শামীম উন বাছির ঃ শিক্ষক সংকট ও প্রয়োজনীয় টুল-বেঞ্চির অভাবে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলার পরমানন্দপুর পশ্চিমপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের পড়াশুনায় ব্যাঘাত ঘটছে। শিক্ষার্থীর তুলনায় এই বিদ্যালয়ে শিক্ষক কম থাকলেও দায়িত্বরত অনেক শিক্ষক প্রতিদিন দিচ্ছেন কাশ ফাঁকি। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, কয়েকজন শিক্ষক হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করে চলে যান। মন চাইলে কখনো এসে কাশ করেন। প্রধান শিক্ষক প্রায়ই স্কুলের বাইরে থাকেন। তার বদলে কাশ করেন একজন প্যারা শিক্ষক। এলাকাবাসীর অভিযোগ উপজেলা সদরের সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ায় শিক্ষকরা তাদের মনগড়া মতো স্কুলে আসা-যাওয়া করেন। উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার বা সহকারী শিক্ষা অফিসাররা বিষয়টি তদারকি না করায় স্কুলে প্রতিদিন না আসার বিষয়টি শিক্ষকদের কাছে রেওয়াজে পরিণত হয়েছে। অভিযোগকারীরা জানান, বিদ্যালয়ে মোট শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৫শ৪০ জন। তার বিপরীতে শিক্ষক-শিক্ষিকা মাত্র আছেন ৪জন। এর মধ্যে একজন শিক্ষিকা রয়েছেন সিএনএডের ট্রেনিংয়ে। অভিভাবরা জানান, বিদ্যালয়ে টুল ও বেঞ্চির অভাবে শিক্ষার্থীরা ইটের উপর বসে কাশ করে। সরেজমিন গত সোমবার দুপুর পৌনে দুইটায় বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায় ৪জন শিক্ষকের স্থলে বিদ্যালয়ে উপস্থিত আছেন মাত্র ১জন শিক্ষক। উপস্থিত শিক্ষক মোঃ মজিবুর রহমান বলেন,শিক্ষিকা ফারজানা আক্তার ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সিএনএড’র ট্রেনিং করছেন। সহকারী শিক্ষক মোহাম্মদ আলী হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর দিয়ে চলে গেছেন। প্রধান শিক্ষক স্কুলে নেই। শিক্ষক মজিবুর রহমান জানান, এ বিদ্যালয়ে ৫শ৪০ জন শিক্ষার্থী থাকলেও শিক্ষক আছেন মাত্র ৪জন। বিদ্যালয়ে টুল ও বেঞ্চের সমস্যা প্রকট। বিদ্যালয়ের শিক্ষক হাজিরা খাতায় দেখা যায়, শিক্ষক মোহাম্মদ আলী অনুপস্থিত থাকলেও হাজিরা খাতায় তার স্বাক্ষর আছে। অপরদিকে ৩দিন ধরে হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর নেই প্রধান শিক্ষক মোঃ জাহাঙ্গীর আলমের। চতুর্থ শ্রেণীর কাশে গিয়ে দেখা যায়, কয়েকজন শিক্ষার্থী ইটের উপর বসে কাশ করছে। তাদের কাশ নিচ্ছেন উপজেলার অরুয়াইল আবদুস সাত্তার মহাবিদ্যালয়ের একাদশ শ্রেণীর প্রথম বর্ষের ছাত্র মোঃ আবদুস সালাম। কলেজ ছাত্র সালাম বলেন, তিনি দুই হাজার টাকা বেতনে দীর্ঘদিন ধরে বিদ্যালয়ে খন্ডকালীন শিক্ষকতা করে আসছেন। চতুর্থ শ্রেণীর ছাত্রী সান্তনা আক্তার, ছাত্র নিয়ামতউল্লাহ, মোঃ সাগর মিয়াসহ অনেক শিক্ষার্থী বলেন, কাশে বেঞ্চ কম থাকায় তারা ইট দিয়ে বেঞ্চ বানিয়ে এখানে লেখাপড়া চালিয়ে যাচ্ছে। এতে তাদের খুবই কষ্ট হচ্ছে। অপরদিকে তৃতীয় শ্রেণীর কক্ষেরও একই অবস্থা। তৃতীয় শ্রেণীতে গিয়ে দেখা যায় শিক্ষার্থীদের কাশ নিচ্ছেন প্যারা শিক্ষিকা আজিমুন নেছা। এইচ.এস.সি পাশ করা আজিমুন নেছা বলেন, প্রধান শিক্ষক জাহাঙ্গীর আলমের বদলে তিনি প্রায়ই কাশ নেন। অভিভাবক মোঃ বাচ্চু মিয়া, রহমান উদ্দিন ও জেসমিন বেগম বলেন, প্রধান শিক্ষকসহ স্কুলের শিক্ষকরা মনগড়া মতো স্কুলে আসা যাওয়া করেন। এছাড়া ্িবদ্যালয়ে পর্যাপ্ত বেঞ্চি না থাকায় শিক্ষার্থীরা ইটের উপর বসে কাশ করতে হয়। এ ব্যাপারে বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক মোঃ জাহাঙ্গীর আলমের সাথে যোগায়োগ করলে তিনি বিদ্যালয়ে শিক্ষক ও বেঞ্চির স্বল্পতার কথা স্বীকার করে বলেন, বিষয়টি নিয়ে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে একাধিকবার চিঠি দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, বিদ্যালয়ের স্বার্থে কমিটি আব্দুস সালাম নামে একজনকে প্যারা শিক্ষক নিয়োগ দিয়েছেন। আর আমি স্কুলে না থাকলে আজিমুন নেছা আমার কাশ নেন। তিনি বলেন, বিদ্যালয়ের কাজে বাইরে থাকার কারনে তিন দিন হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর দিতে পারিনি। বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা পর্ষদের সভাপতি মোঃ ইদ্রিছ আলী বলেন, বিদ্যালয়টিতে শিক্ষকসহ বেঞ্চ সঙ্কট রয়েছে। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে একাধিকবার জানিয়েও কোনো সুফল পাওয়া যাচ্ছে না। এ ব্যাপারে সরাইল উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোঃ তৌফিকুল ইসলামের সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই। খোজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। |