Main Menu

ওরা আন্তঃজেলা সাংবাদিক।

+100%-

ওরা আন্তঃজেলা সাংবাদিক। দেশের জেলা থেকে জেলায়, এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্তে ছুটে বেড়ান তারা। তাদের টার্গেট থাকে দুর্নীতিগ্রস্ত বিভিন্ন সরকারি দফতর ও কর্মকর্তা। না, এই বিশেষ গোত্রের তথাকথিত সাংবাদিকরা ছোটেন না কোনো সংবাদের পেছনে। ওনারা ছোটেন ‘বিশেষ কিছু’র পেছনে। ( সূত্র : মানবকন্ঠ ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৫ )

তারা নিজেদের সাংবাদিক পরিচয় দিলেও প্রকৃতপক্ষে কোনো গণমাধ্যমের সঙ্গেই তাদের কোনো সম্পর্ক নেই। কখনো কোনো সংবাদও (নিউজ) তারা লেখেন না।

তবে তাদের হাবভাব, চালচলন, হুমকি-ধমকিতে তটস্থ থাকেন দুর্নীতিগ্রস্ত সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা। পেশাদার সাংবাদিকদের মতো এদেরও আছে ‘প্রেসক্লাব’।

ভুয়া পুলিশ, র‌্যাব, ডিবি কিংবা ভুয়া চিকিৎসকদের মতো এরাও সমাজে ভুয়া সাংবাদিক হিসেবে পরিচিত। এদের মধ্যে কেউ পতিতাদের দালাল, কেউ মোটর মেকানিক, কেউ কেরোসিন বিক্রেতা, কেউ মানবপাচারকারী, কেউ পুলিশের সোর্স।

তবে অধিকাংশেরই নির্দিষ্ট কোনো পেশা নেই। অল্প বিদ্যা জানা এই ধুরন্দরদের ‘সাংবাদিকতার’ আড়ালে প্রতারণাই পেশা।

এরা দর্নীতিগ্রস্ত সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে দল বেঁধে হানা দেয়। পেশাদার সাংবাদিকদের মতো এদেরও থাকে বিভিন্ন সোর্স। সোর্সের মাধ্যমে এরা ওইসব প্রতিষ্ঠান কিংবা নির্দিষ্ট ব্যক্তির দুর্নীতি সম্পর্কিত কিছু তথ্য সংগ্রহ করে তাদের টার্গেট ঠিক করে।

পরে ওইসব তথ্যের ভিত্তিতে হানা দেয় সেখানে। আর সংবাদ প্রকাশের ভয় দেখিয়ে হাতিয়ে নেয় মোটা অঙ্কের অর্থ।

বিভিন্ন সময়ে এ ধরনের ভুয়া সাংবাদিককে আটকও করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। কিন্তু তার পরও থেমে নেই এদের তৎপরতা। এই ক’দিন আগে এ ধরনের একটি ভুয়া সাংবাদিক গ্রুপকে আটকের পর বেরিয়ে আসে এদের অভিনব কিছু প্রতারণার কথা।

গত ১৫ সেপ্টেম্বর ফরিদপুরের নর্থ চ্যানেল ভূমি অফিসের কর্মচারীরা এ রকম ৪ ভুয়া সাংবাদিককে আটক করে পুলিশে দেয়। এদের কাছ থেকে বিভিন্ন পত্রিকার বেশ কিছু ভুয়া পরিচয়পত্র, একটি প্রাইভেট কার ও নগদ টাকা উদ্ধার করা হয়।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা পুলিশকে জানায়, তারা মাসে একাধিকবার ঢাকা থেকে প্রাইভেট কার ভাড়া নিয়ে কয়েকজন মিলে নির্দিষ্ট কোনো জেলাকে টার্গেট করে বেরিয়ে পড়েন।

তাদের উদ্দেশ্য থাকে সরকারি ভূমি অফিস, বিআরটিএ অফিস, পাসপোর্ট অফিসসহ সরকারি এমন সব প্রতিষ্ঠান যেখানে সরকারের রাজস্ব আয় হয় এবং ঘুষের লেনদেন হয়। ওই প্রতিষ্ঠানে গিয়ে তারা সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীদের হুমকি-ধমকি দিয়ে দুর্নীতির তথ্য পত্রিকায় প্রকাশ করে দেয়ার ভয় দেখিয়ে টাকা নিয়ে সটকে পড়তেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাজধানীতে এ রকম কিছু ভুয়া সাংবাদিক আছেন। এদের মধ্যে কয়েকজনের পরিচয়ও পাওয়া গেছে। পাওয়া গেছে ভুয়া সাংবাদিকদের একটি প্রেসক্লাবের সন্ধানও।

ফরিদপুরে চাঁদাবাজি করতে গিয়ে আটক রিয়াদুল ইসলাম কখনো কোনো পত্রিকায় কাজ করেননি। তবে তিনি নিজেকে দৈনিক স্বাধীন সংবাদের রিপোর্টার হিসেবে পরিচয় দেন। এ

কই ঘটনায় আটক সোহেল সালাউদ্দিন বাংলাদেশ টু-ডে পত্রিকার বিজ্ঞাপন প্রতিনিধি হিসেবে ফ্রিল্যান্সার হিসেবে কাজ করলেও তিনি সব জায়গায় নিজেকে সাংবাদিক হিসেবেই পরিচয় দেন।

এ ছাড়া তিনি জুরাইন প্রেসক্লাবের শীর্ষ কর্মকর্তা হিসেবেও পুলিশের কাছে পরিচয় দেন। ওই ঘটনায় আটক মাহমুদ হোসেন একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলের ক্যামেরাপার্সনের সহযোগী হিসেবে কিছুদিন কাজ করলেও তিনিও নিজেকে সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে বিভিন্ন জায়গায় চাঁদাবাজি করছেন।

তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, রাজধানীর, মিরপুর, শাহ্ আলী, যাত্রাবাড়ী, দনিয়া, ডেমরা, সানারপাড়, মাতুয়াইল, জুরাইন ও নারায়ণগঞ্জ এলাকায় ভুয়া সাংবাদিকদের রয়েছে বেশ কয়েকটি গ্রুপ।

এসব প্রতিটি গ্রুপই একই কায়দায় প্রাইভেট কার কিংবা মাইক্রোবাস ভাড়া নিয়ে এক জেলা থেকে আরেক জেলায় ঘুরে সাংবাদিক পরিচয়ে চাঁদাবাজি করছে।

নারায়ণগঞ্জ সানারপাড়ে জামাল নামে এক ব্যক্তি দীর্ঘদিন ধরে নিজেকে সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করে আসছেন বলে অভিযোগ আছে।

এই জামাল মূলত পতিতাদের দালাল হিসেবেই এলাকায় পরিচিত। মাতুয়াইল এলাকায় তানভীর নামে আরেক ভুয়া সাংবাদিকের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে।

মিরপুর শাহ্ আলী মার্কেটের দোতলায় মানবাধিকার ক্রাইম রিপোর্টার অ্যাসোসিয়েশন নামে এমন একটি প্রতিষ্ঠান রয়েছে।

গত বছর ডিসেম্বরে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) হল ভাড়া করে সম্মেলন করতে এলে থলের বিড়াল বের হয়ে পড়ে। ওই সময় প্রতিষ্ঠানের সভাপতিসহ কয়েকজনকে পুলিশ আটক করে। পরে কয়েক মাস জেল খেটে জামিনে ছাড়া পান তারা।

গত মার্চে ফার্মগেট এলাকায় মাহমুদ নামে এক ভুয়া সাংবাদিককে র‌্যাব-২ এর একটি দল আটক করে। গত বছর যাত্রাবাড়ী এলাকায় জীবন খান নামে এ রকম এক ভুয়া সাংবাদিককে যাত্রাবাড়ীর একটি হোটেল থেকে আটক করে পুলিশ।

শুধু ভুয়া সাবাদিকই নয়, এসব ভুয়া সাংবাদিকের রয়েছে প্রেসক্লাবও। এই ‘প্রেসক্লাব’ সাইন বোর্ডও তাদের চাঁদাবাজির একটি হাতিয়ার। এ রকমই একটি ‘প্রেসক্লাবের’ সন্ধান পাওয়া গেছে জুরাইনে।

জুরাইন প্রেসক্লাব নাম দিয়ে কিছু অসাধু ব্যক্তি নিজেদের সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে চাঁদাবাজি করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এই প্রেসক্লাবের সভাপতি সাহেল আহমেদ সোহেল মূলত মবিল ও কেরোসিন ব্যবসায়ী।

কখনোই কোনো সংবাদ মাধ্যমের সঙ্গে এই ব্যক্তির কোনো সম্পর্ক ছিল না। পোস্তগোলায় বিভিন্ন রি-রোলিং মিলের বর্জ্যের (কাচড়া) ব্যবসাও করেন তিনি। ওই এলাকায় পুলিশের মালিকানাধীন বিভিন্ন পাবলিক পরিবহনের (বাস, টেম্পু) তত্ত্বাবধানও করেন তিনি।

এই প্রেসক্লাবের সেক্রেটারি রাসেল একজন কার্টন ব্যবসায়ী। তিনিও কখনো সাংবাদিকতা পেশায় ছিলেন না। এই প্রেসক্লাবের সঙ্গে সম্পৃক্ত প্রত্যেক সদস্যই মূলত ভুয়া সাংবাদিক। এদেরই এক সদস্য সোহেল সালাউদ্দিন চাঁদাবাজি করতে গিয়ে আটক হন ফরিদপুরে।

ভুয়া সাংবাদিকদের প্রসঙ্গে ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক কুদ্দুস আফ্রাদ বলেন, সাংবাদিক ইউনিয়নের পক্ষে এসব ভুয়া সাংবাদিকের এককভাবে রোধ করার কোনো উপায় নেই।

দুঃখজনক বিষয় হলো, কখনো কখনো সরকারি প্রতিষ্ঠান ও দলের এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কিছু অসাধু ব্যক্তির পৃষ্ঠপোষকতা পান এসব তথাকথিত সাংবাদিক। এদের প্রতারণা রোধ করতে সামাজিক সচেতনতা সবচেয়ে বেশি জরুরি। এ ছাড়া সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগ ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকেও এ বিষয়ে উদ্যোগ নিতে হবে। তবে এসব ভুয়া সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে যে কোনো ধরনের ব্যবস্থা নিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যদি আমাদের সহযোগিতা চায় সেক্ষেত্রে আমরা সর্বাত্মক সহযোগিতা করব।

প্রসঙ্গ ব্রাহ্মণবাড়িয়া :: আমাদের জেলায়ও এদের দৌরাত্ব অনেকগুন বেড়েছে। কিছুদিন পূর্বে সোহেল নামে এক হলুদ সাংবাদিককে র্যাব আটক করে মাদকসহ। এ ছাড়াও বিভিন্ন সময় পুলিশ বিভিন্ন জায়গা থেকে প্রতারণার অভিযোগে সাংবাদিকতার মুখোশধারীদেরকে গ্রেফতার করে। সবচেয়ে দাপট দেখা যায়, পূর্ব সীমান্ত এলাকায়। বিকেল হলেই সামনে প্রেস লিখা মোটর বাইকে করে তিনজন করে চেপে যেতে থাকেন পূর্বাঞ্চলে। সেখানে মাদক সেবন ও পরিবহন করেন তারা। অনেকে আবার আনতে যান মাদক বিক্রেতার কাছ থকে মাসোহারা। এ বিষয়ে সচেতন মহল বারবার চেষ্টা করেও তা নিয়ন্ত্রনে আনতে পারছেন না। ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রেসক্লাবের সম্মানিত সভাপতি সৈয়দ মিজানুর রেজা ও সাধারন সম্পাদক রিয়াজউদ্দিন জামি সব সময়ই হলুদ সাংবাদিক রোধে প্রশাসনের সহযোগিতা কামনা করেন।






Shares