Main Menu

সরাইল মাধ্যমিক পরীক্ষা কেন্দ্রে অনিয়ম, ইউএনও অফিস ঘেরাও,পরীক্ষার্থীদের আত্মহত্যার ঘোষনা

+100%-
প্রতিনিধি : সোমবার দুপুরে মাধ্যমিক পরীক্ষা কেন্দ্রে অনিয়মের শিকার শিক্ষার্থীদের অভিভাবক ও বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা পরিষদের সদস্যরা নির্বাহী কর্মকর্তার দফতর ঘেরাও করেছে। এ সময় তারা দায়িত্বে অবহেলার সাথে সংশ্লিষ্ট শিক্ষক কর্মকর্তা সহ সকলের দৃষ্টান্তমূলক বিচার দাবী করেন। এটা মেধাবী শিক্ষার্থীদের কৌশলে ফলাফল বিপর্যয় ঘটিয়ে শিক্ষা জীবন ধ্বংসের হীন ষড়যন্ত্র বলে উল্লেখ করেন তারা। ওদিকে চরম উদ্বিগ্ন শিক্ষার্থীরা এ ষড়যন্ত্রে বিচার না পেলে আত্মহত্যা করার ঘোষনা দিয়েছে। ইউএনও এবং মাধ্যমিক কর্মকর্তা নিজেদের দায় স্বীকার করে ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দিয়েছেন। ইতিমধ্যে ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত হয়ে চার শিক্ষককে বরখাস্থের কথা বললেও কোন কাগজ দিতে নারাজ প্রশাসন।  চলমান এসএসসি পরীক্ষায় গত রোববার সরাইল অন্নদা সরকারী উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রের বিজ্ঞান বিভাগের ২৬ পরীক্ষার্থীর নির্ধারিত সময়ের ১৫ মিনিট নষ্ট করে দিয়েছে কেন্দ্রে দায়িত্বরত পর্যবেক্ষকরা। পরীক্ষার্থী, অভিভাবক ও কেন্দ্র সূত্রে জানা গেছে, গত রোববার সরাইল অন্নদা সরকারী উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রের ৬নং কক্ষে মানবিক, বাণিজ্য ও বিজ্ঞান বিভাগের ৫৬ জন পরীক্ষার্থীর একসাথে পরীক্ষা নেওয়া হয়।

এদের মধ্যে ২৬ জন বিজ্ঞান বিভাগের পরীক্ষার্থী। সরাইল কেন্দ্রের এই কক্ষটিতে পরীক্ষায় পর্যবেক্ষকের দায়িত্বপালনে ছিলেন সরাইল উপজেলার শাহবাজপুর বহুমূখী উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মোঃ নজরুল ইসলাম ও মোঃ কবির হোসেন এবং পানিশ্বর শামসুল আলম উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মোঃ জয়নাল আবেদীন। আরেকজন পর্যবেক্ষক অনুপস্থিত ছিলেন। পরীক্ষার নিয়মানুযায়ী ১২টা ১০মিনিটে বিজ্ঞান বিভাগ এবং ১২টা ২০মিনিটে মানবিক ও বাণিজ্য বিভাগের পরীক্ষার্থীদের হাতে প্রশ্নপত্র দেওয়ার কথা। কিন্তু দায়িত্বরত পর্যবেক্ষকরা সম্পূর্ণ অনিয়ম ও মনগড়াভাবে সকল বিভাগের পরীক্ষার্থীদের একসাথে ১২টা ২০মিনিটে তারা সবার হাতে প্রশ্নপত্র দেন। এসময় পরীক্ষার্থীরা দেখতে পাই বিজ্ঞান বিভাগের পরীক্ষার্থীদের হাতে বাণিজ্য বিভাগের প্রশ্নপত্র। অপরদিকে মানবিক বিভাগের পরীক্ষার্থীদের হাতে দেওয়া হয়েছে বিজ্ঞান বিভাগের প্রশ্নপত্র। এ ঘটনায় কেন্দ্রের ৬নং কক্ষের পরীক্ষার্থীরা হতবাক হয়ে পর্যবেক্ষকদের ভুল ধরিয়ে দিলে, পরে তারা এটি সংশোধন করেন। তবে পর্যবেক্ষকদের এ ভুলের কারণে পরীক্ষার নির্ধারিত ৩৫ মিনিটের মধ্যে পাঁচ মিনিট সময় নষ্ট হয়ে যায়। অপরদিকে যথাসময়ে (১২টা ১০মিঃ) প্রশ্নপত্র না দেওয়ায় বিজ্ঞান বিভাগের পরীক্ষার্থীদের ১৫মিনিট সময় নষ্ট হয়। এপর ১২ টা ৪৫ মিনিটে এ কক্ষের সকল বিভাগের পরীক্ষার্থীদের কাছ থেকে তাদের উত্তরপত্র নিয়ে নেয় পর্যবেক্ষকরা।

এতে বিজ্ঞান বিভাগের পরীক্ষার্থীরা ৩৫ মিনিটের স্থলে সময় পেয়েছে মাত্র ২০ মিনিট। সময় সল্পতার কারণে পরীক্ষার্থীরা সহজ অনেক প্রশ্নের জবাব তাদের উত্তরপত্রে দিতে না পারায় পরীক্ষা কেন্দ্রেই কান্নাকাটি শুরু করে তারা। এ বিষয়ে তাৎক্ষনিক সকল পরীক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকরা উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে অভিযোগ করেন। উপজেলা নির্বাহী অফিসার পরীক্ষা কেন্দ্রে দায়িত্ব অবহেলার অভিযোগে চার পর্যবেক্ষককে (শিক্ষক) তাদের দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেন। এছাড়া ঘটনার সঠিক তদন্ত করে এক দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করতে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে তিনি নির্দেশ দেন।

এ বিষয়ে কেন্দ্রের ৬নং কক্ষে পর্যবেক্ষকের দায়িত্বে থাকা শিক্ষক মোঃ নজরুল ইসলাম ও মোঃ কবির হোসেন বলেন, পরীক্ষার্থীদের সময় নষ্ট করা হয়নি। ভুলে এক বিভাগের প্রশ্নপত্র অন্য বিভাগের পরীক্ষার্থীদের হাতে দেওয়া হয়। পরে সাথে সাথে তা সংশোধন করা হয়েছে।

সরাইল পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক মোঃ আনোয়ার হোসেন মাস্টার বলেন, কেন্দ্রের ওই কক্ষে বিজ্ঞান বিভাগের ২৬ পরীক্ষার্থীর মধ্যে ১৮ জনই পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্রী। তিনি অভিযোগ করে বলেন, আমাদের বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এসএসসি পরীক্ষায় সব সময় ভালো ফলাফল করে আসছে। অন্নদা স্কুল কর্তৃপক্ষ ইচ্ছে করেই এ অনিয়ম কাজটি করিয়েছে।

এদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক পরীক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকরা অভিযোগ করে জানায়, ইচ্ছে করেই ওই পর্যবেক্ষকরা ১৫ মিনিট সময় পরীক্ষার্থীদের কাছ থেকে কেড়ে নিয়েছে। তাদের ইচ্ছাকৃত অনিয়ম ও গাফিলতির কারণে বিজ্ঞান বিভাগের ২৬ পরীক্ষার্থীর ভবিষ্যৎ এখন অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা পুনরায় এ পরীক্ষা নেওয়ার দাবিও জানায়। একদিন পরও কোন প্রতিকার না পেয়ে সোমবার দুপুরে ব্যবস্থাপনা পর্ষদের সদস্য ও অভিভাবকরা নির্বাহী কর্মকর্তার দফতর ঘেরাও করেন। অভিভাবক সদস্য মোঃ জহির উদ্দিন আহমেদ, মোঃ শাহ আলম ও আবদুর রাজ্জাক ক্ষোভের সাথে জানান, আমাদের বিদ্যালয়ের ফলাফল খারাপ করার জন্য এটা মহল বিশেষের য়ড়যন্ত্র। দায়িত্বে নিয়োজিত সকলেই জড়িত। সুষ্ঠু বিচার না পেলে আমরা মামলা করব। অভিভাবক সোহরাব মিয়া, মোঃ সাইদ, রোকসানা বেগম, নূর আহম্মদ, হেনা বেগম ও চন্দনা রায় বলেন, আমাদের মেয়েদের শিক্ষা জীবন পরিকল্পনা করে শেষ করে দেয়া হয়েছে। নির্বাহী কর্মকর্তা সকাল থেকে আমাদেরকে দাঁড় করিয়ে রেখেছেন। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা ও পরীক্ষার খবর রাখেন না। শিক্ষার্থীরা আত্মহত্যা করলে এর দায়ভার কে নিবে। কেন্দ্র সচিব এম এ হাসান ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, সময় নষ্ট হয়নি। এ ঘটনার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও সরাইল উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মোঃ ছায়েদুর রহমান বলেন, প্রাথমিক তদন্তে ঘটনার সত্যতা পাওয়া গেছে। বিষয়টি আরো খতিয়ে দেখা হচ্ছে। সরাইল উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ আনিসুজ্জামান খান ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, বিষয়টি আমাকে কেউ জানায়নি। ১টা ২০ মিনিটে জানতে পেরেছি। আগে জানলে সময় দিতাম। এ ঘটনায় এক সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। চার পর্যবেক্ষককে তাদের পরীক্ষা কেন্দ্রের দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। তদন্ত রিপোর্ট আসার পর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।






Shares