কেমন কাটে প্রবাসী বাঙ্গালীদের ঈদের দিন
আমিনুল ইসলাম, কাতার প্রতিনিধি : সৌদি আরব, কাতার, কুয়েত, দুবাই, সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ মধ্যপ্রাচ্যের বেশির ভাগ দেশে আজ উদযাপিত হচ্ছে পবিত্র ঈদু উল ফিতর।
এসব দেশে বসবাস করছেন প্রবাসী বাংলাদেশীদের একটি বিরাট অংশ। যারা পরিবার পরিজন ছাড়াই থাকেন।কীভাবে কাটছে এই প্রবাসীদের ঈদ? আসুন জেনে নেয়া যাক কেমন কাটে মধ্যপ্রাচ্যে ‘ব্যাচেলরদের’ ঈদের দিনটি।
মঙ্গলবার চাঁদ দেখার ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গেই প্রবাসী বাংলাদেশিদের সবচেয়ে বেশি ভিড় লক্ষ করা গেছে সেলুনগুলোতে। কর্মব্যস্ত জীবনে ঈদের জন্য নিজেকে প্রস্তুত করার এটাই সময় প্রবাসীদের।
ফজর নামাজের পর সবার কানে মোবাইল।দিনের শুরুতে দেশের প্রিয়জনকে ঈদের শুভেচ্ছা জানাতে সবাই ব্যস্ত।অতপর ঈদের নামাজের প্রস্তুতি শুরু।
ঈদের নামাজের জন্য অধিকাংশ প্রবাসীর প্রথম পছন্দ পাঞ্জাবী। তবে কেউ কেউ এ্যারাবিয়ান পোশাক তোব (জুব্বা), সারওয়াল এবং মাথায় সেমাগ (রুমাল)ও পরে থাকেন।
প্রস্তুতি যখন শেষ তখন দল বেঁধে ছুটে চলা মসজিদ পানে।নামাজ শেষে একে অপরকে বুকের সাথে মিলেয়ে আপন করে নেওয়া।নামাজ শেষে বাসায় ফিরে সবাই মিলে নাস্তা করা। তবে এই নাস্তায় পরোটা ও মাংস প্রাধান্য পায়।
নাস্তা শেষে চলে এক দীর্ঘ ঘুম। ঈদের পূর্বে অধিকাংশ প্রবাসীকে নির্ঘুম কর্মব্যস্ত থাকতে হয়। তাই পূর্বের জমে থাকা ঘুম সুদে আসলে উসুল করার এটাই প্রবাসীদের মোক্ষম সুযোগ।ঘুম থেকে উঠে লাঞ্চ,তাতে থাকে বিশেষ আয়োজন।
প্রিয় বন্ধুকে আগেই আমন্ত্রন করে আনা হয় নিজ বাসায় অথবা নিজেই বন্ধুর বাসায় মেহমান হন। বন্ধু বান্ধব সবাই মিলে এক সাথে খাওয়া প্রবাসীদের ঈদ আনন্দে ভিন্ন মাত্রা যোগ করে।
দুপুরে খাবার পর সবাই মিলে টিভি সেটের সামনে বসে চলতে থাকে আড্ডা।এক আড্ডায় দুপুর গড়িয়ে বিকেল।বিকেলে সবাই মিলে বাইরে বের হওয়া। প্রবাসে প্রায় সব দেশেই বাংলাদেশী অধ্যুষিত কিছু এলাকা থাকে। এসব এলাকাতেই ঈদের বিকেলের আড্ডাটা জমজমাট হয়।এই আড্ডায় সন্ধ্যা পেরিয়ে রাত হয়ে যায়। অত:পর নিজ নিজ গন্তব্যে ফিরে যাওয়া। সাধারণত এভাবে কাটে প্রবাসীদের ঈদের দিনটা।তবে যারা স্বপরিবারে প্রবাসে থাকেন তাদের ঈদের আনন্দ ব্যাচেলরদের ঈদ আনন্দ থেকে অনেক গুন বেশি।
দুঃখজনক হলেও সত্য অনেক প্রবাসী ঈদের দিনও ছুটি পান না।বিশেষ করে যাদের ডিউটি হসপিটাল, ফামের্সী খাবার হোটেল, আবাসিক হোটেল, মুদির দোকান এবং ক্লিনারের। তারা এক বুক ব্যাথা নিয়ে ঈদের দিনও ডিউটি করেন এবং প্রবাসে এদের সংখ্যাই বেশি।
আর একটি অপ্রিয় সত্য হলো প্রবাসী ঈদে বুকের ভিতর কান্না চেপে রেখে মুখে হাসি ফুটানোর ব্যর্থ চেষ্টা করেন।একটু চিন্তা করলেই বুঝা সম্ভব যেখানে নেই মা-বাবা, ভাই-বোন, ছেলে-সন্তান, আত্মী-স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশী সেখানে কীভাবে ঈদের আনন্দ থাকতে পারে?
এভাবে বছরের পর বছর প্রবাসীরা ঈদ করে যান।নিজেকে মমের মত জ্বালিয়ে অন্যকে আলোকিত করেন।