Main Menu

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় অন্যরকম কালেকশন

+100%-

মসজিদ ঢাকায়। কালেকশন ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়। মসজিদের নাম করে ঘুষ গ্রহণের অভিযোগ উঠেছে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে। অবৈধভাবে ইটভাটা চলতে দিয়ে এই ঘুষ আদায় করছেন তারা। অন্য ক্ষেত্রেও তাই করা হচ্ছে। টাকা না পেলে নানাভাবে হয়রানি করা হয়। দেয়া হয় মামলা। এনিয়ে পরিবেশ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে জেলা প্রশাসকের কাছে দেয়া হয়েছে অভিযোগ।

ইটভাটার মালিকরা জানান- টাকা না দিলেই বিপদ। টাকা পেলে অবৈধ ইটভাটা চলতেও কোনো বাধা নেই তাদের। জেলার ১৮১টি ইটভাটার মধ্যে ৯৯টি ইটভাটাই চলছে অবৈধভাবে।

সরাইলের শাহবাজপুরের সুবর্ণ ব্রিক ফিল্ডের মালিক শহিদুল ইসলাম রুবেল জানান- তার কাছ থেকে মসজিদের জন্য ৫০ হাজার টাকা নিয়েছেন পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক নুরুল আমিন। পরবর্তীতে আবার চাহিদা মতো টাকা না দেয়ায় পরিবেশ ছাড়পত্র, ডিসির লাইসেন্সসহ সবকিছু থাকার পরও ঢাকার পরিবেশ অধিদপ্তরের ম্যাজিস্ট্রেট দিয়ে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হয় তাদের ইটভাটায়। অন্যায়ভাবে ৩ লাখ টাকা জরিমানা আদায় করেন।

এদিকে নিজের বাড়ির মসজিদের জন্য ৫ লাখ টাকা চেয়ে না পেয়ে এক প্রবাসীর বিরুদ্ধে মামলা দেন পরিবেশের এই কর্মকর্তা। এনিয়ে সৌদি প্রবাসী দুলাল মিয়া গত ৬ই মার্চ জেলা প্রশাসকের কাছে একটি অভিযোগ দেন। ওই অভিযোগ থেকে জানা যায়, দীর্ঘ ৩২ বছর ধরে সৌদি আরবে রয়েছেন শহরের পূর্ব পাইকপাড়ার বাসিন্দা দুলাল মিয়া। ইতিপূর্বে জেলার শ্রেষ্ঠ রেমিট্যান্স যোদ্ধা হিসেবে জেলা প্রশাসনের সম্মাননাও পান তিনি। ২০১৮ সালে ছুটিতে দেশে এসে পূর্বপাইকপাড়ায় রামঠাকুর মন্দিরের পশ্চিমপাশে কুমিল্লা-সিলেট সড়ক লাগোয়া ২.৮২ শতাংশ জায়গা ক্রয় করেন। পরবর্তীতে ১২ বছর আগে সেখানে নির্মিত পুরাতন দ্বিতল ভবন ভেঙে নতুন ভবন করার উদ্যোগ নেন। এরপরই দুলালের ওই জমির পাশে ৮১ শতাংশের একটি মজা পুকুর থাকায় পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক নুরুল আমিন সরজমিন পরিদর্শনে যান। এ সময় তিনি জানান, পুকুরের ৬০০ বর্গফুট জায়গা ভরাট করা হয়েছে। দুলালের জমির পাশের আরও তিন ভবন মালিকের বিরুদ্ধে একই অভিযোগ আনা হয়। তবে সেখানে এমন আরও ৫-৬টি ভবন থাকলেও তাদের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ গঠন করেননি পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা। পরিবেশ অধিদপ্তরের আনা পুকুর ভরাটের অভিযোগের প্রেক্ষিতে ভরাটকৃত জায়গা থেকে মাটি সরিয়ে পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে নেন প্রবাসী দুলাল। তারপরও পরিবেশ অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম বিভাগীয় পরিচালক ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করেন। জরিমানা মেটানোর পরও উপ-পরিচালক নুরুল আমিন নানাভাবে দুলালকে হয়রানি করতে থাকেন। একপর্যায়ে দুলালের কাছে নিজের বাড়ির একটি মসজিদের জন্য পাঁচ লাখ টাকা চাঁদা দেয়ার প্রস্তাব দেন নুরুল আমিন। সেই টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক বিসল চক্রবর্তী উপ-পরিচালক নুরুল আমিনের বরাত দিয়ে তার কাছে এক লাখ টাকা দাবি করেন। সে সময় এও বলেন, স্যারের টাকা না দিলে আপনার বিরুদ্ধে মামলা হবে। সেই টাকা না দেয়ায় চলতি বছরের ২রা জানুয়ারি তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। ভুক্তভোগী প্রবাসী দুলাল মিয়া জানান, পাঁচ লাখ টাকা না দেয়ায় তাকে হয়রানি করার জন্য পরিবেশ আইনে মামলা দেয়া হয়। ঘটনাস্থলে না এসে, কোনো ধরনের তদন্ত ছাড়াই মামলার অভিযোগপত্রও দেয়া হয়েছে।

অভিযোগের বিষয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক বিসল চক্রবর্তী সাংবাদিকদের বলেন, ‘জেলা প্রশাসক মহোদয়ের কাছে যদি এমন কোনো অভিযোগ জমা পড়ে থাকে, তাহলে তিনি নিশ্চয়ই সেটি তদন্ত করে দেখবেন। এ ব্যাপারে নুরুল আমিন স্যারের সঙ্গে কথা বলেন।

সুবর্ণ ব্রিক ফিল্ডের মালিক শহিদুল ইসলাম রুবেল জানান- ২০২০ সালের অক্টোবরে মসজিদের জন্য তার কাছ থেকে ৫০ হাজার টাকা নেন উপ-পরিচালক নুরুল আমিন। ঢাকার রোকেয়া সরণিতে এই মসজিদ হচ্ছে বলে তাকে জানানো হয়। মসজিদের একটি রশিদও দেয়া হয় তাকে। ন্যাশনাল ব্যাংকের মাধ্যমে এই টাকা পাঠান তিনি। রুবেল বলেন, মসজিদের নামেই সবার কাছ থেকে টাকা আদায় করেন উপ-পরিচালক। তার অফিসের এসি, কম্পিউটারও ব্রিক ফিল্ড মালিকদেরই দেয়া। মোট কথা উপ-পরিচালক নুরুল আমিনের সঙ্গে যাদের সম্পর্ক ভালো তাদেরকে ছাড় দেন। অন্যদের অন্যায়ভাবে মোবাইল কোর্ট করে হয়রানি করেন। আমার ব্রিক ফিল্ডের পাশে আর ২টি ব্রিক ফিল্ড অবৈধভাবে চলছে। কিন্তু তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছেন না। শব্দ দূষণ, নদী দূষণ, খাল-পুকুর ভরাট হচ্ছে এসব নিয়ে তাদের কোনো কার্যক্রম নেই। পলিথিন ব্যাগে বাজার সয়লাব। এনিয়েও তাদের কোনো কথা নেই। টাকা পাওয়া যায় বলে শুধু ইটভাটা নিয়েই ব্যস্ত এখানকার পরিবেশ কর্মকর্তারা।

পরিবেশ অধিদপ্তরের ব্রাহ্মণবাড়িয়া কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মো. নুরুল আমিন- প্রবাসীর অভিযোগের বিষয়ে বলেন, এটি বানোয়াট অভিযোগ। তাছাড়া তার কোনো মসজিদ নেই বলেও জানান। ইটভাটা মালিকদের কাছ থেকে মসজিদের নামে টাকা নেয়ার অভিযোগ সম্পর্কে বলেন-কেউ মুখ দিয়ে কিছু বললে তাতো বন্ধ করার সুযোগ নেই।

সূত্র : মানবজমিন






Shares