Main Menu

জাগো ফাউন্ডেশন, ভিবিডি দুটি শব্দ মিলে যেন ভালবাসার প্রতিচ্ছবি

+100%-

আমার নাম রাসেল মিয়া। বর্তমানে অনার্স প্রথম বর্ষে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি কলেজে পড়াশোনা করছি। পাশাপাশি চাকুরী জীবনেও যোগদান করেছি। ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর পদে চাকুরীরত আছি। বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার, সরাইল থানার বিটঘর গ্রামে। আজ থেকে প্রায় তিন বছর আগে ২০১৫ সালের নভেম্বর মাসের ২৪ তারিখ ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় প্রথম জাগোর একটি অঙ্গ সংগঠন ভলান্টিয়ার ফর বাংলাদেশ এর ভলান্টিয়াররা আয়োজন করেছিল ইউনির্ভার্সেল চিন্ড্রেস ডে (ইউসিডি) নামক একটি অনুষ্ঠান।

একটু পিছনে ফিরে যাই। তখন আমি এস.এস.সি পাশ করে কলেজে প্রথম বর্ষে পা রাখি। ছোট বেলা থেকেই পথ শিশুদের প্রতি অনেক মায়া হত। বাবার হাত ধরে যখন ছোট বয়সেই রেল ষ্টেশনে গিয়ে ট্রেনের জন্য দূরের কোথাও যেতে অপেক্ষা করতাম। তখন দেখতাম ঐ পথ শিশুদের কি রকম জীবন যাপন। যে বয়সে বাবা-মা আমাকে সোনার চামচ দিয়ে ভাত হাওয়ায় সেই বয়সে ওরা রেল ষ্টেশনে পঁচা ময়লা খাবার খায়। যেই বয়সে আমাকে মা গোসল করিয়ে সকাল বেলায় হাজারো বুঝিয়ে শুনিয়ে স্কুলে পাঠায়, সেই বয়সে ওরা রবীন্দ্রনাথের প্রভুহীন কুকুরের মত ঘুরে রাস্তায় রাস্তায়। নীরবে চোখের কোনে জল আসত। কাউকে বুঝতে দিতাম না। ওরা ও তো মানুষ। আমার মতই রক্তে মাংসে ভরপুর। আরো

একটু পিছনে যাই। আপনাদের আমার ছোট স্মৃতির পাতা থেকে একটি গল্প বলি, তখন আমি ক্লাস সেভেন এ পড়ি। প্রথমবার ঢাকায় যাব বাবার সাথে। বাসে চড়তে পারিনা বলে বাবা দূর পাল্লার জায়গায় ট্রেনে নিয়ে যেত। ট্রেন আসতে দেরী করছে। হঠাৎ দূরে কোথাও একটা ঝটলা চোখে পরছে। বাবার সাথে সাথে আমি গেলাম। গিয়ে দেখি একটি ঝরাঝীর্ণ কাপড় পরা ৮-৯ বছরের আনুমানিক ছেলেকে মারছে। সবাই দেখছে কেউ কিছুই বলছে না। তখন আমার বাবা সাহস করে বলেছিল ঐ থাম তোমরা। এই ছেলেটা কি অপরাধ করেছে? প্রতি উত্তরে ঐ লোকটি দোকানদার পরিচয় দিয়ে বলল গতকালও সে আমার দোকান থেকে প্রায় তিন দিন ধরে টাকা ও খাবার নিয়ে যাচ্ছে। আজ ধরা পরেছে। তাই মারছি। তখন জটলার মাঝে এক লোক বলল খাবার ও টাকা মিলে কত টাকা হবে??? দোকানদার বলল চুরের বাচ্ছা আমার মনে হয় ৭০-৮০ টাকার বেশি নিয়েছে। হুম অপরাধ ছিল ৭০-৮০ টাকা। এটাই তার অপরাধ!!! আর ঐ দিকে তার সারল্যতার প্রতিচ্ছবি ছেলেটির মুখের নাকের ছিদ্র দিয়ে কিছুটা রক্ত ঝড়ছে। কিছুক্ষণ পর দেখলাম ছিড়া কাপড় পড়ে তার মা ছোট একটি মেয়েকে কুলে নিয়ে ছেলেটির কাছে এসেছিল। তারপর হৃদয় বিধারক ঘটনার সৃষ্টি হল। ঐ মহিলার ভাষ্যমতে ওনার বাড়ি নরসিংদী জেলাতে, স্বামী অন্য জায়গায় বিয়ে করে চলে গেছে। এক ছেলে এক মেয়ে, কাজের সন্ধানে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় আসা, কাজ কেউ দেয় না, ঘুমায় রেলষ্টেশনে, ভিক্ষা করি, গত ৩ দিন ধরে জ্বর, তাই ভিক্ষা করতে পারছিলাম না, না খেয়ে আছি বলে ছেলে চুরি করেছে। বাবার চোখে তাকালাম, চোখ বেয়ে পানির দেখা মিলছে। ঐ দিকে ট্রেন ও চলে আসছে। বাবা ঐ মহিলাকে কিছু টাকা দিয়ে আমরা ট্রেনে উঠলাম। চিন্তু করছিলাম ছেলেটির অপরাধ এটাই!!!…….. ও ওর মায়ের জন্য চুরি করেছে, চুরি করেছে ওর ছোট বোনটার জন্য।

ঐ দিন থেকেই মনে মনে প্রতিজ্ঞা করছিলাম সারা জীবন যতটুকু পারি ওদের সাহায্য করব। আর ঐ সুযোগটিই এনে দিয়েছিল ২০১৫ ইং সনের নভেম্বর মাসের ২৪ তারিখ। সকালের সূর্যটা ঐ দিন ছিল একটু ব্যতিক্রম। জাগো ও বিভিডির পক্ষ থেকে বিশ্ব শিশু দিবস উদযাপন করব পথ শিশুদের সাথে এই ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলাতেই। ঐ দিন শুনেছিলাম তাদের সুখ দুঃখের গল্প। সুখের দিন গুলোর চাইতে তাদের দুঃখের গল্পগুলোই ছিল অনেক বেশি। তাদের দুষ্টমি, হাসি-আনন্দর সাথে ভলান্টিয়াররাও মিশে গিয়েছিল। যেন ভালবাসার এক পূর্ণমিলন। ব্রাহ্মণবাড়িয়াতে যদিও জাগোর অঙ্গ সংগঠন ভলান্টিয়ার ফর বাংলাদেশ ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার সময়কাল ৩ বছরের উপর কিন্তু আগামী ২রা মে হল ঐ মহৎ সংগঠনটির ৬ষ্ঠ তম জন্ম বার্ষিকী। হাজারো সালাম ও শ্রদ্ধা জাগো ও ভিবিডি এর সাথে সংযুক্ত সকল মহৎ মানুষদের। যাদের এই মহৎ সংগঠনের মাধ্যমে ঐ সকল রবীন্দ্রনাথের ছুটি গল্পের রাস্তায় রাস্তায় ঘুরা প্রভুহীন বালকদের কাছে টানার সুযোগ পেয়েছি, তাদের বাস্তব জীবন সম্পর্কে অবগত হয়েছি। যে এই সংগঠনগুলোর উদ্যোক্ত জনাব করভী রাখসান্দ ভাইকে, তাকেও জানাই অন্তর থেকে অপুরন্ত ভালবাসা। আর সর্বশেষে আগামীর পথের শুভকামনা রইল ভলান্টিয়ার ফর বাংলাদেশ ও জাগো ফাউন্ডেশকে। জয় হোক জাগোর, জয় হোক ভলান্টিয়ার বাংলাদেশের।

লেখক
মোঃ রাসেল মিয়া
কমিটি মেম্বার
ভলান্টিয়ার ফর বাংলাদেশ
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা।






Shares