Main Menu

ব্রাহ্মণবাড়িয়া আওয়ামী লীগে ‘ইঁদুর’, সতর্ক করলেন মোকতাদির চৌধুরী

+100%-

15542465_1708866402758517_1306353362403816447_n

‘ইঁদুর’ তৎপর ব্রাহ্মণবাড়িয়া আওয়ামী লীগে। দলকে কুটিকুটি করার চেষ্টা করছে এরা। খন্দকার মোশতাক ও তাহের উদ্দিন ঠাকুরের মতো লোকজন এখনো আছে। তাদের ব্যাপারে আমাদের সতর্ক থাকতে হবে। দলের কিছু নেতার সাম্প্রতিক তৎপরতায় এমন মন্তব্য করেন জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি সদর সংসদ সদস্য র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী। শুক্রবার শহর মিলনায়তন কেন্দ্রে প্রশাসন আয়োজিত বিজয় দিবসের আলোচনায় তিনি ইঙ্গিতপূর্ণ এ বক্তব্য রাখেন। এর আগের দিন এক অনুষ্ঠানে তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রকারীদের এক হাত নেন মোকতাদির চৌধুরী। আহ্বান জানান সাহস নিয়ে সামনে এসে ষড়যন্ত্র করার। সম্প্রতি নানা ক্ষেত্রে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা আওয়ামী লীগের বিভেদ দৃশ্যমান হয়ে উঠে। তৎপর হয়ে উঠেন কিছু নেতা। নাসিরনগরের ঘটনায় জেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের দিকে অভিযোগের আঙুল উঠলে সরব হন দলের ওই নেতারা। জেলা আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব পরিবর্তনের আলোচনাও ছড়িয়ে পড়ে এই সময়ে। এসব নিয়ে বৃহস্পতিবার বিজয় মেলার আলোচনায় প্রথম মুখ খোলেন মোকতাদির চৌধুরী। তার কড়া বক্তব্য নিয়ে সরব আলোচনা এখন জেলা আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে এবং শহরে। ষড়যন্ত্রকারী হিসেবে তিনি কাদের (দলের কোন নেতাদের) ইঙ্গিত করছেন সেটি নিয়েও সৃষ্টি হয়েছে কৌতূহল।
বৃহস্পতিবার বিজয় মেলার সমাপনী অনুষ্ঠানে দেয়া বক্তব্যে মোকতাদির চৌধুরী বলেন, আমি ভিন্ন ধরনের কথা বলি বলেই ষড়যন্ত্রকারী-চক্রান্তকারীরা আমার বিরুদ্ধে তৎপর থাকে। কিন্তু ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জনগণ আমাকে চেনেন-জানেন, আমি ষড়যন্ত্রকারীদের ভ্রুকুটি উপেক্ষা করেই এ পর্যন্ত চলে এসেছি। বিজয় মেলার কমিটি যেভাবে গঠিত হয়েছিল সেভাবে কাজ করেনি। প্রথম থেকে একটি সূক্ষ্ম চেষ্টা লক্ষ্য করা গেছে এই বিজয় মেলাকে বিভক্ত করার জন্য। বিজয়মেলাকে কেন্দ্র করে আবহাওয়াকে দূষিত করে তোলা হয়েছিল। দুর্ভাগ্যবশত এই বিজয় মেলার মঞ্চ থেকে কোনো কোনো গণধিকৃত ব্যক্তি জেলা আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে পরিবর্তন আনার আহ্বান জানিয়েছেন বলে আমি শুনেছি। যদি এটা সত্যি হয়ে থাকে তাহলে আমি বলবো জেলা আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব সব সময় পরিবর্তনশীল। জগদ্দল পাথরের মতো বসে থাকার সুযোগ নেই। আমরাও প্রস্তুত, আমি ও আমার সাধারণ সম্পাদক আল মামুন সরকার দু’জনেই প্রস্তুত আছি। সামনে যখন আওয়ামী লীগের সম্মেলন হবে তখন আপনারা নেতৃত্ব পরিবর্তন করে আপনাদের পছন্দমতো গণধিকৃত নেতাদের নিয়ে আসতে পারেন। সেসব নেতা যাদের চাঁদাবাজি-দখলবাজির কারণে ব্রাহ্মণবাড়িয়া ভদ্রলোকের বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়েছিল। তিনি বলেন, শিক্ষা-দীক্ষায় উন্নত এই ব্রাহ্মণবাড়িয়া। এখানে মেট্রিক পাস লোক পাওয়া যায় না কমিটি করার জন্য। এই অবস্থায় গণধিকৃত ব্যক্তি, জনগণ কর্তৃক প্রত্যাখ্যাত ব্যক্তিরা নেতৃত্ব পরিবর্তনের আহ্বান জানায়। তারা কে কি করেন, কোন স্টলে বসে কি কথা বলেন তা কি আমি জানি না। জেলা পরিষদ নির্বাচন প্রসঙ্গে বলেন, সামনে জেলা পরিষদ নির্বাচন। এ নিয়ে আমি কথাও বলবো না, ভোটও চাইবো না। তবে জেলা পরিষদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ষড়যন্ত্রের যে জাল বোনা হয়েছে সে কথা বলতে চাই। দল থেকে সুস্পষ্ট করে একজনকে মনোনয়ন দেয়ার পরও গণধিকৃত, জনগণ কর্তৃক প্রত্যাখ্যাত ব্যক্তি, ৬০-৭০ হাজার ভোটে ফেল করা ব্যক্তি রাজনীতির মাঠে আছে। কাদের ভরসায়? রাতের বেলা কুটি বাড়িতে গিয়ে কারা ফুসর-ফুসর করে তাও আমার জানা আছে। কারা আমার বিরুদ্ধে পত্রিকায় লেখায় তা আমার জানা আছে। এতে কাদের ইন্টারেস্ট তাও আমার জানা আছে। নাম না উল্লেখ করে দলের নেতাদের সমালোচনায় তিনি বলেন, কি একেকজন নেতা পায়ের নিচে মাটি নেই, উনি নেতা। উনাকে ভোট দিতে হবে। তিনি বলেন, যারা জননেত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে দাঁড়াতে চান তারা প্রকাশ্যে দাঁড়ান। সে কোন্‌ বাপের বেটা তা আমি দেখতে চাই। এ সময় কর্মীরা আওয়ামী লীগের দালালরা হুঁশিয়ার, সাবধান বলে স্লোগান দিতে শুরু করলে তিনি তাদের থামিয়ে দেন। বলেন, মিটিংয়ে আস ঠিকভাবে স্লোগান দিতে পারো না। আমরা যারা আছি, সবাই আওয়ামী লীগের দালাল। তাই স্লোগান দিতে হলো- ষড়যন্ত্রকারীরা হুঁশিয়ার সাবধান! তিনি আরো বলেন, অনেক শ্রম-ত্যাগের বিনিময়ে আওয়ামী লীগকে ঐক্যবদ্ধ করা হয়েছে। ষড়যন্ত্রকারীদের দ্বারা বিভক্তি আনার জন্য নয়। তারা শেখ হাসিনার পথেই যদি না থাকে তাহলে আওয়ামী লীগের নাম ব্যবহার করে কেন? এরা বেহায়া, নির্লজ্জ। শরম নেই। আসলে কয়লা ধুইলে ময়লা যায় না। তিনি বলেন, নির্বাচন যাক। তারপর বোঝাপড়া হবে। এখনো জাতীয় নির্বাচনের ২ বছর বাকি আছে। কয়েকদিনের জন্য দেশের বাইরে ছিলাম। তাতেই এই অবস্থা হয়ে গেছে। পত্রিকায় উঠেছে আমার বিরুদ্ধে একশ’ লোকের সঙ্গে কথা বলেছে। বুঝেছেন তো তারা কনভিন্স হয়ে বলেছে- নাসিরনগরের ঘটনার মেইন কালপ্রিট আমি। ষড়যন্ত্রটা কোথায়? জেলা আওয়ামী লীগেরই নয়, আমাদের ফেলে দিতে পারলে শেখ হাসিনাকেও ফেলে দেয়া সম্ভব। কারণ আমরা শেখ হাসিনার বিশ্বস্ত অনুচর। আজ এখানে, কাল ওখানে আর পরশু ঐখানে থাকি না। যেদিন জয়বাংলা বলেছি সেদিন থেকে জয়বাংলাতেই আছি। এই ব্রাহ্মণবাড়িয়াতেই অনেকে বলেছে, এখন জয়বাংলা বলা যাবে না। ১৯৯৬ সালে আমি যখন প্রধানমন্ত্রীর একান্ত সচিব তখন এখানকার মুক্তিযোদ্ধা সংসদের নেতাদের জয়বাংলা বলার জন্য বলেছিলাম। তখন তারা তাতে রাজি হননি। মুক্তিযোদ্ধা বিজয় মেলা উদযাপন পরিষদ আয়োজিত মেলার সমাপনী অনুষ্ঠানে জেলা প্রশাসক রেজওয়ানুর রহমান ও পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান বক্তব্য রাখেন। গত ৯ই ডিসেম্বর শহরের ইন্ডাস্ট্রিয়াল স্কুল মাঠে এই মেলার উদ্বোধন করেন জেলার বাঞ্ছারামপুর এলাকার সংসদ সদস্য সাবেক মুক্তিযোদ্ধা প্রতিমন্ত্রী ক্যাপ্টেন (অব.) এবি তাজুল ইসলাম। এদিন সভাপতিত্ব করার কথা থাকলেও পৌর মেয়র নায়ার কবির সেখানে যাননি। অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আল মামুন সরকারও ছিলেন অনুপস্থিত।
#
সংবাদ মানবজমিন






Shares