Main Menu

একটি রত্নগর্ভা গ্রাম ‘নাওঘাট’- তারিকুল ইসলাম সেলিম

+100%-
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার আশুগঞ্জ উপজেলার কৃতি-সন্তানদের প্রসূতগার খ্যাত রত্নগর্ভা একটি ছোট্র পল্লীর নাম ‘নাওঘাট ।  প্রকৃতিক সুন্দর্যে অপরূপ চির সবুজে ঘেরা গ্রামটির অবস্থান ঢাকা- চট্রগ্রাম, ঢাকা-সিলেট রেলপথে আশুগঞ্জ রেলস্টেশনের পরে তালশহর রেলস্টেশন নামক স্থানটির দুই-তৃতীয়ংশ ভূ-খন্ডই নাওঘাট । স্টেশনের উত্তরে নাওঘাট গ্রামের সীমানা প্রাচীরেই তালশহর । নাওঘাট গ্রামের ভৌগলিক সীমানা ঘেঁষা গ্রামগুলো হলো উত্তরে তালশহর-ক্ষুদ্র ব্রাহ্মণবাড়িয়া, দক্ষিনে খাকচাইল ও তারুয়া, পশ্চিমে তারুয়া ও খাড়াসার, পূর্বদিকে  বড়হরন গ্রাম রয়েছে । মোট জনসংখ্যা ৩৩৬৭ জনের মধ্যে পুুরুষ ১৪৭২ জন মহিলা ১৮৯৫ জন । এ গ্রামের প্রায় নব্বই ভাগ আদিবাসী সুশিক্ষিত ।
শতভাগ মুসলমান অধ্যষিত এ গ্রামে প্রাচীনকাল থেকেই বহু বিখ্যাত জ্ঞাণী-গুণী মাণীষীদের মিলন মেলায় পরিপূর্ণ ছিল ।  তাঁরা সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক এবং শিক্ষা-সংস্কৃতির নেতৃত্ব দিয়েছেন । তাঁদের গৌরবময় অবদান ও সম্মান নাওঘাট গ্রামের মানুষদেরই শুধু সম্মানীত করেনি, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ইতিহাস ও ঐতিহ্যকে এ অঞ্চলে বিশেষ মর্যাদা আসনে সু-প্রতিষ্ঠিত করেছে । এই সকল ঐতিহাসিক ব্যক্তিদের অনেকেই ইতিহাসের ধূলোর আবরণে ঢেকে যাচ্ছে । তাদের অনেকেই আজ আমাদের থেকে বিস্মৃতির আড়ালে হারিয়ে গেল । লোক ঐতিহ্য নির্ভর নাওঘাট গ্রামে বহু জ্ঞাণী গুণী ও কীর্তিমানদের জন্ম ।
কবি, সাহিত্যিক, সাংবাদিক, লেখক, গবেষক, বিজ্ঞানী, রাজনীবিদ, শিক্ষাবিদ, প্রযুক্তিবিদ, মুফতি, মাওলানা, সচিব, উকিল, মোক্তার, ব্যারিষ্টার, ম্যাজিষ্টেট, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, ব্যাংকার, ইন্সুরেন্সকর্মী ব্যবসায়ী, শিল্পপতি, গীতিকার, সুরকার, সংগীত পরিচালক থেকে শুরু করে সরকারী ও বেসরকারী উচ্চু পদস্থ কর্মকর্তা কর্মচারি অনেকেই ছিল এবং আছে । ভারত ভাগের সময় কৃতি-সন্তানদের খনি নাওঘাট গ্রামে ৭০ -৮০জন গেজুয়েট ছিল ।
আমাদের এ অঞ্চলের উচ্চশিক্ষা আলোকবার্তিকা জ্বেলে গেছেন  ব্রিটিশ-ভারতের ব্রাহ্মণবাড়িয়া মহকুমার প্রথম ডেপুটি ম্যাজিস্টেট আব্দুর রহিম । তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ফাস্ট ব্যাচের ছাত্র ছিলেন । ১৯২০-এর দশকে তিনি বেঙ্গল সিভিল সার্ভিসে (বিসিএস) যোগদান করেন । ঐতিহাসিক মোক্তার ও প্রতিথযশা রাজনীতিক মৌলভী আব্দুল হামিদ ভূঁইয়া ১৯৩৬ সালে ব্রাহ্মণবাড়িয়া মহকুমা মুসলিম লীগের সেক্রেটারি জেনারেলের দায়িত্ব পান । সেকালের খ্যাতনামা মোক্তার আব্দুল হামিদ ভূঁইয়া পেশায় আইনজীবি ও রাজনীতিক হলেও তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিভিন্ন সামাজিক কর্মকান্ডে ছিলেন বিশিষ্ট । ব্রাহ্মণবাড়িয়া এন্ডারসন (কুঁড়লিয়া) খাল খননে তাঁর বিশেষ ভূমিকা শহরবাসীর হৃদয়ে আজও স্মরনীয় । তাঁর প্রচেষ্টা, উদ্যোগ ও প্রেরণায় শহর ও গ্রামে গড়ে উঠেছিল বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান । ব্রাহ্মণবাড়ীয়া সরকারি কলেজ, তালশহর এ এ আই উচ্চ বিদ্যালয়, মডেল গালর্স হাইস্কুল, মূক-বধির বিদ্যালয়, ইন্ড্রাস্ট্রিয়াল স্কুল, জর্জ হাই স্কুল, তালশহর করিমিয়া ফাজিল মাদ্রাসা ইত্যাদি প্রতিষ্ঠার সময় তাঁর শ্রম ও একগ্রতা সর্বজন-বিদিত । পশ্চিম ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে প্রথম দেওবন্দ পাশ আলেম মাওলানা কুদরত আলী মৌলভী (আব্দুল হাই) । তিনি এ অঞ্চলের মানুষকে আরবী শিক্ষায় দীক্ষিত হতে সব সময় অনুপ্রাণীত করতেন ।  সুবিখ্যাত ব্যক্তি আড়াইসিধা উত্তর (বর্তমান আশুগঞ্জ সদর) ইউনিয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান আব্দুল ওয়াহেদ ভূঁইয়া । ১৯৬৮ সালে তিনি ইউনিয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান থাকাকালে আশুগঞ্জ তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র প্রতিষ্ঠার পর কৃষিতে বিপ্লব ঘটাতে সবুজ প্রকল্পের উদ্যোগ নেন । শিক্ষক ও চিকিৎসক আব্দুল হামিদ মিয়া । তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যায় প্রতিষ্ঠা হওয়ার পর উচ্চশিক্ষায় ব্রাহ্মণবাড়িয়া মহকুমা থেকে প্রথম ডাবল এমএ পাস করেন । ব্রাহ্মণবাড়িয়া মহকুমা (বর্তমান জেলা)’র প্রথম বিএ পাস মহিয়সী নারী শিক্ষাবিদ ও সমাজসেবিকা বেগম শামসুন্নাহার । তিনি ১৯৪৬ সালে কলকাতা লেডি ব্রার্বোন কলেজ থেকে বিএ পাস করেন । পরবর্তীতে একযুগ অর্থাৎ ১২ বছরের মধ্যে এ জেলায় দ্বিতীয় কোন নারী বিএ পাস করেনি । বাংলা সাহিত্যের অন্যতম পুরোধা ব্যক্তিত্ব, নজরুল যুগে প্রতিভাধর, শক্তিমান, স্বতন্ত্র ও রোমান্টিক কবি-সাহিত্যিক, প্রবান্ধানিক, নজরুল গবেষক, সাহিত্য আলোচক, সমালোচক, গীতিকবি ও প্রবীণ সাংবাদিক মোহাম্মদ মাহফুজউল্লাহ । নজরুল ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠায় তাঁর ভূমিকা অতুলনীয় ।  তিনি নজরুল ইনস্টিটিউটের প্রতিষ্ঠাতা নির্বাহী পরিচালক ও বাংলা একাডেমির সম্মানিত ফেলো ছিলেন ।  সাহিত্যে অসামান্য অবদানের জন্য রাষ্ট্রীয় সর্বোচ্চ সম্মান একুশে পদকে-০৭ ভূষিত হন।
উপ-মহাদেশের প্রখ্যাত শিক্ষাবিদ ও মৃত্তিকা বিজ্ঞানী বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ময়মনসিংহের সাবেক উপচার্য ড. প্রফেসর জহিরুল হক ভূঁইয়া । গবেষণাকালে তিনি প্রথম বাংলাদেশের মাটিতে নাইট্রিফাইং ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিতি সনাক্ত ও পৃথক করেন । তিনিও বিভিন্ন কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে বেশ কয়েকজনকে চাকুরি দিয়েছেন । শিক্ষক ও সাহিত্যনুরাগী ওয়ালীউল ইসলাম বাসার স্যার । ব্যাংকিং জগতের এক অনন্য পথিকৃৎ উত্তরা ব্যাংকের সাবেক মহাব্যবস্থাপক আতিকুল ইসলাম ভূঁইয়া । তিনি পরবর্তীতে উত্তরা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এম.ডি) থাকা অবস্থায় পরলোক গমন করেন ।  বাংলাদেশ সরকারের সাবেক যুগ্ন সচিব কাজী একেএম ইব্রাহিম, (ইপিসিএস ও সিএসপি)। প্রখ্যাত আইন প্রনেতা ও ট্রাস্টি বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার মোজাম্মেল হক ভূঁইয়া (এফসিএ)। তিনিই প্রথম এবং একমাত্র বাংলাদেশী যিনি একসাথে ব্যারিস্টার ও এফসিএ -এ দুটি পেশাগত ডিগ্রী অর্জন করেন । ১৯৮৯ সালে  উপমহাদেশে তিনি প্রথম বৃটিশ সিলেবাসের আদলে এলএলবি কোর্স (অনার্স) এর জন্য ভূঁইয়া একাডেমি প্রতিষ্ঠা করেন ।
এছাড়া বিপুল সংখ্যক বিদ্যালয়, মাদ্রাসা, এতিমখানা, ও মহাবিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা ও পৃষ্ঠপোষকতা করা ছাড়াও তিনি মিস ভ্যালোরি টেলর এর সাথে পক্ষাঘাতগ্রস্ত লোকদের চিকিৎসার জন্য সাভারে এশিয়ার সর্ববৃহৎ কেন্দ্র বর্তমান ‘সেন্টার ফর দি রিহ্যাবিলিটেশন আফ দি প্যারালাইজড (সিআরপি) প্রতিষ্ঠা করেন । এবং দীর্ঘ ২২ বছর  উক্ত প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন ।
সমাজবিজ্ঞানী বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান, চট্রগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় সমাজ বিজ্ঞানী অনুষদের দুই বার নির্বাচিত ডিন ও চট্রগ্রাম ইসলামী আর্ন্তজাতিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপচার্য ড. প্রফেসর মোহাম্মদ মাহববুউল্লাহ । সমাজহিতৈষী ও দক্ষ প্রশাসক কাজী আব্দুল বায়েস (ইপিসিএস)। তিনি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারেরর সাবেক অতিরিক্ত সচিব ও জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো মহাপরিচালক ছিলেন  ।  তিনি বহু স্কুল-কলেজ-মসজিদ-মাদ্রাসা রাস্তা-ঘাট উন্নয়নে প্রশংসনীয় ভূমিকা রাখেন । বাংলাদেশ সরকারের সাবেক উপ-সচিব শহিদুল হক খাঁন । মানুষকে চাকুরি দেয়ার প্রতিযোগীতায় তিনিও কম ছিলেন না । ধনার্ঢ্য ব্যবসায়ী মোঃ কামালউদ্দিন ভূঁইয়া, তিনি খুবই সফল ব্যবসায়ী ছিলেন । পুরান ঢাকার মালিটোলা বংশাল-এ ঐতিবাহী প্রখ্যাত ব্যবসা প্রতিষ্ঠান কে জামান-এর কর্ণধার তিনি । বহু বিখ্যাত ও ধনার্ঢ্য ব্যবসায়ী তাঁর প্রতিষ্ঠান থেকে সৃষ্টি হয়েছে ।  কুমিল্লা বার্ডের সাবেক পরিচালক মোহাম্মদ ওবায়েদ উল্লাহ । গণস্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মেডিকেল এ্যাডভাইজার এ.এফ.এম ওয়ালীউল্লাহ । বিশিষ্ট আয়কর আইনজীবি এ্যাড. শহিদুল হক বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট । টিএন্ডটি বোর্ডের সাবেক মহাপরিচালক ইঞ্জিনিয়ার মোঃ হাসানুজ্জামান ফারুখ ।
২৫শে ফেব্রুয়ারি ২০০৯ সালে পিলখানা দরবার হলে ততাকথিত দাবি আদায়ের নামে বিডিয়ার বিদ্রোহে নিহত শহীদ কর্ণেল কাজী মোয়াজ্জেম হোসেন (বাদল) পিএসসি । কবি ও সাংবাদিক কাজী আকতার হোসেন ।  সাবেক উপ-সচিব (ওয়াসা) মহীউদ্দিন আল মাহমুদ । বিমান বাহিনীর সিনিয়র ওয়ারেন্ট অফিসার কাজী জসিমউদ্দিন । শিল্পপতি কাজী আব্দুল হাকিম । বিশিষ্ট আয়কর আইনজীবী এ্যাডভোকেট শহিদুল হক । ফ্লাইট লেপ্টেনেন্ট নাসিম পারভেজ ও ঢাকা স্টক এ্যাকচেঞ্জ (ডিএসই) বিশিষ্ট ব্যবসায়ী অকাল প্রায়াত মোঃ আতিকুল ইসলাম-সহ তাঁরা আজ সবাই পরলোকগত ।
এই নিভৃতচারি ও প্রচার বিমূখ মানুষগুলো কখনো পাদ-প্রদীপের আলোয় আসার চেষ্টা করেননি ।  নাওঘাট গ্রামের সু-খ্যাতি অর্জনে এ বরেণ্য ব্যক্তিগণের অবদান চির-স্মরণীয় হয়ে থাকবে ।  নাওঘাট গ্রামে আটারোশ সালের দ্বিতীয়ার্ধে থেকে বিংশ শতাব্দী পর্যন্ত কয়েকজন গন্যমান্য প্রভাবশালী ব্যক্তি ছিলেন যাঁরা আমাদের সমাজকে আঁধারে আলোর পথ দেখিয়ে গেলেন । তাঁরা হলেন মরহুম নুরু বক্স মুন্সি, হাজী সুবেদার আলী, আয়দর আলী, সেকান্দার আলী, হাজী আবুল হোসেন মুন্সি, শমশের আলী বেপারী, জাফর ভূঁইয়া, সফর আলী, হাজী আজগর আলী, মোঃ আব্দুল আওয়াল, মুন্সি রুমুউদ্দিন কারী, কাজী রমিজউদ্দিন মাস্টার, আব্দুর রউফ ভূঁইয়া, রুমুউদ্দিন বেপারী, হাজী তোতা মিয়া, তারু মিয়া, ছমিরউদ্দিন সরকার বেপারী, জিন্নাত আলী ভূঁইয়া, আবদুল গফুর, সোনা মিয়া ভূঁইয়া মেম্বার, মহসিন মিয়া, মৌলভী কলিমউদ্দিন আহমেদ, জমাদ্দার আলী ভূইয়া, খেয়াজ আলী, শেখ ইয়াছিনুল বেপারী, কাজী মতিউর রহমান, আলতাব আলী মাস্টার, আব্দুল লতিফ মৌলভী, চান্দ আলী বেপারী, মেম্বার, সরুজ মেম্বার,  আবু তাহের মেম্বার, আমিনুল ইসলাম (উনু মিয়া) মৌওলানা আব্দুর রাজ্জাক মৌলভী, আব্দুল মান্নান শাহ (রহঃ) মোজ্জামেল হক সরকার,  মহসিন মিয়া, বালা চান্দ মিয়া, মোঃ ইউনুছ মিয়া, মোঃ ওসমান গণি, মোঃ খলিলুল রহমান প্রমুখ ব্যক্তিরা সবাই পরলোক গমন করেছেন । তাঁদের মধ্যে কেউ কেউ খুব ধার্মিক ও সাদামাটা জীবন-যাবন গেছেন । এছাড়া তাঁরা সমাজের বিভিন্ন স্থরে নেতৃত্ব দিয়েছেন ।
মানবহিতৈষী মহাত্তম কৃতিপুরুষ ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় অসংখ্যা পরিবারের ভাগ্য পরিবর্তনের লাকী কয়েন বাংলাদেশ রেলওয়ের সাবেক মহাব্যবস্থাপক ইঞ্জিনিয়ার রফিকুল ইসলাম ভূঁইয়া । ১৯৬২ সালে এসেস্টেন্ট ইঞ্জিনিয়ার পদে যোগদানের পর অসংখ্য মানুষকে চাকুরী দেন । তিনি পরবর্তীতে বাংলাদেশ সরকারের অতিরিক্ত সচিব (যোগাযোগ মন্ত্রনালয়) হিসেবে অবসর গ্রহন করেন । তারপর তিনি ১৯৯৬ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু (যুমনা) সেতু রেলওয়ের কনসাল্টটিং টিমের প্রধান হিসেবে ৫ বছর কাজ করেন । নারী নেতৃত্বের অগ্রদূতী বাংলাদেশে প্রথম মহিলা ব্যারিস্টার, সমাজকল্যাণ -মহিলা ও শিশু বিষয়ক সাবেক মন্ত্রী ড. ব্যারিস্টার রাবিয়া ভূঁইয়া এমপি । এই মহীয়সী নারী মানব অধিকার প্রতিষ্ঠা করেন এবং বহু স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা, রাস্তা-ঘাট ও বিদ্যুৎ উন্নয়নে তাঁর ভূমিকা অনন্য । পানি বিজ্ঞানী ড. সাদিকুল ইসলাম ভূঁইয়া, তিনি ফিলিপাইনে ম্যানিলায় আন্তর্জাতিক ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটে (IRRI) এ বিজ্ঞানী হিসেবে ছিলেন । পানি ও কৃষি গবেষণায় দেশে ও আর্ন্তজাতিক পর্যায়ে তাঁর অবস্থান অর্ত্যান্ত প্রশংসনীয় । বিশিষ্ট ব্যাংকার বাংলাদেশে মৎস্য ও পোল্ট্রি শিল্পের প্রবর্তক সোনালী, জনতা ও রাজশাহী কৃ্ষি উন্নয়ন (রাকাব)-এর সাবেক মহাব্যবস্থাপক মোহাম্মদ নাসিরউল্লাহ ।  তিনিই এদেশে সর্বপ্রথম সোনালী ব্যাংক থেকে মৎস্য ও পোল্ট্রি শিল্পের জন্য কাজ করেন এবং কৃষিঋণের ব্যবস্থা করে দেন । কবি ও শিক্ষক কাজী আবিদ হোসেন । হাজী মোঃ শফিকুল হক (অবঃ) ফাস্ট এসেস্টেন্ট জেনারেল ম্যানেজার (এজিএম), বাংলাদেশ জনতা ব্যাংক । শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ, সহযোগী অধ্যাপক হলি ফ্যামিলি হসপিতাল ডাঃ আলী আফজাল ভূঁইয়া (কাওছার) ।  বাংলাদেশ ইসলামিক ফাউন্ডেশনের পরিচালক একেএম মফিজুর রহমান ।  উপ পরিচালক হসপিটাল আমেরিকা-মোঃ ছানাউল হক ভূঁইয়া । বাংলাদেশ রেলওয়ের সাবেক অডিটর মোঃ শরিফ আহমেদ ভূঁইয়া । ইঞ্জিনিয়ার শামসুল হক আবুধাবী প্রবাসী  । আব্দুল্লাহ আল (মাহমুদ), সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট বাংলাদেশ কর্মাস ব্যাংক । জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভাইস প্রিন্সিপাল অধ্যাপিকা মাহফুজা রফিক । চট্রগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ বিজ্ঞানের অধ্যাপিকা হোসনে আরা চৌধুরী । আমাদের গৌরবের উত্তরাধিকারী, সুরের যাদুকর প্রখ্যাত সুরকার ও সঙ্গীত পরিচালক মুকসুদ জামিল মিন্টু “পূবালী বাতাসে”, “সোয়া চাঁন পাখি (তাঁর সংগ্রহ গান)। “আমার ভাঙ্গা ঘরে ভাঙ্গা চালা”, “চাঁদনী পরশে আমারে কে স্মরণ করে”, “সোয়া উড়িল উড়িল”, “বাজে বংশী রাজ হংসী নাচে হেলিয়া দুলিয়া”, কত না রঙে কত না ঢঙে নাচেছিল তিনি”, এলোমেলো বাতাসে উড়িয়েছে শাড়ীর আঁচল”, নীল অঞ্জনা ঐ নীল নীল চোখে”, আমি অনেক ব্যাথার শ্রাবন পেরিয়ে”, “আমি আর কারো ভালোবাসা চায় না”, কোন এক সন্ধ্যায় হাজার আতঁশবাজি আর সানাইর সুর” সহ এমন সব অসাধারণ গানের সুর সষ্ট্রা ও সংগীত পরিচালক এই খ্যাতিমান পথ্বিকৃত । তিনি এনটিভির চীফ মিউজিক ডিরেক্টর ।  আনোয়ারুল হক ভূঁইয়া সাবেক সিইও ভূঁইয়া কম্পিউটার লিঃ ঢাকা । বিশিষ্ট ব্যাংকার বীর মুক্তিযুদ্ধা আবদুল আওয়াল, ব্যাবস্থাপক বাংলাদেশ কৃ্ষি ব্যাংক দায়ার বাজার শাখা কোম্পানীগঞ্জ, সিলেট । ঐতিহ্যবাহী তালশহর হাই স্কুলের খ্যাতিমান শিক্ষক আজাহারুল ইসলাম সেলিম স্যার । মহান মুক্তিযুদ্ধে রণাঙ্গনের দুঃসাহসিক তরুন সেকশন কমান্ডার বীর মুক্তিযুদ্ধা আলী আফজাল । বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের সাবেক মহাব্যবস্থাপক মাসুদ আহমেদ ভূঁইয়া (শেলী) । শিল্প-সাহিত্যে ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব মোহাম্মদ আহসানউল্লাহ ফরিদ । বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও সমাজসেবক মোঃ সেলিম আহমেদ । বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও সমাজসেবক হাবিবুর রহমান মোল্লা । ধনার্ঢ্য ব্যক্তি ও বিশিষ্ট ব্যবসায়ী মোঃ কামরুজ্জামান ভূঁইয়া ।  ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের চেয়ারম্যান ড. অধ্যাপক এহসানূল হক খাঁন (পিয়াল) । গাইনী রোগ বিশেজ্ঞ সেন্ট্রাল হাসপাতাল ডা. রাজিনা বানু । ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসাপাতালের সহযোগী অধ্যাপক ডাঃ ফিরোজা পারভিন (ডলি) । নাক কান গলা বিশেজ্ঞ ডাঃ তৌফিক আতিক, বঙ্গবন্ধু মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল । ডাঃ আশরাকুন্নাহার এমবিবিএস (বিসিএস স্বাস্থ্য), সহকারি সার্জন ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল । ডাঃ মোঃ ওবায়দুল হক এবিবিএস, (বিসিএস স্বাস্থ্য) বঙ্গবন্ধু মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল ।  ডার্চ বাংলা ব্যাংকের ভাইস প্রেসিডেন্ট কাজী আনোয়ারুল আজিম রিপন । জাতীয় দলে সাবেক কৃতি ফুটবলার ডাঃ কাজী আব্দুল কাদের । মাহতাব জামিল (লিটন) এসেস্টেন্ট এক্সিকিউটিভ অফিসার বাংলাদেশ ইঞ্জিনিয়ার ইনস্টিটিউট । ড. আনিস পারভেজ অধ্যাপক, ইন্ডিপেন্ডেন্ট ইউনির্ভাসিটি । ইফতেহার রানা হিমু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ফার্মেসী বিভাগে আর্নাস ও মাস্টাস পরীক্ষায় প্রথম শ্রেণীতে প্রথম স্থান অধিকার করে উক্ত বিভাগে প্রভাষক হিসাবে যোগদেন । বর্তমানে তিনি আমেরিকা সফটওয়্যার ইঞ্জিয়ার হিসেবে আছেন । সহকারি অধ্যাপক মোঃ মোর্শেদ আলম, এম সাইফুর রহমান কলেজ কোম্পানীগঞ্জ সিলেট । মোঃ আজিজুর রহমান (সুমন) সহকারি অধ্যাপক ডেফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভাসির্টি, আশুলিয়া সাভার। ডাঃ ওবায়দুল হক শিপন এমবিবিএস, এফআরসিএস, (বিসিএস স্বাস্থ্য) বাজিতপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল । সহকারি অধ্যাপক মনিরুল ইসলাম (বিসিএস শিক্ষা) ।  ঢাকা স্টক এ্যাকচেঞ্জ (ডিএসই) বিশিষ্ট ব্যবসায়ী মোঃ গোলাম মোস্তফা । ব্যারিস্টার শাহানারা (পুষ্প) ভূঁইয়া,  অধ্যাপক নর্থ সাউথ ইউনির্ভাসিটি ।  মিজানুর রহমান (সোহাগ)  পুলিশ ইন্সেপেক্টর বাংলাদেশ পুলিশ হেডকোয়াটার ঢাকা । মৌওলানা মোঃ মুজিবর রহমান( কামিল হাসিদ, এম.এ ইসলাম) খতিব নাওঘাট মধ্যপাড়া জামে মসজিদ ও সহকারি অধ্যাপক টনকী সাদেকুল উলুম আলিম মাদরাসা, আখাউড়া ব্রাহ্মণবাড়িয়া । মোঃ নুরুজ্জামান ভূঁইয়া মাসুম (সি.এ), বিশিষ্ট ব্যবসায়ী মালিটোলা ঢাকা । সনেটিয়ার ও গল্পকার মোঃ নাজমূল হক । সু-লেখিকা আইরিন আকতার, তিনি বাংলাদেশ সরকারের স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয়ের অধীনে ঢাকা মেডিকেল কলেজে কর্মরত আছেন । এ্যাভোকেট লাভলী খাতুন, সিলেট জর্জকোট । সাহিত্যিক  ড. সুকান্তা করিম । তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রাষ্ট্র বিজ্ঞান বিভাগে সহকারি অধ্যাপক হিসেবে আছেন । মোঃ শফিউল্লাহ আদনান ( বিসিএস তথ্য) সহকারি পরিচালক চলচিত্র ও প্রকাশনা অধিদপ্তর, তথ্য মন্ত্রনালয় । আতিকুল ইসলাম বিজয় (বিসিএস শিক্ষা) প্রভাষক ব্রাহ্মণবাড়িয়া মহিলা কলেজ -সহ প্রমুখ । ছোট লেখাটিতে নবীন-প্রবীন অনেকের নাম আসলেও সবার নাম ও কর্মকান্ড তুলে ধরা সম্ভব হয়নি। উপোল্লেখিত ব্যক্তিগণে নাম ও তাদের সামান্য পরিচয় দিয়েছি মাত্র । তাছাড়া এখনো প্রায় ৪০০ জন গেজুয়েটদের নাম বাকি রয়েছে । যাঁরা বিভিন্ন ক্ষেত্রে অধ্যায়ন, অধ্যাপনা ও কর্মরত আছেন তাঁদের নাম ও বর্তমান অবস্থান পর্যায়ক্রমে তুলে ধরতে পারলে লেখাটি আংশিক হলেও পূর্ণতা পাবে ।  তাদের মধ্যে এখন বাকি আছে প্রায়  ২৪-২৫ জন এমবিবিএস, এফআরসিএস, ডাক্তার আছেন । অধ্যাপক, সহকারী অধ্যাপক রয়েছে ২৫-৩০ জন । ইঞ্জিনিয়ার রয়েছে ২০-২৫ জন । ব্যাংকার ১৫-২০ জন মতো রয়েছে । চাকুরীজীবি ও ব্যবসা-বাণিজ্য করছে এমন লোকের সংখ্যাও কম নয় ।
নাওঘাট গ্রাম ঊনিশো সালের শুরু থেকে শিক্ষা, শিল্প-সাহিত্য ও সংস্কৃতিতে অর্ত্যান্ত সমৃদ্ধিশালী হিসাবে একক ছত্র আধিপত্য বিস্তারে বিশেষ স্থানে রয়েছে । যাঁদের ভূমিকা অন্ধকারে আলোর দিশারী হয়ে আমাদের আগামী দিনের চলার পথ দেখিয়ে দিচ্ছে । তাঁদের দেখানো পথ স্মরণ করেই এ প্রজন্ম এগিয়ে যাচ্ছে । প্রজম্ম থেকে প্রজম্ম এ ধারা যেভাবে অব্যাহত রেখে চলছে তাতে শুধু নাওঘাট গ্রামেরই নয়, আমাদের এ অঞ্চলের ভবিষ্যৎ প্রজম্মকেও নিজেদের গড়ে তুলতে আরো বেশি উজ্জীবিত করবে ।
লেখক: লোক-সাহিত্যনুরাগী, রাজনীতিক কর্মী ও সংগঠক।





Shares