Main Menu

বিশ্বমিডিয়ায় সাকা ও মুজাহিদের ফাঁসির খবর

+100%-

saka

anandabazar

ঢাকায় রাতেই ফাঁসি গণহত্যার দুই নায়ককে

বুধবার সর্বোচ্চ আদালত আসামিদের আপিল খারিজ করে দেওয়ার পরে দেরি করল না বাংলাদেশ সরকার। শনিবার রাতেই ফাঁসিতে ঝুলিয়ে দেওয়া হল একাত্তরে গণহত্যার দুই নায়ক বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধুরী ও জামাতে ইসলামির সাধারণ সম্পাদক আলি আহসান মহম্মদ মুজাহিদকে। দিনভর নাটকের পর শেষ পর্যন্ত এই ফাঁসি কার্যকর হয় কি না, তা জানতে উৎসুক ছিলেন দেশজোড়া মানুষ। সময় নষ্টের কোনও অছিলা আসামিদের পক্ষে বাদ রাখা হয়নি। এমনকী বেনজির ভাবে রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষাও করেন তাঁরা। কিন্তু রাতেই সেই আর্জি খারিজ হয়ে যাওয়ার পরে ফাঁসির রায় কার্যকর করতে সব বাধা কেটে যায়। ফাঁসি হয়ে যাওয়া মাত্র উল্লাসে ফেটে পড়ে বাংলাদেশ। রাতেই মশাল মিছিল বার করে ঢাকা পরিক্রমা করে গণজাগরণ মঞ্চের সদস্যরা। মিছিল বেরোয় বাংলাদেশের ছোটবড় প্রায় সব শহরেই। পাশাপাশি তাঁদের নেতা মুজাহিদের ফাঁসির প্রতিবাদে সোমবার হরতাল ডেকেছে জামাতে ইসলামি।

আগের খালেদা জিয়া সরকারের দুই প্রভাবশালী মন্ত্রী ছিলেন সাকা ও মুজাহিদ। ঢাকায় বুদ্ধিজীবীদের গণহত্যার মাথা মুজাহিদ ছিলেন খালেদার সমাজকল্যাণ মন্ত্রী। আর চট্টগ্রাম থেকে হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষকে উজাড় করার নায়ক সাকা চৌধুরী ছিলেন মন্ত্রী পদমর্যাদায় প্রধানমন্ত্রীর সংসদীয় উপদেষ্টা। গণহত্যা ও মানবতা-বিরোধী অপরাধে দু’জনকেই প্রাণদণ্ড দিয়েছিল আন্তর্জাতিক আদালত। সুপ্রিম কোর্টও তা বহাল রাখে। তার পরেও সেই রায় পুনর্বিবেচনার জন্য আপিল করেছিলেন দুই আসামি। বুধবার সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্রকুমার সিন্‌হার নেতৃত্বে চার বিচারপতির আপিল বেঞ্চ সেই আবেদনও খারিজ করে। এর পরে রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার আবেদন জানানোর সুযোগ ছিল দুই আসামির। কিন্তু তা নিয়ে প্রচুর নাটক করেন সাকা ও মুজাহিদ। আগে তাঁরা মৌখিক ভাবে জানিয়েছিলেন, প্রাণভিক্ষা চাইবেন না। কিন্তু আজ ফাঁসির তোড়জোড় শুরুর পরে জেল পরিদর্শনে যাওয়া দুই ম্যাজিস্ট্রেটকে তাঁরা জানান, রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা চাইবেন। এ খবর শুনে সাকার পরিবার বিস্ময় প্রকাশ করেন। মুজাহিদের ছেলে ও জামাতের পক্ষ থেকে জানানো হয়, সরকার মিথ্যে কথা বলছে। কেউ প্রাণভিক্ষা চাননি। কিন্তু রাতে রাষ্ট্রপতির দফতর থেকে জানানো হয়, সাকা ও মুজাহিদের প্রাণভিক্ষা নামঞ্জুর করা হল। এর পরেই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ঘোষণা করেন, রাতেই ফাঁসির পরে আসামিদের দেহ গ্রামের বাড়িতে কবর দেওয়া হবে। নিজের দুই মন্ত্রীর ফাঁসির তোড়জোড় শুরু হওয়া মাত্র দীর্ঘ লন্ডন সফর কাটছাঁট করে এ দিনই ঢাকায় ফিরে এসেছেন প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া। বিএনপি-র পক্ষে বলা হয়েছে, দেশে সঙ্কটময় পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়াতেই তাঁদের নেত্রী চিকিৎসা স্থগিত রেখে দেশে ফিরলেন।

একাত্তরে আল বদর সংগঠনের প্রধান মুজাহিদ স্বাধীনতাপন্থী বাঙালি বিশিষ্ট জনেদের ‘খতম তালিকা’ তৈরি করে দিয়েছিলেন সহযোগী পাকিস্তানি সেনাদের। পরাজয়ের আগে সেই তালিকা ধরে বিশিষ্ট অধ্যাপক, শিল্পী, লেখক ও চিকিৎসকদের বাড়ি থেকে তুলে এনে খুন করে পাক সেনারা। তখনও মুজাহিদ তাঁদের চিনিয়ে দিতে সেনাদের সঙ্গে ছিলেন। পরে জামাতে ইসলামির শীর্ষ নেতা হন মুজাহিদ। এখনও তিনি দলটির সাধারণ সম্পাদক।

অন্য দিকে বাহিনী তৈরি করে চট্টগ্রামকে সংখ্যালঘু-শূন্য করার অভিযান চালান সাকা চৌধুরী। অভিযোগ, সংখ্যালঘুদের মাথা কেটে আনলে তিনি পুরস্কারের ঘোষণা করেছিলেন। রাউজানে নিজের হাতে গুলি করে খুন করেছিলেন কুণ্ডেশ্বরী ঔষধালয়ের মালিক বৃদ্ধ নূতনচন্দ্র সিংহকে। একটি দখল করা বাড়িতে ‘টর্চার ও কিলিং ক্যাম্প’-ও চালাতেন সাকা। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পরে তিনি প্রথমে পাকিস্তান ও পরে ব্রিটেনে চলে যান। জিয়াউর রহমানের আমলে দেশে ফিরে বিএনপি-তে যোগ দেন সাকা। এরশাদ তাঁকে মন্ত্রী করেন। খালেদা তাঁকে সংসদীয় উপদেষ্টা করেন। খালেদার আমলে চট্টগ্রামে ধরা পড়া আলফার জন্য পাঠানো ১০ ট্রাক অস্ত্র যে জাহাজে করে এসেছিল, সেটিরও মালিক ছিলেন সাকা চৌধুরী।

এ দিন সকালে ফাঁসির তোড়জোড় শুরু হওয়ার খবর পেয়েই চট্টগ্রাম-রাঙামাটি সড়ক অবরোধ করে মুক্তিযোদ্ধারা জানান, সাকা চৌধুরীর মৃতদেহ তাঁরা রাউজানের মাটিতে কবর দিতে দেবেন না। গণজাগরণ মঞ্চও বিকেল থেকে শাহবাগ চত্বরে অবস্থান শুরু করেন। ফাঁসির পরেও উল্লাসে ফেটে পড়ে মিছিল বার করেন তাঁরা। গণ্ডগোল রুখতে ঢাকায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা কঠোর করা হয়েছে।

bbc
সালাউদ্দিন কাদের ও মুজাহিদের ফাঁসি কার্যকর
বাংলাদেশে ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময়কার মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে বিএনপি নেতা সালাউদ্দীন কাদের চৌধুরী এবং জামায়াত নেতা আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদের ফাঁসি কার্যকর করা হয়েছে।

বাংলাদেশের কারা মহাপরিদর্শক সৈয়দ ইফতেখারউদ্দিন জানিয়েছেন, ”১২টা ৫৫ মিনিটে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে এই ফাঁসি কার্যকর করা হয়েছে।”

স্বাধীনতা যুদ্ধের ৪৪ বছর পর এই বিচার প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলো।

এর আগে এই দুজনের প্রাণভিক্ষার আবেদন রাষ্ট্রপতি নামঞ্জুর করেন। এরপর কারাগারে শুরু হয় মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের প্রস্তুতি।

কারাগারের বাইরে নিরাপত্তা প্রহরা জোরদার করা হয়।

মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত দু’জনের পরিবারের সদস্যরা রাতে কেন্দ্রীয় কারাগারে দুজনের সাথে শেষবারের মতো দেখা করতে যান।

দুজনের করা আপীল বিভাগের রায় পুর্নবিবেচনার আবেদন বুধবার খারিজ করে দেন সুপ্রিম কোর্ট

সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়, দুজন ম্যাজিস্ট্রেট সকালে মি চৌধুরী এবং মি মুজাহিদের সাথে দেখা করলে তারা লিখিতভাবে এই প্রাণভিক্ষার আবেদন করেন।

তবে দুই রাজনীতিকের পরিবারের সদস্যরা এই প্রাণভিক্ষার আবেদনের খবরে বিস্ময় প্রকাশ করেন। কারাগারে দেখা করে বেরিয়ে এসে প্রাণভিক্ষার আবেদন করা হয়নি বলে তারা জানান।

২০১৩ সালের ১৭ জুলাই মানবতা-বিরোধী অপরাধের মামলায় জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদকে মৃত্যুদণ্ড দেয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।

তাঁর বিরুদ্ধে আনা বুদ্ধিজীবী হত্যা, গণহত্যা, ধর্ষণসহ সাতটি অভিযোগের মধ্যে পাঁচটি অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে।

সেই রায়ের বিরুদ্ধে আপীল করেছিলেন মি. মুজাহিদ। এ বছর ১৬ই জুন আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের মৃত্যুদণ্ডের রায় বহাল রাখে আপিল বিভাগ।

অন্যদিকে এ বছর ২৯ জুলাই, সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর বিরুদ্ধে দেয়া মৃত্যুদণ্ডের রায় বহাল রাখেন আপিল বিভাগ।
রায় কার্যকরের আগে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার ও ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় নিরাপত্তা বাড়ানো হয়

২০১৩ সালের ১ অক্টোবর চার অভিযোগে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর মৃত্যুদণ্ড এবং পাঁচ অভিযোগে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দিয়েছিল আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১।

পরে গত ৩০ সেপ্টেম্বর উভয় রায়েরই পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশ করা হয় ।

ওই দিন রাতে আপিল বিভাগের এই দুটি পূর্ণাঙ্গ রায় সুপ্রিম কোর্ট থেকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে পৌঁছায়।

ট্রাইব্যুনাল মৃত্যু পরোয়ানায় সই করেন ও পরে ওই মৃত্যু পরোয়ানা কারাগারে পাঠানো হয়।

কিন্তু আপীল বিভাগের রায় পুনর্বিবেচনার আবেদন জানানো হলে ১৮ নভেম্বর সেই আবেদন খা্রিজ করে দেন।

মুক্তিযুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধে বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী ও জামায়াত নেতা আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের ফাঁসির দণ্ড কার্যকর করা হয়েছে। খুন, গণহত্যা, বুদ্ধিজীবী হত্যা, অগ্নিসংযোগ, ধর্ষণের অপরাধে শনিবার রাত ১২টা ৫৫ মিনিটে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে একই মঞ্চে পৃথক ফাঁসিকাষ্ঠে ঝুলিয়ে তাদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়।

পাকিস্তানের প্রভাবশালী পত্রিকা দ্য ডন, ভারতের টাইমস অব ইন্ডিয়াসহ আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলো অনলাইন সংস্করণে গুরুত্বের সঙ্গে এ সংবাদ ছেপেছে।

dawn

কাতারভিত্তিক প্রভাবশালী পত্রিকা আলজাজিরা ‘বাংলাদেশে দুই বিরোধী নেতার মৃত্যুদণ্ড’ শিরোনামে সংবাদটি প্রকাশ করেছে। রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার আবেদন খারিজ হওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ ও সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে ফাঁসিতে ঝুলানো হয় বলে উল্লেখ করে আলজাজিরা।

আলজাজিরা বলে, ১৯৭১ সালে পাকিস্তানের সঙ্গে স্বাধীনতা যুদ্ধে সাকা ও মুজাহিদের ভূমিকার কারণে তাদের ফাঁসি দেওয়া হয়।






Shares