Main Menu

টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে যাদের উপর থাকবে সকলের নজর

+100%-

রোববার স্বাগতিক বাংলাদেশ ও আফগানিস্তানের ম্যাচের মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছে ক্রিকেটের ক্ষুদ্র সংস্করণ টি-টোয়েন্টির সবচেয়ে বড় ‍আসর বিশ্বকাপ। টি-টোয়েন্টি মানেই ব্যাটে-বলের উত্তেজনাকর জমজমাট লড়াই।

টেস্ট কিংবা ওয়ানডে ম্যাচে দলীয় প্রচেষ্টাই দলের জয়ের ক্ষেত্রে প্রধান ভূমিকা রেখে থাকলেও টি-টোয়েন্টিতে একজনই দলের জন্য দেবদূত হয়ে হাজির হতে পারেন। এই দেবদূত যারা হতে পারেন- তাদের অনেককে নিয়ে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে বাজিকররা ইতোমধ্যে বাজিও ধরে ফেলেছেন।

দলের জন্য দেবদূত হয়ে এলেও প্রতিপক্ষের জন্য রুদ্রমূর্তি হয়ে হাজির হতে পারেন এমন টি-টোয়েন্টি স্পেশালিস্টদের নিয়েই এবারের আয়োজন।

ক্রিস গেইল (ওয়েস্ট ইন্ডিজ)
টি-টোয়েন্টি ম্যাচকে অনেকে ব্যাটসম্যানের খেলা বলে থাকেন। কারণ হিসেবে বলা হয়, বোলার যত কৌশলী ও ক্ষুরধার বলই ছোঁড়েন না কেন, ব্যাটসম্যান সবসময় সেটাকে বাউন্ডারি ছাড়া করার প্রস্তুতি নিয়ে থাকেন। এই বক্তব্যের পক্ষে জ্বলন্ত উদাহরণ ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলের ড্যাশিং ওপেনার ক্রিস গেইল।

গেইল কোনো কারণে ইনজুরড হয়েছেন শুনলেই যেন পরবর্তী ম্যাচের বোলাররা আরাধনায় বসেন, ‘গেইল যেন পরবর্তী ম্যাচে খেলতে না পারেন’! কারণ? এই মারকুটে ব্যাটসম্যান সত্যিই যেন কোনো বলকে বল মনে করেন না!

অসি লিজেন্ড শেন ওয়ার্ন একবার বলেছিলেন, ‘গেইল যখন ব্যাটিং করেন তখন ‍আমার সন্তানদের গ্যালারিতে রাখতে ভয় পাই!’

মারদাঙ্গা ব্যাটিং করে প্রতিপক্ষের বোলারদের কপালের ঘাম শুকিয়ে দেওয়া গেইল বরাবরের মতোই এবারের বিশ্বকাপেও দর্শক-বাজিকরের নজরে থাকছেন।

৩৪টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলে ৩৩ গড়ে ৯৯৯ রান সংগ্রহ করেছেন গেইল। রয়েছে একটি শতক ও ১০টি অর্ধশতক। সর্বোচ্চ ১১৭। বোলিং ঝুলিতেও রয়েছে ১৫টি উইকেট।

লাসিথ মালিঙ্গা (শ্রীলঙ্কা)
মালিঙ্গা ভক্তরা বলে থাকেন, তিনি যখন বল করেন তখন বোলাররা ব্যাট করবেন কী- কোন দিক থেকে কী গতিতে বল আসছে বুঝতেই পারেন না, আর যদি সেটা হয় উইকেট হন্তারক ‘ইয়র্কার’ তাহলেতো কথাই নেই। এ কথা সরাসরি স্বীকার না করলেও অনেক ব্যাটসম্যানই মালিঙ্গাকে বিশ্বের সবচেয়ে বিপজ্জনক বোলার হিসেবে মনে করেন।

২০০৭ ওয়ানডে বিশ্বকাপে দক্ষিণ অাফ্রিকার বিপক্ষে এক ওভারে হ্যাটট্রিকসহ টানা ৪টি উইকেট নিয়েছিলেন মালিঙ্গা।

একেবারেই অল্প রান লক্ষ্য হিসেবে বেঁধে দেওয়া হলেও শ্রীলঙ্কান দলের বোলিং লাইনআপে যখন মালিঙ্গা থাকেন তখনও প্রতিপক্ষের ব্যাটসম্যানদের অনেক হিসেব-নিকেশ করে ব্যাট করতে হয়। কারণ, মালিঙ্গার একটি দুর্দান্ত স্পেলও প্রতিপক্ষের সব ছক এলোমেলো করে দিতে পারে।

মালিঙ্গা ৫০টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচে উইকেট নিয়েছেন ৬০টি। ৩১ রান দিয়ে পাঁচ উইকেট নিয়েছেন এক ম্যাচে।

শহীদ আফ্রিদি (পাকিস্তান)

কোনো ম্যাচে মুখোমুখি হওয়ার আগে প্রতিপক্ষের যে খেলোয়াড়দের নিয়ে বিশেষভাবে পরিকল্পনা সাজাতে হয় তাদের মধ্যে একজন হলেন পাকিস্তানের শহীদ আফ্রিদি। তবে, আফ্রিদি যেদিন জ্বলে ওঠেন সেদিন শত ছক কষেও তাকে প্রতিরোধ করা যায় না।

একা আফ্রিদিই পুরো ম্যাচের হিসেবে নিকেশ বদলে দিতে পারেন। ব্যাটিংয়ে আফ্রিদির দিন মানে প্রতিপক্ষের বোলিং লাইনআপ তছনছ হয়ে যাওয়া। আর বোলিং-ফিল্ডিংয়ে দারুণ পারফর্ম করে দলকে নিশ্চিত পরাজয়ের হাত থেকে আফ্রিদি বাঁচিয়েছেন-এমন উদাহরণ আছে অনেক। তবে, আফ্রিদি নিয়ে প্রতিপক্ষের আশার কথা হলো ‘আফ্রিদি সহজে জ্বলে ওঠেন না’।

৭০টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলে প্রায় ১৯ গড়ে ১০৪৪ রান সংগ্রহ করেছেন এই মারদাঙ্গা ব্যাটসম্যান। শতক না থাকলেও অর্ধশতক রয়েছে ৪টি। আর বোলার আফ্রিদির ঝুলিতেও রয়েছে ৭৩টি উইকেট। ৪ উইকেট নিয়েছেন দুইবার।

সবচেয়ে বড় কথা হলো, সদ্য সমাপ্ত এশিয়া কাপে ‍আফ্রিদির ব্যাটিং তাণ্ডব প্রতিপক্ষের বোলারদের ঘুম হারাম করে দিয়েছে এটা নিঃসন্দেহে বলা যায়।

সাকিব আল হাসান (বাংলাদেশ)
কখনো বোলিংয়ে, কখনো ব্যাটিংয়ে-আবার প্রয়োজনীয় মুহূর্তে ফিল্ডিংয়ে দলের ত্রাতা হিসেবে আবির্ভূত হওয়ার অসংখ্য উদাহরণ আছে বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসানের। বিশ্ব ক্রিকেটে টাইগার দলকে যারা পরাশক্তির কাতারে নিয়ে যাওয়ার প্রচেষ্টায় অবদান রাখছেন তাদের মধ্যে সাকিবের নাম সর্বাগ্রে আসবে। এজন্যই তাকে নিয়ে প্রতিপক্ষ দলের আলাদা ছক কষতে হয়। সাকিব যেদিন হাসেন, সেদিন বাংলাদেশও হাসে। বিশ্বকাপের চূড়ান্ত পর্ব শুরুর আগে দু’টি প্রস্তুতি ম্যাচেও সেই প্রমাণ হয়েছে।

ধুম ধাড়াক্কা ব্যাটিং বলতে টি-টোয়েন্টিকে বোঝানো হলেও সাকিবের কাছে বিশেষ কোনো সংজ্ঞা নেই। সাকিবের বেলায়, যে বলটি মারার সেটিকে মাঠ ছাড়া হতেই হবে। এ কারণে সাকিব যখন ব্যাটিং প্রান্তে থাকেন তখন বাংলাদেশ দলের স্কোরকার্ডে জমা হতে থাকে শুধু চার-ছক্কা। টাইগার দলের সমর্থকদের পাশাপাশি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে সাকিবের ওপর নজর থাকবে একথা নির্দ্বিধায় বলা যায়।

২৮টি টি-টোয়েন্টি খেলে ২০ গড়ে ৫৬৬ রান সংগ্রহ করেছেন সাকিব। ৩টি অর্ধশতকের মালিক সাকিবের সর্বোচ্চ ৮৪। স্ট্রাইক রেট ১২৮।

অলরাউন্ডার সাকিবের বোলিং ঝুলিতে রয়েছে ৩৬ উইকেট। ৪ উইকেট নিয়েছেন দুইবার।

বিরাট কোহলি (ভারত)

বিশ্ব ক্রিকেটের দ্বিতীয় শচীন বলা হয় তাকে। নিজের ব্যাটিং ধারাবাহিকতাই এ খেতাব দিয়েছে তাকে। তিনি বিরাট কোহলি। দলের প্রয়োজনে কোহলি হতে পারেন সবচেয়ে ঠাণ্ডা মাথার খেলোয়াড়টি- ‍আবার দলের প্রয়োজনেই প্রতিপক্ষের বোলারদের কাছে রুদ্ররূপে আবির্ভূত হন। কোনো কোনো ব্যাটসম্যান ওয়ানডে-টেস্ট স্পেশালিস্ট খেতাব পেয়ে থাকলেও কোহলি যেন ‘স্পেশালিস্ট ইন অল ফরম্যাটস’।

কোহলি একাই জয়-পরাজয়ের ক্ষেত্রে প্রধান ‘হিসাব’ হয়ে যান। ধারাবাহিক কোহলির মারকুটে ব্যাটিং টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপেও উপভোগ করবেন দর্শক-এমনটাই প্রার্থনা প্রথম টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপজয়ী দল ভারতের।

২১টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলা কোহলির সংগ্রহ ৩৪ গড়ে ৫৮৭ রান। সর্বোচ্চ ৭৮ ম্যাচের ইনিংস খেলা কোহলির অর্ধশতক রয়েছে ৪টি।

ডেল স্টেইন (দক্ষিণ আফ্রিকা)
দক্ষিণ আফ্রিকা দলের বোলিং লাইনআপে ডেল স্টেইন রয়েছেন-এমনটি নিশ্চিত হওয়া গেলে প্রতিপক্ষের ব্যাটসম্যানরা মানসিকভাবে যেমন দুর্বল হয়ে পড়েন, তেমনি অনেক বেশি আত্মবিশ্বাসী হয়ে ওঠেন দক্ষিণ আফ্রিকা দলেরই খেলোয়াড়রা।

ডেল স্টেইনের একটি মাত্র বোলিং স্পেলে এলোমেলো হয়ে গেছে প্রতিপক্ষ দলের শক্তিশালী ব্যাটিং লাইনআপ-এমন অসংখ্য উদাহরণও রয়েছে রেকর্ড বইয়ে। বোলিং তাণ্ডবের কারণে অনেক ধারাভাষ্যকার ‘স্টেইন গান’ খেতাবও দিয়েছেন তাকে।

এবারের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ডেল স্টেইন একাই দলের জয়-পরাজয়ের হিসাবে অনেক ভূমিকা রাখবেন এটা নিঃসন্দেহেই বলা যায়। স্টেইনের গতির জাদু ধারাবাহিক থাকলে দক্ষিণ আফ্রিকা শিরোপা জিতবে এমন প্রত্যাশা করা এতটুকুনও বাড়াবাড়ি হবে না।

৩৩টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলা স্টেইন প্রতিপক্ষের উইকেট খেয়েছেন ৪৬টি। রান খরচেও তিনি বিশ্বের অন্যতম কৃপণ বোলার। তার বোলিং গড় প্রায় ১৬। – See

ডেভিড ওয়ার্নার (অস্ট্রেলিয়া)

অ্যাডাম গিলক্রিস্ট-ম্যাথু হেইডেনদের বিদায়ের পর মনে করা হয়েছিল, অসি ব্যাটিং লাইনআপে হার্ডহিটার ব্যাটসম্যান আর এমন আসবে না। অস্ট্রেলীয় ক্রিকেটপ্রেমীদের এমন আশঙ্কাকে ব্যাটিংয়ের ক্ষুরধারে উড়িয়ে দিতে আবির্ভূত হন ডেভিড ওয়ার্নার। ওয়ার্নারের বিধ্বংসী ব্যাটিংকে অনেকে গিলক্রিস্টের চেয়েও টর্নেডোরূপী বলে আখ্যা দিতে থাকেন। ক্রিকেটপ্রেমীদের পক্ষ থেকে এই উপাধি পেয়ে ব্যাট হাতেই কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে থাকেন ওয়ার্নার।

টেস্ট-ওয়ানডে দলে খেললেও ওয়ার্নারের ব্যাটিং স্টাইলে মনে হয় তিনি টি-টোয়েন্টি খেলতেই ক্রিকেটে এসেছেন। অসি ক্রিকেটপ্রেমীদের প্রত্যাশার নাম যেমন ওয়ার্নার, তেমনি ওয়ার্নার বাজিকরদের অন্যতম বাজির ঘোড়াও।

৪৭টি টি-টোয়েন্টি খেলা ওয়ার্নার রান সংগ্রহ করেছেন ২৯ গড়ে ১৩০০। শতক না করলেও ১০টি অর্ধশতকের মালিক এ অসি ব্যাটসম্যানের এক ইনিংসে সর্বোচ্চ সংগ্রহ ৯০* রান।

বাজির ঘোড়া আরও যারা
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে নিজের দলের ত্রাতা হিসেবে আরও যেসব খেলোয়াড় মারকুটে ব্যাটসম্যান অথবা বিধ্বংসী বোলার রূপে আবির্ভূত হতে পারেন এদের তালিকায় রয়েছেন বাংলাদেশের মাশরাফি বিন মর্তুজা, মুশফিকুর রহিম, আবদুর রাজ্জাক; ভারতের রোহিত শর্মা, যুবরাজ সিং; পাকিস্তানের উমর আকমল, উমর গুল, সাঈদ আজমল; শ্রীলঙ্কার অজন্তা মেন্ডিস, তিলকারত্নে দিলশান, কুমার সাঙ্গাকারা, আফগানিস্তানের হামজা হাতক; অস্ট্রেলিয়ার মিশেল জনসন, শেন ওয়াটসন; ইংল্যান্ডের স্টুয়ার্ট ব্রড, ইয়ন মরগান; হংকংয়ের মার্ক চ্যাপম্যান; আয়ারল্যান্ডের কেভিন ও’ব্রেইন; নিউজিল্যান্ডের ব্রেন্ডন ম্যাককালাম, রস টেলর, কোরি অ্যান্ডারসন, টিম সাউদি; দক্ষিণ আফ্রিকার এফ ডু প্লেসিস, কুইনটন ডি কক, ওয়েস্ট ইন্ডিজের সুনীল নারায়ণ ও জিম্বাবুয়ের এলটন চিগম্বুরা।

তবে নজর যাদের দিকেই থাকুক, অনিশ্চয়তার খেলায় কে কোন দিন জ্বলে ওঠেন সেটা বলা মুশকিল। কেউ নজরে থাকুক আর না থাকুক- টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ যে উত্তেজনায় ঘাম ঝরাবে এমনটি বলা নিশ্চয় বাড়াবাড়ি হবে না।






Shares