Main Menu

ইংরেজি শিখে বদলে যাও, বদলে দাও বাংলাদেশ

+100%-

wasim-khan-shimulফারহান অাহমেদ ফুয়াদ: ইতিহাসূত্রে শাসকের ভাষা হিসেবে যে ইংরেজির সঙ্গে অামাদের পরিচয় তা এখন অান্তর্জাতিক যোগাযোগের ভাষা। বর্তমান বিশ্ব প্রেক্ষাপটে ও আধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞান চর্চায় ইংরেজি অাজ একক অপ্রতিদ্বনদ্বী ভাষা। জাতি হিসেবে বিশ্ব দরবারে মাথা উচু করে দাঁড়াতে হলে এবং অামাদের নিজস্ব সমৃদ্ধ বাংলা ভাষা ও শিল্প সংস্কৃতিকে অান্তজার্তিক পরিমন্ডলে পৌছাতে হলে ইংরেজি শিক্ষা অাবশ্যক।

ব্যক্তিগত গন্ডি ছেড়ে অান্তর্জাতিক পর্যায়ে ইংরেজি এখন একটি শ্রেষ্ঠ International Language. বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে বর্তমানে কোন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের নির্বাহী কর্মকর্তা (Executive) কিংবা কোন বহুজাতিক (Multinational) কোম্পানির কর্মকর্তা হিসেবে চাকরি পেতে হলে যেটা অবশ্যই দরকার তা হলো ইংরেজি ভাষার দক্ষতা। অার চাকরির বিজ্ঞাপনে প্রায়ই চোখে পড়ে- “The candidate must have strong command both in spoken and written English”.
তাছাড়া অাপনি ইংরেজি না জানলে পৃথিবীর যে কোন প্রান্তে অাপনার সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ থেকে অর্জিত সার্টিফিকেট মূল্যহীন হয়ে পড়বে। সর্বোপরি English Language চর্চা এখন অামাদের সময়ের দাবি।
বাংলাদেশে প্রথম শ্রেণী থেকে স্নাতক শ্রেণী পর্যন্ত ইংরেজি একটি আবশ্যিক বিষয়। অাশ্চর্য হলেও সত্য যে, ইংরেজি ভাষা শিক্ষার অনুকূল পরিবেশের ঘাটতি রয়েছে পাশাপাশি ইংরেজি ভীতির কারণে সুদীর্ঘকাল একাডেমিক শিক্ষা জীবন শেষেও কিছু কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া বেশীর ভাগ ছাত্রছাত্রী ইংরেজিতে ভীষণ দুর্বল থেকে যাচ্ছে। এর মূল কারণ হিসেবে বিশেষজ্ঞরা বলছে যে, আমাদের দেশের শিক্ষার্থীগণ ইংরেজি ভাষার প্রায়োগিক দিকটাকে উপেক্ষা করে কেবলমাত্র Essay, Letter, Application, Dialogue, Comprehension ইত্যাদি পরীক্ষায় Common ফেলার মাধ্যমে তারা একটির পর একটি পরীক্ষার বৈতরণী পার হয়ে চলছে। এখনও দেখা যাচ্ছে যে, অসংখ্য ছাত্রছাত্রী ইংরেজি মুখস্থ করে যাচ্ছে। এতে ছাত্রছাত্রীদের ক্রিয়েটিভিটি নষ্ট হচ্ছে অর্থাৎ নিজ থেকে কিছুই সৃষ্টি করে লিখতে পারছে না ফলে তাদের নিজস্ব চিন্তন ক্ষমতা হ্রাস পাচ্ছে।
তাছাড়া আমাদের দেশের প্রায় সব গ্রাজুয়েট এবং মাস্টার্স ডিগ্রিধারীগণ বাধ্যতামূলক বিষয় হিসেবে ইংরেজি পড়ছেন উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায় পর্যন্ত কিন্তু শতকরা কতজন ইংরেজি বলতে পারে?

আমরা অনেকেই গ্রামারের প্রচুর নিয়মকানুন এবং এখনও শিক্ষকরা গ্রামারের নিয়ম আমাদের ছাত্রছাত্রীদের মুখস্থ করাচ্ছেন কিন্তু আমাদের শিক্ষার্থীরা কি বাস্তব জীবনে ইংরেজি ব্যবহার করতে পারছে?
উপরোক্ত প্রশ্নের উত্তর যদি হয় না, তাহলে বলতেই হবে যে অামাদের ইংরেজি শিক্ষা ব্যবস্থায় এখনও গলদ রয়েছে।
মনে রাখা জরুরী, একটি ভাষা ফলপ্রসূভাবে জানার অর্থ হলো ঐ ভাষায় চারটি দক্ষতা থাকা। শুনে ঐ ভাষা বুঝতে পারা, ঐ ভাষায় কথা বলতে পারা, লিখতে পারা এবং পড়ে বুঝতে পারা। আর চারটি বিষয়ে দক্ষতা অর্জন করা শুধুমাত্র গ্রামার শিখে সম্ভব নয়। পাশাপাশি একটি ভাষা জানার জন্য দরকার পরিবেশ যা সবচেয়ে বেশী গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু ইংরেজি শেখার সে পরিবেশ নেই অামাদের দেশে। কারণ আমাদের মাতৃভাষা বাংলা। আরেকটি ব্যাপার বুঝতে হবে যে, ইংরেজি হচ্ছে Skills Based Subject, Content Based নয়। আর এই Skill অর্জন করার জন্য দরকার প্র্যাকটিস।

অামাদের সকল সীমাদ্ধতা ও দুর্বলতা থাকা সত্ত্বেও অাশার কথা হচ্ছে যে, সরকারি-বেসরকারি,বিদেশী, এমনকি ব্যক্তি পর্যায়ে উদ্যোগি হয়ে ইংরেজি ভাষা শেখানোর প্রচেষ্টা চলছে অামাদের দেশে। এই পরিক্রমায় ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার ছাত্রছাত্রীদের ইংরেজী শিক্ষার দৈন্যদশা দেখে ২০০৫ সালে জনাব ওয়াসিম অাহমেদ খান শিমুল নিজ জন্মভূমিতে প্রতিষ্ঠা করেন “সুহিলপুর ইংলিশ ল্যাংগুয়েজ টিচিং একাডেমি” নামে অবৈতনিক ইংরেজী ভাষা শিক্ষার একটি প্রতিষ্ঠান। যেখানে সুহিলপুর ইউনিয়নসহ অাশেপাশের হাজার হাজার ছাত্রছাত্রী বিনামূল্যে ইংরেজি ভাষা শিখে দেশে বিদেশে স্ব স্ব অবস্থানে সুনামের সাথে কাজ করছে এবং ইংরেজী ভাষা শিখে শত শত শিক্ষার্থী শিক্ষকতার মতো মহান পেশার সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়াসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে জাতি গড়ার কাজে নিয়োজিত রয়েছে। পরবর্তিতে এটিকে অারো বর্ধিত পরিসরে ইংরেজি ভাষাকে গোটা জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলের ছাত্রছাত্রীদের দ্বারপ্রান্তে পৌছে দেয়ার লক্ষ্যে ২০১৫ সালের শুরুতে গড়ে তোলেন “International Language Teaching Academy” যার অধীনে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার বিভিন্ন মাধ্যমিক স্কুলে গঠন করা হয় “English Language Club”। অার তখন এই ক্লাবের সদস্যরা খুজে পায় ইংরেজি ভাষা চর্চার অনুকূল পরিবেশ।

চলতি বছর “International Language Teaching Academy” অধীনে Language Club-এর মাধ্যমে প্রায় ২০,৪৮৭ জন ছাত্রছাত্রীকে ইংরেজী ভাষা শেখানো হচ্ছে। যা একটি “ইংরেজী ভাষা শিক্ষা” অান্দোলনে রূপ লাভ করেছে। বিভিন্ন মাধ্যমিক স্কুলে “English Language Club” গঠনের পূর্বে মোটিভেশনাল প্রোগ্রাম অায়োজনের মাধ্যমে ছাত্রছাত্রী ও অভিভাবকদের মাঝে একটি বিষয় ব্যাপক সাড়া জেগেছে যে, “ইংরেজি ভাষা একটি সহজ বিষয় এবং ইংরেজি শিখে পরীক্ষায় ভালো ফলাফল করে, বদলে যাও বদলে দাও বাংলাদেশ” এই স্লোগানটি। উক্ত Language Club এর সদস্যরা ইংরেজি ভাষা শিখার পাশাপাশি শিখছে সততা, নৈতিকতা, ভদ্রতা ও দেশপ্রেম।

অামরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে International Language Teaching Academy(ILTA) পক্ষ থেকে গভীর কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জানাতে চাই স্বাধীনতার ৪৩ বছর পর হলেও বাংলাদেশকে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন। নিঃসন্দেহে এটি একটি চমৎকার উদ্যোগ। বর্তমান সরকার ২০১০ সালের জাতীয় শিক্ষা নীতির অালোকে প্রণীত জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের সিলেবাস মোতাবেক ৬ষ্ঠ থেকে ১০ম শ্রেণীতে ইংরেজি ভাষার চারটি স্তর এর উপর যথাযথ গুরুত্ব প্রদান করে ইংরেজি ভাষা শিক্ষাকে উৎসাহিত করেছেন যা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ। এই অালোকে বর্তমান ইংরেজি সিলেবাস অনেকটাই বিজ্ঞানভিত্তিক কারণ ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণীর সকল অভ্যন্তরীন ইংরেজি ১ম পত্র পরীক্ষায় Listening & Speaking Test বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। তাই সকল মাধ্যমিক স্কুলগুলোতে ইংরেজি প্র্যাকটিস করার যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে। ইংরেজি ভাষা চর্চার ছাড়াও শিক্ষার্থীদের প্রয়োজন ইংরেজি ভাষা শিখার নির্দেশনামূলক একটি বই অার সেই অভাববোধ থেকে বিগত প্রায় একযুগের স্বকীয় মেধা ও গবেষণালদ্ধ বাস্তব প্রশিক্ষণ, ব্যাপক অধ্যয়ন এবং দীর্ঘদিনের ইংরেজি বিষয়ে শিক্ষকতা ও অভিজ্ঞতার অালোকে রচনা করেন “An Adviser of Communicative English Grammar & Language” বইটি। কোন তাত্ত্বিক কিংবা দুর্বোধ্য English Grammar নয়; বরং অত্যন্ত সহজ-সরল ভাষায় রচিত, সহজে ইংরেজি শেখার একটি চ্যাংলেঞ্জিং বই।
পরিশেষে, অামি সমাজের সর্বস্তরের মানুষ, রাজনীতিবিদ, সমাজসবেক, শিক্ষাবিদ, ছাত্রশিক্ষক, অভিভাবক ও সরকারের দৃষ্টি অাকর্ষণ করে বলতে চাই যে, একটি মহৎ কাজ শুরু করে একজন। কিন্তু এ মহৎ কাজটিকে এগিয়ে যায় সবার অংশগ্রহনে, সবার সহযোগিতায়। সরকারেরর পাশাপাশি জনগণ যদি এগিয়ে অাছে তাহলে ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ গড়া তথা অামাদের প্রত্যাশিত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে International Language Teaching Academy (ILTA) নিঃসন্দেহে বড় ভূমিকা পালন করবে।

fuadfarhanahmed.bd@live.com
চক্ষু বিভাগ
২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেলা সদর হাসপাতাল, ব্রাহ্মণবাড়িয়া।






Shares