Main Menu

নবীনগরে করোনা রোগীদের দাফন-কাফনে একদল আলেম 

+100%-
মিঠু সূত্রধর পলাশ,নবীনগর প্রতিনিধি :  সারা দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে বাড়ছে মৃতের সংখ্যা। তাদের দাফন-কাফন নিয়ে নানা করুণ ঘটনার জন্ম হচ্ছে। মৃতের স্বজনরা পর্যন্ত এগিয়ে আসছেন না মরদেহ দাফন বা সৎকারে। এমনি পরিস্থিতিতে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগরে মৃতের দাফন কাফনে নিয়োজিত রয়েছে মাওলানা মেহেদীর নেতৃত্বে উপজেলার বেশ কিছু আলেম যুবক।
টেলিফোনে মৃত্যুর খবর পেয়েই ছুটে যান তারা। দিন বা রাত, ঝড় কি বৃষ্টি, সব উপেক্ষা করে ছুটে চলেছেন তারা। সুরক্ষা পোশাক পিপিই, হাতে গ্লাভস, চোখে  চশমাসহ সকল সুরক্ষা সামগ্রী পড়ে লাশের গোসল থেকে দাফন পর্যন্ত সব কাজই করছেন তারা। নিজেরা ভয়ভীতির মধ্যে থাকলেও দায়িত্ব পালনে পিছপা হচ্ছেননা। ইতিমধ্যে উপজেলায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে বা উপসর্গ নিয়ে মারা যাওয়া অনেকেরই জানাজা ও দাফন ইসলামী নিয়ম মেনে সম্পন্ন করতে এগিয়ে এসেছেন মাওলানা মেহেদী হাসানের নেতৃত্বে উপজেলার বেশ কিছু যুবক আলেম। উপজেলা প্রশাসন কর্তৃক গঠিত এই কমিটি বিনিময়ে কোন অর্থ সহায়তাও নিচ্ছেনা।
মাওলানা মেহেদী হাসান ছাড়াও ওই কমিটিতে রয়েছেন সহকারী টিম প্রধান মুফতি হেদায়েত উল্লাহ, মাওলানা রহমত উল্লাহ, মুফতি আমজাদ হোসাইন, মাওলানা মাওলানা ফয়জুল্লাহ মাহমুদ, মাওলানা গোলাম রব্বানী, মাওলানা আশরাফুল ইসলাম, মাওলানা ইকবাল হোসাইন, মাওলানা আব্দুল্লাহ আল মামুন, মাওলানা  মাসুদুর রহমান খান, মাওলানা ইয়াসিন আরাফাত, মাওলানা সালাউদ্দিন আহমদ, মাওলানা আব্দুল হাকিম, মো: জাফর আহমদ, মাওলানা সানাউল্লাহ, মাওলানা নাদিম, মাওলানা একরামুল ইসলাম, মাওলানা জাকারিয়া মাহমুদ, মাওলানা মুহাম্মদ আলী,  হাফেজ মাওলানা জুহির, মাওলানা আবরারুল হক।
উপজেলায় এ পর্যন্ত করোনা উপসর্গ নিয়ে মারা যাওয়া সাত জন হলেন, ইব্রাহিমপুরের বৃদ্ধা জাহানারা বেগম, শিবপুরের এক স্বাস্থ্যকর্মী কামরুন্নাহার বেগম, বাইশমৌজা আমতলী গ্রামের ব্যবসায়ী আব্দুর রউফ, নবীনগর কলেজ পাড়ার হাজ্বী সামছুল হক, নবীনগর পূর্ব ইউনিয়ন ডোপাকান্দা গ্রামের জজ মিয়া, পৌর এলাকার মাঝিকাড়া গ্রামের তাহসিন আক্তার জনি, ও ভোলাচং গ্রামের হারিজ মিয়া।
এ ব্যাপারে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান মনির বলেন, মায়ের মৃত্যুতে যেখানে সন্তানরা এগিয়ে আসেন না সেখানে মাওলানা মেহেদীর নেতৃত্ব একদল যুবক আলেম এগিয়ে আসছেন প্রতিনিয়ত। ঝড় বৃষ্টিতেও তারা জীবনের পরোয়া না করে এই মানবিক কাজে সর্বাত্মক নিজেদের নিয়োজিত রাখছেন। আমি উপজেলাবাসীর পক্ষ থেকে তাদের এই কর্মের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।
করোনাকালীন সময়ে এমন মানবিক কাজের ভূয়সী প্রসংশা করে উপজেলা করোনাভাইরাস প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ মাসুম বলেন, বিনা পারিশ্রমিকে এমন মানবিক কাজ সত্যি বিরল। তবে প্রশাসনের পক্ষ থেকে আমরা তাদের সুরক্ষার কথা চিন্তা করে পিপিই, মাস্ক, হ্যান্ড গ্লাভস, আই গগলস, ও গাম বুট (জুতা) প্রদান করেছি। আমি আশা করবো তাদের এই মহৎ কাজে উপজেলার সর্বস্তরের জনগণ সার্বিকভাবে সহযোগিতা করবেন।
মাওলানা মেহেদী হাসান বলেন, প্রশাসনের সার্বিক সহযোগিতায় আমরা এই  কাজ সম্পন্ন করছি। লাশের পাশে বাবা-মা, ভাই-বোন, স্বামী কেউ থাকেনা। এটা আসলে বাস্তবতা। তবে যারা ইসলামের মূল গান নিজের মধ্যে ধারণ করেছেন যারা নবী করীম (সা:)এর আদর্শে নিজেকে তৈরি করেছেন, তাদের মধ্যে এনিয়ে কোন ভয় নেই। তারা মৃত্যুকে হাসিমুখে বরণ করেন। এটা আমাদের নৈতিক  দায়িত্ব। আমাদের মানবিক দায়িত্ব, একটা মানুষ যখন বিপদে থাকবে তার পাশে দাঁড়ানো। সেটা কোন ধর্ম এটা বিবেচ্য নয়। যে কোন ধর্মের হোক আমাদের টিম তাদের স্বজনদের পাশে থেকে তাদের ধর্মের নিয়ম অনুযায়ী আমরা এই কাজ সম্পন্ন করব। ইতিমধ্যে আমরা ৭ লাশ দাফন করেছি।





Shares