Main Menu

সরাইলে বালু উত্তোলন বন্ধের দাবিতে কৃষকদের মহাসড়ক অবরোধ:: আহত-৫, হৃদরোগে নিহত-১

+100%-

সরাইল (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) প্রতিনিধিঃসরাইলের তিতাস নদী থেকে দীর্ঘদিন ধরে বালু উত্তোলনের নামে ড্রেজার দিয়ে কৃষি জমি গিলে খাওয়ার অভিযোগ করছে স্থানীয় কৃষকরা। বান্নিঘাট শ্বশান ও শেষ সম্বল নিজেদের জমি হারিয়ে দিশেহারা এখন উপজেলার শাহবাজপুর ইউনিয়নের ধীতপুর গ্রামের সহস্রাধিক কৃষক। তারা নির্বাহী কর্মকর্তা,জেলা প্রশাসকের কাছে এ বিষেয়ে লিখিত আবেদন ও উপজেলা সদরে বিক্ষোভ মিছিল করেও কোন সুরাহা পায়নি। উল্টো তাদেরকে পুলিশ দিয়ে হয়রানি ও মারধর করা হয়। নদীতে জমি বিলীনের চিত্র সহ্য করতে না পেরে হৃদরোগে (হার্ট এটাক) আক্রান্ত হয়ে মঙ্গলবার বিকেলে মারা গেছেন হরকুমার কর্মকার (৫৫) নামের এক কৃষক। তাই ক্ষুদ্ধ হয়ে গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ভুক্ত সহস্রাধিক কৃষক তিতাসের ব্রীজের পূর্ব পাশে বালু উত্তোলন বন্দের দাবিতে ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক অবরোধ করে ফেলে। ইফতারের পূর্ব মূহুর্তে মহাসড়ক অবরোধ করায় চরম দূর্ভোগে পড়ে যাত্রীরা। দুইদিকে দুই কিলোমিটার যানজটের সৃষ্টি হয়।

শাহবাজপুর ফাঁড়ির পুলিশ প্রথমে লাঠিপেটা করে অবরোধকারীদের হঠানোর চেষ্টা করে। এতে কৃষকরা উত্তেজিত হয়ে পড়ে। পরে পুলিশ পিছু হটে। কৃষকরা এ সময় বালু মহাল স্থায়ীভাবে বন্ধের দাবিতে মহাসড়কে মিছিল করে। আহত হয় শহিদুল(১৭), সুকুমার (৪৮), রাসেল (১৬) ও লিটন (৩০)। সরাইল থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ আলী আরশাদ ঘটনাস্থলে পৌঁছে স্থানীয় নেতৃবৃন্দের সহায়তায় বিষয়টি দ্রুত নিস্পত্তির আশ্বাস দিয়ে কৃষকদের অবরোধ প্রত্যাহার করেন।

অবরোধে অংশ নেওয়া গ্রামবাসী ও কৃষকরা জানায়, তিতাস নদীর উত্তর পাড়ে রয়েছে তাদের সহ¯্রাধিক বিঘা কৃষি জমি। অধিকাংশ জমির মালিক ধীতপুর গ্রামের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের কৃষকরা। রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় ২০০১ সাল থেকে এ নদী থেকে অবৈধ ভাবে বালু উত্তোলনের মাধ্যমে বাণিজ্য করে আসছেন গ্রামের মহিউদ্দিন নামের এক প্রভাবশালী লোক। ক্ষমতাসীন লোকদের তদবিরে রফাদফার মাধ্যমে ২০১৩ সাল থেকে বালু উত্তোলনের জন্য বৈধ ভাবে নদীর নির্দিষ্ট জায়গা ইজারা দেওয়া শুরু করেন জেলা প্রশাসন। গত চার বছর ধীতপুর এলাকায় তিতাস নদীর বালু মহাল এক সনা ইজারা নিচ্ছে একটি মহল।

এ বছর নদীতে ৪০৪৭ দাগের ২০ একর জায়গা জুড়ে সরকার বালু উত্তোলনের জন্য ইজারা দিয়েছে। ইজারাদাররা  বালু তোলার নামে ড্রেজার দিয়ে পানির নিচ দিয়ে নির্বিচারে কৃষি জমির মাটি কেটে নিচ্ছে। এক সময় কৃষি জমি হয়ে যাচ্ছে নদীর অংশ। এভাবে ইতি মধ্যে ধীতপুর এলাকার তিন শতাধিক কানি কৃষি জমি নদীতে বিলিন হয়ে গেছে। কৃষক রাজ কুমার দাস (৫৫), সুরঞ্জন দাস (৩৫), মাধপ চন্দ্র দাস (৪৫), মানিক কর্মকার (৫০) বলেন, অষ্টমী ¯œানের বান্নিঘাট শ্বশান থেকে মুড়িঘাট পর্যন্ত দুই কিলোমিটার এলাকার শত শত কৃষি জমি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে।

জমি নির্ভর অনেক কৃষক পরিবার এখন পথে বসার উপক্রম হয়েছে। আমরা গরীব ও দূর্বল বলে কি সরকার আমাদের সমস্যা দেখবে না। বাণিজ্য করবে তারা আর জমি ধ্বংস করবে আমাদের। এটা কেমন কথা।বাধা দিলে প্রভাবশালী ইজারাদার তাদেরকে নানা ভাবে হুমকি দেয়। এমনকি ডাকাতি মামলা দায়ের করে পুলিশ দিয়ে হয়রানি করে।

রতন চন্দ্র দাস ও লিটন চন্দ্র দাস কান্না জড়িত কণ্ঠে বলেন,‘আমাদের সব শেষ হইয়া যাইতেছে। বালু তোলার নামে আমাদের ভাত কাইড়া নিচ্ছে। আমরা বাঁচতে চাই। আমরা নিরীহ, তাই আমাদের দাবি কেউ মানছে না।

শাহবাজপুর ইউপি চেয়ারম্যান মুক্তিযোদ্ধা ওসমান উদ্দিন আহমেদ খালেদ বলেন, এখানে কোন সময় বালু মহাল ছিল না। বালু মহাল হতে পারে না। এলাকার সাবেক এক মন্ত্রী উনার দলীয় কিছু লোকের সুবিধার্থে বালু মহাল সৃষ্টি করেছেন। যা এখন স্থানীয় কৃষকদের মরণ ফাঁদে পরিনত হয়েছে। এটা বন্ধ করা জরুরী। উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান মোঃ শের আলম মিয়া বলেন, জনগনের জন্যই সরকার। নিরীহ অসহায় দরিদ্র কৃষকদের বাঁচানো সকলের দায়িত্ব। গুটিকয়েক লোকের লাভের জন্য শত শত কৃষকের পেটের ভাত কেড়ে নেওয়া যাবে না। তাদের এ দাবি আদায়ের আন্দোলনের সাথে আমি ও আছি।

ইউএনও মোহাম্মদ এমরান হোসেন বলেন,‘বালু মহালের এলাকা চিহ্নিত করা আছে। ইজারাদার যদি জনগণের ক্ষতি সাধন করে তাহলে অবশ্যই এ ব্যাপারে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’  






Shares