আশুগঞ্জ সার কারখানা থেকে ৭ জেলায় সার পরিবহন বন্ধ। পুলিশ প্রহরায় সার পরিবহনের দাবী
মো.শফিকুল ইসলাম. ব্রাক্ষণবাড়িয়া থেকে॥ টানা অবরোধ আর হরতালের কারনে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ সার কারখানা থেকে ৭ জেলায় সার পরিবহনে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। নৌপথে আংশিক চালু থাকলেও সড়কপথে সার পরিবহন পুরোপুরি বন্ধ থাকায় কারখানা থেকে সার সরবরাহ নেমে এসেছে অর্ধেকেরও নীচে।বুরো মৌসুমকে সামনে রেখে নিজ নিজ জেলার বরাদ্বের সার সরবরাহ করতে না পেরে বিপাকে পড়েছে ডিলারগন। কারখানা গেইটে ও নৌবন্দরে সার নিয়ে আটকা পড়েছে শতাধীক ট্রাক।এভাবে চলতে থাকলে আগামী বুরো মৌসুমে হাওরাঞ্চলসহ ৭ জেলায় সার সংকটের আশংকা করছেন ডিলারগণ।বেকার হয়ে পড়েছে সার সরবরাহ ও পরিবহন কাজে নিয়োজিত অর্ধ সহ¯্রাধীক শ্রমিক।অলস সময় কাটছে ট্রাক মালিকদের।
সরেজমিনে গিয়ে জানাযায়,দেশের অন্যতম ইউরিয়া সার উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান আশুগঞ্জ সার কারখানা থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া,কুমিল্লা,চাদপুর,কিশোরগঞ্জ,নেত্রকোনা,হবিগঞ্জ ও সুনামগঞ্জ জেলায় সার সরবরাহ করা হয়ে থাকে।এই ৭ জেলার ডিলারগন তাদের বরাদ্বকৃত সার অধিকাংশ সড়কপথে ও আংশিক নৌপথে পরিবহন করে থাকেন।কৃষি বিভাগ থেকে চলতি মাসে ৭ জেলার ডিলাদের বরাদ্ব দেয়া হয়েছে প্রায় ৫৩ হাজার ৮‘শ টন ইউরিয়া সার। কারখানা থেকে ডিলাদেরকে প্রতিদিন প্রায় দেড় হাজার টন সার সরবরাহের কথা থাকলেও হরতাল ও অবরোধের কারণে ডিলারগন ৫‘শ টনের বেশী সার উত্তোলন করা সম্ভব হচ্ছে না। এতে করে সার সরবরাহ ও পরিবহন কাজে জড়িত অর্ধসহ¯্রাধীক শ্রমিকও বেকার হয়ে পড়েছে। কিছু কিছু শ্রমিক কাজ করলেও তাদের আয় নেমে এসেছে অর্ধেকেরও নীচে।শ্রমিকরা জানায় যেখানে প্রতিদিন একজন শ্রমিক ৫‘শ টাকা আয় করতে পারতো সেখানে ট্রাক কম আসায় বর্তমানে ১৫০ টাকার বেশী রোজগার করা সম্ভব হচ্ছে না।এতে করে সার সরবারাহ কাজে নিয়োজিত অর্ধ সহ¯্রাধীক শ্রমিক মানবেতর জীবন যাপন করতে হচ্ছে।
জেলা ট্রাক মালিক গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক কাউছার আহমেদ জানান ঘন ঘন অবরোধ আর হরতালের কারণে সার পরিবহন বন্ধ থাকায় অলস সময় কাটছে সার পরিবহন কাজে জড়িত অর্ধশতাধীক ট্রাক। চালক ও শ্রমিকদের বসিয়ে রেখে বেতন দিতে হচ্ছে।অন্যদিকে ব্যাংক ঋণ আর কিস্তিতে কেনা ট্রাক মালিকরা পড়ছে বিপাকে।এতে করে প্রতিদিন কমপক্ষে ৫ লাখ টাকা লোকসান গুনতে হচ্ছে ট্রাক মালিকদের।
সার সমিতির সাবেক পরিচালক মিজানুর রহমান জানান হরতাল আর অবরোধের কারণে সড়ক পথে সার পরিবহন চরম ভাবে বিঘিœত হচ্ছে।কারখানা থেকে বর্তমানে প্রতিদিন কারখানা থেকে ৫‘শ টনের বেশী সার সরবরাহ করা সম্ভব হচ্ছে না।আসন্ন বুরো মৌসুমে কৃষকের স্বার্থ বিবেচনা করে সার পরিবহন ব্যবস্থাকে হরতাল ও অবরোধের আওতামুক্ত রাখার দাবী জানিয়েছেন তিনি।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সার সমিতির সাধারন সম্পাদক মো. জালাল উদ্দিন জানান সারের জন্য কারখানা গেইটে দিনের পর দিন ট্রাক আটকা পড়ে থাকায় অতিরিক্ত ভাড়া গুনতে হচ্ছে ডিলাদের।বর্তমানে সার পরিবহন আংশিক চালু থাকলেও ডিলাদেরকে ভাড়া গুনতে হচ্ছে দ্বিগুনের চেয়েও বেশী।ইতোমধ্যে হাওরাঞ্চলের জেলা গুলোতে বীজতলা তৈরির কাজ শুরু হয়েছে।চলতি মাসের বরাদ্বের সার এই মাসের মধ্যে নিজ নিজ এলাকায় পৌছাতে না পারলে কারখানা অধীনস্থ জেলা গুলোতে সারের তীব্র সংকট সৃষ্টি হতে পারে।প্রয়োজনে পুলিশ প্রহরার মাধ্যমে হলেও দ্রুত এসব এলাকায় সার পৌছানোর ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য প্রশাসনের কাছে দাবী জানিয়েছে সার সমিতির নেতারা।
হরতাল আর অবরোধের কারণে সার পরিবহনে যে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে তা দ্রুত সমাধান করা না হলে ট্রাক মালিক ও ডিলারদের যেমন লোকসান গুনতে হবে তেমনি আগামী মৌসুমে সার সংকটেরও সম্ভবনা রয়েছে।এতে করে হাওরাঞ্চলসহ ৭ জেলায় বুরো ধান উৎপাদনেও বিপর্যয় দেখা দিতে পারে।
এ ব্যাপারে আশুগঞ্জ সার কারখানার মহাব্যবস্থাপক প্রশাসন মোঃ আনোয়ার হোসেন জানান হরতাল অবরোধের কারণে সার পরিবহনে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।সড়কপথে সার পরিবহন বন্ধ থাকায় ডিলারগন কারখানা থেকে সার উত্তোলন করছে না।এতে করে শ্রমিকদেরও বেকার সময় কাটছে।