন। এই নিয়ে এলাকায় ব্যাপক তোলপারের সৃষ্টি হয়েছে। ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রশাসকের কাছে দেওয়া অভিযোগ ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, নবীনগর উপজেলার শিবপুর গ্রামের ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ’র বংশধর মো: হোসেন মিয়া ও শওকত খাঁন শিবপুর, কমলপুর ও চক সেমন্তঘর এই তিন মৌজায় অবস্থিত নাল, ভিটি, পুকুর শ্রেণীর ৫০৫ শতক জমি গত বছরের ২১ জুলাই নামমাত্র মূল্য ২৮ লক্ষ টাকা বিক্রি করেন। যার বাজার মূল্য রয়েছে কমপক্ষে ১৫ কোটি টাকা। সরকারও কোন উদ্যোগ নিচ্ছে না। যদিও ৮০ দশকের গোড়ার দিকে সরকারী ভাবে ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ-র জন্মভূমিতে একটি সংগীত পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। পর্যটন কেন্দ্র বাস্তবায়নের জন্য সংস্কৃতি মন্ত্রনালয় ৫ সদস্যের একটি কমিটিও গঠন করে ছিল। কিন্তু আজ পর্যন্ত তা বাস্তবায়িত হয়নি। বর্তমানে সরকার ও ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ-র স্মৃৃতি রক্ষার্থে বিষয়টি বাস্তবায়িত উদ্যোগ গ্রহণ করলেও এখনও আলোর মুখ দেখেনি । বিভিন্ন আইনী জটিলতার কারণে।
এব্যাপারে সাবেক সংসদ সদস্য এডভোকেট শাহ্ জিকরুল আহম্মেদ খোকন বলেন, আলাউদ্দিনের স্মৃতিরক্ষার্তে সরকারী ভাবে আলাউদ্দিন খাঁ কমল্পেক্স তেরী এখন অনুমোদনের অপেক্ষায়।
ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ-র বংশধর কদরের নেছা বলেন বহু লোক আছেন ছবি তুইল্লা নেন কিন্তু কিছুই হয়না । পারলে কিছু কইরা দেহান।
আলাউদ্দিন খাঁ স্মৃতি সংসদের সভাপতি শামীম রানা রতন ও মো: আবুল হোসেন খান বলেন, আলাউদ্দিন খাঁ দেশে না থাকার কারনে তার জন্ম ভূমি অবহেলিত। তবে আশা করি বর্তমান সরকারের আমলেই এখানে আলাউদ্দিন খাঁ কমম্পেক্স নির্মিত হবে। এবং অতি দ্রুত মামলাটি নিস্পত্তি হবে।