Main Menu

আজ আওয়ামীলীগ নেতা শহীদ ইকবাল আজাদের প্রথম শাহাদাৎ বার্ষিকী

+100%-

মোহাম্মদ মাসুদ , সরাইল :আজ বিশিষ্ট্য শিল্পপতি দানবীর সরাইল উপজেলা আওয়ামীলীগের সিনিয়র সহ- সভাপতি  সরাইলের গণমানুষের প্রাণপ্রিয় নেতা শহীদ এ কে এম ইকবাল আজাদের প্রথম শাহাদাৎ বার্ষিকী। এ উপলক্ষ্যে তাঁর পরিবার ও শহীদ ইকবাল আজাদ স্মৃতি পরিষদ বিভিন্ন কর্মসূচী গ্রহন করেছে। সকালে মরহুমের গ্রামের বাড়িতে কোরআনখানী মিলাদ মাহফিল ও দোয়ার আয়োজন করা হয়ে হয়েছে। বিকেল ৩টায় স্মৃতি পরিষদের উদ্যোগে উপজেলা চত্বরে এক বিশাল স্মরন সভার আয়োজন করা হয়েছে। ইকবাল আজাদ স্মৃতি পরিষদের সভাপতি ও প্রয়াত আজাদের সহধর্মিনী মিসেস শিউলী আজাদের সভাপতিত্বে ওই স্মরণ সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিমের বক্তব্য রাখার কথা রয়েছে। এ ছাড়া বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখার কথা রয়েছে আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য ও পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী এম পি, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা পরিষদের প্রশাসক ও জেলা আওয়ামীলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি সৈয়দ এ কে এম এমদাদুল বারী, পৌর মেয়র ও জেলা আওয়ামীলীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন। প্রয়াত এ নেতার স্মরণ সভায় উপজেলার নয়টি ইউনিয়ন থেকে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক লোক সমাগমের সম্ভাবনা রয়েছে। প্রসঙ্গতঃ গত ২০১২ খ্রীষ্টাব্দের ২১ অক্টোবর সন্ধায় ইকবাল আজাদ নিজের প্রাইভেটকার নিয়ে হিন্দু সম্প্রদায়ের সর্ব বৃহৎ উৎসব শারদীয় দূর্গাপুঁজা পরিদর্শনের উদ্যেশ্যে বের হন। সরাইল সদরের সরকারি অন্নদা স্কুল মোড়ে নিজ দলের কিছু লোক তাঁর হামলা চালায়। উপর্যুপুরি বল্লমের আঘাতে ঘটনাস্থলেই নিহত হন তিনি। পরের দিন তাঁর ছোট ভাই প্রকোশলী জাহাঙ্গীর আজাদ বাদী হয়ে সরাইল উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি আবদুল হালিম ও সাধারন সম্পাদক রফিক উদ্দিন ঠাকুর সহ দলীয় ২২ জন লোককে আসামী করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। পরবর্তীতে পুলিশ এ মামলায় আরো সাত জনকে চার্জসীটভুক্ত করেন। বর্তমানে চট্রগ্রাম দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে মামলার কার্যক্রম চলছে।

ফ্ল্যাশ ব্যাক:

 

কে এই ইকবাল আজাদ:

১৯৯০ সালের আগ পর্যন্ত ইকবাল ছিলেন অরাজনৈতিক ব্যক্তি। প্রথম শ্রেণীর ঠিকাদার হিসেবে সবাই তাঁকে চিনতেন। ১৯৯০ সালে সম্মেলনের মাধ্যমে সরাইল উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক নির্বাচিত হন ইকবাল আজাদ। সাধারন সম্পাদক নির্বাচিত হওয়ার পরই তিনি তৃণমূল পর্যায়ে দলকে সংগঠিত করতে মনোনিবেশ করেন। ০৯টি ইউনিয়নেই শুরু হয় তার পদচারনা। তার অক্লান্ত পরিশ্রমে সরাইলে একটি শক্ত ভিত্তির উপর দাড় হয় আওয়ামীলীগ। উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়নেই দল শক্তিশালী হয়। ফলে তিনি সরাইলবাসীর প্রিয় নেতায় পরিণত হন। ২০০১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইকবাল আজাদ ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২-(সরাইল) আসনে প্রার্থী হন। এরপরই তিনি দলের তার বিরুদ্ধপক্ষের কাছে বিরাগভাজন হন। তাকে দমাবার চেষ্টা তখন থেকেই শুরু করে প্রতিপক্ষের লোকেরা। এতে তারা অনেকটা সফলও হন। রাজনৈতিকভাবে ইকবাল আজাদকে মোকাবেলা করতে ব্যর্থ হয়ে পরিকল্পনা মাফিক ২০০৩ সালের সম্মেলনে সাধারন সম্পাদকের পদ থেকে তাকে সরিয়ে দেওয়া হয়। দেওয়া হয় কমগুরুত্বপূর্ন সিনিয়র-সহ-সভাপতির পদ। কিন’ দমে যাওয়ার পাত্র নন ইকবাল আজাদ। নতুন উদ্যোমে আবারো শুরু করেন রাজনীতি। পুরো নির্বাচনী এলাকা চষে বেড়ান তিনি। তার অমায়িক ব্যবহারে জনগনের হৃদয়ে স’ান করে নেন তিনি। দল সংগঠিত হয় তার নেতৃত্বে। ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২-(সরাইল-আশুগঞ্জ) আসনে তিনি প্রার্থী হন। কিন’ মহাজোটের শরীকদল জাতীয় পার্টিকে আসনটি ছেড়ে দেওয়ায় মনোনয়ন লাভে ব্যর্থ হন তিনি। ইকবাল আজাদের জনপ্রিয়তার উপর ভর করে ১৯৭৩ সালের পর এই আসনটিতে আওয়ামীলীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট প্রার্থী অ্যাডভেকেট জিয়াউল হক মৃধা জয়লাভ করে চারদলীয় ঐক্যজোটের শরীকদল ও ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান, সাবেক এমপি মুফতী ফজলুল হক আমিনীকে পরাজিত করে। পরে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনেও উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক রফিক উদ্দিন ঠাকুর উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন।

হত্যাকান্ডের নৃশংস  বিবরন:

গত ২১ অক্টোবর সন্ধ্যার দিকে সরাইল উপজেলা সদরের কুট্টাপাড়া গ্রামের বাড়ি থেকে ইকবাল আজাদ তার ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ে সরাইল বাজারের উদ্দেশ্যে রওনা হন। তার সঙ্গে ছিলেন ছোট ভাই জাহাঙ্গীর আজাদ ও ছাত্রলীগ নেতা সানা উল্লা গিয়াস উদ্দিন সেলু। গাড়ির চালক ছিলেন (ব্যক্তিগত ড্রাইভার) আবদুর রউফ। সরাইল বিকাল বাজার এলাকায় স্থানীয় অন্নদা স্কুলের মোড় সিএনজি অটোরিকশা স্ট্যান্ডে গাড়িটি আসামাত্র অভিযুক্ত মিস্টার আলী সিএনজি অটোরিকশা দিয়ে ব্যারিকেড সৃষ্টি করে। এসময় (আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসী) মামলার অন্যতম আসামি আবদুল হালিম ও রফিক উদ্দিন ঠাকুরের হুকুমে অভিযুক্ত সন্ত্রাসীরা দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে ইকবাল আজাদের গাড়িতে হামলা করে এতে ভাঙচুর চালায়। এসময় ইকবাল আজাদ গাড়ি থেকে নেমে পড়লে রফিক ঠাকুর বল্লম দিয়ে ঘাই মারে। তিনি (ইকবাল) দৌড়ে আত্মরক্ষার চেষ্টা করলে অভিযুক্ত সন্ত্রাসীরা তাকে জাপটে ধরে। তখন মাহফুজ আলী বল্লম দিয়ে ইকবাল আজাদের বুকে ঘাঁই মারে এবং আবদুল হালিম, আব্দুল জব্বার, ইদ্রিছ আলী ও ছাত্রলীগ ক্যাডার সিজার দেশীয় অস্ত্র দিয়ে এলোপাতাড়ি মারপিট করে। সোহেল তার হাতে থাকা বল্লম দিয়ে ইকবালের পিঠে ঘাঁই মারে এবং ইসমত আলীও বল্লম দিয়ে পিঠে ঘাঁই দেয়। এসময় জাহাঙ্গীর আজাদ ও ছাত্রলীগ নেতা সেলু সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের কবল হতে রক্তাক্ত ইকবাল আজাদকে বাঁচাতে এগিয়ে গেলে সন্ত্রাসী মিজান ধারালো দা দিয়ে জাহাঙ্গীর আজাদকে কোপ মারে এবং সন্ত্রাসী আব্দুল্লা বল্লম দিয়ে সেলুকে বাম চোখের নিচের অংশে ঘাঁই মারে। এসময় কজন সন্ত্রাসী গুরুতর আহত ইকবাল আজাদের গলায় ও বুকে পা দিয়া ধরে রাখে এবং অন্যান্য সন্ত্রাসীরা তার মৃত্যু নিশ্চিত করে বীরদর্পে চলে যায়। পরে স্থানীয়রা ইকবাল আজাদের নিথর দেহ হাসপাতালে নিয়ে আসলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

মামলা :

উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক, সাংগঠনিক সম্পাদকসহ ২২জনকে আসামী করে মামলা করেন ইকবাল আজাদের ভাই জাহাঙ্গীর আজাদ। ইকবাল আজাদ খুনের ঘটনায় উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি আব্দুল হালিম, সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা চেয়ারম্যান রফিক উদ্দিন ঠাকুর, যুগ্ম সাধারন সম্পাদক ও সরাইল সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুল জব্বার ও সাংগঠনিক সম্পাদক মাহফুজ আলীকে ২২ জনের বিরুদ্ধে সরাইল থানায় হত্যা মামলা দায়ের করা হয়।


যে কারণে খুন :

সরাইল সদর ইউনিয়নের জনপ্রিয় ইউপি চেয়ারম্যান, বিশিষ্ট ঠিকাদার ও পশ্চিম কুট্টাপাড়া গ্রামের বাসিন্দা ছিলেন ইকবাল আজাদের বাবা আব্দুল খালেক। তিনি সমাজে সত্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠার জন্য লড়াই করে গেছেন। ৭০’র জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন তিনি। ১৯৭৪ সালের ১৬ ডিসেম্বর এলাকার কিছু উচ্ছৃঙ্খল যুবক জনপ্রিয় নেতা আব্দুল খালেককে গুলি চালিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করে। মরহুম ধনাঢ্য পিতার রেখে যাওয়া বিশাল সম্পত্তি ও ব্যবসাকে কাজে লাগিয়ে শিল্পপতি হন এ কে এম ইকবাল আজাদ। একসময় এগিয়ে আসেন সমাজ সেবায়। গরিব অসহায় মানুষদের নানাভাবে উপকার করতে থাকেন তিনি। ১৯৯০-৯১ সালে ইকবাল আজাদ আওয়ামী লীগ রাজনীতির সাথে জড়িত হন। ওই সালেই তিনি সরাইল উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হন। ২০০৩ সালে দলীয় পদ নিয়ে তার সাথে দূরত্ব বেড়ে যায় আব্দুল হালিম ও রফিক উদ্দিন ঠাকুর গংদের। এক সময় উভয় গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ বেঁধে যায়। সমপ্রতি ইকবাল আজাদ সভাপতি পদে প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দেন। তাছাড়া আগামী সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন ইকবাল আজাদ। এছাড়াও দুর্নীতিবাজদের নানা অনৈতিক কর্মকা-ে বাধা হয়ে দাঁড়ান তিনি। এসবই ইকবাল আজাদের জন্য কাল হয়ে দাঁড়ায়। এ ব্যাপারে প্রয়াতের ছোট ভাই প্রকৌশলী জাহাঙ্গীর আজাদ বলেন, টি.আর, কাবিখার লুটপাট ও টেন্ডারবাজীর প্রতিবাদ করতেন আমার ভাই ইকবাল আজাদ। তিনি সন্ত্রাসী কর্মকান্ড ও অন্যায় অবিচারের বিরুদ্ধে ছিলেন, তাই তাকে পরিকল্পিতভাবে খুন করা হয়েছে। জাহাঙ্গীর আজাদ আরো বলেন, তিনি চেয়েছিলেন সরাইলে সুষ্ঠুধারার রাজনীতি প্রতিষ্ঠিত ইউক। তৃণমূল পর্যায়ে সংগঠনটি শক্তভিত্তির উপর দাঁড় হউক। অমায়িক ব্যবহারে আমার ভাই সরাইলবাসীর প্রিয় নেতায় পরিণত হয়েছিলেন। জাহাঙ্গীর আজাদ দাবি করেন, ঘটনার আগের রাতে (২০ অক্টোবর) অভিযুক্ত আওয়ামীলীগ নেতারা থানায় যান ভাইয়ের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিতে। তখনই তাকে হত্যার পরিকল্পনা করা হয়।

প্রতিক্রিয়া :

সদর আসনের সংসদ সদস্য ও পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী বলেন, এটি একটি নিন্দনীয় ও ন্যক্কারজনক ঘটনা।

এ ব্যাপারে জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মেজর (অব.) জহিরুল হক খান বীরপ্রতীক অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কথা স্বীকার করে বলেন, ঘটনাটি খুবই নিন্দনীয়। তারা ঘটনার সুষ্ঠু বিচার চান।

জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মো. মাহবুবুল বারী চৌধুরী মন্টু বলেন, তারা দলীয় সভা করে হত্যাকারীদের বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।

উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি, প্রধান আসামি আবদুল হালিম বলেন, ‘আমি হত্যার রাজনীতিতে বিশ্বাস করি না। রাজনৈতিক কারণে আমাকে অভিযুক্ত করা হচ্ছে।

উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা চেয়ারম্যান রফিক উদ্দিন ঠাকুর হত্যাকান্ডের সাথে তার সম্পৃক্ততার কথা অস্বীকার করে বলেন, ইকবাল আজাদ সরাইলের জনপ্রিয় নেতা।   তারহত্যাকান্ডে  তিনি শোকাহত। তিনি দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক বিচার দাবি করেন।

ইকবাল আজাদ হত্যা মামলার আসামী ২১ নেতাকর্মীর আত্মসমর্পণ:

সোমবার ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহসভাপতি একে ইকবাল আজাদ হত্যা মামলার প্রধান আসামি উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল হালিম ও উপজেলা চেয়ারম্যান রফিক উদ্দিন ঠাকুরসহ ২১ আসামিকে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে। দুপুরে এ মামলার চার্জশীটভুক্ত ২৯ আসামির মধ্যে ২১ জন সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিনের প্রার্থনা করলে বিজ্ঞ বিচারক তাদের জামিন না মঞ্জুর করে সবাইকে জেল হাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন। আসামিরা হলেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি সাদেক মিয়া, যুগ্ম সম্পাদক ও সদর ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল জব্বার, সাংগঠনিক সম্পাদক মাহফুজ আলী, সদর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ইসমত আলী, আওয়ামী লীগ নেতা ইদ্রিস আলী, যুবলীগ নেতা কামরুল ইসলাম, বাবু, বকুল, লিমন, আব্দুল্লাহ, শরীফ, মিজান, রাসেল, ইনু মিয়া, মুসা মিয়া, জনি মিয়া, নয়ন মিয়া, মিস্টার আলী ও মোঃ মফিজ মিয়া।

অভিযোগ পত্র দাখিল :

ইকবাল আজাদ হত্যা মামলায় অভিযোগ পত্র দাখিল, নতুন অভিযুক্ত ৭ জন, সভাপতি- সম্পাদক সহ আসামী ২৯ জন

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইলে চাঞ্চল্যকর আওয়ামীলীগ নেতা ইকবাল আজাদ হত্যা মামলার অভিযোগ পত্র দাখিল করা হয়েছে। ঘটনার দুই মাস পর গত সোমবার বিকেলে মুখ্য বিচারিক হাকিমের (চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট) বরাবরে অভিযোগ পত্রটি জমা দিয়েছেন মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা। হত্যার সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে নতুন ভাবে ৭ জনকে আসামী করা হয়েছে। আওয়ামীলীগের সভাপতি সম্পাদক সহ অভিযোগ পত্রে মোট আসামীর সংখ্যা ২৯ জন। স্বাী করা হয়েছে ৪২ ব্যক্তিকে।

পুলিশ সূত্রে জানা যায়, সরাইল সদর ইউনিয়নের পশ্চিম কুট্রাপাড়া গ্রামের বাসিন্ধা স্বনামধন্য ঠিকাদার ও সমাজ সেবক ছিলেন ইকবাল আজাদের বাবা আব্দুল খালেক। সমাজে সত্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠার জন্য তিনি ছিলেন নিবেদিত। ওই সময়ে তিনি জনপ্রিয়তার তুঙ্গে থাকায় পর পর দুইবার সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন। অত্যন্ত সততা ও নিষ্ঠার সাথে তিনি দায়িত্ব পালন করছিলেন। ৭০’র জাতীয় নির্বাচনে সরাইলে আওয়ামীলীগের দলীয় মনোনয়নে ও তার ভূমিকা ছিল। আর এসবই এক সময় কাল হয়ে দাঁড়ায় তার জন্যে। তার রাজনীতি ছিল স্থানীয় মুরব্বীদের ঘিরে। ১৯৭৪ সালের ১৬ ডিসেম্বর এলাকার কিছু উছৃঙ্খল যুবক পরিকল্পনা মাফিক রাতের অন্ধকারে আব্দুল খালেককে গুলি করে হত্যা করে। পিতার বিশাল সম্পত্তি ও ব্যবসাকে কাজে লাগিয়ে এ কে এম ইকবাল আজাদ সমাজ সেবায় মন দেন। গরীব অসহায় মানুষদের উপকার করতে থাকেন। অন্যায় অত্যাচার অবিচার চুরি ডাকাতি দূর্নীতি ও অনিয়মের বিরুদ্ধে সোচ্ছার প্রতিবাদ করতে থাকেন।

১৯৯০-৯১ সালে ইকবাল আজাদ আওয়ামীলীগ রাজনীতির সাথে জড়িত হন। ওই সালেই তিনি সরাইল উপজেলা আ’লীগের সম্পাদক হন। ২০০৩ সালে দলীয় পদ নিয়ে তার সাথে দূরত্ব বেড়ে যায় আব্দুল হালিম ও রফিক ঠাকুর গংদের। এক সময় উভয় গ্র“পের মধ্যে সংঘর্ষ বেঁধে যায়। অতি সম্প্রতি ইকবাল আজাদ সভাপতি পদে প্রার্থী হওয়ার ঘোষনা দেন। আর তখনই সরাইলে গ্র“পিং রাজনীতিতে বিরুধ ও হিংসা বৃদ্ধি পায়। পাকশিমুল ইউনিয়ন আ’লীগের সম্মেলনের তারিখ পরিবর্তনকে কেন্দ্র করে গত ১২ অক্টোবর ইকবাল সমর্থিত যুবলীগ ও ছাত্রলীগের কিছু কর্মী আব্দুল হালিমকে লাঞ্ছিত করে।

এ ঘটনায় উভয় গ্র“পে উত্তেজনা বৃদ্ধি পায়। একই দিন বিকেলে অরুয়াইল ইউপি যুবলীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। স্থানীয় যুবলীগ নেতা শফিকুল ইসলামের পদ নিয়ে মাহফুজ আলী ও আশরাফ উদ্দিন মন্তুর মধ্যে বাক বিতন্ডা হয়। পরে দুজনে দুটি কমিটি ঘোষনা করে। শফিক উপজেলা যুবলীগের আহবায়ক মাহফুজ আলীর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। ইকবাল বিরুধী নেতারা বিভিন্ন জায়গায় মিটিং করেন। ১৮ অক্টোবর হালিমের জেলা সদরের বাস ভবনে সভা হয়। ওই সভায় উপজেলা ও ইউনিয়নের অনেক নেতা অংশ নেন। আলোচনা হয় ইকবাল আজাদের বিষয়ে চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়ার। ২০ অক্টোবর রাত ৯ টায় মাহফুজ আলী মন্তুর মোটর সাইকেলে থেকে নামিয়ে শফিককে মামলার কারন জিজ্ঞেস করেন। এ ঘটনায় তাদের মধ্যে হাতাহাতি হয়। পরে উভয় গ্র“পের লোকজন দেশীয় অস্রে সজ্জিত হয়ে সরাইল সদরে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া করে।

ইকবাল আজাদ বিষয়টি নিস্পত্তির জন্য ওই রাতেই প্রানপণ চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। ২১ অক্টোবর সন্ধার পর ইকবাল আজাদ বিষয়টি নিস্পত্তি ও পূঁজা মন্ডব পরিদর্শনের উদ্দেশ্যে কুট্রাপাড়া নিজ বাড়ি থেকে তার প্রাইভেট কারযোগে রওয়ানা দেন। সিএনজি ষ্ট্যান্ডের নিকট যাওয়া মাত্র পূর্ব পরিকল্পনা মাফিক অভিযোগ পত্রে উল্লেখিত আ’লীগের নেতা কর্মীদের উপস্থিতি ও অংশ গ্রহনে বল্লমের উপর্যুপুরি আঘাত এবং দা এর কূপে গুরুতর আহত হন ইকবাল আজাদ। আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাকে জেলা সদর হাসপাতালে নেয়ার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষনা করেন। অভিযোগ পত্রের আসামীরা হচ্ছে- আব্দুল হালিম, রফিক উদ্দিন ঠাকুর, মাহফুজ আলী, আব্দুল জব্বার, হাফিজুল আসাদ সিজার, ইসমত আলী, ইদ্রিস আলী, মোকাররম আলী সোহেল, বাবু, হারিছ, বকুল, লিমন প্রকাশ রিপন, আব্দুল্লাহ, শরীফ, মিজান, রাসেল, ইমদাদ, হাবিবুর রহমান হাবিব, ইনু মিয়া, মুসা মিয়া, জনি, নয়ন, ছাদেক মিয়া, আনব আলী, প্রকৌশলী মশিউর রহমান, মিষ্টার আলী, কামরুল ইসলাম, আল- এমরান ও মোঃ মফিজ।












Shares