Main Menu

‘প্রেমে ব্যর্থতায়’ হতাশাগ্রস্ত ছিলেন নাফিস

+100%-

ডেস্ক :  ব্যাংক ‍গুড়িয়ে দেয়ার পরিকল্পনার মামলায় ৩০ বছরের কারাদণ্ড প্রাপ্ত কাজী রেজওয়ানুল আহসান নাফিস আগে থেকেই বুঝতে পেরেছিলেন বড় ধরনের শাস্তি অপেক্ষা করছে তার জন্য। তাই বিচারকের কাছে নিজের দোষ স্বীকার করে ক্ষমা চেয়েছিলেন তিনি। বলেছিলেন, তার কারণে বাবা চাকরি হারিয়ে এখন বেকার। সংসারে তিনি ছাড়া বাবা-মা’র পাশে দাঁড়ানোর কেউ নেই।

তবে ওই চিঠিতে ব্যক্তিগত কিছু বিষয়ও তুলে এনেছেন নাফিস। লিখেছেন, ব্যক্তিগত কিছু দুর্বলতা ও প্রেমিকার বিশ্বাসভঙ্গের হতাশাই তাকে জঙ্গিবাদের পথে ঠেলে দিয়েছিল। কিন্তু শেষমেশ কোনো লাভ হয়নি তাতে। শাস্তি তাকে পেতেই হয়েছে।   

চিঠিতে যা লিখেছিলেন নাফিস:
নিজের ভুল স্বীকার করে নাফিস বলেন, ‘দয়া করে আমাকে ক্ষমা করে দিন। আমার বাবা আমার কারণে চাকরি হারিয়েছেন। একমাত্র বোনের বিয়ে হয়ে গেছে, আমি ছাড়া আমার বাবা-মাকে দেখার এখন আর কেউ নেই। আমি তাদের পাশে থাকতে চাই। আমি আপনার মাধ্যমে সবার কাছে ক্ষমা চাইছি। দয়া করে সাজা দেয়ার আগে আমাকে একটু করুনা করুন। আমার বেঁচে থাকার আশাটি জাগিয়ে রাখুন। আমাকে ক্ষমা করে দিন, প্লিজ।’

নাফিসের দাবি, ছোটবেলার তোতলামির সমস্যা, লেখাপড়ায় ভাল করতে না পারা, ভাগ্যান্বেষণে যুক্তরাষ্ট্রে গিয়েও সফল হতে না পারা এবং প্রেমিকার বিশ্বাসভঙ্গের হতাশাই তাকে জঙ্গিবাদের পথে ঠেলে দিয়েছিল। নিজে কখনো ইসলামী জঙ্গিবাদে বিশ্বাস করেননি বলেও দাবি করেন নাফিস।

তিনি বলেন, ‘জঙ্গিবাদে আমি কখনোই অনুরক্ত ছিলাম না। আমি একে ঘৃণা করি হৃদয়ের অন্তস্থল থেকে। এটা ইসলামই নয়।’
নাফিস বলেন, আমার কোনো বন্ধু ছিল না। বাবা-মার সঙ্গে সম্পর্কও সহজ ছিল না। আমি ছিলাম নিঃসঙ্গ। এই পর্যন্ত জীবনে আমি কিছু একটা হওয়ার চেষ্টা করেছি, কিন্তু ডুবেছি হতাশায়।”

নিজের প্রতি আস্থা ফেরাতেই যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়া বলে জানান এই যুবক। ভাবছিলেন, অর্থ উপার্জন করে পরিবারকে যেমন সহায়তা করবেন, তেমনি নিজের পড়াশোনাও চালিয়ে যাবেন। তিনি বলেন,“কিন্তু এই চেষ্টাও সফল হয়নি। উপরন্তু বাড়ি থেকেই আমাকে অর্থ নিয়ে চলতে হত।”

মিসৌরির বিশ্ববিদ্যালয় ছেড়ে নিউ ইয়র্কে চলে আসেন নাফিস একটি কাজের আশায়, উঠতে চেয়েছিলেন আলবেনিতে এক চাচার বাড়িতে। কিন্তু চাচির অসম্মতিতে তা হয়নি বলে জানান এই যুবক। এরপর তিনি আশ্রয় নেন জ্যামাইকার কুইন্সে দূর সম্পর্কের আত্মীয় সোনিয়ার বাড়িতে। কিন্তু একদিন ‘ছোট’ একটি ঘটনার জন্য সোনিয়ার বাবার ‘তীব্র’ তিরস্কার শুনতে হয় তাকে। নাফিস বলেন, “তারপর সোনিয়ার বাড়িতে থাকা আমার জন্য অসম্ভব হয়ে দাঁড়াল”।

এই সময় নাফিস খবর পান, স্বদেশে থাকা যে তরুণীকে নিয়ে ভবিষ্যতের ছক আঁকছিলেন তিনি, সেও প্রতারণা করছে। “আমার মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ল। মনে হল, এই পৃথিবীতে আমার আর কোনো প্রয়োজন নেই। আত্মহত্যা করতে চেয়েছিলাম, কিন্তু ধর্ম এতে সমর্থন দেয় না বলে তা-ও করতে পারিনি।” এরপর ‘হতাশ-বিপর্যস্ত’ নাফিস ভাবেন, ‘জিহাদে’ নিজেকে উৎসর্গ করবেন তিনি। “খেপাটে পরিকল্পনা নিয়ে আমি তখন ছদ্মবেশী ওই এজেন্টদের সঙ্গে যোগাযোগ করি, বলি আমার পরিকল্পনার কথা।”

নাফিস গত ৭ ফেব্রুয়ারি আদালতে দোষ স্বীকার করলে তখনি বিচারক তার ৩০ বছর শাস্তির আভাস দিয়েছিলেন। সব শুনেও এই যুবক বলেছিলেন, তিনি বুঝেই দোষ স্বীকার করছেন।

বন্দি হওয়ার পর আত্মপীড়নের জর্জরিত হওয়ার কথাও বিচারকের কাছে তুলে ধরেন নাফিস। তিনি বলেন, ‘এখানে আমি সম্পূর্ণ কুরআন পড়েছি, যা আগে পড়া হয়নি কখনো। নিজের কাজের ন্যূনতম সমর্থনও এতে পেলাম না।”নাফিস আরো বলেন, “বন্দিশালায় আমি নিজের ধর্মীয় আচার পালন করতে পেরেছি। এখানে এসে আমি ধর্মকে আরো ভালোভাবে উপলব্ধি করতে পেরেছি।”






Shares