Main Menu

কবির ছদ্মবেশে ঘাতকের মমি

+100%-

জাহেদ সরওয়ার : বাংলা কবিতার অন্যতম কবি জীবনানন্দ দাশ তার এক প্রবন্ধে বলেছিলেন ‘কবিতাও একই জীবনের অন্যরকম উৎসার’। অর্থাৎ তিনি বলতে চেয়েছিলেন জীবন আর কবিতা আলাদা কিছু নয়। একজন সৎ কবি ব্যক্তি জীবনে একরকম আর কবিতায় অন্যরকম তা হতে পারেনা। কারণ কবিতা তার যাপিত জীবনেরই প্রতিচ্ছবি। কবির মনন সবচাইতে বেশি ধরা পড়ে তার কবিতায়। যেখানে খেলা করে তার আদর্শবোধ, যেখানে প্রবাহিত হয় তার বাসনার নদী। সেই হিসাবে এদেশিয় কবিদের ভেতর সৎ কবি পাওয়া যাবে কিনা সন্দেহ। পাওয়া গেলেও নিতান্তই হাতেগোনা কয়েকজন। এজন্য মনে রাখার মতো কবিতা খুববেশি নাই বললেই চলে। প্রায়শই কবিদের জীবন আর লেখালেখি বিচার করলে তাদের ঘৃণা করাও দুষ্কর হবে। প্রতিষ্ঠার জন্য মিথ্যাচার, সেই প্রতিষ্ঠাকে বিকানোর জন্য নগ্ন আত্মপ্রচার আর টাকার জন্য জীবনসুদ্ধ চালিয়াতি করা কবিদের মধ্যে অনন্ত উজ্জ্বল হয়ে আছেন আল মাহমুদ। আল মাহমুদ অসম্ভব প্রচার পাওয়া কবি। তার চরিত্র সরিসৃপের মতো। যে কোনো রূপে তিনি নিজেকে রূপান্তরিত করতে পারেন। এমনকি এখন অর্থ আর যশলাভের জন্য তিনি একাত্তরের ঘৃণিত হত্যাকারীদের বন্দনাকারীতে পরিণত হয়েছেন।

অথচ তিনি যত্রতত্র বলে বেড়াচ্ছেন তিনি নাকি একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছেন। তিনি মুক্তিযোদ্ধা। এই মিথ্যা মুক্তিযোদ্ধার পরিচয়ে নিয়েছেন একের পর এক সুবিধাদি। একাত্তর সালে তিনি কলকাতায় অন্য অনেক বাংলাদেশির মতো পালিয়ে গিয়েছিলেন যেখানে দেশে গ্রামে গঞ্জে থেকে মানুষ যুদ্ধ করেছে তিনি সেখানে কেন গিয়েছিলেন সেই প্রশ্ন সামনে এসে দাঁড়ায়। কেন তিনি পালিয়ে গিয়েছিলেন কলকাতায় তার কোন উত্তর না থাকলেও। খানিকটা হদিস পাওয়া যায় শক্তি চট্টোপাধ্যায় আর সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের স্মৃতিকথায়। একাত্তর সালে শক্তি সুনীলের অন্যতম ঠিকানা ছিল সোনাগাছির কুখ্যাত পতিতালয় আর খালাসিটোলার বাংলামদের বাজার। তিনি মূলত সোনাগাছিতে পতিতা সেবা আর খালাসিটোলায় মদ্যপান করে দিনাদি অতিবাহিত করছিলেন।

একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ কোথায় হয়েছিল আর মুক্তিযুদ্ধে ঠিক কি হয়েছিল সে সম্পর্কে কোনো ধারণা নাই আল মাহমুদের। এসব বুঝা যায় আল মাহমুদের মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কিত স্মৃতিকথায় বা স্মৃতিচারণে ও মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী তার রাজাকারপ্রীতিতে। সম্প্রতি বাংলানিউজটুয়েন্টিফোর নামের অনলাইন পত্রিকার এক হলুদ সাংবাদিকের কাছে নিজের জন্মদিন উপলক্ষে তিনি একটা সাক্ষাৎকার দিয়েছেন। তাতে সেই গোমূর্খ হলুদ সাংবাদিক তাকে জিজ্ঞেস করেছেন ‘জীবনের অনেকটা সময় আপনি সমাজতন্ত্রের পতাকা বহন করেছেন এখন আবার ধর্মের ছায়াতলে এসেছেন’। তিনি কোথায় সমাজতন্ত্রের পতাকা বহন করেছেন জানাবেন কেউ, দয়া করে? হলুদটি আবার জিজ্ঞেস করেন, ‘আপনি তো একজন মুক্তিযোদ্ধাও, মুক্তিযুদ্ধের সময় কিভাবে কবিতা লিখতেন? তখন আল মাহমুদ বলছেন, ‘আমার কবিতা হ্যান্ডবিলি করা হতো। প্রতিটি ক্যাম্পে ক্যাম্পে মুক্তিসেনারা আমার কবিতা পড়তেন। এটা আমার দারুণ অনুপ্রেরণা।’

অথচ এর আগে আরেক লেখায় তিনি বলেছিলেন, মুক্তিযুদ্ধের ভেতরটা আমি দেখেছি। যুদ্ধের সময় উদ্দীপিত হয়ে দু’য়েকটা কবিতাও লিখেছি। পরে এ নিয়ে কবিতা লিখতে না পারলেও উপন্যাস লিখেছি। আমার কবিতা হোক বা গদ্যই হোক যা কিছু মুক্তিযুদ্ধের ওপর নিজের অভিজ্ঞতা থেকে লিখেছি। যুদ্ধ শেষ পর্যন্ত একটা নিষ্ঠুর ব্যাপার। কবি হৃদয় সর্বক্ষণ এ নিয়েই পড়ে থাকতে পারেনা। তাছাড়া মুক্তিযুদ্ধে আমার পরিবার পরিজনের অপরিসীম ক্ষতি হয়েছে।’ বিচিত্রা, সেপ্টেম্বর ১৯৯৫।

এখানে লক্ষ্য করুন তাকে জিজ্ঞেস করা হয়েছে কি আর তিনি উত্তর দিচ্ছেন কি? আল মাহমুদের এই মিথ্যাচার যদি আমলে নেই তাহলে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস অন্যভাবে রচনা করতে হয়। জীবনে কোথাও কারও লেখায় আমি দেখি নাই অথবা এমন কাউকে দেখি নাই যিনি বলছেন রণাঙ্গনে আল মাহমুদের কবিতা পড়েছেন। আল মাহমুদ এইটা কোনো পাশ্চাত্য অথবা মধ্যপ্রাচ্যের যুদ্ধপ্রবণ দেশের কবির সাক্ষাৎকার নিজের মতো করে চালিয়ে দিয়েছেন। তুরস্কে নাকি এক সময় যুদ্ধক্ষেত্রে নাজিম হিকমতের কবিতা পাঠ করে যোদ্ধারা শক্তি অর্জন করতেন এইরকম একটা বাসনার অবদমন থেকে এই বৃদ্ধ বয়সে তিনি এই মিথ্যাচার করেছেন। অই অনলাইন পত্রিকার হলুদ সাংবাদিকটি তাকে আরো জিজ্ঞেস করেন, আপনার কবিতা কলকাতার মেয়েরা ব্লাউজের ভেতর রাখতো? তখন ইসলামের ভেকধারী বাংলার এই রসময়গুপ্ত যৌনতৃপ্তি সহকারে বলছেন ‘হ্যাঁ এটা সত্যি ঘটনা। এবং আমি মনে করি এটা একজন কবির এক জীবনের সাধনার ফল।’ সাংবাদিকটি এই জিনিসগুলা ঠিক কোথা থেকে জেনেছিলেন তা জানা যায় না। কলকাতার মেয়ে মানে সম্ভবত তিনি সোনাগাছির পতিতাদের বুঝিয়েছেন। আল মাহমুদের এই সব নষ্টামি তথাকথিক আল মাহমুদরে প্রশ্রয়দাতা ইসলামি দলগুলা কিভাবে সহ্য করে?
বাংলাদেশে স্বাধীনতা উত্তর আমরা সবাই জানি একাত্তরে স্বাধীনতা বিরোধী জামাতে ইসলামি সঠিক অর্থে কোনো ইসলামী দল নয় তারা বস্তুত পাকিস্তানের প্রেতাত্মা। এবং অর্জিত স্বাধীনতাকে নস্যাৎ করে দেবার জন্যই তাদের রাজনীতি। একাত্তরের লাখ লাখ মানুষকে হত্যা করেছে তারা পাকবাহিনীর সহযোগিতায়। হাজার হাজার নারীকে ধর্ষণ ও হত্যা করেছে তারা। অথচ এদেশেরই অসংখ্য মুক্তিযোদ্ধার হত্যাকারী ক্ষমতালোভী সামরিক শাসক জিয়াউর রহমান একাত্তরের স্বাধীনতা বিরোধী রাজাকার ঘাতক শাহ আজিজুর রহমানকে মন্ত্রী হিসেবে তার মন্ত্রীসভায় প্রধানমন্ত্রী, কুখ্যাত যুদ্ধাপরাধী জয়পুরহাটের আব্দুল আলীম, যুদ্ধাপরাধী ইনকিলাব পত্রিকার প্রতিষ্ঠাতা মাওলানা মান্নানকে মন্ত্রীসভায় স্থান দেন। এর মাধ্যমে তিনি স্বাধীনতা বিরোধী রাজাকারদের বাংলাদেশের রাজনীতিতে পূর্নবাসিত করেন। এবং এই ক্ষমতার আওতায় তারা আবারও সেই একাত্তরের স্বরূপে চালিয়ে যেতে থাকে রগকেটে সাধারণ মানুষ হত্যা। দেশ আবার দুইভাগে ভাগ হয়ে যায়। আবার তৈরি হয় যুদ্ধ পরিস্থিতি। স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি আর বিপক্ষের শক্তি। মিথ্যাবাদি ও সুবিধাবাধী আল মাহমুদ যোগ দেন একাত্তরের সেই পরাজিত পাকিস্তানের প্রেতাত্মা জামাতের সাথে। তিনি বেঈমানি করেন লাখ লাখ শহীদের রক্তের সাথে। তিনি বেঈমানি করেন হাজার হাজার নারীর সম্ভ্রমের সাথে। ইসলামের ছদ্মবেশে তিনি হয়ে উঠেন এদেশে গণমানুষের শত্রু জামাতে ইসলামির অন্যতম দালাল কবিতে, পরিণত হন তাদের ভাড়াটে বুদ্ধিজীবীতে।

আল মাহমুদ যে যুদ্ধাপরাধীদের একজন ভাড়াটে বুদ্ধিজীবী তা প্রমাণিত হয় যখন জামাতীদের সংগঠন মুক্তিযোদ্ধা পরিষদ কর্তৃক প্রদত্ত সস্মাননা আর পদক গ্রহণ করেন। ২০০৯ সালের ২৭ ডিসেম্বর প্রথম আলো পত্রিকা থেকে জানা যায়, মুক্তিযুদ্ধে অবদান রাখায় তাঁকে সম্মাননা দেওয়া হবে এবং তিনি সেখানে যাবেন। সংগঠনটি যে জামায়াতের, এ তথ্যও তিনি জানেন। মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারী দল জামায়াতের কাছ থেকে মুক্তিযুদ্ধে অবদান রাখার সম্মাননা কেন নেবেন জানতে চাইলে আল মাহমুদ বলেন, ‘তাহলে কার কাছ থেকে নেব। আওয়ামী লীগ তো আর আমাকে সম্মাননা দেবে না।’ মুক্তিযুদ্ধে জামায়াতের অবস্থান বিষয়ে আবারও প্রশ্ন করলে আল মাহমুদ বলেন, ‘কারা বিরোধিতা করেছে, এখনো এটা স্থির হয় নাই।’ হায় মুক্তিযোদ্ধাদের রক্ত, তিনি নাকি মুক্তিযোদ্ধা অথচ তিনি জানেন না কারা মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করেছে। সাহিত্য জগতে এরকম ভ- কোনোদিন ছিল না, মনে হয় হবেও না। এখানে আরো লক্ষণীয় তিনি বাসনা করছেন আওয়ামী লীগ তাকে সম্মাননা দিতে চাইলে তিনি তাও গ্রহণ করবেন। একজন মানুষ কতটুকু দায়িত্বজ্ঞানহীন হলে এমন স্ববিরোধী কথা বলতে পারেন? আর জামাতের মত যুদ্ধাপরাধী একটা দলের একটা স্বাধীন দেশে মুক্তিযোদ্ধা পরিষদের সম্মাননার নামের প্রহসনও দেখে যেতে হচ্ছে একটা স্বাধীন জাতিকে।

একই দিনের প্রথম আলো সূত্রে আরো জানা যায় এই সম্মাননা গ্রহণার্থে তিনি তার মত ব্যক্ত করেন, ‘এ সম্মাননা গ্রহণকে নিজের জন্য ন্যায়সংগত ভেবেছি।’ তিনি আয়োজকদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলেন, ‘এ সংবর্ধনা ইতিহাসের অনিবার্য।’ তাতো বটেই মুক্তিযোদ্ধার পরিচয়ে বেঁচে থাকবেন, তিনি জানেন না মুক্তিযুদ্ধে কাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছিলেন, আবার পুরস্কার নেবেন মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে এর চাইতে ইতিহাস সৃষ্টি আর কীইবা হতে পারে।

২০০৯ সালের ২৮ ডিসেম্বর সংগ্রাম পত্রিকা থেকে জানা যায়, সম্মাননা গ্রহণকালে আল মাহমুদ তার অনুভূতি জানিয়ে বলেন, আজকের এই সম্মাননা একটি ইতিহাস হয়ে থাকবে। যারা এমন আয়োজন করলেন, তাদের প্রতি আমি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। তিনি বলেন, কবিদের কাজ মানুষকে স্বপ্ন দেখানো। মুক্তিযুদ্ধে আমি সে দায়িত্ব পালন করেছি। আমার মনে কোন খুত নেই, সঠিকভাবেই আমি আমার দায়িত্ব পালন করেছি। আবারো মানুষকে জাগিয়ে তুলতে হবে।
.. .. .. .. .. .. .. ..
এখন ইসলামী ছাত্রশিবিরের সম্বন্ধে একটু বলি। আমি এদের ভালোবাসি। কারণ আমার জানামতে ইসলামী ছাত্রশিবির একমাত্র ছাত্রসংগঠন যারা এখনও নৈতিক বল ও ঈমানের ওপর দাঁড়িয়ে আছে। আমি মনে করি এরা বিজয়ী হবে, ইনশাল্লাহ।’

এই হচ্ছে মুক্তিযোদ্ধা আল মাহমুদের চরিত্র। পৃথিবীর কোনো কবি এভাবে নিজের জাতির মহান অর্জনের সাথে বেঈমানি করেন নাই। মার্কিন কবি এজরা পাউন্ড ২য় বিশ্বযুদ্ধের সময় কেবল মাত্র মার্কিন আগ্রাসন আর তার যুদ্ধনীতির বিরুদ্ধে ইতালির রেডিওতে ধারাবাহিকভাবে একটা অনুষ্ঠান করছিলেন। মার্কিন জয়ের পর এজরা পাউন্ডকে প্রায় আঠার মাস একটা খাচার ভেতর রাখা হয় যুদ্ধাপরাধী হিসাবে। যার নিচে ছিল উচুনিচু কংক্রিটের মেজে। যাতে ঘুমানোও অথবা বসা যেত না। পরে যখন তিনি সম্পূর্ণ পাগল হয়ে যান তখন পাগল হিসাবে তার স্থান হয় পাগলা গারদে। কিন্তু আল মাহমুদ পাগল নন, ধূর্ত শেয়াল।

তার আরো কিছু চালাকি ও চালিয়াতির নমুনা হিসাবে বিডিনিউজটুয়েন্টিফোর’-এ ২৬ অক্টোবর ২০০৮ এ রাজু আলাউদ্দিন কর্তৃক তার একটা সাক্ষাৎকার গ্রহণ করা হয়েছিল তার কিছু অংশ তুলে দিচ্ছি,
রাজু: ঠিক আছে। আপনার সম্পর্কে ভুল বা সঠিক যেটাই হোক না কেন তা হলো আপনি জামায়াতের সক্রিয় সদস্য কিনা?
মাহমুদ: না। আমি কোনো রাজনৈতিক দলের সদস্য না।
রাজু: তাহলে জামায়াত আপনার পৃষ্ঠপোষক কেন?
মাহমুদ: আমি দৈনিক সংগ্রামে চাকুরি করি। আপনি তো জানেন আমি সরকারী কর্মচারী হিসেবে রিটায়ার করেছি। লিখে-টিখে খেতে হয় আমাকে। সংগ্রামে লিখি, পালাবদলে লিখি এবং আরও কয়েকটা পত্রিকায় লিখে-টিখে খাই। এখন আপনি বলছেন যে তারা পৃষ্ঠপোষক কিনা। হতে পারে। আমি যেহেতু ধর্মে বিশ্বাস করি, ধর্মের কথা বলি; শুধু এখানেই নয়, জাতীয় এবং আন্তর্জাতিকভাবে। তারা আমাকে সমর্থন করে।
রাজু: তারা ভাবে যে আপনি তাদের লোক।
মাহমুদ: তারা হয়তো ভাবতে পারে। তাদের লোক বলে আমাকে ভাবে কিনা সেটা তো আমি আর তাদের মনের কথা জানি না।
রাজু: তাদের মনের মানুষ ভাবে আপনাকে।
মাহমুদ: আমাকে তারা ভালোবাসে।
রাজু: ভালোবাসে? একটা লোককে আমরা ভালোবাসি কেন? কিংবা আপনার কবিতা আমার ভালো লাগে কেন? ভালো লাগে এই কারণে যে মনে হয় যেন এটা আমার মনের কথা। তো ওরা যে আপনাকে ভালোবাসে, তার মানে ওদের মনের সঙ্গে আপনার মনঃগঠনের কোনো ঐক্য আছে বলেই কি ভালোবাসে?
মাহমুদ: আমি আগেই বলেছি যে আই অ্যাম নট এ পলিটিশিয়ান। আমি যেহেতু ইসলামে বিশ্বাস করি ইসলামের কথা বলি
রাজু: ইসলামের নাকি ‘জামায়াতে ইসলামী’র?
মাহমুদ: না, এই ধরনের প্রশ্ন করা সঠিক নয়। দলকে নিয়ে একজন কবিকে এই ধরনের প্রশ্ন করা কি সঠিক? আমি তো আগেই বলেছি আমি রাজনীতিক নই।
রাজু: কিন্তু আপনাকে তো জামায়াতে ইসলামীর অনেক দলীয় কর্মকা-ে দেখা গেছে।
মাহমুদ: না, এটা আপনি ঠিক বলেন নি।
রাজু: অনেক অনুষ্ঠানে দেখা গেছে; আপনি সভাপতিত্ব করছেন বা গেস্ট হিসেবে আছেন।
মাহমুদ: আমি হয়তো তার কোনো ছাত্র সংগঠনের কালচারাল অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেছি। অনেক ছাত্র সংগঠনেই আমি করে থাকি। কিন্তু যেহেতু আমি কোনো একসময় বা কোনো একবার বা দুইবার বা তিনবার তাদের একটা অনুষ্ঠানে গিয়েছি তাতে আমাকে এভাবে চিহ্নিত করা ঠিক না।
রাজু: আপনি জামায়াতের রাজনীতিতে বিশ্বাস করেন কিনা?
মাহমুদ: জামায়াতের রাজনীতি কী সেটা আমার কাছে প্রথম ব্যাখ্যা করতে হবে। তাহলে আমি বুঝতে পারবো আমি সমর্থক কিনা। জামায়াতে ইসলাম ইসলামী রাষ্ট্র, ইসলামী শরিয়ত প্রচলনের জন্যে রাজনৈতিক কর্মকা- পরিচালনা করে। আমি একজন সাংস্কৃতিক কর্মী, আমি একজন কবি। কোথাও যদি তাদের সাথে আমার মিল হয় সেটা তো ভালো কথা আমি মনে করি, অসুবিধা কী? এবং তারা যদি সে-কারণে আমাকে খানিকটা পৃষ্ঠপোষকতা দেয় তাহলে সেটা আমার লভ্য; এটাকে বলি না যে এটা দোষনীয়। যেহেতু তারা আদর্শগতভাবে আমার কবিতা বা আমাকে সমর্থন দেয় তাহলে এটা দোষণীয় মনে করি না। এ কারণে আমাকে রাজনীতি করতে হবে বা রাজনৈতিক দলের অর্ন্তভূক্ত হতে হবে  এটা জরুরী না।
রাজু: না, কিন্তু ওদের রাজনীতিতে আপনি বিশ্বাস করেন কিনা?
মাহমুদ: আমি ইসলামে বিশ্বাস করি। জামায়াতে ইসলাম দেশের নানান ঘটনায় নানা রকম রাজনৈতিক প্রক্রিয়া চালায়, এটার সাথে ইসলামের সম্পর্ক থাকতেও পারে। নিশ্চয় থাকবে, কারণ তারা তো ইসলামী দলই।
রাজু: এটা কোন ইসলাম? কারণ হচ্ছে, সেভেনটি ওয়ানে ওরা যখন স্বাধীনতার বিপক্ষে কাজ করলো তখনও কিন্তু তারা বলছে যে ইসলাম রক্ষা হলো তাদের মূল দায়িত্ব। সেখানেও কিন্তু তারা ‘ইসলাম’কে ব্যবহার করছে।
মাহমুদ: জামায়াতে ইসলাম ইসলামের স্বার্থেই কোনো এক সময়ে মানে স্বাধীনতা যুদ্ধের সময়ে ছিলো শেখ মুজিবের বা আওয়ামী লীগের অপজিট দল।
রাজু: এখানে আমি একটু বলি: সেভেনটি ওয়ানে ওদের ভূমিকা কেবল আওয়ামী লীগের, শেখ মুজিবের বিপক্ষে নয়, ওটা প্রকারান্তরে গোটা জাতির স্বার্থের বিপক্ষে চলে গেছে।
মাহমুদ: এটা আমি ঠিক সম্পূর্ণভাবে সঠিক মনে করি না।
রাজু: যদি এটা সঠিক না হয় তাহলে সেভেনটি ওয়ানের যে-অর্জন সেটা কি আওয়ামী লীগের অর্জন নাকি এই জাতির অর্জন?
মাহমুদ: মনে রাখতে হবে যে আমি একজন মুক্তিযোদ্ধা
রাজু: সে-জন্যেই তো আপনি এর উত্তর দেবেন।
মাহমুদ: তখনকার জামায়াতে ইসলামীর আমার যেটা ধারণা; আমি কিন্তু রাজনীতির লোক নই আগেই বলে নিচ্ছি। আমার ধারণা যেটা পাকিস্তানের যে-ঐক্য, যে ভাব-কল্পনা  এটার অনুসারী ছিলো তারা, সেটা তারা রক্ষা করতে চেয়েছে। এবং সেই জন্যে শেখ মুজিবের রাজনীতির বিরোধিতা করেছে। এবং বিরোধিতার পরিণাম তারা ভোগ করেছে।
রাজু: কী পরিণাম ভোগ করেছে? আমি তো কোনো পরিণাম দেখি না।
মাহমুদ: তাদের অসংখ্য লোক মারা গেছে।
রাজু: আর তারা যে অসংখ্য লোক হত্যা করছে, অসংখ্য নারীকে ধর্ষণে সহযোগিতা করছে, অনেক লুটপাট করছে
মাহমুদ: এ বিষয়ে আমাকে প্রশ্ন না করাই ভালো
রাজু: আপনি মুক্তিযোদ্ধা, ফলে আপনি এসব বিষয়ে বলতে পারেন।
মাহমুদ: এ ব্যাপারে আমাকে প্রশ্ন না করাই ভালো।
রাজু: আপনি বলতে অনাগ্রহী কেন?
মাহমুদ: অনাগ্রহী না, আমি যে-বিষয়টা কম জানি সেটা বলতে চাই না। এটা একটা রাজনৈতিক কর্মকা-
রাজু: না আপনি কম জানেন এই ব্যাপারটা ঠিক না।
মাহমুদ: একজন কবির কী সর্ম্পক এখন কথা হলো আমি একজন কবি মাত্র।
রাজু: একজন কবির সাথে রাজনীতির সম্পর্ক তো হয়।
মাহমুদ: না, আমার সাথে রাজনীতির সম্পর্ক তেমন ঘটেনি। আমি আরাম কেদারায় বসে রাজনীতির চর্চা করি না। আমি কাব্যচর্চা করি, কবিতা নিয়েই কথা বলতে চাই।
.. .. .. .. .. .. . .
এই হচ্ছে আল মাহমুদের মুক্তিযুদ্ধ চেতনার হাল। আল মাহমুদ যে স্বাধীনতা বিরোধীদের সাথে হাত মিলিয়ে তাদের পক্ষে গুণগান করছেন তা না। প্রতিটি স্বৈরাচারের পা চাটা তিনি। এরশাদের আমলেও তিনি তার এই মগজ বিক্রি করেছিলেন এরশাদের কাছে। এরশাদের কাছ থেকে পেয়েছিলেন বাড়ি প্লট সহ অনেক উপটৌকন। কথায় বলে দুর্জন বিদ্বান হলেও পরিত্যাজ্য। আল মাহমুদের এই বিকৃত, হঠকারি, আত্মঘাতী মানসিক গঠন তার কবিতার ভেতরও ব্যাপৃত। শুধু কবিতার দোহাই দিয়ে তিনি নিজেকে আড়াল করতে চান। আল মাহমুদের কবিতাগুলা ছন্দ, অন্তমিল আর গুপ্ত যৌনবাসনার একধরণের মিক্সার। আর তার গল্প উপন্যাসগুলাতো রীতিমতো পর্ণসাহিত্য। সেখানে যৌনতা যোনি আর শিশ্নের গর্জনে কানপাতা দায়। আত্মপ্রচারের জন্য তিনি সব কিছু করেছেন। সেই আত্মপ্রচারের মোহে মোহিত এদেশের কিছু তরুণতরুণী।
অথচ একশ্রেণির প্রগতি নামধারী তরুণ এই আল মাহমুদকেই কবি হিসাবে ধরে নিয়ে তাকে নিয়ে তারা বিভিন্ন অনুষ্ঠানসহ তার সাথে ছবি তোলাকে জীবন্ত অমর হবার উপায় মনে করছেন। দেশের তরুণ সমাজের মাথায় কিরকম ঘা হলে তা সম্ভব? আল মাহমুদ কবি নামকে পুঁজি করে কাটিয়েছেন এক ছদ্ববেশি ঘাতকের জীবন। নষ্ট করেছেন দেশের অনেক কবিদের সম্ভাবনাকে। হাজার হাজার তরুণ সিনিয়র হিসাবে আল মাহমুদের এই প্রতারণাকে গ্রহণ করেছেন খুব স্বাভাবিকভাবে তার কবিতার দোহাই দিয়ে। একটা তরুণ প্রজন্মকেই তিনি ঠেলে দিয়েছেন চরিত্রহীনতার দিকে স্বজাতি স্বদেশ ও স্বাধীনতার সাথে বেঈমানির দিকে। আল মাহমুদের কবিতার দোহাই দিয়ে অনেকেই আল মাহমুদ সম্পর্কে নীরব থাকেন। আল মাহমুদকে যুদ্ধাপরাধীদের সহযোগী হিসেবে চিহিৃত করেন না, তারা কি ভেবে দেখেছেন তাদের এই নীরবতাও এই প্রশ্নহীনতাও একাত্তরের শহীদের রক্তের বিরুদ্ধে যায়, ধর্ষিতার সম্ভ্রমের বিরুদ্ধে দাঁড়ায়?






Shares