Main Menu

কানাডায় যেভাবে কাটছে রুমানার দিন

+100%-

রুমানা মঞ্জুরের স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ
ভ্যাঙ্কুভার, ১১ জুলাই- স্বামীর আক্রমণে দুই চোখ হারানো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শিক্ষিকা রুমানা মঞ্জুর কানাডায় তার স্নাতকোত্তর শিক্ষা সম্পন্ন করেছেন। তবে এখানেই তিনি থামবেন না বলে জানিয়েছেন কানাডার সিবিসি নিউজকে। সিবিসি নিউজ রুমানার সাক্ষাৎকারটি ১০ জুলাই বুধবার প্রকাশ করে।
রুমানা বলেছেন, “অতীতের নেতিবাচক ঘটনা আমার ভাবনা চিন্তা আটকে রাখুক তা আমি চাই না। আমি যা করতে চাই তা করতে হবে।”
তিনি বলেন, “অন্ধ হয়ে অনেক চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছিলাম। তবে আমার স্নাতকোত্তর শেষ করতে পারব ভাবিনি।”
কানাডায় পড়াশোনা করা অবস্থায় ছুটিতে ২০১১ সালের জুনে বাংলাদেশে আসেন রুমানা। সেসময় তার স্বামী হাসান সাঈদ ‘পরকীয়ার’ অভিযোগে তার ওপর হামলা চালিয়ে দুই চোখ নষ্ট করে দেন। ঘটনাটি সেসময় বাংলাদেশে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছিল।
ওই ঘটনায়র পর হাসান সাঈদ গ্রেপ্তার হন। এর কিছুদিন বাদেই বঙ্গবন্ধু হাসপাতাল ‘রহস্যজনকভাবে’ মারা যান সাঈদ। ওই হাসপাতালে কারা হেফাজতে চিকিৎসাধীন হাসানকে তার কক্ষের বাথরুমে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায় ৫ ডিসেম্বর।

ভ্যাঙ্কুভার, ১২ জুলাই- রুমানা মনজুর দেশে ফিরতে চান। দাঁড়াতে চান সহিংসতা ও নিষ্পেষণের শিকার নারীদের পাশে। কানাডায় ইউনিভার্সিটি অব বৃটিশ কলম্বিয়াতে মাস্টার্সের থিসিস জমা দিয়েছেন। তার এই থিসিসের ভূয়সী প্রশংসা করা হয়েছে। এখন আইনের দিকে তার ঝোঁক। আইনে ডিগ্রি অর্জন করে সহায়তা করতে চান সহিংসতা ও নির্যাতনের শিকার নারীদের। রুমানা মনজুর বাংলাদেশের সেই নারী, যার ওপর নারকীয় নির্যাতন চালিয়েছিল তার স্বামী। তার দু’টি চোখই তুলে নেয়া হয়েছিল। এতে তিনি চিরদিনের জন্য অন্ধ হয়ে যান। তার নাক মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এ অবস্থায় বন্ধু-বান্ধবের সহায়তায় তিনি কানাডায় চলে যান। সেখানে গিয়ে শুরু করেন নিজের পায়ে দাঁড়ানোর সংগ্রাম। নিচু ভূমির দেশ হিসেবে এখন পরিচিত বাংলাদেশ। এই দেশের ওপর জলবায়ুর পরিবর্তনে কি মারাত্মক প্রভাব পড়বে তার ওপর তিনি মাস্টার্সের থিসিস করেন। গত ২৮শে জুন সেই থিসিস জমা দেন ইউনিভার্সিটি অব বৃটিশ কলাম্বিয়ার একটি জমায়েতে। থিসিস জমা দিয়ে তিনি এর পক্ষে যুক্তিতর্ক তুলে ধরেন। ওই রুমে তখন উপস্থিত ছিলেন বেশ কয়েকজন প্রফেসর, বন্ধু, পারিবারিক সদস্য ও অনুসারী শিক্ষার্থীরা। রুমানার বক্তব্য শেষ হতেই সবাই তাকে অভিনন্দিত করে। এখন থেকে দু’বছর আগে স্বামীর হামলায় অন্ধ হয়ে যাওয়া রুমানার কাছে অন্ধকারময় হতাশার ভিতরেও যেন সেই প্রশংসা ছিল বিদ্যুচ্চমকের মতো। তার এ পথে চলা শুরু হয়েছিল জানুয়ারিতে। বলেছেন, আমি নিজেকে বোঝালাম। কিছুই বদলে যায় নি। কান্না কোনদিন কোন কিছু পরিবর্তন করে দিতে পারে না। তাই তোমাকে সামনে এগোতে হলে নিজেকে নিজের আসনে বসাতে হবে। সেই থেকে আমার নতুন যাত্রা শুরু। ফিরে পেতে চাইলাম আমার মুখের হাসি। জানুয়ারিতে সিদ্ধান্ত নিলাম আমি কারও নিয়ন্ত্রণে থাকবো না। তাতে ভবিষ্যতে আমি সুখী বা অসুখী যা-ই থাকি না কেন। ২০১১ সালের জুনে রুমানা মনজুর ইউনিভার্সিটি অব বৃটিশ কলাম্বিয়ার আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের একজন গ্র্যাজুয়েট ছিলেন। ওই বছরে তিনি পরিবারের অন্য সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে দেশে ফেরেন। তখনই স্বামী তার ওপর হামলা চালায়। পরের ঘটনা সবার জানা।

ওদিকে কানাডার দ্য গ্লোব অ্যান্ড মেইল পত্রিকাকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে রুমানা বলেছেন অনেক কথা। বলেছেন, আমি কখনও ভাবিনি আজকের এই দিনটি আমার সামনে ফিরে আসবে। আগামী সেপ্টেম্বরে তিনি ইউনিভার্সিটি অব বৃটিশ কলাম্বিয়ায় আইন নিয়ে পড়াশোনা করবেন। সিএনআইবি থেকে তিনি সহায়তা পেয়েছেন কিভাবে নিজের বাড়ি চিনতে হবে। সমপ্রতি তিনি নিয়েছেন অ্যাক্রোবেটিক যোগ ব্যায়ামের প্রশিক্ষণ। তিনি সফটওয়্যারের ওপর বিশেষ প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। এখন অন্ধদের পড়ালেখার কৌশল ব্রেইল পদ্ধতি শিখছেন। রুমানা যা বলেন তা তার অনুসারী শিক্ষার্থীরা টেক্সট বইয়ে রেকর্ড করে, টাইপ করতে সহায়তা করে, সম্পাদনা করতে সহায়তা করে। রুমানা বলেছেন, তিনি বাংলাদেশে ফিরতে চান। তবে খুব শিগগিরই নয়। বর্তমানে তিনি, তার মেয়ে আনুশেহ ও পিতামাতা কানাডার স্থায়ী অধিবাসী। রুমানা বলেছেন, যখন আমি প্রথম কানাডায় আসি তখন এটা আমার কাছে ছিল একেবারে একটি নতুন দেশ। আমাকে তার ভিতর পড়াশোনা করতে হয়েছে। কিন্তু আমার কাছে সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ সময় সেটাই যখন সব সমপ্রদায়ের মানুষ আমাকে সহায়তা করেছে। এটা এক বিস্ময়কর অভিজ্ঞতা। রুমানার এখন চেহারায় কিছুটা পরিবর্তন এসেছে। তার তুলে নেয়া চোখে বসানো হয়েছে দু’টি কৃত্রিম চোখ। তা দিয়ে তিনি দেখতে পান না। তবে তা তাকে দিয়েছে এক স্বাভাবিক চেহারা। এ জন্য কেউ তার দিকে তাকালে তাকে অন্ধ বলে মনে হবে না। তার হাতে রয়েছে এমন একটি ঘড়ি যা তাকে সময় বলে দেয়।






Shares