Main Menu

৭০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হলেও ঠিকাদারের গাফিলাতিতে অসংখ্য বাড়িঘর ভেঙে নদীগর্ভে বিলীন

নবীনগরে মেঘনার ভাঙ্গণে দিশেহারা সাধারণ মানুষ

+100%-

মিঠু সূত্রধর পলাশ,নবীনগর প্রতিনিধি:  ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগরে মেঘনার ভাঙনে মুখে উপজেলার বড়িকান্দি, ধরাভাঙ্গা, নুরজাহানপুর, মুক্তারামপুর, সোনাবালুয়া, মানিকনগর বাজার, চরলাপাং, কেদারখোলা, বাইশ মৌজা বাজারসহ নদী তীরবর্তী গ্রামগুলোর সীমানা মানচিত্র থেকে দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে। বদলে যাচ্ছে উপজেলার মানচিত্র। এলাকার অধিকাংশ মানুষ ঘরবাড়ি, ফসলি জমিজমা, ব্যবসায়িক দোকানপাট হারিয়ে সর্বশান্ত হয়ে গেছেন অনেকেই।
নবীনগর উপজেলার পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া প্রমত্তা মেঘনার প্রবল ভাঙনের খেলা চলছে প্রায় অর্ধশতাব্দী ধরে। ভৈরব-নবীনগর-নরসিংদী নদীপথের প্রায় ৮০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে গত ১০ বছরে মেঘনা গর্ভে বিলীন হয়েছে প্রায় ৪০ কিলোমিটার এলাকা। প্রতিবছর শতশত কৃষিজমি, বাড়িঘড় গ্রাস করছে সর্বনাশী মেঘনা। বাড়ছে উদ্বাস্ত ও ছিন্নমূলের সংখ্যাও। মেঘনার ভাঙনে সর্বস্ব হারিয়ে যাযাবরী জীবনযাপন করছে অসংখ্য পরিবার।
সরেজমিন দেখা যায়, নবীনগর উপজেলার বড়িকান্দি ইউনিয়নের ধরাভাঙ্গা, নুরজাহানপুর, মুক্তারামপুর, সোনাবালুয়া, বড়িকান্দি, মানিকগর বাজার, নয়াহাটি, চিত্রি, চরলাপাং, নজরদৌলত, গাছতলা, কেদারখলা, দুর্গারমপুরসহ এলাকার হাজার হাজার একর ফসলি জমিসহ অসংখ্য ঘরবাড়ি ইতোমধ্যেই নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। অব্যাহত এ ভাঙনের ফলে আগামী কয়েক বছরের মধ্যে নবীনগর উপজেলার আরো কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বাজারসহ কয়েকটি গ্রাম মেঘনাগর্ভে বিলীন হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। বিশেষ করে বড়িকান্দি, ধরাভাঙ্গা, নুরজাহানপুর, মুক্তারামপুর, সোনাবালুয়া,মানিকনগর বাজার, চরলাপাং, কেদারখোলা পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে। প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে এ ভাঙনের ভয়াবহতা চরম আকার ধারণ করে। তখন দেখা যায় নদীর ভঙ্কর ঢেউ আর মাটি ভাঙার শব্দে দিশেহারা হয়ে ছোটাছুটি করে মেঘনা পাড়ের মানুষ। নিরুপায় হয়ে সৃষ্টিকর্তার মুখপানে চেয়ে থাকা ছাড়া আর তাদের কিছুই করার থাকে না।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের নদী ভাঙনরোধকল্পে ৭০ কোটি টাকা ব্যয়ে বড়িকান্দি নূরজাহানপুর, সোনাবালুয়া ও ধরাভাঙ্গা গ্রামের নদী ভাঙন এলাকায় কাজ চলছে ধীর গতিতে। পানির নিচে সাগর চুরির মতো ঘটনা ঘটছে বলে এলাকাবাসীর অভিযোগ। গত ২১ মে শুক্রবার দুপুরে নদী ভাঙন এলাকা পরিদর্শনে গিয়ে স্থানীয় সংসদ সদস্য এবাদুল করিম বুলবুল বলেন, নদীর পাড়ের মানুষের সবচেয়ে বড় দুঃখ হলো নদী ভাঙন, মেঘনার ভাঙন রোধকল্পে ২০২০ সালে ৭০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। ঠিকাদার কাজ শুরু করেছেন। কিন্তু কাজের ধীর গতির কারণে অসংখ্য বাড়িঘর ভেঙে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। এ বিষয়ে ঠিকাদারের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

স্থানীয় আওয়ামীলীগ নেতা সাইফুর রহমান সোহেল জানান, ছোট বেলায় এক মাইল দূরে গিয়ে গোসল করেছি। আর এখন মেঘনার ভাঙনের কারণে আমাদের ঘরের কাছে নদী এসে গেছে। শত শত একর কৃষিজমি, বাড়িঘর, গাছপালা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, মসজিদ, কবরস্থান ইতোমধ্যে নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। ভাঙন রোধকল্পে দ্রুত কাজ শুরু করার জন্য সরকারের কাছে দাবি করে তিনি।
নুরজাহানপুর গ্রামের বাসিন্দা ও জনশক্তি রফতানির সাবেক মহাপরিচালক মাহবুবুর রহমান জানান, মরণের আগে যদি ভাঙন প্রতিরোধের বাঁধটা দেখে যেতে পারতাম, তা হলে মরেও শান্তি পেতাম।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের পূর্বাঞ্চলীয় প্রধান প্রকৌশলী জহির উদ্দিন আহম্মদ বলেন, কুমিল্লার এম জাহের ঠিকাদারের মাধ্যমে ২০২০ সালের জানুয়ারি মাসে এ প্রকল্পের কাজটি শুরু হয়। কাজের ধীরগতি ও অবহেলার কারণে নতুন করে এই এলাকায় ভাঙন শুরু হয়েছে। ওই ঠিকাদারের বিরুদ্ধে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

বড়িকান্দি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আনোয়ার পারভেজ হারুত বলেন, এভাবে মেঘনার ভাঙন অব্যাহত থাকলে একদিন উপজেলার সম্পূর্ণ মানচিত্রই পাল্টে যাবে।






Shares