আখাউড়া পৌরসভা নির্বাচন :: চলছে শেষ মুহূর্তের প্রচার প্রচারনা
ডেস্ক ২৪:: ১৯৯৯ সালের ১২ ডিসেম্বর আখাউড়া উপজেলার উত্তর ও দক্ষিণ ইউনিয়নের প্রায় ৮.৩৩ বর্গ মিটার আয়তন নিয়ে ৯টি ওয়ার্ডের সমন্বয়ে গঠিত হয় আখাউড়া পৌরসভা। এ পৌরসভার অধিকাংশ মানুষই পেশায় ব্যবসায়ী ও চাকুরিজীবী। আগামী ৩০ ডিসেম্বর টানা চতুর্থবারের মতো আখাউড়া পৌরসভা নির্বাচনের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। আগামী ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হবে এ নির্বাচন। প্রচারনা শেষ মহূর্তে জমে উঠেছে আখাউড়া পৌরসভা নির্বাচন। এবার প্রথম বারের মতো দলীয় প্রতিকে নির্বাচন হওয়ায় এতে যোগ হয়েছে ভোটারদের মাঝে আলাদা ইমেজ। নির্বাচন শেষ মুহূর্তে নৌকা- ধানের শীষের লড়াই জমে উঠেছে। উঠেছে।
তবে এই ভোটের লড়াই ক্ষমতার কোন পালা বদল হবেনা। নৌকা আর ধানে কার কত জনপ্রিয়তা রয়েছে তার একটি চিত্র ফুটে উঠবে। তাই এ নির্বাচনকে ঘিরে দুই প্রতিদ্বন্ধী দল আওয়ামীলীগ ও বিএনপির মধ্যে শুরু হয়েছে ব্যাপক তোড়জোড়। প্রধান দুই দলের প্রার্থীসহ রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী ও সমর্থকরা ইতিমধ্যে ব্যাপক প্রচার প্রচারনা শুরু করে দিয়েছে। এ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে প্রতিটি পাড়া মহল্লা ও অলিগলিতে চলছে এক প্রকার উৎসবের আমেজ।
প্রার্থীরা তাদের দলীয় সমর্থন নিয়ে নাওয়া খাওয়া ভূলে ভোটারদের কাছে ছোটে চলছেন। এ নির্বাচনে আওয়ামীলীগ সমর্থিত প্রার্থী বর্তমান মেয়র ও জেলা আওয়ামীলীগ সদস্য তাকজিল খলিফা কাজলের (নৗকা) বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক হাজী মন্তাজ মিয়া (ধানের শীষ) প্রতিকে নির্বাচন করছেন।
দীর্ঘ ৭ বছর পর নৌকা-ধানের শীষের লড়াই বেশ জমে নির্বাচনি উত্তাপ ছড়িয়ে পড়েছে ঘরে ঘরে। চলছে গনসংযোগ আর উঠোন বৈঠক। বর্তমান মেয়র তাকজিল খলিফা কাজল দীর্ঘ ৪ বছর মেয়র পদে থাকা কালে পৌর এলাকায় রাস্তাঘাট, ড্রেন, কালভার্টসহ নানামুখি উন্নয়ন কাজ করেন। দলমত নির্বিশেষে সকলের কাছে একজন সদালাপী মানুষ হিসাবে এখনো আস্তার প্রতিক হয়ে আছে। তাছাড়া এ নির্বাচনে আরো ৩ জন স্বতন্ত্র প্রার্থী রয়েছেন। তারা হেভিওয়েট না থাকায় এখন পযর্ন্ত যে আবাস পাওয়া যাচ্ছে তাতে নৌকা-ধানের লড়াই হবে হাড্ডাহাড্ডি। মেয়র পদে অন্যান্য প্রার্থীরা হলেন বিএনপি থেকে সদ্য পদত্যাগকারী ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো.মশিউর রহমান বাবুল স্বতন্ত্র ও মো: সুহেল (স্বতন্ত্র) মো: সালাহ উদ্দিন চৌধুরী (স্বতন্ত্র)। ১৯৯৯ সালে আখাউড়া পৌরসভা গঠিত হয়। পৌর সভার প্রথম মেয়র নির্বাচিতহয় আওয়ামীলীগ সমর্থিত মো: নূরুল হক ভূইয়া। ২০১১ সালে নির্বাচনে উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এনএম হাসান খান নির্বাচিত হয়। ২০১১ সালের নভেম্বরে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে তিনি মারা যায়। পরে ২০১২ সালের জানুয়ারীতে উপ-নির্বাচন হয়। এই নির্বাচনে আওয়ামীলীগ সমর্থিত প্রার্থী তাকজিল খলিফা কাজল জয় লাভ করে মেয়র পদটি পুনরায় আওয়ামীলীগের দখলে চলে আসে।
আওয়ামীলীগ চাচ্ছে সরকারের জনপ্রিয়তা যাচাইয়ের পাশাপাশি মেয়র পদটি পুনরায় তাদের দখলে নিতে । আর বিএনপি চায় তৃণমূলকে চাঙ্গা ও এই পদটি পুনরুদ্ধার করতে। জাতীয় সংসদের ন্যায় নির্বাচন হওয়ায় এটাকে সবাই গুরুত্ব আর মর্যাদাপুর্ন মনে করছেন। দু’দলের অগ্নিপরীক্ষায় জনপ্রিয়তা প্রমানের চ্যালেঞ্জে চোখের পাতায় ঘুম নেই প্রতিদ্বন্ধী প্রার্থী ও সমর্থকদের। তাই সর্বশক্তি দিয়ে নানা কৌশলে জয়ের চেষ্টা করছেন। উন্নয়নের জোয়ার আর প্রতিশ্রুতির জোয়ারে ভাসছে পৌর এলাকা। এদিকে দলীয় প্রতীকে নির্বাচন হওয়ায় এ ক্ষেত্রে সাধারণ ভোটাররা ব্যাক্তি নয় বরং প্রতীক আর উন্নয়ন কর্মকান্ড তারা গুরুত্ব দিচ্ছেন বলে জানায়। এ নির্বাচনে কোন প্রার্থীকে ভোট দিলে এলাকার উন্নয়ন হবে এ নিয়ে চলছে নানা হিসাব নিকাশ।
এদিকে দলীয় প্রার্থীকে বিজয়ী করতে একাট্রা হয়েছেন আওয়ামীলীগ ও তার সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মী ও সমর্থকরা। দীর্ঘ দিন ধরে চলে আসা দলীয় কোন্দল আর গ্রুপিং অবসান ঘটিয়ে দলীয় মনোনিত প্রার্থীকে বিজয় করতে এক যোগে মাঠে নেমে কাজ শুরু করেছেন। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী তাকজিল খলিফা কাজল বলেন, আমি ভোটারদের দ্বারে-দ্বারে গিয়ে ভোট চাইছি। তারা আমাকে স্বতঃস্ফূর্তভাবে সমর্থন দিচ্ছেন। আমি আশা করছি নির্বাচনে আমি বিপুল ভোটে বিজয়ী হবো। আমি নির্বাচিত হলে সকলের সহযোগিতা নিয়ে এমন একটি আধুনিক পৌরসভা গঠন করবো যাতে করে দেশের বাকি পৌরসভাগুলোর কাছে আখাউড়া পৌরসভা অনুকরণীয় হয়ে থাকে।
অপরদিকে বিএনপির প্রার্থীর পক্ষে শীর্ষ নেতারা নামকা ওয়াস্তে মাঠে নামলে ও বেশী ভাগ সময় থাকছেন অনেকটাই অনুপস্থিত। তৃনমূল বিএনপির একাধিক নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দু’দফা সরকার পতন আন্দোলনের পর দলীয় কোন জোড়ালো কর্মসূচি না থাকায় এক প্রকার নেতাকর্মীরা অনেকটাই নিস্তেজ হয়ে পড়েছেন। কিন্তু এই নির্বাচনের মাধ্যমে দল সুসংগঠনকে শক্তি হওয়ার সুযোগ তৈরী হয়েছে। তাই নিস্ক্রিয় নেতারা এখন সক্রিয় হয়ে মাঠে কাজ না করে তাহলে দলকে বড় ধরনের খেসারত দিতে হবে। বিএনপি মনোনীত প্রার্থী হাজী মো. মন্তাজ মিয়া অভিযোগ করে বলেন, আমার পক্ষে কর্মী-সমর্থকরা প্রচার-প্রচারণা চালাতে গেলেই তাদের যৌথ বাহিনীর ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে। তবে নির্বাচন যদি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হয় তাহলে তিনি বিপুল ভোটে নির্বাচিত হবেন বলেও আশা প্রকাশ করেন। তবে ভোটররা বলছেন, প্রার্থীরা যত প্রতিশ্রুতিই দিক না কেনো, এবার দলীয় প্রতীক দেখে নয় সৎ ও যোগ্য প্রার্থীকেই নির্বাচিত করবেন তারা।
তবে কে ধরছেন আখাউড়া পৌরসভার হাল কিংবা কে হচ্ছেন পৌরসভার পরবর্তী মেয়র তা জানতে ভোটার ও প্রার্থীদের অপেক্ষা করতে হবে আগামী ৩০ ডিসেম্বর পর্যন্ত। উল্লেখ্য, আগামী ৩০ ডিসেম্বর ১১টি ভোট কেন্দ্রে আখাউড়া পৌরসভা নির্বাচনের ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। পৌর এলাকার মোট ভোটার সংখ্যা ২৪ হাজার ৯৫০ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ১২ হাজার ৪৫৮ জন ও নারী ভোটার ১২ হাজার ৪৯২ জন।