Main Menu

সেচের অভাবে পুড়ছে বোরো ফসল

+100%-


শামীম-উন-বাছির : ব্রাহ্মণবাড়িয়া, আখাউড়া ও বিজয়নগর উপজেলায় গত শুক্রবারের টর্নেডোয় ক্ষতিগ্রস্ত অধিকাংশ পরিবারের জীবিকা কৃষিনির্ভর। টর্নেডোর তাণ্ডবে তাঁদের ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হওয়ার পাশাপাশি নষ্ট হয়েছে জমির বোরো ধান ও শাকসবজি। কিছু জমিতে টর্নেডোর আঘাত না লাগলেও সেচের অভাবে সেসব জমির ফসলও নষ্ট হতে চলেছে।
ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকেরা জানান, এখনো বিদ্যুৎ সরবরাহ চালু না হওয়ায় বোরোর জমিগুলোতে সেচ দেওয়া যাচ্ছে না। টর্নেডো-দুর্গত গ্রামগুলোর প্রায় প্রতিটি বাড়ির আঙিনা, বাড়ির চারপাশ ও পুকুরপাড়ে ছিল নানা জাতের গাছ এবং বাঁশঝাড়। টর্নেডো এসব গাছ শিকড়সুদ্ধ উপড়ে ফেলেছে। গাছগুলোতে সবুজের চিহ্ন নেই। গবাদিপশুরও ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।
বাসুদেব ইউনিয়নের দুবলা গ্রামের বর্গাচাষি দুলাল মিয়া বলেন, অন্যের ছয় কানি জমি চাষ করে চলে তাঁর সংসার। টর্নেডোয় তাঁর ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। জমির ধানের চারাগুলোও এখন লালচে হয়ে গেছে।
দুবলা-চান্দি বন্দের (মাঠ) ২৮৫ কানি জমিতে গভীর নলকূপে সেচ দেন দানু মিয়া। তিনি বলেন, টর্নেডোর পর থেকে বিদ্যুৎ নেই। তাঁর নলকূপেরও ক্ষতি হয়েছে।
পল্লী বিদ্যুৎ কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, টর্নেডোয় পল্লী বিদ্যুতের ৬৯টি খুঁটি ভেঙে গেছে। নষ্ট হয়েছে ছয়টি ট্রান্সফরমার। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৫০ থেকে ৬০ কিলোমিটার বিদ্যুতের লাইন। এ কারণে ২০ হাজার গ্রাহক ও আটটি গভীর নলকূপ বিদ্যুৎহীন।
পল্লী বিদ্যুৎ আখাউড়া আঞ্চলিক কার্যালয়ের উপমহাব্যবস্থাপক মনজুুর মোর্শেদ বলেন, বিদ্যুৎ লাইন সচল হতে আরও প্রায় দুই সপ্তাহ লেগে যেতে পারে। এই সময়ের পর গভীর নলকূপে বিদ্যুৎ-সংযোগ দেওয়া সম্ভব হলেও আবাসিক সংযোগ দিতে আরও সময় লাগবে।
দুবলা গ্রামের কৃষক বাহাদুজ্জামান বলেন, ‘বেশির ভাগ খেতের ধানগাছে থোড় আইছে। খড়ায় মাটি খাঁ খাঁ করতাছে। এহনই পানি না দিলে আর ধান হইব না।’
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ব্রাহ্মণবাড়িয়ার উপপরিচালক বলাই চন্দ্র দাস বলেন, টর্নেডো-দুর্গত এলাকার ৫১০ হেক্টর জমির বোরো ধান ও ১০ হেক্টর জমির শাকসবজির ক্ষতি হয়েছে। দুই-এক দিনের মধ্যে বৃষ্টি হলে ক্ষতিগ্রস্ত জমিগুলো থেকে প্রায় ৪০ ভাগ ফসল তোলা সম্ভব হবে। প্রাণিসম্পদেরও ক্ষতি হয়েছে ব্যাপক। জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা বজলুর রশিদ বলেন, ক্ষয়ক্ষতির হিসাব নিরূপণ এখনো শেষ করা যায়নি।
সেনাবাহিনীর সদস্যদের বুধবার সদর উপজেলার মাছিহাতা ও বাসুদেব ইউনিয়নের টর্নেডো-দুর্গত গ্রামগুলোর বাড়ি বাড়ি তাঁবু টানিয়ে দিতে দেখা গেছে। সেনাবাহিনীর একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করে বলেন, তাঁদের চারটি দল দুর্গত এলাকায় কাজ করছে। জেলা প্রশাসন ঘরবাড়ি হারানো ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে দুই বান্ডেল ঢেউটিন, ছয় হাজার টাকা ও একটি করে শাড়ি এবং লুঙ্গি বিতরণ শুরু করেছে। আখাউড়ার আমোদাবাদ ও টেংড়াপাড়া গ্রামের দুর্গত মানুষের মধ্যে ত্রাণ বিতরণ করেছে পুলিশ।
পুলিশ সুপার মো. মনিরুজ্জামান বলেন, টেংড়াপাড়ার ক্ষতিগ্রস্তরা জেলে সম্প্রদায়ের। এদের অনেকের মাছ ধরার নৌকার ক্ষতি হয়েছে। পুলিশের পক্ষ থেকে জেলেদের মাছ ধরার নৌকার ব্যবস্থা ও দুর্গত এলাকার কয়েকটি পরিবারকে পুনর্বাসন করা হবে। এ ছাড়া গত বুধবারও বিভিন্ন সংগঠন এবং ব্যক্তির উদ্যোগে ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করা হয়।






Shares