Main Menu

আশুগঞ্জে শিশুদের রাস্তায় আন্দোলনে বসিয়ে প্রধান শিক্ষক গেলেন ব্যাংকে

+100%-

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জে মহিলা আওয়ামীলীগ নেত্রীর বিরুদ্ধে ভূমিদস্যুতার অভিযোগ তুলে কোমলমতি শতশত শিক্ষার্থীদের দিয়ে ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক অবরোধ করানোর ঘটনায় মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মহা পরিচালকের কাছে অভিযোগ দেয়া হয়েছে। রবিবার জেলা মহিলা আওয়ামীলীগ নেত্রী আনারকলি এই অভিযোগ দেন।
মহাপরিচালকের কার্যালয় সুত্রে জানা গেছে,বিষয়টি তদন্ত করে ৩ দিনের মধ্যে রিপোর্ট দেয়ার জন্যে কুমিল্লা অঞ্চলের উপ-পরিচালককে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এদিকে এঘটনায় বিদ্যালয় সংশ্লিষ্টরা এখন দায় এড়াচ্ছেন। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রেজাউল আজাদ বলছেন তিনি ওই সময় ব্যাংক ছিলেন। পরিচালনা কমিটির ২ জন সদস্যের নাম এসেছে আন্দোলন আয়োজনে। তাদের একজনের সাথে কথা হলেও আরেকজনের ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
অভিযোগ সুত্রে জানা যায়,আশুগঞ্জের সোনারামপুর মৌজার ১৯০ দাগের ৯০ শতক খাস জায়গার ওপর ১৯৮৩ সালে রওশন আর জলিল বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় এবং একটি পেট্রোল পাম্প প্রতিষ্ঠিত হয়। স্কুল ক্যাম্পাসে ৩ তলা দুটি বিল্ডিং এবং পেট্রোল পাম্পে দোতলা একটি বিল্ডিং রয়েছে। পরবর্তীতে বছর দু’য়েক আগে ১৯১ দাগের ৫৭ শতক আয়তনের একটি খাস পুকুরও শ্রেনী পরিবর্তন ছাড়াই বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ অবৈধভাবে ভরাট করে তাদের দখলে নেয়। এছাড়া হাজী আবদুল গফুর গং এর ব্যাক্তি মালিকানাধীন সিএস খতিয়ান নং ৫০০,এসএ খতিয়ান নং-৬৮৮,বিএস/ডিপি খতিয়ান নং-৮৪,২০০,১৫১২,সিএস দাগ নম্বর -১৯২ এবং বিএস দাগ নম্বর ১৮৬৮-এর ১৭ শতক ভূমিও বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ দখল করে সেখানে সীমানা প্রাচীর নির্মান করে। প্রায় ৩০ বছর আগে দখল করা এই ভূমি উদ্ধারে হাজী আবদুল গফুরের ৫ পুত্র যথাক্রমে মাহবুব আলী,আবদুল হাই, আবু ছাইদ,আবদুর রশিদ,আবদুল হামিদের ওয়ারিশগন ব্রাহ্মণবাড়িয়া সহকারী জজ আদালতে একটি দেওয়ানী মোকদ্দমা করেন(মোকদ্দমা নম্বর-৮৯/১৫)। ২০২০ সালের ১৫ই অক্টোবর আদালত এই মামলার রায় প্রদান করেন। এরপর ২০২১ সালের ১লা মার্চ বর্তমান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অরবিন্দু বিশ্বাস বাপ্পী ও সহকারী কমিশনার-ভূমি ফিরোজা পারভীন স্বয়ং উপস্থিত থেকে আদালতের রায় অনুসারে ওই জায়গা আবদুল গফুরের ওয়ারিশদের বুঝিয়ে দেন। এরমধ্যে হাজী আবদুর রশিদের ছোট ছেলে আতিকুল ইসলামের ওয়ারিশ হিসেবে আনারকলি এবং তার তিন ছেলেমেয়ে ২ শতাংশ ১৬ অযুতাংশ জায়গার মালিক হন। তাদের জায়গার নামজারী খতিয়ান নাম্বার ৩০৫২। কিন্তু আনারকলি বিদ্যালয়ের জায়গা দখল করেছেন এমন অভিযোগ তুলে গত ২৬শে মে বিদ্যালয়ের ক্লাস বন্ধ করে শিক্ষার্থীদের তার বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামানো হয়। প্রায় এক ঘন্টা শিক্ষার্থীদের বসিয়ে গুরুত্বপূর্ন ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ রাখা হয়। এসময় আনারকলির বিরুদ্ধে আপত্তিকর স্লোগান এবং বিভিন্ন ধরনের প্লেকার্ড বহন করতে বাধ্য করা হয় তাদেরকে। পরে জেলা প্রশাসকের কাছে দেয়া স্মারকলিপিতে তাকে ভূমি দস্যু আখ্যায়িত করে রাতের আধারে বিদ্যালয়ের সীমানা প্রাচীর ভেঙ্গে জায়গা দখল করে নেয়ার অভিযোগ করা হয়। অভিভাবক সদস্য মো: মোছা মিয়া ও বিদোৎসাহী মো: সেলিম রেজা এই আন্দোলনের মুল হোতা। ‘ভূমি লীজগ্রহন ও অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ বাস্তবায়ন কমিটি’ গড়ে তোলে এ দু’জন আহবায়ক ও যুগ্ম আহবায়ক পদপদবী গ্রহন করেন এবং স্বাক্ষর দিয়ে স্মারকলিপি জমা দেন।
বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের দখলে থাকা জায়গা আদালতের রায়ে উদ্ধারের একবছর পর হঠাৎ তাকে টার্গেট করে এই আন্দোলনের বিষয়ে আনারকলি জানান, সোনারামপুর মৌজার জেএল-১৩,খতিয়ান নং -৫/১,বিএস দাগ নং ১৮৭১ এর মোট ১১৮৮ বর্গফুট ভূমি গত ১১ই এপ্রিল রেলওয়ের বিভাগীয় ভূ-সম্পত্তি কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে যথাযথ প্রক্রিয়ায় বানিজ্যিক ভিত্তিতে বন্দোবস্ত আনেন তিনি। সেখানে কাজ শুরু করার পর জায়গাটি অবৈধভাবে দখলে ব্যর্থ অপরাধী চক্র তার বিরুদ্দে নানা ষড়যন্ত্রে মেতে উঠে। স্থানীয় প্রশাসনকে ব্যবহার করে প্রথমে সেখানে ঘর নির্মান করার কাজে বাধা দেয়। এতে ব্যর্থ হয়ে গত ১৪ই মে চিহ্নিত চাদাবাজ,সন্ত্রাসী ও মাদক ব্যবসায়ীরা ঘটনাস্থলে এসে সন্ত্রস্ত অবস্থার সৃষ্টি করে। তাকে হত্যার হুমকী দিয়ে ৫ লাখ টাকা চাদা দাবী করে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও তার বিরুদ্ধে মানহানিকর একের পর এক আপত্তিকর পোষ্ট দেয়। এরপর সংবাদ মাধ্যমে চাদাবাজ ও দখল বানিজ্যে জড়িত বলে মানহানিকর সংবাদ প্রকাশ ও প্রচারের ব্যবস্থা করে। এরই প্রেক্ষিতে তিনি বাদী হয়ে গত ২২ শে মে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আসমা জাহান নিপার আদালতে ৬ জনকে আসামী করে একটি মামলা দায়ের করেন । এরপরই তাকে ভূমিদস্যু হিসেবে প্রতিপন্ন করতে অপরাধীচক্র পরস্পর যোগসাজসে ওই বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ব্যবহার করে অন্যায়-অবৈধ আন্দোলনের পরিকল্পনা করে। এই আন্দোলনের মাধ্যমে এলাকার শান্তি শৃঙ্খলা বিঘ্ন এবং দেশের গুরুত্বপূর্ন একটি মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ করে জনজীবনে দূর্ভোগ সৃষ্টি করা ছাড়াও তার চরম সম্মানহানি করা হয়। তিনি এতে জড়িতদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহনের দাবী জানান।
রওশন আরা জলিল বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রেজাউল আজাদের কাছে জানতে চাইলে তিনি পরিচালনা কমিটির সদস্য মো: মোছা মিয়া ও সেলিম রেজার কাছে আন্দোলনের বিষয়ে জানতে বলেন। আন্দোলনে বিদ্যালয়ের ১২’শ শিক্ষার্থীদের সবাই গিয়েছিলো কিনা তাও তিনি জানেননা। ওই সময়ে তিনি ব্যাংকে ছিলেন বলে জানান। পরে ব্যাংক থেকে একবার এসে শিক্ষার্থীদের ফিরিয়ে আনেন। এই আন্দোলনের আহবায়ক,বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সদস্য মো: মোছা মিয়া জানান- কোর্টের রায়ে আনারকলিদের জায়গা বুঝিয়ে দেয়ার বিষয়টি তার জানা নেই। ৫ মাস আগে পরিচালনা কমিটিতে এসেছেন তিনি। এবিষয়ে তার যুগ্ম আহবায়ক সেলিম রেজা ভালো বলতে পারবেন বলে জানান। তবে সেলিম রেজার নাম্বার বন্ধ পাওয়া যায়।
আশুগঞ্জের সাবেক সহকারী কমিশনার-ভূমি ফিরোজা পারভীন জানান-আদালতের রায় অনুসারে ওই জায়গাটি হাজী আবদুল গফুরের ওয়ারিশদের বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে। স্কুল কমিটির উপস্থিতিতেই জায়গা বুঝিয়ে দেয়া হয়।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অরবিন্দু বিশ্বাস বাপ্পী বলেন,বিষয়টি নিয়ে স্কুল পরিচালনা কমিটি তার সাথে কখনো কথা বলেনি। হাইওয়ে বন্ধ করার অধিকার তাদের নেই। আমি ওই সময় জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে ছিলাম। খবর পেয়ে প্রধান শিক্ষককে ফোন করলে তিনি শিক্ষার্থীদের উঠিয়ে নিয়ে আসেন। স্কুল কর্তৃপক্ষ শ্রেনী পরিবর্তন করে পুকুর ভরাট করেছে কিনা সেটি আমার জানা নেই।
মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের কুমিল্লা অঞ্চলের উপ-পরিচালকের অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা নওয়াব ফয়জুন্নেছা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের উপ-পরিচালক রোখসানা ফেরদৌস মজুমদার জানান-তিনি এখনো তদন্তের চিঠি পাননি।






Shares