Main Menu

লিবিয়ায় আইএসের গুলিতে দুই বাংলাদেশি নিহত:: এক জনের বাড়ি নাসিরনগর

+100%-

ডেস্ক ২৪:: ঈদের ছুটিতে লিবিয়ার বেনগাজির রাস্তায় গাড়ি নিয়ে বেরিয়েছিলেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর উপজেলার মোসলেহ উদ্দিন (৩০) ও বরিশালের মো. আরিফুল করিম সিদ্দিক। সঙ্গী ছিলেন আরও দুই জন। আইএস জঙ্গিরা তাদের গাড়িতে হামলা চালালে মোসলেহ উদ্দিন ও আরিফুল প্রাণ রক্ষায় লাফিয়ে পড়েন। তখন জঙ্গিদের মুহুর্মুহু গুলিতে ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান এ দুজন। অন্যরা গাড়িতে থাকায় গুরুতর আহত হয়েছেন। এমন ঘটনায় ঈদের আনন্দ যেন দ্রুত মিইয়ে গেছে লিবিয়াপ্রবাসী বাংলাদেশীদের মধ্যে। গত ২২শে জুলাই ভোর চারটায় এমন মৃত্যু সংবাদে দুই পরিবারকেও অনিশ্চয়তায় ফেলে দিয়েছে। দুই পরিবারে চলছে শোকের মাতম। ভবিষ্যতের চিন্তায় অন্ধকার দেখছেন তারা। স্বজন হারানোর আহাজারিতে শোকাতুর পরিবেশ বিরাজ করছে দুই পরিবারে।


মৃত্যু সংবাদ পাওয়ার পর বিছানায় লেগে গেছেন মোসলেহ উদ্দিনের মা। মোসলেহ উদ্দিনের পরিবার সূত্রে জানা গেছে, পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি ছিলেন তিনি। তিন ভাই এক বোনের সংসারে মোসলেহ উদ্দিন বছর তিনেক আগে জমিজমা বিক্রির টাকায় জীবিকার সন্ধানে লিবিয়া যান। প্রথমে যান সুদান। এরপর লিবিয়াতে পাড়ি জমান। ঢাকায় ছোটখাটো ব্যবসা করেন মোসলেহ উদ্দিনের মামা মো. সেলিম। ভাগ্নের মৃত্যু সংবাদের কথা বলতে গিয়ে আবেগতাড়িত হয়ে বলেন, ২২শে জুলাই ভোর চারটায় ভাগ্নের মৃত্যুর খবর পাই। ওই দিন বেলা দুইটায় ভাগ্নের মৃত্যু সংবাদ নিশ্চিত করে লিবিয়া থেকে আমাদের ঘটনার বর্ণনা দেয়া হয়।


মোসলেহ উদ্দিন কিভাবে লিবিয়া গেল? -এমন প্রশ্নে তার মামা সেলিম বলেন, ভাগ্নে প্রথম যায় সুদান। এরপর লিবিয়াতে গিয়ে গত তিন বছর ধরে ওই দেশেই আছে। কিভাবে গেছে ওই বিষয়টি আমি জানি না। তবে লিবিয়া যাওয়ার পর কিছুদিন পর আমাকে ফোন করে জানায়, মামা কয়েক দিন ভয়ে ছিলাম। কাগজপত্র ঠিক ছিল না। এখন কাগজপত্র ঠিক করে ফেলেছি। কোন ভয় নাই। পুলিশও গ্রেপ্তার করতে পারবে না।

তার পারিবারিক সূত্র জানায়, মোসলেহ উদ্দিন ব্রাহ্মণবাড়িয়া নাসিরনগরের দাঁতমণ্ডল গ্রামের নানা বাড়ির একটি আলিয়া মাদরাসা থেকে দাখিল পাস করেন। এরপর এইচএসসি ভর্তি হন নরসিংদীর একটি কলেজে। তার মামা সেলিম জানান, নরসিংদীতে ভর্তি হওয়ার পর ভাগ্নে আমাকে বলে মামা আমি তোমাদের বাড়িতে থেকে সপ্তাহে তিন দিন ক্লাস করতে যাবো। আমি ভাগ্নের কথায় সায় দিয়ে বলি তুই দরকার হলে সারা জীবন নানাবাড়ি থেকে পড়াশোনা কর। কিন্তু পরিবারের আর্থিক টানাপড়েনে পড়ালেখা আর চালাতে পারছিল না মোসলেহ উদ্দিন। ফলে এক সময় বিদেশ যাওয়ার বায়না ধরে আমাকে জানায়, মামা আমাকে অনেক বড় হতে হবে। আমি বিদেশ চলে যাবো। তখন মা ও ভাই-বোনসহ সবাইকে দেখাশোনা করতে পারবো। টাকার কোন সমস্যা হবে না। তখন আমরাই কিছু টাকা জোগাড় করে ভাগ্নেকে বিদেশ পাঠাই। মোসলেহ উদ্দিনের মায়ের অবস্থা সম্পর্কে সেলিম বলেন, ছেলের শোকে রীতিমতো পাথর হয়ে গেছেন তার বোন। চোখ বন্ধ করে পড়ে আছেন।


বর্তমানে লিবিয়াতে বাংলাদেশের কোন দূতাবাস না থাকায় এ সমস্যা আরও প্রকট হয়ে দেখা দিয়েছে। কয়েক দিন আগে লিবিয়ায় অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাস বন্ধ করে দিয়ে তা তিউনিশিয়ায় স্থানান্তর করা হয়েছে। মোসলেহ উদ্দিনের মামা সেলিম জানান, ভাগ্নে মারা যাওয়ার দিন তার সহকর্মীরা জানিয়েছিল বাংলাদেশে লাশ নিতে যা খরচ লাগবে সব অর্থ দেবে কোম্পানির মালিক। কিন্তু ভাগ্নের সহকর্মীরা এখন জানাচ্ছেন, লাশ নিতে কোম্পানির মালিক কোন অর্থ দেবেন না। অন্যদিকে বাংলাদেশ দূতাবাসেরও এ বিষয়ে কোন সাড়া নেই। লিবিয়া থেকে ওরা বলেছে, লাশ দেখতে চাইলে আপনাদের ৮-১০ লাখ টাকা জোগাড় করতে হবে। এনিয়ে মহা চিন্তার মধ্যে আছি। ভাগ্নে মোসলেহ উদ্দিনের সঙ্গে তার কবে কথা হয়েছে এমন প্রশ্নে সেলিম বলেন, ভাগ্নের সঙ্গে ২০শে জুলাই রাতে সর্বশেষ কথা হয়। কয়েকবার ফোন করার পরও দেখছি ভাগ্নে ফোন ধরছে না। বাধ্য হয়ে ঘুমাতে যাই। কিছুক্ষণ পর ভাগ্নে ফোন করে জানায়, মামা ঈদের ছুটিতে রেস্ট নিচ্ছিলাম। তাই ফোন ধরতে একটু দেরি হয়েছে। আপনাকে আমি পরে ফোন দেব। একথা বলতে বলতে ঢুকরে কেঁদে ফেলেন মামা সেলিম। বলেন, প্রিয় ভাগ্নের স্মৃতি ছাড়া আর কিছুই থাকল না।

নাসিরনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল কাদের জানান, ঘটনাটি তিনি শুনেছেন। এর পর ওই বাড়িতে পুলিশের একজন উপ-পরিদর্শককে (এসআই) পাঠানো হয়েছে।






Shares