Main Menu

সৈয়দা নাহিদা হাবিবা;একজন আলোকবর্তিকা

+100%-

%e0%a6%87%e0%a6%89%e0%a6%8f%e0%a6%a8%e0%a6%93-%e0%a6%a8%e0%a6%be%e0%a6%b9%e0%a6%bf%e0%a6%a6%e0%a6%be-%e0%a6%b8%e0%a7%8d%e0%a6%af%e0%a6%be%e0%a6%b0%e0%a7%87%e0%a6%b0-%e0%a6%9b%e0%a6%ac%e0%a6%bfএকজন মানুষ মহৎ হয়ে উঠেন তাঁর কর্মগুণে। পৃথিবীতে এমন অনেক মানুষ আছেন, যাঁরা তাঁদের কর্ম, ধ্যান-জ্ঞান, অর্জন সবকিছু উৎসর্গ করেন দেশের কল্যাণে ,মানুষের কল্যাণে। নিঃস্বার্থভাবে করেন মানুষের উপকার, দেশের কল্যাণ । তাঁরা কর্তব্য কাজে ফাঁকি না দিয়ে অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করেন।এমনই একজন হলেন চট্টগ্রাম বিভাগের শ্রেষ্ঠ ,সরাইল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দা নাহিদা হাবিবা।
রত্নগর্ভা ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার সরাইল উপজেলার প্রাথমিক শিক্ষার হালটা যখন নিবুনিবু অবস্থা, তখন আলোকবর্তিকা হয়ে সরাইল উপজেলা নির্বাহী অফিসারের দায়িত্ব নিয়ে প্রায় ১ বছর ২ মাস আগে সরাইলে যোগদান করেন সৈয়দা নাহিদা হাবিবা।

এই কর্মবীর শৈল্পিক মানুষটি সরাইলে যোগদান করেই , শিক্ষার এই কংকালসার অবস্থা দূর করার জন্য প্রাথমিক শিক্ষার উপর কাজ শুরু করেন। রোদ-বৃষ্টি উপেক্ষা করে কখনো বাঁশের সাঁকো বেয়ে ,কখনো ক্ষেতের আলপথ দিয়ে হেটে তিনি ছুটে চলেন ভৌগলিকভাবে বিচ্ছিন্ন গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে।যেখানে পূর্বে কখনো কোন ইউএনওর পায়ের চিহৃ পড়েনি।

প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শতভাগ শিক্ষার্থী উপস্থিতি নিশ্চিতকরণ ও ঝরেপড়া রোধকল্পে -বিদ্যালয় পরিদর্শন, অভিভাবক সমাবেশ, বিভিন্ন শ্রেণীপেশার মানুষের সাথে যোগাযোগ, মিড ডে মিল উপকরণ টিফিন বক্স বিতরণ, দরিদ্র শিক্ষার্থীদের মাঝে শিক্ষা উপকরণ ও পোশাক বিতরণ, জার্সি ও ক্রীড়াসামগ্রী বিতরণ, পরিষ্কার ও নিরাপদ পানি ব্যবস্থার জন্য পানির ফিল্টার বিতরণ, শ্রেণীকক্ষ এবং বিদ্যালয় প্রাঙ্গণ পরিষ্কার-পরিছন্ন রাখাসহ বিদ্যালয়কে আকর্ষণীয় করার লক্ষ্যে ফুলবাগান করা, শ্রেণীকক্ষে ঝুড়ি স্থাপন, পরিছন্নদল গঠন, বিভিন্ন বিদ্যালয়ে বেঞ্চ সরবরাহ,সহ নানাবিধ প্রশংসনীয় ও শিক্ষাবান্ধব উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন। এর ফলে সরাইল উপজেলার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রায় ৪৫ হাজার শিক্ষার্থী বিদ্যালয়মূখী হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। এতে করে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীর উপস্থিতির হার বৃদ্ধি পেয়েছে এবং ঝরেপড়াও রোধ হবে বলে অভিভাবক, শিক্ষক এবং এলাকার গণ্যমান্য সচেতন ব্যক্তিরা আশাবাদ ব্যক্ত করেন।সৈয়দা নাহিদা হাবিবা শুধু একজন উপজেলা নির্বাহী অফিসার নয়, তিনি একজন আলোকবর্তিকা ।

তাছাড়া বিদ্যালয়ের সীমানা প্রাচীর নির্মাণ, বিদ্যালয়ের জমি সংক্রান্ত নিরোধ নিষ্পত্তি যা স্বাধীনতার ৪৫ বছরেও সমাধান হয়নি তা তিনি একে একে সমাধান করছেন ।তাঁর বহুমূখি কাজের স্বীকৃতি হিসেবে “প্রাথমিক শিক্ষাপদক ২০১৬ “ এর বিভাগীয় পর্যায়ে তিনি চট্টগ্রাম বিভাগের শ্রেষ্ঠ নির্বাহী অফিসার হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন। পেয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের’ এক্সেস টু ইনফরমেশন’হতে সম্মাননা সনদ ।

সরাইলের সচেতন নাগরিক সমাজ সৈয়দা নাহিদা হাবিবাকে বাল্যবিয়ে বন্ধের শৈল্পিক কারিগর মনে করেন ।কারণ তাঁর চেষ্ঠা,প্রচেষ্ঠা,কর্মদক্ষতা ও সচেতনতায় দেশের সবচেয়ে বাল্যবিয়ে প্রবণ উপজেলা সরাইল আজ নিরানব্বই ভাগ বাল্যবিয়ে মুক্ত উপজেলা। বাল্যবিয়ে রোধকল্পে এলাকায় জনসমাবেশ, উদ্বুদ্ধকরণ সভা, লিফলেট বিতরণসহ তাঁর গৃহীত বিভিন্ন উদ্যোগ প্রশংসার দাবীদার।তিনি শতভাগ চেষ্ঠা চালিয়ে যাচ্ছেন সম্পূর্ণরুপে বাল্যবিয়ে বন্ধ করতে।তাঁর কাছে বাল্যবিয়ের খবর আসা মাত্রই তিনি এলাকার চেয়ারম্যন,মেম্বারদেরকে বিয়ে বন্ধের নির্দেশ দেন।এমনকি তিনি তাদেরকে নিয়ে বর-কনের বাড়িতে হাজির হয়ে অনেক বাল্যবিয়ে বন্ধ করে দিয়েছেন ।শতজনের খাবারের আয়োজনের দোহাই দিয়েও বাল্যবিয়ের ব্যাপারে কেউ কোন রকম ছাড় পাননি তাঁর কাছে । তিনি মনে করেন,প্রত্যেকটি শিশুর একটি সুন্দর ভবিষ্যৎ আছে।আর তার সুন্দর ভবিষ্যৎ গড়ে দেয়ার দায়িত্ব আমাদের সকলের।একটি কন্যা শিশুর জীবন বাল্যবিয়ের মাধ্যমে শেষ হয়ে যাবে তা মেনে নেয়া যায়না।

এলাকার সুশীল সমাজ থেকে শুরু করে কৃষক, জেলে কামার-কুমার সবাই ১বছর ২ মাসে জেনে গেছেন, যেখানেই বাল্যবিয়ে সেখানেই এই নীতিবান কর্মকর্তার কঠোর হস্তক্ষেপ।বাল্যবিয়ে সম্পর্কে তিনি কোন ধরনের অনুরোধ মানেন না। তাঁর চেষ্টা ও হস্তক্ষেপে সরাইল উপজেলা প্রায় ৯৯ ভাগ বাল্যবিয়ে মুক্ত।

বাংলাদেশে যদি তাঁর মতো আরো ১০০ জন এরকম নিবেদিত প্রাণ,সৎ ,কর্মবীর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা থাকতো তাহলে বাংলাদেশের প্রাথমিক শিক্ষার চেহারাটা পাল্টে যেত।

লেখক: এম.মনসুর আলী, অরুয়াইল বাজার,সরাইল,ব্রাহ্মণবাড়ীয়া






Shares