প্রতিনিধি : ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল-নাসিরনগর সড়কটি যেন এক আতঙ্কের নাম। সূর্যাস্তের পরপরই এই সড়কটিতে ডাকাতদের উৎপাত বেড়ে যায়। একদিকে ডাকাতরা তান্ডব চালায় অনদিকে পুলিশী টহল থাকে বলেও অভিযোগ রয়েছে। সর্বশেষ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায়ও এই সড়কের পুটিয়া-কুন্ডা সেতুর মধ্যতর্বী স্থানে বেশক’টি যাত্রীবাহী যানবাহনে ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। ডাকাতির শিকার হওয়া নাসিরনগর উপজেলার দাতমন্ডল গ্রামের বকুল মিয়া ও নাজিম মিয়া জানান,‘সড়কের আশপাশে টহল পুলিশ ছিলো। মুখোশধারী ১৫/১৬ জন ডাকাত রাস্তায় ব্লক ফেলে সিএনজি আটকে আমাদের কাছ থেকে নগদ ৩৬ হাজার ৬০৪ টাকাসহ চারটি মোবাইল ফোনসেট নিয়ে যায়। এসময় একাধিক যানবাহনে ডাকাতরা লুটপাটের তা-ব চালায়।’ ভুক্তভোগীরা এই সড়কে প্রায়শই ডাকাতির ঘটনাকে পুলিশের নিষ্ক্রিয়তাকেই দায়ী করছেন। প্রায়দিনই কেউ না কেউ ডাকাতির শিকার হচ্ছেন। ভুক্তভোগীরা আরো জানান, দুই উপজেলার মাঝামাঝি স্থানে ডাকাতি হয় বলে পুলিশ বিষয়টিকে অতি সহজেই এড়িয়ে যায়। সূর্যাস্তের পরই সড়কটি ডাকাতদের দখলে থাকে। স্থানীয় এলাকাবাসী জানান, ২৮ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে সড়কের সরাইল উপজেলার পুটিয়া ব্রীজ ও নাসিরনগর উপজেলার কুন্ডা ব্রীজ এলাকার মধ্যবর্তী স্থানে প্রায় এক কিলোমিটার এলাকায় নিয়মিতই ঘটছে ডাকাতির ঘটনা। সন্ধ্যার পর থেকে ভোর পর্যন্ত একেক দিন একেক সময় ডাকাতির ঘটনা ঘটছে। কোনো কোনো সময় পুলিশের পাশেই ঘটছে ডাকাতির ঘটনা। যদিও জেলা পুলিশের বিশেষ টহলের কারণে বিগত কিছুদিন ডাকাতির ঘটনা বন্ধ ছিলো। এসব বিষয়ে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় প্রতিনিয়তই আলোচনা হয়। নাসিরনগর উপজেলার গোর্কণ ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান এম.এ. হান্নান এই প্রতিবেদককে জানান, ‘এই পথে রাতে চলতে গেলে আমার নিজেরই ভয় হয়।’ সড়কের মধ্যবর্তী স্থানে একটি পুলিশ ফাঁড়ি স্থাপনের জন্য স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন তিনি। এই সড়কে ডাকাতদের কবলে পড়েছেন বদলী হওয়া নাসিরনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকতা জামিল আহমেদ ও সরাইল থানার বর্তমান ওসি উত্তম কুমার চক্রবর্তী। এই সড়কে নিয়মিত চলাচলকারীদের মধ্যে ডাকাতের কবলে পড়েনি এমন লোক খুঁজে পাওয়া দুস্কর। নাসিরনগর বাজারের ব্যবসায়ী মো. স্বাধীন মিয়া জানান, ‘ডাকাতির ভয়ে সন্ধ্যার আগেই বাড়ি ফেরার চেষ্টা করি।’ জানতে চাইলে নাসিরনগর থানার পুলিশ পরিদর্শক (ওসি) মো. আবদুল কাদের জানান, ‘এই সড়কে নিয়মিত পুলিশ টহল দেয়। নাসিরনগর এলাকায় ডাকাতি হচ্ছে না। তবে ডাকাতির শিকার হন নাসিরনগর এলাকার লোকজন।’ অপরদিকে সরাইল থানার পুলিশ পরিদর্শক (ওসি) উত্তম কুমার চক্রবর্তী জানান, ‘আমি নিজেও ডাকাতের কবলে পড়েছিলাম। আগের চেয়ে অনেক কমেছে। ডাকাতি রোধে পুটিয়া ব্রীজের পাশে পুলিশ ক্যাম্পের ঘর নিমার্ণ কাজ চলছে। তবে ডাকাতি হলেও কেউ মামলা করেনা।’ নাসিরনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সামিহা ফেরদৌসী জানান, ‘ডাকাতি রোধে সড়কের মধ্যবর্তী স্থানে একটি পুলিশ ফাঁড়ি স্থাপন জরুরি। এ বিষয়ে জেলা আইনশৃঙ্খলা রক্ষা কমিটির সভায় আমি ও উপজেলা চেয়ারম্যান প্রতিনিয়তই আলোচনা করছি।’ |