Main Menu

রিমুর ভাইয়ের দাপট : দোকানে তালা দিয়ে ব্যবসায়ীকে উঠিয়ে নেয়ার অভিযোগ

+100%-

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বাকিতে টাইলস না দেওয়ার জেরে প্রভাবশালী ছাত্রলীগ নেতা রিমু আনসারী ও আনসারি পরিবারের ভয়ে জামাল হোসেন নামে এক ব্যবসায়ি আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন।

দোকানে তালা ঝুলিয়ে দেওয়ার চারদিন পর ব্যবসায়িকে প্রকাশ্যে দোকান থেকে তুলে নিয়ে ছাত্রলীগ নেতার ভাই হুমকি দিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। ভয়ে ওই ব্যবসায়ি জেলা ছেড়ে দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

ছাত্রলীগ নেতার পরিবারের ভয়ে ব্যবসায়ি সংগঠনের নেতাদের কেউ এগিয়ে আসছেন না। এমনকি কোনো ব্যবসায়িই প্রকাশ্যে মুখই খুলতে চাইছেন না।
জামাল হোসেন জেলা শহরের কুমারশীল মোড় এলাকার মেসার্স ইসলাম টাইলসের সত্ত্বাধিকারী। তিনি নোয়াখালির লক্ষিপুরের বাসিন্দা। গত ২৯ থেকে ৩০ বছর ধরে তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় টাইলসের ব্যবসা করেন। তিনি পরিবার নিয়ে শহরের পাইকপাড়ায় বসবাস করেন।

ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সদস্য ও ঢাকা মহানগর উত্তর ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি রেদোয়ান আনসারি ওরফে রিমুর বড় ভাই রায়হান আনসারি ওরফে রিকুর যন্ত্রণায় ওই ব্যবসায়ির আকঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন।

স্থানীয় লোকজন ও ব্যবসায়ি জামাল জানান, প্রায় দেড় বছর আগে রায়হান আনসারি ওরফে রিকির কাছে ব্যবসায়ি জামাল টাইল বিক্রি করেন। তখন ব্যবসায়ি জামাল রায়হানের কাছ থেকে ৯ হাজার ২০০টাকা পাওনা ছিলেন। টাকার জন্য দীর্ঘদিন মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও রায়হান আনসারি ফোন ধরেননি। গত শুক্রবার রায়হান পাওনা ৯ হাজার টাকা ফেরত দিয়ে যান। তখন রায়হান বাকিতে আরো টাইল কেনার জন্য সঙ্গে বাবু নামের একজনকে নিয়ে যান। গত শনিবার বিকেলে দোকোনে জামাল হোসেন ছিলেন। দোকানের কর্মচারীরা টাইলস বিক্রির জন্য ৬৪ হাজার ৪০০টাকার একটি মেমো তৈরি করেন। তখন তারা ১০হাজার টাকা দিয়ে টাইলসগুলো পাঠানোর জন্য দোকানের কর্মচারীদের নির্দেশ দেন রায়হান। আরো ১০হাজার টাকা সন্ধ্যার পর পাঠানো হবে বলে জানানো হয়। তখন দোকানে কর্মরত লোকজন বাকিতে টাইলস পাঠাতে অপরাগতা প্রকাশ করেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে রায়হান আনসারি ও তার সঙ্গে থাকা বাবু নামে এই লোক জামালের টাইলসের দোকান কর্মচারীদের বের করে দেন। পরে দোকানে শাটার বন্ধ করে তালা দিয়ে চাবি নিয়ে যান। ঘটনার দুইদিন পর গত সোমবার সকালে তালা ভেঙ্গে জামাল দোকান খুলেন। মঙ্গলবার বেলা আড়াইটার দিকে রায়হান আনসারি সঙ্গে বাবু নামের ওই লোককে নিয়ে জামালের দোকানে যান। সেসময় অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে ও হুমকি দিয়ে দোকান থেকে জামালকে তুলে নিয়ে যান রায়হান। দোকানের কর্মচারীরা বিভিন্ন জায়গায় খোঁজাখুজি করলেও জামালের কোনো সন্ধ্যান পাওয়া যায়নি।

খবর পেয়ে পুলিশ খোঁজাখুঁজি শুরু করলে সন্ধ্যা ছয়টার দিকে জামালকে ছেড়ে দেন রায়হান।

ব্যবসায়িরা জানান, গত শনিবার রায়হান আনসারি দোকানে তালা ঝুলিয়ে দেন। রোববার দুপুরে বিষয়টি ব্যবসা মালিক সমিতি, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আল মামুন সরকার ও চেম্বার অব কমার্সকে অবগত করেন। কিন্তু কেউই এসে দোকান খুলে দেননি। ভয়ে ওই ব্যবসায়ি আইনগত কোনো ব্যবস্থাও নিতে পারছেন না।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন ব্যবসায়ি বলেন, আনসারি পরিবার প্রভাবশালী এবং রায়হানের ছোট ভাই ছাত্রলীগের নেতা। তাই কেই কিছু বলার সাহস পাচ্ছে না। মঙ্গলবার তাকে দোকান থেকে তুলে নিয়ে রায়হান হুমকি দিয়েছেন। তাই তিনি আরো বেশি আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন।

মেসার্স ইসলাম টাইলসের সত্ত্বাধিকারি জামাল হোসেন বলেন, গত শনিবার বাবু নামের ওই লোক ও রায়হান আনসারি রিকি দোকানে আসেন। ৬৪ হাজার ৪০টাকার টাইলস কেনার একটি মমো তৈরি করেন। ১০ হাজার টাকা নগদ দিয়ে এবং সন্ধ্যায় আরো ১০হাজার টাকা দিবে বলে টাইলস পাঠাতে বললে কর্মচারীরা টাইল দিতে অপারগতা প্রকাশ করে। পরে তারা দোকানে তালা ঝুলিয়ে চাবি নিয়ে চলে যান। মঙ্গলবারের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমি কোনো কথা বলতে চাই না। আমি এখানে আর ব্যবসা করব। ব্যবসা ছেড়ে এখন থেকে চলে যাব।

ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সদস্য ও ঢাকা মহানগর উত্তর ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি রেদোয়ান আনসারি বলেন, রায়হান ভাই ৬০হাজার টাকার টাইলস কিনতে চেয়েছিল। ২০হাজার টাকা নগদ এবং বাকি টাকা পরে দিবে জানিয়েছিল। কিন্তু দোকানদার হঠাৎ টাইলস দিতে পারবে না বলে জানায়। এটি নিয়ে হয়তাে কোনো ঝামেলা হয়েছে।

জেলা চেম্বারের সভাপতি আজিজুল হক বলেন, দোকানে তালা ঝুলানোর বিষয়টি আমাকে জানিয়েছে। আইনী প্রক্রিয়ায় না গেলেও তো তার পাশে দাড়ানো যাবে না।

জেলা গোয়েন্দা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) লোকমান হোসেন বলেন, বিকেলে ওই ব্যবসায়িকে আমরা খুঁজে বের করেছি। তবে তিনি অনেক ভীত ও আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন। কোনো কিছু বলতে চাইছেন না।

সূত্র ঃ প্রথমআলো






Shares