পুলিশ পরিচয়ে মামলা-গ্রেপ্তারের হুমকি, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় তটস্থ জনপ্রতিনিধিরা



মামলা-গ্রেপ্তারের ভয় দেখিয়ে দফায় দফায় আসছে ফোনকল। চাওয়া হচ্ছে টাকা। পুলিশের উপ–পরিদর্শক (এসআই) পরিচয়ে করা ফোনকলে তটস্থ ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের জনপ্রতিনিধিরা। বিপদ থেকে বাঁচতে বিকাশে টাকাও পাঠাচ্ছে তাদের কেউ কেউ।
বড়াইল ইউনিয়ন পরিষদের কয়েকজন সদস্য জানায়, ০১৮৮৬৮৩৭১৩৭ নম্বর থেকে ফোনকল করে দারোগা সাইফুল পরিচয় দেওয়া হচ্ছে। আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে জড়িত এই বলে তাদের মামলার ভয় দেখানো হয়। টাকা না দিলে ধরে নিয়ে যাওয়ার হুমকি দেওয়া হয় বলে অভিযোগ করেছে তারা।
৪ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য ইউসুফ মিয়া বলেন, ‘আজ শুক্রবার সকালেও আমাকে ফোনকল করে নবীনগর থানায় যেতে বলা হয়। গত কয়েক দিন ধরে সকালে, রাতে এবং সন্ধ্যায় একই নম্বর থেকে কল করে আমার নামে মামলা আছে, টাকা দিলে মামলা থেকে নাম কেটে দেবে বলে বলা হচ্ছে। থানায় না গেলে এফআইআর হয়ে যাবে– এমনটাও বলা হয়।’
৯ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মিজানুর রহমান বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা হবে বলে বিকাশে ১০ হাজার টাকা পাঠাতে বলা হয়। আমার মতো প্রত্যেক ইউপি সদস্যকে বিরক্ত করা হচ্ছে।’
৮ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য চর-গোসাইপুরের নান্নু মিয়া বলেন, ‘আমি কোনো রাজনীতির সাথে জড়িত নই। তিনদিন আগে ফজরের নামাজের পর ফোনকল করে আমার বিরুদ্ধে শক্ত অভিযোগ আছে বলে জানানো হয়। এই কথা শুনে মনে হলো আমার মাথায় ঠাডা পড়ছে। অভিযোগ থেকে বাদ দেবে বলে ১০ হাজার টাকা চাওয়া হয়। এরপর আমি বিকাশে ৩ হাজার টাকা পাঠিয়েছিলাম। সকালে টাকা পাঠানোর পর বিকেলে আবার কল দিয়ে বলে তোমার টাকা নিয়ে যাও। তোমাকে ধরে নিয়ে যামু। এরপর ভয়ে আমি মোবাইলফোন বন্ধ করে দিই।’
এমন অভিযোগ মিলেছে নবীনগর উপজেলার অন্যান্য ইউনিয়ন থেকেও।
বীরগাঁও ইউনিয়নের সাবেক ইউপি সদস্য কামরুল ইসলাম বলেন, ‘আমাকে ফোনকল করে মামলা আছে দাবি করে মামলা শেষ করতে যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নবীনগর পশ্চিম ইউনিয়নের এক ইউপি সদস্য জানান, তাকে মোবাইলফোনে কল দিয়ে গ্রেপ্তারের ভয় দেখানো হয়েছে। পরে তিনি স্থানীয় বিএনপির নেতাকর্মীদের নিয়ে থানায় গিয়ে মৌখিক অভিযোগ করেন এবং জানতে চান সাইফুল ইসলাম নামে কোনো সাব–ইন্সপেক্টর আছে কি না।
যাদের মোবাইলফোনে কলা করা হয়েছে তাদের বিকাশ নম্বরও (০১৯১৭১৭৪৪২২) দেওয়া হয়েছে। শুক্রবার সন্ধ্যায় ওই নম্বারটিতে ফোনকল করে বন্ধ পাওয়া যায়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে নবীনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুর রাজ্জাক বলেন, ‘কেউ লিখিত অভিযোগ দেয়নি। অভিযোগ পেলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তারপরও আমরা দেখছি।’
পুলিশ পরিচয়ে ব্যবহার করা মোবাইলফোন নম্বর দিয়ে বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাইলে ওসি বলেন, ‘যে আইডি কার্ড দিয়ে সিমটা উঠানো হয়েছে তাতে কুমিল্লা দেবীদ্বারের ঠিকানা রয়েছে। তবে আজ শুক্রবার সকাল ১০টার দিকে ওই সিম ব্যবহারকারীর লাস্ট কল লোকেশন দেখতে পাই চট্টগ্রামে। সালেহ ভিউ, ১১০২, আবদুর রহমান সওদাগর লেন, মোগলটুলি, আগ্রাবাদ, চট্টগ্রাম– এই ঠিকানায় সিম ব্যবহারকারীর অবস্থান দেখায়। আমি ওই নম্বরটিতে কল করে কোনো সাড়া পাইনি।’