জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য মহিউদ্দিন খান মাসুম :: আওয়ামী লীগ করেছে বহিষ্কার ছাত্ররা মারধর
ডেস্ক ২৪:: ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সাম্প্রতিক ঘটনায় উসকানি দেয়ার অভিযোগে দল থেকে বহিষ্কৃত হয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা
পরিষদ সদস্য মহিউদ্দিন খান মাসুম। এর আগের কমিটিতে মাসুম ছিলেন ধর্মবিষয়ক সম্পাদক। তিনি জেলার বড় মাদরাসা হিসেবে পরিচিত জামিয়া ইসলামিয়া ইউনুছিয়া মাদরাসা পরিচালনা কমিটির সভাপতি। পেশাগত ভাবে তিনি একজন আইনজীবী এবং জেলা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর। তার বিরুদ্ধে ঘটনার সময় মাদরাসার পক্ষ নিয়ে উস্কানি দেয়ার অভিযোগ উঠেছে। তবে মহিউদ্দিন খান মাসুম বলেছেন, পরিস্থিতি সামাল দিতে তিনি প্রশাসন ও আওয়ামী লীগ নেতাদের কথায় মাদরাসায় যান এবং গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। বিশেষ করে হরতাল প্রত্যাহারের ব্যাপারে। এ সময় মাদরাসার ছাত্ররা তাকে দালাল বলে মারধরও করেছে বলে জানান তিনি। মাসুম বলেন- ধন্যবাদ পাওয়ার পরিবর্তে তার ভাগ্যে কেন বহিষ্কার জুটলো তা তিনি বুঝতে পারছেন না।
শনিবার জেলা আওয়ামী লীগের কার্যকরী কমিটির এক সভায় মহিউদ্দিন খান মাসুমকে সাময়িক বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। গত ১১ই জানুয়ারি দিনভর বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ঘটনার প্রেক্ষিতে জেলা আওয়ামী লীগের কার্যকরী কমিটির এই জরুরি সভাটি হয়।
দলীয় শৃঙ্খলা পরিপন্থি কাজে লিপ্ত থাকার অভিযোগে সভায় সর্বসম্মতভাবে জেলা কমিটির উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য পদ থেকে মহিউদ্দিন খান মাসুমকে সাময়িক বহিস্কারের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। কেন স্থায়ীভাবে তাকে বহিষ্কার করা হবে না সেই জবাব চেয়ে নোটিশ দেয়ারও সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এ বিষয়ে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আল মামুন সরকার বলেন, তিনি ঐ ঘটনার সময় দলীয় শৃঙ্খলা পরিপন্থি কাজে লিপ্ত ছিলেন। তাকে আমরা কারণ দর্শানোর নোটিশ দিচ্ছি। এর জবাব পাওয়ার পর ব্যবস্থা নেয়া হবে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জেলা আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল একাধিক নেতা বলেন- মাসুম মাদরাসায় গেছেন তাতে আমাদের আপত্তির কোনো কিছু নেই। কিন্তু তিনি সেখানে উস্কানিমূলক কথাবার্তা বলেছেন। রাতে ছাত্রটি মারা যাওয়ার পর সকালে তিনি মাদরাসায় গিয়ে এসব কথাবার্তা বলেন বলে জানান আওয়ামী লীগের এই নেতারা। দলের শীর্ষস্থানীয় নেতৃবৃন্দকে কটাক্ষ করেও তখন কথা বলেন মাসুম। তিনি ঘটনার সময় এক নেতাকে ফোন করে এমনও বলেছেন- ‘এখন তোদের এমপি কই, সেক্রেটারি মামুন কই। তাদের বল আমারে ফোন দিতে’। তিনি মাদরাসা কমিটির সভাপতি হলেও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ভাংচুর-অগ্নিসংযোগ থেকে রক্ষায় কোনো ভূমিকা নেননি বলেও দলের নেতারা অভিযোগ করেন। বিশেষ করে প্রথম দিনের ঘটনার সময় যুবলীগ-ছাত্রলীগের এবং পুলিশের কারা সক্রিয় ছিলেন তাদের নামধাম মাসুমের মুখ দিয়ে মাদরাসায় উচ্চারিত হয় বলে জানান দলের নেতারা। দলীয় সূত্র জানায়, এসব কারণেই ক্ষুব্ধ হন জেলা নেতৃবৃন্দ তার ওপর। এ বিষয়ে গতকাল মহিউদ্দিন খান মাসুম মানবজমিনকে বলেন- কোন গুনাহের কারণে বহিষ্কার হলাম তা বুঝতে পারছি না। যেখানে তাদের আমাকে ধন্যবাদ দেয়ার কথা সেখানে করলো বহিষ্কার। ডিসির হুকুম মতো আমি সারা দিন-রাত পরিশ্রম করলাম, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে কাজ করলাম। পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠলে দায়িত্বশীল আওয়ামী লীগের একাধিক নেতাও আমাকে ফোন করেন মাদরাসায় যাওয়ার জন্য। জেলা প্রশাসক ছাত্র মারা যাওয়ার পর ভোর ৫টার আগেই আমাকে ফোন করে মাদরাসায় যেতে বলেন। তখন অন্ধকার থাকায় আমি সকাল হওয়ার পর বাসা থেকে বের হই। মাদরাসায় গিয়ে ছাত্র মারা যাওয়ার খবর পাই। এরপর মাদরাসায় থেকে সারাদিন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা চালাই। ময়নাতদন্ত শেষে লাশ তাড়াতাড়ি নিহতের পরিবারের কাছে দেয়ার জন্য প্রশাসনে যোগাযোগ করি। এরপর মাদরাসা কর্তৃপক্ষ হরতাল ডাকলে তা অফ করতে ভূমিকা রাখি। বিজিবি, র্যাব, পুলিশ ও প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে মাদরাসায় কয়েক ঘণ্টা বৈঠক করে হরতাল প্রত্যাহারের ব্যবস্থা করি। আমি আর ডাক্তার বজলুর রহমান ছাড়া তখন স্থানীয় আর কেউ ছিলো না। ১২ই জানুয়ারি সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত মাদরাসা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তাদের বৈঠকে উপস্থিত থেকে হরতাল অফ করিয়ে বাড়ি ফিরি। এসময় মাদরাসা ছাত্ররা আমাকে দালাল বলে গালাগাল করে। লাথি মারে, লাঠি দিয়ে শরীরে আঘাত করে। এরপর বড় হুজুর আমাকে লোক দিয়ে রাত ১১টায় বাড়িতে পাঠান। এখন আমার কি অপরাধ বুঝতে পারছি না। হয়তো আমি মাদরাসা কমিটির সভাপতি এটাই আমার অপরাধ। মহিউদ্দিন খান মাসুম প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের সম্পর্কে মামা হন। তিনি শহরের পৈরতলা খাঁ বাড়ির বাসিন্দা।
আওয়ামী লীগের ঐ সভায় ভাংচুর-অগ্নিসংযোগের ঘটনা চলাকালে প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিষ্ক্রিয় ভূমিকার নিন্দা করে প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়। এছাড়া, সভায় মাদরাসা ছাত্রদের সঙ্গে জেলা পরিষদ মার্কেট ব্যবসায়ীদের সংঘর্ষ, মাদরাসা ছাত্রের মৃত্যু, আর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে তাণ্ডব চালানোর বিষয়ে বিচার বিভাগীয় তদন্ত দাবি করা হয়। সভায় মাদরাসা ছাত্রদের নিন্দনীয় ভূমিকা অস্বীকার করে প্রিন্সিপাল মুফতি মোবারকউল্লাহর করা সংবাদ সম্মেলন প্রত্যাখ্যান করা হয়। এছাড়া পুরো ঘটনা তদন্তে একটি তদন্ত কমিটিও করা হয়। জেলা আওয়ামী লীগ সহ-সভাপতি এডভোকেট আবু তাহেরকে এর আহ্বায়ক করা হয়েছে। অন্য সদস্যরা হচ্ছেন এডভোকেট নূর মোহাম্মদ জামাল, এডভোকেট মাহবুবুল আলম খোকন, এডভোকেট তানভীর ভূঞা ও এডভোকেট নাজমুল হোসেন। সভায় ক্ষতিগ্রস্ত সকল প্রতিষ্ঠানের জন্য ক্ষতিপূরণ চাওয়া হয়।
জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত এ সভায় সভাপতিত্ব করেন জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী এমপি। জেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক আল মামুন সরকারের পরিচালনায় বক্তব্য রাখেন জেলা আওয়ামী লীগ নেতা তাজ মো. ইয়াছিন, হেলাল উদ্দিন, মুজিবুর রহমান বাবুল, মাহবুবুল বারী চৌধুরী মন্টু, মঈনউদ্দিন মঈন, গোলাম মহিউদ্দিন খোকন, এডভোকেট মাহবুবুল আলম খোকন, সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তানজিল আহমেদ, জহিরুল ইসলাম ভূঞা ও এডভোকেট রাশেদুল কায়সার জীবন প্রমুখ।