Main Menu

নবীপ্রেম প্রমাণে হাত কেটেছিল যে কিশোর (ভিডিও)

+100%-

2016_01_21_14_56_31_CjfwLKElKmOVxybT9Mr3XK9GFwShTo_original

ম্প্রতি পাকিস্তানে মসজিদের ইমামের নির্দেশে নিজের হাত কেটেছে এক বালক। এই খবর শুনেই পাঞ্জাব প্রদেশের ওই গ্রাম ঘুরে এসেছেন বিবিসি প্রতিনিধি ইরাম আব্বাস। সেই ছেলে, তার পরিবারের ও ওই গ্রামবাসীর সামগ্রিক প্রতিক্রিয়া নিয়ে বিবিসির এই প্রতিবেদন ‘The boy accused of blasphemy who cut off his hand’। বাংলামেইলের পাঠকদের জন্য এটি ভাষান্তরিত করা হল।

‘আমি কেন ব্যথা বা কষ্ট পাবো? পবিত্র নবীর বিরুদ্ধে যে হাত ওঠেছিল তা কাটার সময় আমার ব্যথা হবে কেন?’ এ ছিল ১৫ বছরের কিশোর কাইসারের (ছদ্ম নাম) অভিব্যক্তি। মাত্র কয়েকদিন আগেই ব্লাসফেমির অপরাধে নিজের ডান হাতটি কব্জি পর্যন্ত কেটে ফেলেছে সে ।

১১ জানুয়ারি। পাঞ্জাবের এক গ্রামের মসজিদ প্রাঙ্গনে সমবেত হয়েছেন বিভিন্ন বয়সী নারী-পুরুষ। ঈদে মিলাদুন্নবী উপলক্ষে 2016_01_21_14_56_34_Xz9aiI5WAzsZkw7zbK7JncL4rfxe6u_original (2)আয়োজিত অনুষ্ঠানে ওয়াজ করছেন মসজিদের ইমাম। এক পর্যায়ে তিনি বলেন, ‘এখানে মহানবী হজরত মুহাম্মদের (সা.) অনুসারী আছেন কারা কারা? হাত তুলেন।’ তখন উপস্থিত সকলে হাত তুলেন। এরপরই তিনি প্রশ্ন করেন, ‘এখানে এমন কেউ কি আছেন কি নবীর সুন্নতে বিশ্বাস করেন না? থাকলে হাত তুলেন।’ তখন ঠিকমত না শোনার কারণে হাত তোলে কাইসার। এ নিয়ে উপস্থিত লোকজনের মধ্যে ফিসফিসানি শুরু হয়। ইমাম কায়সারকে মুরতাদ বলে ঘোষণা করেন। কায়সার তার ভুল হয়ে গেছে বলে জানালে ইমাম বলেন, ‘তুই যে নবীকে ভালোবাসিস তার প্রমাণ দে।’ নিজেকে মোহাম্মদের অনুসারী বলে প্রমাণ করতেই তখন হাত কাটে কাইসার।

বিবিসি প্রতিনিধি যখন তার সঙ্গে দেখা করেন তখন সে ছিল দুর্বল। কিন্তু ধর্ম সম্পর্কে সচেতনতা ঠিকই ছিল তার। সে বলে, ‘আমি সেদিন না বুঝে হাত তুলেছিলাম। তারপরও,আমি তো একটা ধর্মবিরোধী কাজ করেছি, তাই না। সেজন্যই আমাকে প্রায়শ্চিত্ব করতে হয়েছে।’
তার এ কাজটি ভুল না শুদ্ধ এটি উপলব্ধি করার মত বয়সও হয়নি তার। তারপরও নিজের এই হাত কাটা নিয়ে কোনোই উদ্বেগ নেই শিশুটির। সে কেবল বোঝে, হাত না কাটলে গ্রামের লোকজন তার দিকে ঘৃণার দৃষ্টিতে তাকাত যা তার পক্ষে সহ্য করা ছিল অসম্ভব। তাইতো সেদিন ওয়াজ ফেলে বাড়ি ছুটে যায় সে। তারপর ঘাস কাটার যন্ত্রটি দিয়ে নিজেই নিজের হাত কেটে ফেলে। কাজটা কি ঠিক হচ্ছে, না ভুল, এটুকু পর্যন্ত বুঝতে পারেনি সে। কাটা হাতটি একটা প্লেটে নিয়ে সে মসজিদে ছুটে যায়। ওর বাড়ি থেকে মসজিদের দূরত্ব ১শ মিটার। তার হাত বেয়ে তখন গড়িয়ে পড়ছে রক্তধারা। সেদিকে দৃষ্টি নেই তার। ব্যথা বেদনা উপলব্ধি করার মত অনুভূতিটুকুও যে ছিল না তার। সে কাটা হাতসমেত থালাটি ইমামের সামনে পরিবেশন করে।

উপস্থিত জনতা তো হতবাক! ছেলেটা এ কি করেছে! কারো মুখেই কথা নেই। কয়েকজন অবশ্য এগিয়ে এসেছিল তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার জন্য। বিবিসি প্রতিনিধিকে কাইসার বলে, ‘যখন আমি নিজের হাত নিজে কেটেছিলাম তখন তো কোনো ব্যথা অনুভব করিনি। তবে এখন কেন করব? যে হাত আমার নবীজীর বিরুদ্ধে উত্তোলিত হয়েছে সে হাতটা আমি নিজের শরীর থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলেছি।’ বলতে বলতে তার মুখে হাসি ফুটে ওঠে।

এই বিরল ঘটনাটি নিয়ে গ্রামের লোকজন বেশ উত্তজিত। তারা এটিকে এক ধরনের অর্জন বা নবীভক্তির দৃষ্টান্ত হিসেবেই দেখছেন। গোটা গ্রামে কাইসার এখন বীরের মর্যাদা পাচ্ছে। স্থানীয়রা তাকে সম্মানের দৃষ্টিতে দেখছে। এই গ্রামের অধিকাংশ মানুষই অশিক্ষিত এবং তদের সমাজ গোড়ামি আর কুসংস্কারে পরিপূর্ণ। তাদের ধর্মীয় জীবনটা আবর্তিত হয় মসজিদকে ঘিরে যেখানে ইমামের মুখ নিঃসৃত সকল বাক্যই অমোঘ সত্য হিসেবে বিবেচিত। শুধু এই গ্রাম নয় – পাকিস্তানের বাকি সব গ্রামেও এই একই সংস্কৃতি বিরাজমান। তবে কাইসারের মত হাত কেটে ফেলার ঘটনা একেবারেই ব্যতিক্রম। এ ধরনের ঈশ্বর ও নবী প্রেমের দৃষ্টান্ত তো আর রোজ রোজ দেখা যায় না। তাই বুঝি ১৫ বছরের এ কিশোরটি এখন দর্শণীয় বস্তু হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। তাকে এক নজর দেখার জন্য আশপাশের গ্রামগুলো থেকে লোকজন ছুটে আসছে। এদেরই একজন ফারুক। মধ্য ত্রিশের এ যুবকটি এসে কাইসারের বাম হাতে চুমু খান। এরপর হাতটি নিজের কপালে ঠেকান। স্থানীয় রীতি অনুযায়ী ওই কিশোরের পকেটে কিছু দক্ষিণাও গুজে দেন ‍তিনি।

ফারুক বিবিসি প্রতিনিধিকে বলেন, ‘আমি শুনেছি সে নবীর প্রতি সম্মান জানিয়ে নিজের হাত কেটে ফেলেছে। এজন্য আমি তাকে দেখতে এসেছি। নবীর প্রতি এমন ভালোবাসা তো সচাররাচর দেখা যায় না। তাইতো আমি তাকে সম্মান জানাতে এসেছি।’ এ সময় আবেগে থরথর করে কাঁপতে থাকেন ফারুক। তার দু চোখ বেয়ে নেমে আসে অশ্রুধারা।

2016_01_21_14_56_32_xXXgNPIYJoId8vv7FTcriuqgYHlfst_original (1)
এই সেই যন্ত্র যা দিয়ে হাত কেঁটেছিল কাইসার

 

 

 

 

 

পাঁচ ভাইবোনের মধ্যে কাইসার সবার ছোট। ভাইবোনদের মধ্যে একমাত্র সে-ই নিয়মিত স্কুলে যায়। পাশাপাশি এ বয়সেই ধার্মিক হিসাবেও এলাকায় তার সুনাম রয়েছে। হাত কাটার পর তাকে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল গ্রামের ছোট্ট একটা ক্লিনিকে। সেখানে অপ্রতুল সরঞ্জামাদি দিয়েই তার হাতে ব্যান্ডেজ বেঁধে দেয়া হয়েছে। কিন্তু নার্সকে দেয়ার মত কোনো অর্থ ছিল না তার বাবার কাছে। ছেলের এই হাত কর্তন নিয়ে দারুণভাবে চিন্তিত কাইসারের বাবা। তিনি চান, ছেলের আবার সু্থে হয়ে ওঠুক এবং তার একটা নতুন হাত হউক। কিন্ততু তা কি আদৌ সম্ভব কিনা তা জানিন না। এখন তার কেবল একটাই সান্ত্বনা , ছেলে যে নবীজীকে ভালোবেসেই কাজটা করেছে। তাই বুঝি ছেলের গর্বে বুক ফুলে ওঠে পিতার।

এ ঘটনায় সন্ত্রাস বিরোধী আইনের আওতায় মসজিদের ওই ইমামকে আটক করা হয়েছে। যদিও তিনি ঘৃণা ও সহিংসতা ছড়ানোর অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। ইমামের কোনো শাস্তি হউক এমনটি কাইসারের পরিবারও চায় না। তাদের সরল চিন্তা, কাইসার তো নিজেই নিজেকে শাস্তি দিয়েছে, ওনার কি দোষ!

 

তবে এ কথা স্বীকার করতেই হবে, পাকিস্তানের মত রক্ষণশীল দেশ জুড়ে যে ধর্মীয় কূপমণ্ডুকতার পরিবেশ বিরাজ করছে, তারই বলি হয়েছে কাইসার এবং তার মত শিশুরা। কখনো পরিবারের হাতে, কখনো বা জঙ্গিদের হাতে এমনকি সরকারের ভুল সিদ্ধান্তের কারণেও দুর্ভাগ্যের শিকার হতে হচ্ছে সেখানকার নতুন প্রজন্মটিকে। কাইসারের এই হাত কাটার ঘটনা রক্ষণশীল দেশটির কত কিশোরকে প্রভাবিত করবে কে জানে!






Shares