Main Menu

সান্নিধ্যের স্মৃতিঃ- কবি-সাহিত্যিক মোহাম্মদ মাহ্ফুজউল্লাহ্

+100%-
মোঃ তারিকুল ইসলাম সেলিম:: একের পর এক নক্ষেত্রের বিয়োগান্ত আমাদের অপূরনীয় ক্ষতি হয়ে যাচ্ছে। এসব নক্ষত্রের জন্ম যুগে যুগে হয় না। আমাদের নাওঘাট গ্রামে নক্ষত্রের ভরা ঝুড়িতে ভাগ্যগুনে প্রায় আড়াই-তিনশো বছরের ইতিহাসে কেবল একজনকেই পেয়েছিলাম। নাওঘাট গ্রামের কৃতি-সন্তান বাংলা সাহিত্যের অন্যতম পুরোধা ব্যক্তিত্ব, নজরুল যুগে প্রতিভাধর, শক্তিমান, স্বতন্ত্র ও রোমান্টিক কবি-সাহিত্যিক, প্রবান্ধানিক, নজরুল গবেষক, সাহিত্য আলোচক, সমালোচক, গীতিকবি ও প্রবীণ সাংবাদিক মোহাম্মদ মাহফুজউল্লাহ । তাঁর নামের সাথে আমার প্রথম পরিচয় ঘটে সম্ভবত ১৯৯০ – ৯১ সালের দিকে। তখন আমার বয়স পাঁচ থেকে ছয় বছর । সবেমাত্র আত্মীয়-স্বজন, পাড়া প্রতিবেশীদের সাথে পরিচয়ের প্রথম পাঠ সমাপ্তির পর্যায়ে । এর বাইরেও অনেকের নামে সাথে প্রত্যেক্ষ ও পরোক্ষভাবে পরিচয় হতে থাকে। তবে ২০০০ সালে এই মহান মানুষটির গভীর সান্নিধ্যে যাওয়ার সুযোগ হয়। তখনই অদেখা পরিচয়ের পূর্ণতা পায় । মোহাম্মদ মাহ্ফুজউল্লাহ’র মতো সাহিত্যের এতো বিশাল জ্ঞান বিশারদের সান্নিধ্যে পাওয়াও কম কথা নয়। আল্লাহ বিশেষ রহমতেই মনে হয় আমার সে সুভাগ্য হয়েছিল। এজন্য কৃতজ্ঞ মহান রাব্বুল আল আমিনের কাছে।আমি মাহ্ফুজউল্লাহ’র চাচার সাথে যখন থেকে নিয়মিত যোগাযোগ শুরু করি। তখন থেকে মাসে একবার হলে উনার সান্নিধ্যে যাওয়ার চেষ্টা করেছি। প্রথম দিকে অনেক সময় দুুই তিন মাসে একবার দেখা করতে যেতাম। আমাকে কাছে পেলে তিনি খুবই খুশি হতেন এবং কাছে টেনে কত যে আদর স্নেহ করতেন। তা কেবল পরিবার আত্মীয়-স্বজনরাই ভাল জানেন। ২০১০ সালে থেকে আমাকে মাসে দুই একবার কাছে না পেলে এক রকম  অদেখার অস্থিরতায় টিএন্ডটি থেকে আমার মোবাইলে ফোন দিয়ে খোজ খবর নিতেন। বাসায়  যাওয়ার জন্য কথা বলতেন। সে অমিত স্মৃতির কথা আমার মনে পড়লে হত-বিহত হৃদয়ের দাগও কেটে যায়। যাই হোক কথা না বাড়িয়ে এখানেই টেনে ধরলাম। কবি মোহাম্মদ মাহফুজউল্লাহ ষাটের দশকের সূচনা লগ্নেই কবিচিত্তের অধিকার প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি সাহিত্যকে মনে-ধ্যানে-জ্ঞানে ধারণ করেছেন। এজন্যই ৭৮ বছর বয়সে এসেও জীবনের শেষ সময় পর্যন্ত কলম ধরে রেখে ছিলেন। সাহিত্যকে তিনি অফুরন্ত ভান্ডারে সমৃদ্ধি করেছেন।
১৯৩৬ সালের ১লা জানুয়ারীতে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার কৃতি-সন্তানদের খনি রত্নগর্ভা নাওঘাট গ্রামে এক উচ্চ ও মধ্যে বিত্ত মুসলিম পরিবারে জম্ম গ্রহন করেন । বাবা আব্দুল আওয়াল ছিলেন একজন সমাজ সেবক ও প্রচন্ড শিক্ষানুরাগী। শিক্ষা জীবন শুরু নাওঘাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে, ১৯৫০ সালে তালশহর হাই স্কুল থেকে কৃতিত্বের সাথে ম্যাট্রিক পাশ করেন। ঢাকা কলেজ থেকে ১৯৫২ সালে আই.এ ও ১৯৫৫ সালে বি.এ পাশ করেন। পরে শিক্ষা জীবনের ইতিটানে ( বাংলা ) এম.এ প্রথম পর্ব : ১৯৫৫-১৯৫৬ শিক্ষা বর্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে । তারপর প্রবেশ কর্মজীবনে, মাসিক মাহে-নও তে  ১৯৫৬-১৯৬১ সাল পর্যন্ত সহ-সম্পাদক হিসাবে কাজ করেন। সাহিত্য সম্পাদক দৈনিক জেহাদ ১৯৬১-১৯৬২ সাল পর্যন্ত। সহযোগী সম্পদক ছিলেন ১৯৬১-১৯৬৭ পর্যন্ত মাসিক “পূবালী” তে । সিনিয়র সহকারি সম্পদক হিসাবে দৈনিক বাংলা (সাবেক পাকিস্তান), ১৯৬৪-১৯৯৭ পর্যন্ত কাজ করেন । ১৯৮৫ সালে নজরুল ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা হলে প্রতিষ্ঠাকালীন সময় থেকেই নির্বাহী সদস্য ও নজরুল প্রত্রিকার প্রধান উপদেষ্টা, পরবর্তীতে নিবার্হী পরিচালকের দায়িকত্ব পালন করেন তিনি (১৯৮৫-১৯৯৫ সাল পর্যন্ত)। পেশা জীবনে অধিককাল সাংবাদিকতার সাথে জড়িত থাকলেও এ উপ-মহাদেশে মূলত কবি, সাহিত্যিক, সমালোচক হিসাবে তার ব্যাপক পরিচিত সমাদৃত। মোহাম্মদ মাহফুজউল্লাহ ছিলেন একাধারে কবি, সাহিত্যিক, আলোচক, সমালোচক, নজরুল ইসলাম ও ফররুখ গবেষক । রবীন্দ্র গবেষনায়তেও তার রয়েছে যথেষ্ট সুখ্যাতি । কৈশোর কালেই কবিতা লেখা ও ছবি আঁকার প্রতি প্রবল নেশা পেয়ে বসে তাকে। কৈশোর কিংবা শৈশবের সে নেশায় মোহাম্মদ মাহফুজউল্লাহ’র সাহিত্য জগতে প্রবেশ। ১৯৫৩-১৯৫৯ সালের পরিধিতে রচনা করেন তার প্রথম কাব্য গন্থ “জুলেখার মন” বইটি লেখে সাহিত্যঙ্গনের আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে চলে আসেন তিনি , পাঠক মহলেও ব্যাপক সাড়া পড়ে যায়, তার পর দ্বিতীয় গন্থ অন্ধকারে একা, রক্তিম হৃদয় দিয়েই শুরু আর পিছনে থাকাতে হয়নি নজরুল যুগের এই যুগ স্রষ্টা কবি’র । শুধু সামনেই এগিয়ে চলা। কবি, সাহিত্যিক, সমালোচক ও প্রাবন্ধিক মোহাম্মদ মাহফুজউল্লাহ আমাদের সাহিত্য জগতের এক উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিত্ব ।
……রোমান্টিক সুলভ কল্পনার অধিকারী, ঐতিহ্য ও ধর্মীয় মূল্যবোধে আস্থাশীল মাহফুজউল্লাহ’র কাব্যে দেশ ও প্রকৃতির প্রতি অনাবিল ভালবাসা যেমন প্রকাশ পেয়েছে, তেমনি বর্তমান যুগ-সংকট সম্পর্কে তাঁর মানস-প্রক্রিয়াও ব্যক্ত হয়েছে। মোহাম্মদ মাহফুজউল্লাহ’র লিখা বইগুলোর মধ্যে রয়েছে কাব্য: ১.জুলেহার মন (১৯৫৯), ২. অন্ধকারে একা (১৯৬৬), ৩. রক্তিম হৃদয় (১৯৭০), ৪. আপন ভুবনে (১৯৭৫), ৫. মোহাম্মদ মাহ্ফুজউল্লাহ্ কাব্য-সম্ভার (১৯৮২), ৬. বৈরিতার হাতে বন্দী (১৯৯০), ৭. সময়ের বিমর্ষ দর্পণে (২০০৬), ৮. কবিতা সংগ্রহ মোহাম্মদ মাহ্ফুজউল্লাহ (২০০১)। কয়েকটি সুদীর্ঘ ও সংলাপধর্মী কবিতাসহ তার অগ্রন্থিত কবিতার সংখ্যা প্রায় পাঁচশো। প্রবন্ধ : ১. নজরুল ইসলাম ও আধুনিক বাংলা কবিতা (প্রথম প্রকাশ : মে, ১৯৬৩। ইতঃমধ্যে গ্রন্থটির তিনটি পরিবর্ধিত সংস্করণ প্রকাশিত হয়েছে।), ২. সমকালীন সাহিত্যের ধারা (প্রথম প্রকাশ : ১৯৬৫), ৩. সাহিত্য-সংস্কৃতি-জাতীয়তা (প্রথম প্রকাশ : ভাদ্র, ১৩৭৪), ৪. মধুসূদন-রবীন্দ্রনাথ (প্রথম প্রকাশ : পৌষ, ১৩৭৪), ৫. নজরুল-কাব্যের শিল্পরূপ (প্রথম প্রকাশ : জ্যৈষ্ঠ, ১৩৮০), ৬. সাহিত্য ও সাহিত্যিক (প্রথম প্রকাশ : মে, ১৯৭৮) ৭. বুদ্ধির মুক্তি ও রেনেসাঁ আন্দোলন (প্রথম প্রকাশ : জুলাই, ১৯৮০, ইতঃমধ্যে গ্রন্থটির তিনটি সংস্করণ প্রকাশিত হয়েছে), ৮. বাংলা কাব্যে মুসলিম ঐতিহ্য (প্রথম প্রকাশ : জ্যৈষ্ঠ, ১৩৭২ ইতঃমধ্যে গ্রন্থটির চতুর্থ সংস্করণ প্রকাশিত হয়েছে), ৯. কবিতা ও প্রসঙ্গ কথা (প্রথম প্রকাশ : ফেব্রুয়ারি, ১৯৭৬) ১০. সাহিত্যের রূপকার (প্রথম প্রকাশ : জুন, ১৯৮১), ১১. বাঙালী মুসলমানের মাতৃভাষা প্রীতি, ১২. মুসলিম বাংলার সাংবাদিকতা ও আবুল কালাম শামসুদ্দীন (প্রথম প্রকাশ : মার্চ, ১৯৮৩), ১৩. গোলাম মোস্তফা (জীবনী-গ্রন্থ) (প্রথম প্রকাশ : ফেব্রুয়ারি, ১৯৮৭), ১৪. সুফী মোতাহার হোসেন (জীবনী-গ্রন্থ) (প্রথম প্রকাশ : ফেব্রুয়ারি, ১৯৮৮), ১৫. কৈশোর কালের কথা ও সাহিত্য-জীবনের সূচনা পর্ব (১৯৯৮), ১৬. প্রাতিষ্ঠানিক নজরুল-চর্চার ইতিবৃত্ত (প্রথম প্রকাশ : জুন, ১৯৯৪), ১৭. ভাষা আন্দোলনে আবুল কালাম শামসুদ্দীন (প্রথম প্রকাশ : মার্চ, ১৯৮৯), ১৮. বিদ্রোহী ও জাতীয় কবি নজরুল (প্রথম প্রকাশ : মার্চ, ২০০১), ১৯. বাংলা কাব্যে ফররুখ আহমদ : তার শক্তি ও স্বাতন্ত্র্যের স্বরূপ (প্রথম প্রকাশ : অক্টোবর, ২০০৩), ২০. পূবালীর দিনগুলি ও সমকালীন সাহিত্য-সংস্কৃতি (২০০৫), ২১. ইতিহাস ও স্মৃতির আলোকে ঢাকা মহানগরীর সাহিত্য-সংস্কৃতি (২০০৫), ২২. ভাষা আন্দোলন যুগে যুগে (২০০৬), ২৩. বাংলা ভাষা যুগে যুগে (২০০৯), ২৪. নজরুল কাব্য ও সঙ্গীত (২০১১), ২৫. সাহিত্য চর্চ্চার নেপথ্য কথা ও নানা প্রসঙ্গ (২০১৭), ২৬.বাংলা ভাষা ও ভাষা আন্দোলন যুগে যুগে (২০১৭), ২৭. যাঁদের হারিয়ে খুঁজি (রেখাচিত্র), (২০০৭), ২৮ মোহাম্মদ মাহফুজউল্লাহ’র দীর্ঘ কবিতা, (২০০৯). ২৯ শিশু কিশোর ছড়া, (২০০৯). ৩০. কিশোর অভিযান কাহিনী দিগ-দিগন্ত, (১৯৭৪) প্রভৃতি। অগ্রন্থিত উপন্যাস-২টি যথা- পান্ডুর আকাশ (মাসিক মোহাম্মদীতে ধারাবাহিক ভাবে প্রকাশিত), ২-জীবন-খাচাঁর পাখি (ঈদ সংখ্যা-সচিত্র স্বদেশ)। অগ্রস্থিত রচনার সংখ্যা অর্ধ সহস্রাধিক, অ-প্রকাশিত রচনার সংখ্যাও তার চেয়ে কম নয়। মোহাম্মদ মাহফুজউল্লাহ’র কবিতা ইংরেজী, রুশীয়, জার্মানী, ফরাসী,ইটালিয়ান, আরবী, উর্দু ইত্যাদি ভাষায় অনূদিত হয়েছে।
ভাষা সৈনিক মোহাম্মদ মাহফুজউল্লাহ ১৯৫২ সালে ঢাকা কলেজে ছাত্র থাকাবস্থায় রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে ভাষা আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছিলেন । প্রখ্যাত কবি, সাহিত্যিক প্রাবন্ধিক মোহাম্মদ মাহফুউল্লাহ’র অসামান্য অবদানে জন্য  বাংলাদেশ সরকার ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান সর্বোচ্চ সম্মানে ভূষিত করেন । পদক সম্মাননাঃ-১. বাংলা একাডেমী সাহিত্য পুরষ্কার (১৯৭৭), ২. নজরুল স্মৃতি পুরষ্কার (কলকাতা-(১৯৮৫), ৩. কবি ফররুখ স্মৃতি পুরষ্কার-(২০০৪), ৪. আবুল মনসুর আহমদ সাহিত্য পুরষ্কার, ৫.তমদ্দুন মজলিশ প্রদত্ত “মাতৃভাষা পদক” ৬. জাতীয় প্রেসক্লাব লেখক সম্মাননা পদক, ৭. ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন সম্মাননা পদক, ৮. ফকির ফাউন্ডশন সম্মাননা পদক-(২০০৬), ৯. আশুগঞ্জ বন্দর শতবর্ষ উদযাপন পরিষদ সম্মাননা-(২০০০), ১০. বাংলা ভাষা সাহিত্য সংস্কৃতি চর্চা কেন্দ্র প্রদত্ত সম্মাননা-(২০০৬), ১১.নজরুল ইনস্টিটিউট প্রদত্ত নজরুল পদক-(২০০৪), ১২.তমদ্দুন মজলিশ প্রদত্ত গুণীজন সম্বর্ধনা পদক, ১৩. শাহেদ আলী ফাউন্ডেশন পুরষ্কার, ১৪. অলক্ত সাহিত্য পুরষ্কার, ১৫. রাষ্ট্রীয় সর্বোচ্চ সম্মান “একুশে পদক”-(২০০৭), ১৬. নাওঘাট কল্যাণ সমিতি প্রদত্ত সংর্বধনা ২০০৮  , ১৭. ড. জেট এইচ ভূইঁয়া ফাউন্ডেশন প্রদত্ত সংর্বধনা ।
দৃষ্টিপাত:- নজরুল ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক পদে থাকাকালে তিনি “বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমী” পরিচালনা পরিষদের সদস্য ছিলেন। তিনি বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের প্রযত্ন পরিষদেরও সদস্য ছিল ( ২০০৩-২০০৫ ) পর্যন্ত  । মোহাম্মদ মাহফুজউল্লাহ বাংলা একাডেমী কতৃক প্রকাশিত ( কবি আব্দুল কাদির সম্পাদিত ) “নজরুল রচনাবলী’র” নতুন সংস্করণের সম্পাদনা পরিষদের সদস্য ও প্রধান সমন্বয়ক ছিলেন ।
উল্লেখ্য যে- ২০০২ সালের পর থেকে ৬-৭ টি বই আমার বিশেষ উদ্যোগ ও সহযোগীতা প্রকাশিত হয়েছে। এ বইগুলো এখন সাহিত্যের অমূল্য সম্পদ। সর্বশেষ “সাহিচর্চার নৈপথ্য কথা ও নানা প্রসঙ্গ ” বইটি প্রকাশ করতে আমাকে প্রচুর সময় ও শ্রম দিতে হয়েছে। এ বইটি লেখা হয়েছে সম্পূর্ন ডিকটেশন দিয়ে। ৬০ থেকে ৭০ ভাগ আমার হাতে লেখা অর্থাৎ তিনি মূখেমূখে বলছেন আমি তা লিখেছি। উনার শেষ ইচ্ছানুযায়ী বইটি প্রকাশ করতেই হবে। চলছে কম্পোজের কাজ দুই একবার তিনি নিজেই চোখের গুলা দৃষ্টি প্রুফ দেখে আমাকে দিয়েছে। এরই মধ্যে চাচা মৃত্যুবরণ করেন। আমি ১৬ বার প্রুফ দেখে ১৭ বারের মাঁথায় ফাইনাল করে পাঠায়। প্রথম দিকে প্রুফ হাতে নিয়ে একটা সাথে আরেক প্যারার মিল খুঁজে পাচ্ছিলাম না। একটা কথা বা ঘটনা একাধিক বার রিপিটেশন হয়েছে। বানান ভুলে ভরা। নানা কারণে কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে অনেকটা হাল ছেড়ে দেওয়ার মতো হয়ে পড়ি। আবার চেষ্টা চালায় যে চাচা আমাকে তাঁর শেষ ইচ্ছা পূরণের গুরুদায়িত্ব দিলে গেলেন।  তিনি এ ব্যাপারে সঠিক ব্যক্তিকে মনোনীত করে গেছেন। এতোগুলো বই করতে পেরেছি এটাও পারব ইনশাআল্লাহ…. এই বলে নিজে অভয় দিলাম। এরই সাথে মোহাম্মদ নাসিরউল্লাহ চাচা, মোহাম্মদ আহসানউল্লাহ ফরিদ চাচা ও মাহফুজউল্লাহ চাচার কনিষ্ঠ পুত্র মাহতাব জামিল লিটন ভাই নিয়মিত আমাকে তো সাহস দিচ্ছেই।
বাংলা বাজারের ঐতিহ্যবাহী প্রখ্যাত প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের স্বাত্ত্বাধিকারী সুলেখক ও অনুবাদক ইফতেহার রসুল জর্জ চাচা ও তার বড় ছেলে সু-শোভন ই শাওন ভাই, মোহাম্মদ আহসানউল্লাহ ফরিদ চাচা ও মাহতাব জামিল লিটন ভাইয়ের সহযোগীতায় অবশেষ ২০১১ সাল থেকে ২০১৭ পর্যন্ত ৭ বছরের প্রচেষ্টায় মাহফুজউল্লাহ চাচার চতুর্থ প্রয়াণ দিবসে প্রকাশিত হয়। সময় দীর্ঘায়িত হলেও চাচার রেখে যাওয়া বিশাল দায়িত্বটুকু পালন করতে পেরেছি। আজ তিনি বেঁচে থাকলে অনেক খুশি হতেন। কাছে টেনে বলতেন সেলিম তুমি আমার জন্য অনেক কষ্ট করেছ। ঊফ আফসোস…..!
২০১৩ সালের ২৯ শে ডিসেম্বর জীবন যুদ্ধে পরাজিত হয়ে চলে যান অনন্তলোকে। বিধাতার কাছে জোড় আকুতি তিনি যেন তাঁহাকে অনন্ত কালেই জান্নাতের সর্বোত্তম স্থানে প্রেরণ করেন……আমিন
 [ কবি’র ৪র্থ প্রয়াণ দিবসে লেখাটি সান্নিধ্যের স্মৃতি’র অংশ বিশেষ ]





Shares