Main Menu

আখাউড়ায় বিদ্যালয়ের সামনে ভাগাড়, অসুস্থ হচ্ছে শিক্ষার্থীরা

+100%-

পরিস্থিতি বোঝাতে পকেট থেকে আতরের শিশি বের করে দেখালেন শিক্ষক রাজু আহমেদ মামুন। আক্ষেপের সুরে বলেন, ‘একে তো গরম। তার ওপর মাঝে মাঝে বিদ্যুৎ থাকে না। সঙ্গে যোগ হয়েছে দুর্গন্ধ। সব মিলিয়ে ক্লাসে থাকা। ‘

ষষ্ঠ শ্রেণি পড়ুয়া বুশরা তালুকদারের সঙ্গে যোগ করে বলল, ‘গন্দের কারণে ক’দিন আগে ত আমি বমি কইরা দিছি। গন্দের কারণে ইস্কুলে আইতাম মন চায় না। ‘ সহপাঠী নাজিয়া সুলতানা তোহা সেদিনের ঘটনা বর্ণনা করে বলে, ‘আমরা তারে বাড়িত লইয়া গেছি। গন্দের কারণে অনেকে ইস্কুলে আইয়ে না। ‘

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া পৌর এলাকার বাংলাদেশ রেলওয়ে উচ্চ বিদ্যালয়ে সম্প্রতি গেলে এমন অভিব্যক্তি জানায় শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। বিদ্যালয়ের সীমানা ঘেঁষেই পৌরসভার ময়লার ভাগাড়, যা বিদ্যালয়ের মূল ভবন থেকে মাত্র দু-তিন শ গজ দূরে। বাতাস এলে দুর্গন্ধের মাত্রা এতটা বাড়ে যে শ্রেণিকক্ষে এমনকি বিদ্যালয় মাঠে থাকাও দায় হয়ে পড়ে। ১৯২০ সালে প্রতিষ্ঠিত উপজেলার প্রসিদ্ধ এ বিদ্যালয়টির ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা এক হাজারের ওপর।

এদিকে ময়লার ভাগাড়টি সড়কের পাশে হওয়ায় পথচারীদেরও দুর্ভোগের শেষ নেই। ওই সড়কটি জেলা সদরে যাওয়ার প্রধান সড়ক বিধায় প্রতিদিন হাজারো মানুষ চলাচল করে। চলার পথে নাক চেপে ধরেও তাঁরা এ দুর্গন্ধ থেকে মুক্তি পান না। ভাগাড়ের আশপাশের অন্তত এক-দু শ গজ এলাকায় দুর্গন্ধটা বেশ তীব্র অনুভূত হয়। যার জানা থাকা সে অনেকে দূরে থাকতেই শ্বাস বন্ধ করে নেন!

সরজমিনে গিয়ে গন্ধের তীব্রতা অনুভব করা যায়। পৌর এলাকার হরিজন কলোনির ঠিক পাশ ধরে যে পথটি জেলা সদরে গেছে সেটি ধরে যাওয়ার সময় উৎকট গন্ধে দম বন্ধ হয়ে আসার জোগাড়। এ প্রতিবেদককে বহনকারী ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার চালক কথা প্রসঙ্গে বলেন, ‘কোনো কারণে যদি ট্রেইনের লাইগ্যা রেলগেইট (আখাউড়া-সিলেট পথ) বন্দ থাকতো তাইলে বুজতেন গন্দডা কিতা। ‘ রেলগেইটের ঠিক পাশেই অন্তত ১০-১২ শতাংশ জায়গাজুড়ে নিয়মিত ময়লা ফেলা হয়।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পৌরসভার তত্ত্বাবধানে পৌর এলাকার পরিচ্ছন্নতার কাজ শেষে উল্লেখিত স্থানে ময়লা ফেলা হয়। সার্ভ বাংলাদেশ নামে একটি প্রতিষ্ঠানকে পরিচ্ছন্নতার দায়িত্ব দিয়ে রেখেছে পৌরসভা। গত কয়েকমাস ধরে পৌরসভার পক্ষ থেকে বাড়ি বাড়ি গিয়ে ময়লা আনার কার্যক্রম শুরু করার পর এর পরিমাণ বেড়ে গেছে। প্রতিদিন ওই জায়গাতে ছোট ছোট ভ্যানে করে আট-দশ বার ময়লা ফেলা হয় বলে ধারণা পাওয়া যায়। শুরুর দিকে ছোট একটি জায়গাজুড়ে ময়লা ফেলা হলেও এখন অনেকটা বড় জায়গাজুড়ে ময়লা ফেলা হচ্ছে।

কথা হলে রেলওয়ে উচ্চ বিদ্যালয়ে দশম শ্রেণির ছাত্র আশরাফুল ইসলাম বলে, ‘ময়লার দুর্গন্ধের কারণে ক্লাস করা দায় হয়ে পড়ে। আমি নিজেও একদিন বমি করে দিয়েছি। আসার পথেও এ ময়লার গন্ধ সহ্য করে আসতে হয়। ‘

কথা বলার সময় জড়ো হয় রাকিবুল ইসলাম সিয়াম. খায়রুল ইসলাম, রৌশাদ আহমেদ মৃদুল, নাজিবা সুলতানা, সিনথিয়া আফরোজ, তাসনিহা হক মহিমাসহ আরো কয়েক শিক্ষার্থী। ময়লার ভাগাড় বিদ্যালয়ের পাশ থেকে সরানোর দাবি তুলেছে তারা। ওই শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, ময়লার কারণে তারা না পারে ক্লাস করতে না পারে বিদ্যালয়ের মাঠে খেলাধুলা করতে। এ ছাড়া দুর্গন্ধের কারণে অনেক শিক্ষার্থী বিদ্যালয়ে আসতেও চায় না বলে জানায় তারা।

বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণির শ্রেণিশিক্ষক মো. নাহিদ হাসান বলেন, ‘দুর্গন্ধটা খুব বাজে আকারের। বাতাস এলে দুর্গন্ধটা খুব বেড়ে যায়। তখন বিদ্যালয়ে থাকাটা কষ্ট হয়ে পড়ে। ‘ ময়লা ভাগাড়ে মাঝে মাঝে আগুন দিয়ে পোড়ানো হয় বলেও জানান ওই শিক্ষক।

মোবাইল ফোনে কথা হলে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আসাদুজ্জামান খান দুর্গন্ধের বিষয়টি স্বীকার করেন। এ প্রতিবেদককে তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে শিগগিরই চিঠি দেওয়া হবে। ‘

আখাউড়া পৌরসভার সচিব মো. আলাউদ্দিনের মোবাইল ফোনে কথা হলে, এ প্রতিবেদকের কাছে বিষয়টি জানা মাত্র মেয়রের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেন। ফোন করায় রাগ হয়ে রেখে দিলেন কি না এমন প্রশ্নের জবাবে পরে তিনি আবার বলেন, ‘আমি জার্নিতে আছি বলে হয়তো লাইনটা কেটে গেছে। আমি এখানে নতুন যোগদান করেছি বলে ঠিক করে কিছু বলতে পারছি না। ‘

আখাউড়া পৌরসভার উপসহকারী প্রকৌশলী মো. ফয়সাল আহমেদ বলেন, ‘বর্জ্যগুলো ফেলতে ফেলতে উঁচু হয়ে যাওয়ায় বাতাসে দুর্গন্ধ ছড়ায়। এখন নিচু করে দেওয়া হয়েছে। নিচু হলে ও বৃষ্টি পড়লে দুর্গন্ধটা আর থাকবে না। ‘

প্রতিবেদন : কালেরকন্ঠ






Shares