Main Menu

সরাইল প্রেসক্লাবের সহায়তায় প্রতিবন্ধী ভাতা পেল কামাল

+100%-

মোহাম্মদ মাসুদ, সরাইল ॥: মো. কামাল মিয়া (৪৯)। উপজেলার নোয়াগাঁও ইউনিয়নের কাটানিশার গ্রামের বাসিন্ধা। শারীরিক প্রতিবন্ধী কামাল ভাতার জন্য স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের পিছে ঘুরছেন ৩ বছর ধরে। কিন্তু নিবন্ধন থাকলেও প্রতিবন্ধী ভাতা তার ভাগ্যে জুটেনি। অবশেষে গত ২ মে শনিবার ত্রাণ সহায়তা দিতে কামালের বাড়িতে যান সরাইল প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ মাহবুব খান। এ সময় কান্নাজড়িত কন্ঠে কামাল মিয়া প্রতিবন্ধী ভাতা বঞ্চিতের বিষয়টি জানান প্রেসক্লাবের নেতৃবৃন্দকে। মাহবুব খান সমাজসেবা অফিসে খুঁজ নিয়ে তার ভাতা প্রাপ্তির বিষয়টি নিশ্চিত করার আশ্বাস দেন।

বিষয়টি প্রেসক্লাবের সাহিত্য সম্পাদক জহিরূল ইসলাম রিপনের আইডি থেকে সামাজিক যোগাযোগ (ফেসবুক) মাধ্যমে প্রচারিত হওয়ার পর নড়ে বসেন উপজেলা সমাজসেবা অধিদপ্তর। বিষয়টিকে গুরূত্ব দিয়ে ওই দফতরের ফিল্ড সুপারভাইজার মো. রাকিব মিয়া এগিয়ে আসেন। মাহবুব খান এ বিষয়ে কথা বলেন কর্মকর্তা আবু নাঈম মৃর্দার সাথে। কামাল মিয়াকে উপজেলা সমাজসেবা অফিসে নিয়ে আসতে বলেন তিনি। গত ৫ মে বুধবার কামাল মিয়াকে নিয়ে সমাজসেবা অফিসে যায় সরাইল প্রেসক্লাব। প্রতিবন্ধী নিবন্ধনের কপি ও স্মার্ট কার্ডের ফটোকপি জমা নিয়েছেন মো. রাকিব মিয়া। এ সময় উপস্থিত ছিলেন-সরাইল মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ ও দৈনিক প্রথম আলো পত্রিকার সরাইল প্রতিনিধি মোহাম্মদ বদর উদ্দিন, সরাইল প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ মাহবুব খান, উপজেলা কৃষকলীগের সভাপতি ও সাংবাদিক মো. শফিকুর রহমান, প্রেসক্লাবের সাংগঠনিক সম্পাদক মো. জুলকার নাঈন, সাহিত্য সম্পাদক জহিরূল ইসলাম রিপন ও সাংবাদিক মো. মুরাদ খান।

সমাজসেবা কর্মকর্তা আবু নাঈম মৃর্দা বলেন, ভাতা বঞ্চিত কামাল মিয়াকে খুঁজে বের করে আনায় সরাইল প্রেসক্লাবকে ধন্যবাদ। শুধু সংবাদ নয়, মানবসেবায় ও পিছিয়ে নেই সাংবাদিকরা। এটা বর্তমান দূর্যোগের সময়ে প্রমাণ করেছে সরাইল প্রেসক্লাব। তার আবেদন পক্রিয়া খুব দ্রততম সময়ের মধ্যেই শেষ হবে। এক সাথে এক বছরের (জুলাই-২০১৯ থেকে জুন-২০২০ খ্রি. পর্যন্ত) মোট ৯ হাজার টাকা ভাতা পাবে কামাল মিয়া। এখন থেকে প্রত্যেক মাসে পাবে ৭৫০ টাকা। আবেগ আপ্লুত হয়ে কামাল বলেন, দীর্ঘ ৩ বছরে যা হয়নি। সরাইল প্রেসক্লাবের সহায়তায় মাত্র ৩ দিনে তা হয়েছে। আল্লাহ আমি অসহায় মানুষের মঙ্গল যারা করেছে তুমি তাদের মঙ্গল কর।

প্রতিবন্ধী কামালের পরিবারে স্বস্থি

স্বস্থি ফিরে এসেছে কামালের পরিবারে। গ্রামে গঞ্জে ঘুরে ক্ষুদ্র ব্যবসা করতেন কামাল। স্ত্রী, ৩ ছেলে ও ৩ মেয়েসহ ৮ সদস্যের পরিবারটি অভাব অনটনের মধ্যেই চলছিল। বড় ছেলে জীবনের বয়স ১৪ বছর। গত ৬ বছর আগে হঠাৎ ষ্ট্রোক করে কামালের বাম হাত ও পা প্যারালাাইজড্ হয়ে যায়। সংসারের একমাত্র উপার্জক্ষম ব্যক্তিটি শারীরিক প্রতিবন্ধী হয়ে যাওয়ায় অন্ধকার নেমে আসে পরিবারে। অর্ধহার-অনাহারে চলতে থাকে তারা। পেটের দায়ে কামালের স্ত্রী অন্যের বাড়িতে কাজ করতে থাকেন। অত্যন্ত কষ্টে দিনাতিপাত করতে থাকে পরিবারটি। সহায় সম্পত্তি বিক্রি করে ফেলে। নিরূপায় হয়ে কামাল বসত বাড়ির জায়গাও বিক্রি করতে বাধ্য হন। এখন মাত্র ১ শতক জায়গার উপর দু’চালা একটি টিনের ঘরে কোন রকমে বসবাস করছে কামাল। সংসারের আহার যোগাড় করতে শ্রমবিক্রি শুরূ করে শিশু জীবন। জীবনের আয় রোজগার দিয়েই কষ্টেশিষ্টে চলছে কামালের সংসার।

তাই বাঁচার তাগিদে প্রতিবন্ধী ভাতার জন্য কামাল গত ৩ বছর ধরে স্থানীয় একাধিক জনপ্রতিনিধির কাছে ঘুরছেন। কিন্তু কোন কাজ হয়নি। নিরাশ হয়ে পড়েছিলেন কামাল। অবশেষে সরাইল প্রেসক্লাবের সহায়তায় একটু স্বস্থি ও আশার আলো দেখছেন কামাল। এখন থেকে প্রতি মাসেই ভাতা পাবেন ৭৫০ টাকা।

 






Shares