প্রতিনিধি: এক সময়ের ইউপি ছাত্রলীগ নেতা শফিক। বর্তমানে ও নিজ ইউনিয়নের বিতর্কিত কমিটির যুবলীগের সভাপতি। এলাকায় ত্রাস হিসেবে পরিচিত। অনেকের কাছে এল এম জি শফিক হিসেবেই অধিক পরিচিত। হত্যা, ব্যবসায়ী অপহরণ, ছিনতাই, ডাকাতি, অবৈধ অস্র বহন ও পুলিশকে মারধর করা সহ নানান অপকর্মের হোতা এ যুবলীগ নেতা। তার বিচারের দাবীতে অরুয়াইল বাজারে হরতাল ও পালিত হয়েছে। তার বিরুদ্ধে সরাইল থানায় রয়েছে অর্ধ ডজনের ও অধিক মামলা। তিনি ক্ষমতাসীন দলের নেতা। তাই প্রকাশ্যে ঘুরলেও পুলিশ এতদিন তাকে চোখে দেখেননি। থেমে থাকেনি তার অপকর্ম। অবশেষে গত শুক্রবার রাত ১০টায় কৌশলের ফাঁদে ফেলে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের বিশ্বরোড থেকে তাকে গ্রেপ্তার করেছে সরাইল থানার এস আই সিরাজ। তার গ্রেপ্তারের খবরে অরুয়াইলে চলছে মিষ্টি বিতরন। তাৎক্ষনিক স্বস্থি ফিরে এসেছিল নিজ গ্রাম ধামাউড়ায়। কিন্তু সেই স্বস্থি ঠিকেনি। শফিকের গ্রেপ্তারের খবরে সকালে প্রতিপক্ষের বেশ কয়েকটি বাড়িতে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করেছে তার লোকজন। পুলিশ ও এলাকাবাসী সূত্র জানায়, ২০০৩ সালে শফিককে অরুয়াইল ইউপি ছাত্রলীগের সভাপতি করা হয়। সভাপতি হওয়ার পর থেকেই তার বিরুদ্ধে আসতে থাকে নানান অভিযোগ। তিন বছরের কমিটি চলছে আট বছর যাবৎ। তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে ধামাউড়া গ্রামে গাজীর গোষ্ঠী ও তালুকদার গোষ্ঠীর লোকজন রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে জড়িয়ে পরে। একের পর এক সংঘর্ষে ওই গ্রামে চার ব্যাক্তি নিহত হন। দিনে দুপুরে চলতে থাকে ভাংচুর লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা। শুধু ধামাউড়া নয় পুরো অরুয়াইলে ছড়িয়ে পড়ে আতঙ্ক। প্রতিপক্ষের খুনের মামলায় গ্রামটি পুরুষ শুন্য হয়ে পড়লে ও কিছু দুষকৃতকারি সন্ত্রাসী এলাকা ছাড়েনি। যুবলীগ নেতা শফিক ছিল অনেক ঘটনারই হোতা। অনেক ঘটনায় আলোচনায় উঠে আসতো তার নাম। অতি সম্প্রতি দাঙ্গারোধে ধামাউড়া গ্রামে যায় পুলিশ। শফিকের নেতৃত্বে আগ্নেয়াস্রে সজ্জিত হয়ে পুলিশের উপর হামলা চালায় একটি গ্রুপ। পুলিশের উদ্দেশ্যে তারা গুলি ছুঁড়ে। বেদড়ক পেটানোর পর তারা পুলিশের ড্রেস ছিঁড়ে ফেলে অবরুদ্ধ করে রাখে। খবর পেয়ে জেলা থেকে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ছুটে যান ধামাউড়ায়। তিনি গুরুতর আহত অবস্থায় ওই চার পুলিশ সদস্যকে উদ্ধার করেন। পুলিশ বাদী ওই মামলার (মামলা নং জি আর – ৩৭/১৩) ১ নং আসামী শফিক। গত বছরের ৩০ ডিসেম্বর গ্রামের ছকিনা বেগমকে মারধর করে হত্যার অভিযোগে শফিককে প্রধান আসামী করে মামলা ( মামলা নং জি আর – ৪৮/১৩) দায়ের করেন নিহতের স্বামী হেলাল মিয়া। প্রকাশ্যে ছিনতাইয়ের অভিযোগে রাষ্টু মিয়া নামের এক ব্যাক্তি তার বিরুদ্ধে মামলা দেয় (জি আর নং- ৫৯৭/১২)। নগদ টাকা ও মালামাল লুটের অভিযোগে তার বিরুদ্ধে মামলা করেন গ্রামের নাসির মিয়া নামের জনৈক ব্যাক্তি ( জি আর- ৩৬/১৩)। নগদ টাকা ছিনতাইয়ের অভিযোগ এনে বাচ্চু ভূইয়া তার বিরুদ্ধে মামলা করেছেন (জি আর- ৩২/১৩)। এ ছাড়া মালামাল লুটপাট ও ভাংচুরের অভিযোগে আবদুল হাশিম ও হারুনুর রশিদ বাদী হয়ে তার বিরুদ্ধে পৃথক দুটি মামলা করেছেন। সবচেয়ে আলোচিত ও লোমহর্ষক ঘটনাটি ঘটেছিল ২০১২ সালের প্রথম দিকে। এ ঘটনার নায়ক ছিলেন শফিক। মেয়ে সংক্রান্ত বিষয়কে কেন্দ্র করে বিরুধ সৃষ্টি হয়। শফিক তার লোকজনকে নিয়ে পাকশিমুল ইউনিয়নের ফতেহপুর গ্রামের হাজী তাহের মিয়ার পুত্র জুলহাসকে (৩০) তার অরুয়াইল বাজারের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে অপহরন করে হাওরের দিকে নিয়ে যায়। পরে তাকে হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে উপরের মাঁড়ির ৪টি ও নীচের মাঁড়ির ২টি দাঁত ফেলে দেয়া হয়। এমন বর্বরতার বিচারের দাবীতে বাজার কমিটি ও ব্যবসায়ীরা একদিনের হরতাল পালন করেছে। এ ঘটনায় জুলহাসের বড় ভাই জিয়াউর রহমান বাদী হয়ে শফিককে প্রধান আসামী করে মামলা দায়ের করেন। এত মামলা মোকদ্দমার পর ও শফিক অত্যন্ত স্বাচ্ছন্দে বিলাস পূর্ণ জীবন যাপন করতেন। প্রকাশ্যে বুক ফুলিয়ে ঘুরলেও পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করেনি। সরাইল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা উত্তম কুমার চক্রবর্তী জানান, শফিক ওই এলাকার বড় মাপের একজন ত্রাস। তার নেতৃত্বে একটি গোষ্ঠী পরিচালিত হয়। সে প্রায় সময়ই তার বাহিনীকে নিয়ে গ্রামে ভাংচুর লুটপাট অগ্নিসংযোগ করে আইন শৃঙ্খলার ব্যাপক অবনতি ঘটাতো। |