Main Menu

আলোচিত শিশু আমেনা হত্যার রহস্য উদঘাটন

নাসিরনগরে প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে নিজ শিশু সন্তানকে হত্যা

+100%-

নিজস্ব প্রতিবেদক:: প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে নিজের পাঁচ বছরের শিশু সন্তানকে ধারালো ছুরি দিয়ে হত্যা করে হারুন(৩৫) নামে এক ঘাতক বাবা। শিশুটিকে হত্যায় সহযোগিতা করেছে ঘাতক বাবা হারুনের মা ছালেহা,হারুনের ভাই আজিজুল হক,ভাই বৌ বেদেনা খাতুনসহ তিন জন। নারকীয় হত্যাকান্ডটি ঘটেছে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নাসিরনগর উপজেলার ধরমন্ডল ইউনিয়নের দৌলতপুর গ্রামে। দীর্ঘ ৬ মাস পর পুলিশ তদন্ত করে এই নারকীয় হত্যাকান্ডের রহস্য উন্মোচন করেন। তবে ঘাতক বাবা হারুনকে এখন পর্যন্ত আটক করা যায়নি।

নাসিরনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাজেদুর রহমান জানান, যখন এই হত্যাকান্ড সংঘটিত হয় তখন লাশ দেখে এবং নিহত আমেনার মা বাবার সাথে কথা বলে আমার সন্দেহ হয়। পরে নিহতের বান্ধবী ও স্থানীয়দের সাথে কথা বলে এই হত্যাকান্ডের মূল রহস্য উৎঘাটন করতে পেরেছি। আমরা বিজ্ঞ আদালতের কাছে আবেদন করেছি মামলার বাদী হারুনকে আটকের অনুমতি দিতে। তার পর পুলিশ বাদী হয়ে হারুনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করবে। পক্ষান্তরে বাদীর দায়েরকৃত মামলার আসামীদেরকে অত্র মামলা হতে অব্যাহতি দিতে আদালতে চুড়ান্ত রিপোর্ট দাখিল করেছি।

পুলিশ ও স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা গেছে, ঘাতক বাবা হারুন মিয়া ও আরজান মিয়ার মধ্যে মাদকদ্রব্য বেচা-কেনা নিয়ে দন্ধ ছিল দীর্ঘদিনের। কে হবে ধরমন্ডল ইউনিয়নের মাদক স¤্রাট। মাদকের আদিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে উভয় পক্ষের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংর্ঘষ হয় বহুবার। গত বছরের ৩১ মে উভয় পক্ষের সংঘর্ষে আরজান মিয়ার সমর্থক তোফাজ্জল মিয়া চিকিৎসাধীন অবস্থায় হাসপাতালে মারা যায়। পরে হারুন মিয়াসহ তার সমর্থদের বসত ঘর লুটপাট ও ভাংচুর করে। পরে স্থানীয় চেয়ারম্যান, মেম্বার ও এলাকার গণ্যমান্য লোকজনের উপস্থিতিতে মিমাংসার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়। পরে হারুন মিয়া আরজানকে ফাঁসাতে বিভিন্ন সময় ফন্দি খুঁজতে থাকে। কিছুদিন পর আরজান মিয়া ইয়াবা নিয়ে আসার পথে কুমিল্লার বুড়িচং থানায় আটক হয়। এই ঘটনায় হারুনকে দায়ী করে আরজানের পরিবার। উল্লেখ থাকে যে, হারুন মিয়া ও আরজান দুজন চাচাত ভাই। এ ঘটনার কয়েক বেশকিছুদিন পর ২০১৯ সালের ২১ জানুয়ারী হারুন তার পাঁচ বছরের মেয়ে (আমেনা আক্তার ৫ কে) ধারালো ছুরি দিয়ে হত্যা করে। পরে আরজানসহ ২৫জনকে আসামী করে নাসিরনগর থানায় একটি হত্যা মামলা করে।

অনুসন্ধানে জানা যায়, হত্যাকান্ডটি ঘটে চলতি বছরের ২১ জানুয়ারী সকাল সাড়ে নয়টার সময় অথচ হারুন মিয়া মামলায় উল্লেখ করেন ২০ জানুয়ারী সকাল দশটার সময়। শিশু আমেনা আক্তার হত্যা মামলার এজহার সূত্রে জানা যায়,আসামীরা বল্লম দিয়ে পিটে(ঘাই) দিয়ে আঘাত করে হত্যা করে। কিন্তু ময়নাতদন্ত রিপোর্ট পর্যালোচনা করে দেখা যায়, আমেনা আক্তারকে বল্লম দিয়ে নয় বরং ধারালো অস্ত্র(ছুরি) দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। এক নম্বর আসামী সেলু মিয়া,তিন নম্বুর আসামীয় লিলু মিয়া,সাত নম্বর আসামী মোহাজ্জিল তাদের ব্যবহৃত মোবাইল ফোনের কল লিষ্ট পর্যালোচনা করে দেখা যায় ওই দিন তারা ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিল না। নাসিরনগর থানা পুলিশের হাতে এই সংবলিত একটি মোবাইল ফোনের সিডিআর(কল লিষ্ট) সংরক্ষিত আছে।

মামলা তদন্তকারী কর্মকর্তা সাব-ইন্সপেক্টর মো. মইনুল ইসলাম খান সমকালকে বলেন, এটি একটি পরিকল্পিত হত্যাকান্ড। প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে নিজের মেয়েকে হত্যা করেছে হারুন মিয়া। নিরপেক্ষ ও প্রত্যক্ষদর্শী ৪০ জন স্থানীয় লোকের ১৬৪ ধারা জবানবিন্দ পর্যালোচনা করে আমরা নিশ্চিত হই এ হত্যাকান্ড মামলার বাদী হারুন মিয়া নিজে সংঘটিত করে। তবে স্বাক্ষীদের নিরাপত্তার স্বার্থে তাদের নাম প্রকাশ করতে পারছিনা।
প্রসঙ্গতঃ মাদক কেনা-বেচা আদিপত্য ও পারিবারিক বিরোধের জেরে ২১ জানুয়ারী শিশু আমেনাকে(৫) হত্যা করা হয়। পরে ২৫ জনকে আসামী করে নাসিরনগর থানায় একটি হত্যা মামলা করে নিহতের বাবা হারুন মিয়া।






Shares