Main Menu

চোখে দেখে না, চলাফেরা করতে পারে না বলে বয়স্কভাতা কার্ড করা হয়নি

+100%-

নিজস্ব প্রতিবেদক:: সারেদা খাতুন। জাতীয় পরিচয়পত্র অনুযায়ী বয়স প্রায় ৮৪ বছর। কিন্তু স্থানীদের ভাষ্য, তাঁর বয়স ১১৫ বছর। বয়সের ভারে ন্যুব্জু হয়ে পড়া সারেদার অন্যের বাড়িতে ঠাঁয় হয়েছে। চোখের দৃষ্টি হারিয়েছেন প্রায় ১০ বছর হলো। আর বার্ধ্যক্যজনিত কারণে নানা রোগে ভূগলেও চিকিৎসা করানোর সাধ্য নেই। একটু স্বচ্ছলতার জন্য বয়স্কভাতার কার্ডের পেতে জনপ্রতিনিধিদের কাছে দ্বারস্থ হলেও আশ্বাস ছাড়া কিছুই মিলেনি।
স্থানীয় ইউপি সদস্যের ভাষ্য, সারেদা চোখে দেখে না এবং চলাফেরা করতে পারে না বলে বয়স্কভাতার কার্ড করে দেওয়া হয়নি।
সারেদা ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর উপজেলার গোকর্ণ ইউনিয়নের নূরপুর গ্রামের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের প্রয়াত ছেনু মিয়ার স্ত্রী। প্রায় ৩০ বছর আগে স্বামী ছেনু মিয়া মারা যান। তাঁর চার মেয়ে ও দুইজন ছেলে সন্তান রয়েছে। দুই ছেলেই দিনমজুর। অভাবে তাঁদের সংসারের খরচ চালানো দায়। সেখানে বৃদ্ধ মায়ের ব্যয় করা যেন মরার উপর খড়ার গাঁ।
সারেদার দুই ছেলের একজন রিকশা চালান ও অন্যজন অন্যের বাড়িতে কাজ করে সংসার চালান। ছেলের সংসারের অভাব অনটন নিত্য দিনের সঙ্গী। অভাব লেগেই থাকে সংসারে। যখন যার বাড়িতে ঠাঁই হয়, তার বাড়িতেই থাকেন সারেদা।
জাতীয় পরিচয় অনুযায়ী বয়স ৮৪ বছর হলেও স্থানীয়দের দাবি সারেদার বয়স ১১৫ বছর হবে। কারণ বয়সে তাঁর চেয়ে ২০ বছরের ছোট চাচাতো বোন রাফিয়া খাতুনের বয়স বর্তমান বয়স প্রায় ৯০ বছর। সেই অনুযায়ী ধারণা করা হচ্ছে সারেদার বয়স অনুমানিক ১১৫ বছর হতে পারে বলে গ্রামবাসীর দাবি।

সরেজমিনে কথা হলে সারেদা বলেন, আমার আপন বলতে কেউ নাই। আমি হাঁটতে পারি না। চোখে দেখি না। চান সুরুজ (চাঁদ-সূর্য) কিছুই দেখি না। থাহনেরও জায়গা নাই। আমারে কেউ একটা ভাতা কার্ড কইরা দেয় না। আমি অহন থাকি পাশের বাড়ির হামিদার ঘরে।
প্রতিবেশী হামিদার বেগম বলেন, বৃদ্ধ সারেদা একটি পরিত্যক্ত ঘরে থাকত। বন্যার পানিতে ঘরটা ভেঙ্গে গেছে। ওই ঘরে থাকার মতো পরিবেশ নেই। তাই আমি তাকে আমার ঘরে থাকতে দিছি। তার ছেলেরা দিন আনে দিনে খায়। তাই এলাকার মানুষের কাছেই থাকে সারেদা চাচী।
ইউপি সদস্য ওহেদ মিয়া বলেন, সারেদা খাতুন চোখে দেখে না এবং চলাফেরাও করতে পারে না। তাই তাকে বয়স্ক ভাতা কার্ড করে দেওয়া হয়নি। কারণ হিসেবে তিনি উল্লেখ করেন, বয়স্ক ভাতা কার্ড হলেও তার টাকা কে তুলে দিবে? সে জন্য তাঁর কার্ড হয়নি।
গোকর্ণ ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ছোয়ব আহাম্মেদ জানান, ৮৫ বছরের কোনো বৃদ্ধা বয়স্ক ভাতা পায়না এমন তথ্য আমার জানা নেই। কাগজপত্র নিয়ে আসলে আমি তার জন্য ভাতার ব্যবস্থা করে দিব।

উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা আবুল খায়ের বলেন, সরকারি নিয়ম অনুযায়ী, বয়স্ক ভাতা পাওয়ার ক্ষেত্রে নারীর বয়স সর্বনিম্ন ৬২, আর পুরুষের বয়স সর্বনিম্ন ৬৫ বছর। সে অনুযায়ী সারেদা খাতুন বয়স্ক ভাতা পাওয়ার যোগ্য।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নাজমা আশরাফী জানান, ‘আমার কাছে আবেদন করলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’



« (পূর্বের সংবাদ)



Shares