Main Menu

উত্সবের মাঝে ভোগান্তির আশঙ্কা

+100%-

টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ চলাকালে খেলোয়াড়দের নিরাপত্তা এবং খেলাগুলো নির্বিঘ্নে শেষ করতে ট্রাফিক ব্যবস্থায় ব্যাপক পরিবর্তন আনতে চলেছে পুলিশ। খেলার দিনগুলোতে স্টেডিয়ামের আশপাশের এলাকায় গাড়ি চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা হবে। অনেকটা ২০১১ সালের বিশ্বকাপ ক্রিকেটের আদলেই ট্রাফিক ব্যবস্থা সাজানো হচ্ছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

১৬ মার্চ থেকে বাংলাদেশে শুরু হচ্ছে আইসিসি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ক্রিকেট। চলবে ৬ এপ্রিল পর্যন্ত। ঢাকার শেরেবাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়াম, চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়াম ও সিলেট স্টেডিয়ামে খেলা হবে। মোট ৩৫টির মধ্যে সিলেটে ছয়টি, চট্টগ্রামে  ১৫টি ও ঢাকায় ১৪টি  ম্যাচ হবে।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ-ডিএমপির যুগ্ম কমিশনার (ট্রাফিক) মীর রেজাউল আলম প্রথম আলোকে জানান, রাজধানীতে যান চলাচল নিয়ন্ত্রণে পুলিশের একটি বিশেষ দল কাজ করবে। তিনি বলেন, খেলোয়াড়দের নিরাপত্তা এবং খেলাগুলো যাতে নির্বিঘ্নে হতে পারে, সে জন্য ট্রাফিক ব্যবস্থায় পরিবর্তন আসবে।

রাজধানী ঢাকার পাশাপাশি চট্টগ্রাম ও সিলেটে একই ব্যবস্থা নিয়েছে পুলিশ। দুই মহানগরের ট্রাফিক ব্যবস্থায়ও বিশেষ পরিবর্তন আনা হচ্ছে।

ডিএমপির ট্রাফিক বিভাগের পশ্চিম শাখার এলাকায় পড়েছে মিরপুর স্টেডিয়াম। তাই খেলা চলাকালে ট্রাফিক ব্যবস্থা সমন্বয় করবে তারা। এই বিভাগের উপকমিশনার ইকরামুল হাবিব জানান, খেলোয়াড়দের চলাচলের জায়গা নির্বিঘ্ন রাখা, দর্শকেরা যাতে নির্বিঘ্নে মাঠে আসা-যাওয়া করতে পারেন, সে জন্য বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। হোটেল থেকে মাঠ এবং মাঠ থেকে হোটেলে আসা-যাওয়ার সময় খেলোয়াড়দের ভিআইপি মর্যাদা দেওয়া হবে। তাই ওই সময়ে সড়কে যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা হবে। পাশাপাশি খেলার দিন বেশ কিছু সড়কে যান চলাচল সীমিত করে ডাইভারশন দেওয়া হবে।

ইকরামুল হাবিব আরও বলেন, খেলোয়াড়েরা সাধারণত দুই ঘণ্টা আগে মাঠে ঢোকেন। সেই অনুযায়ী সড়কে যান চলাচলের গতিমুখ ঘুরিয়ে দেওয়া হবে।

ডিএমপির প্রাথমিক পরিকল্পনা অনুযায়ী খেলা চলাকালে শুধু বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) স্টিকারযুক্ত গাড়ি, ম্যাচ অফিশিয়ালদের গাড়ি, খেলোয়াড় বহনকারী গাড়ি, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থার গাড়ি, খেলাসংশ্লিষ্ট জরুরি সেবায় নিয়োজিত গাড়ি এবং খেলা দেখতে আসা টিকিটধারী দর্শকদের যানবাহন ছাড়া অন্য সব যানবাহনকে খেলার দিন খেলা শুরুর সাড়ে তিন ঘণ্টা আগে থেকে খেলা শেষ হওয়া পর্যন্ত বিকল্প সড়কে চলাচল করতে হবে।

মিরপুর ১০ নম্বর গোলচত্বর থেকে মিরপুর সনি সিনেমা হল ক্রসিং পর্যন্ত, মিরপুর টিঅ্যান্ডটি ক্রসিং হতে প্রশিকা ক্রসিং পর্যন্ত, আগারগাঁও লাইট ক্রসিং হতে মিরপুর ১০ নম্বর গোলচত্বর পর্যন্ত এবং মিরপুর প্রশিকা মোড় থেকে কোনো গাড়ি, রিকশা, ভ্যান মিরপুর স্টেডিয়ামের দিকে যেতে পারবে না।

এ সময় বিকল্প সড়ক হিসেবে তেজগাঁওয়ের খেজুরবাগান থেকে মিরপুর ১০ নম্বর, মিরপুর-১২-এর দিকে চলাচলরত যানবাহনগুলো খেজুরবাগান থেকে ঘুরে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ ক্রসিং হয়ে মিরপুর রোড-টেকনিক্যাল ক্রসিং-মিরপুর ১ নম্বরের সনি হল ক্রসিং, চিড়িয়াখানা রোড-প্রশিকা ক্রসিং-ইয়াং থাই চাইনিজ রেস্টুরেন্ট ক্রসিং হয়ে মিরপুর ১২ নম্বরের দিকে চলাচল করতে পারবে।

এ ছাড়া কোনো বাণিজ্যিক যানবাহন আগারগাঁও লাইট ক্রসিং থেকে রোকেয়া সরণির উত্তর দিকে যেতে পারবে না। শ্যামলী ক্রসিং ব্যবহার করে মিরপুর রোডে চলাচল করতে পারবে।

আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিলের (আইসিসি) তালিকা অনুযায়ী ঢাকার মিরপুর শেরেবাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে ১৬ মার্চ উদ্বোধনী ম্যাচ দিয়ে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ শুরু হবে। উদ্বোধনী ম্যাচ শুরু হবে বেলা সাড়ে তিনটায়। উদ্বোধনী ম্যাচের পর ২১ মার্চ পর্যন্ত বাছাই পর্বের সব খেলা হবে চট্টগ্রাম ও সিলেটে।

ঢাকার পরবর্তী ম্যাচগুলো হবে ২১ মার্চ সাড়ে সাতটায়, ২৩ মার্চ দুটি ম্যাচ সাড়ে তিনটায় ও সাড়ে সাতটায়, ২৫ মার্চ সাড়ে সাতটায়, ২৮ মার্চ দুটি ম্যাচ সাড়ে তিনটায় ও সাড়ে সাতটায়, ৩০ মার্চ দুটি ম্যাচ সাড়ে তিনটায় ও সাড়ে সাতটায়, পয়লা এপ্রিল দুটি ম্যাচ সাড়ে তিনটায় ও সাড়ে সাতটায়, ৩, ৪ ও ৫ এপ্রিল একটি করে ম্যাচ হবে সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায়।

এ ছাড়া ১৭ মার্চ তিনটায় ও সাড়ে সাতটায় দুটি, ১৯ মার্চ তিনটায় ও সাড়ে সাতটায় দুটি অনুশীলন ম্যাচ রয়েছে মিরপুরে। ১৮ ও ১৯ মার্চ ফতুল্লায় রয়েছে দুটি করে অনুশীলন ম্যাচ।

ডিএমপি জানিয়েছে, খেলার দিনগুলোতে ম্যাচ শুরুর প্রায় তিন ঘণ্টা আগে হোটেল থেকে খেলোয়াড়েরা মাঠের উদ্দেশে রওনা হবেন। ওই সময়ে  নগরবাসীকে কিছুটা ভোগান্তিতে পড়তে হতে পারে।

বিশ্বকাপ চলাকালে খেলোয়াড়েরা ঢাকার শেরাটন ও সোনারগাঁও হোটেলে থাকবেন। তাঁদের মাঠে নেওয়া হবে একই সময়ে। মাঠে নেওয়ার সময়ে শেরাটন মোড় থেকে ফার্মগেট, বিজয় সরণি, রোকেয়া সরণি, শেওড়াপাড়া, কাজীপাড়া হয়ে মিরপুর স্টেডিয়ামে যাওয়ার সড়কটিতে যান চলাচল সীমিত থাকবে। এ কারণে এসব সড়কের সংযোগ সড়কগুলোতে আটকে থাকতে হতে পারে সাধারণ নাগরিকদের। আর খেলা না থাকলে অনুশীলনের জন্য খেলোয়াড়েরা যখন মাঠে যাবেন, তখনও এ ধরনের ট্রাফিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছে ডিএমপি।

যানজটের মহানগর ঢাকায় যান চলাচল সীমিত করার কারণে যানজট অসহনীয় হবে কি না—জানতে চাইলে ডিএমপির কর্মকর্তারা বলেন, ‘কিছুটা সমস্যা হয়তো হবে।’ তবে বিশ্বকাপের মতো একটি আন্তর্জাতিক ইভেন্ট আয়োজন এবং এ বিষয়ে দেশের মানমর্যাদা, খেলোয়াড়দের নিরাপত্তার বিষয়টি মাথায় রেখে এটাকে সহজভাবে নেওয়ার অনুরোধ জানান তাঁরা। পাশাপাশি এই বলে আশ্বস্ত করেন, ‘জনদুর্ভোগ যাতে না বাড়ে, সে বিষয়ে সর্বোচ্চ চেষ্টা থাকবে পুলিশের।’

সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের উপকমিশনার (উত্তর) এজাজ আহমেদ জানালেন, খেলোয়াড়দের আনা-নেওয়ার সময় ভিআইপি মর্যাদা দেওয়া হবে। তাই ওই সময়ে যান চলাচল কিছুটা নিয়ন্ত্রণে রাখা হবে। তবে খেলা চলার সময় যান চলাচল স্বাভাবিকই রাখা হবে বলে জানান তিনি। খেলার সময় যান চলাচল নিয়ন্ত্রণে জনজীবনে তেমন কোনো নেতিবাচক প্রভাব পড়বে না বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) ট্রাফিক বিভাগের উপকমিশনার ফারুক আহমেদ বলেন, খেলোয়াড়দের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য জনদুর্ভোগ যতটা কম রাখা যায়, সে চেষ্টাই করবে সিএমপি। খেলোয়াড়দের মাঠে আসা-যাওয়ার সময় যান চলাচল সীমিত করা হবে। ইতিমধ্যেই চট্টগ্রামে পৌঁছে গেছে কয়েকটি দল। তারা চট্টগ্রামের হোটেল আগ্রাবাদ ও পেনিনসুলায় থাকছে। খেলোয়াড়দের মাঠে নেওয়ার সময় দীর্ঘ সময় যাতে মানুষকে রাস্তায় আটকে থাকতে না হয়, সে জন্য দুটি দলকেই একসঙ্গে মাঠে নেওয়ার ব্যবস্থা রেখেছে সিএমপি। খেলোয়াড়দের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা দেওয়ার পাশাপাশি জনগণের বিষয়টি মাথায় রেখে এটা করা হচ্ছে বলে জানালেন সিএমপির এই কর্মকর্তা। খেলা চলার সময় স্টেডিয়াম এলাকায় কোনো সড়ক বন্ধ রাখা হবে না বলেও জানান তিনি।






Shares